নাটোরে পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতাসহ দুজনের ওপর হামলা
Published: 20th, March 2025 GMT
নাটোরের লালপুর উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় কর্মকার (৫২) ও তাঁর এক সহযোগীকে পিটিয়ে আহত করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বুধবার রাত ১০টার দিকে রামকৃষ্ণপুর গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় আহত আরেকজন হলেন খোকন কর্মকার (৪৫)। তাঁরা দুজনই উপজেলার বিলমাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা। গতকাল রাতে তাঁদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
লালপুর উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি দিপেন্দ্রনাথ সাহা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, স্থানীয় শ্রী শ্রী ফকির চাঁদ গোঁসাইয়ের আশ্রম কমিটি গঠনের জের ধরে এই হামলা চালানো হতে পারে।
উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাতে সঞ্জয় ও খোকন এক মৃত স্বজনকে দেখে নিজেদের বাড়ি ফিরছিলেন। রাত ১০টার দিকে তাঁরা রামকৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে পৌঁছালে তাঁদের ওপর রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। তারা সঞ্জয়ের বাঁ হাত ভেঙে দেয় এবং বুক ও পায়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করে। খোকনের ডান পা, বুক ও পেটে আঘাত করা হয়েছে। চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে প্রথমে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে তাঁদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সঞ্জয় কর্মকার বলেন, তিনি আশ্রমের সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় প্রতিপক্ষ উত্তম মণ্ডলের ইন্ধনে প্রশাসন নতুন করে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়। এ ব্যাপারে তিনি নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে মামলা করেন। গতকাল তাঁর পক্ষে রায় হয়। এর জেরে তাঁর ওপর হামলা হতে পারে।
তবে উত্তম মণ্ডল এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি ঘটনার ব্যাপারে কিছুই জানেন না।
লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হাসান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। তবে এ বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।
আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।
বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’
এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।