বিএফইউজে মহাসচিব ও বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, প্রতিটি দিন দুটি সূর্য উদিত হয়, একটি হচ্ছে প্রভাত সূর্য অন্যটি হচ্ছে সংবাদ। সূর্যের আলোতে আমরা দেখি আর সংবাদমাধ্যম আমাদের বিশ্ব দেখায় বা জানায়।  তিনি বলেন, একজন সাংবাদিকের কাজ সমাজের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলা পরিষদ মিলনায়তনে সাংবাদিক ইউনিয়ন গাজীপুর আয়োজিত আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে তিনি এসব বলেন।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, গণমাধ্যমকে সমাজের দর্পণ বলা হয়। সাংবাদিককে বলা হয় সমাজের ওয়াচডগ। এই দর্পণে প্রতিবিম্বিত হয় সমাজের প্রতিচিত্র। অন্যায়, অনিয়ম, নিগ্রহ, শোষণ-বঞ্চনা ও অধিকার হরণের বিরুদ্ধে একজন সাংবাদিককে সোচ্চার থাকতে হয় সবসময়। চোখ রাঙানোকে তোয়াক্কা না করে নির্ভীক ও নিরলসভাবে কাজ করতে হয়। প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার চিত্র প্রত্যক্ষ করতে হয়। মানুষের সমস্যার কথা তুলে ধরার দায়িত্ব পালন করতে হয়। অনেক বাধা বিপত্তির মধ্যে তাদের দিন যায়। ক্ষমতাধরদের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে যেতে হয়।

তিনি বলেন, সাংবাদিকদের হতে হবে সাহসী। কিন্তু রাষ্ট্রের সহযোগিতা না পেয়ে সাহসী সাংবাদিকতা ও অনুসন্ধানী সাংবাদিক অনেকটা বিলীন হতে চলেছে।

বিএফইউজে মহাসচিব বলেন, কথায় কথায় সাংবাদিককে হত্যা করা হয়, নিগৃহীত করা হয়, ভয় দেখানো হয়। সাংবাদিকদের কণ্ঠ রোধ করতে, কাজ ব্যাহত করতে অহরহ দমনপীড়ন চালানো হয়। পুলিশ লেলিয়ে দেওয়া, রাজনৈতিক নেতাদের হুমকি, দুর্নীতিগ্রস্ত আমলাদের অত্যাচার, প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের আক্রমণ- এ সবকিছু সাংবাদিকদের সহ্য করে সামনে এগিয়ে যেতে হয়। তার ওপর রয়েছে নিপীড়নমূলক আইন। নানা রকম হয়রানি এড়িয়ে যেতে সাংবাদিকরা যখন সেলফ সেন্সরশিপের আশ্রয় নেন, তখন গণমাধ্যম আর স্বাধীন থাকে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা প্রভাবশালী মহলের চাপে পড়ে সেলফ সেন্সরশিপ অবলম্বন করেন। অনেক সময় চাকরি হারানোর ভয়ে অফিসের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যাদের যোগাযোগ বেশি, তাদের বিষয়গুলো এড়িয়ে যান। এভাবে সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতা মারা যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নামক গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী আইনের সদ্যবিলুপ্ত ৫৭ ধারায় করা মামলায় হয়রানির শিকার হয়েছেন এমন সাংবাদিকরা মামলা হওয়ার পর নানা সময়ে জটিল বিষয়গুলোতে প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে গেলে আগে নিজের বিপদ এড়ানোর কথা ভাবেন বার বার। ফলে অনেক সময় অনেক তথ্য জেনেও চুপ করে থাকেন। কেননা, বিপদে পড়লে অফিস বা নেতাদের কাছ থেকে খুব বেশি সমর্থন পাওয়া যায় না।

তিনি বলেন, আরেকটা বিষয়ে না বললেই নয়, বাংলাদেশে মুক্ত গণমাধ্যম বিষয়টি কোনো অর্থ বহন করে না। কেননা, বাস্তবতা হলো এখানে সাংবাদিকরা সেলফ সেন্সর্ড। যে কজন সাংবাদিক এই পরিস্থিতির বাইরে থেকে পেশাদারিত্বের সঙ্গে সাংবাদিকতা করতে চান, তারা নানা হয়রানির শিকার হন। তাদের নিয়ন্ত্রণের যে প্রক্রিয়া সেটি তাকে সাহসী হতে বাধা দেয়। মুদ্রার অন্য পীঠও আছে। সাংবাদিকতার বিনিময়ে কিছু প্রত্যাশা করলে সঠিক সাংবাদিকতা করা যায় না। সাংবাদিকতার সঙ্গে যু্ক্তরা যখন হয় কোনো কিছু প্রত্যাশা করেন, নানা হিসাব-নিকাশের মধ্যে পড়ে যান, তখন তিনি মুক্ত সাংবাদিকতা করতে পারবেন না। 

কাদের গনি আরও বলেন, বিগত সরকারের সময় এই প্রবণতা বেড়েছে। সাংবাদিকদের প্লট, ফ্ল্যাট অর্থসহ নানা সুযোগ- সুবিধা দিয়ে তাদের বিবেককে কিনে নেওয়া হয়েছিল। ফলে ওইসব সাংবাদিকরা সত্যিকারের সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়ে ক্ষমতামুখী সাংবাদিকতার দিকে ধাবিত হন। দালালি করে শতশত কোটি টাকার মালিক বনে যান। কোনো কোনো সাংবাদিকের অ্যাকাউন্টে হাজার কোটি টাকা লেনদেনের খবর জাতিকে বিস্মিত করেছে। সঠিক সাংবাদিকতা ছেড়ে কিছু কিছু সাংবাদিক দলদাসে পরিণত হন। যার ফলে সাংবাদিকতার বড় ক্ষতি হয়ে গেছে।

সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, সাংবাদিক কোনো দলের না, কারও স্বার্থের না, এমনকি দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে সঠিক ও নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করবেন– এটাই প্রকৃত সাংবাদিকের কাজ।

সাংবাদিক ইউনিয়ন গাজীপুরের সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট শহিদুজ্জামান, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার, জামায়াতে ইসলামীর আমির প্রফেসর জামাল উদ্দিন, গাজীপুরের পুলিশ সুপার ড.

চৌধুরী জাবেদ সাবের, বিএফইউজে নেতা আবু হানিফ।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক ইউনিয়ন গাজীপুরের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এফইউজ ব দ কত র ব দ কর

এছাড়াও পড়ুন:

পেহেলগামে হামলার পর প্রতিশোধের আশঙ্কায় দিন কাটছে ভারতীয় মুসলিমদের


ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সম্প্রতি সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার পর মুসলিমদের ব্যাপকভাবে ধরপাকড় ও তাঁদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে। মানবাধিকারকর্মীদের আশঙ্কা, উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা পেহেলগামের হামলাকে ব্যবহার করে দেশের বৃহত্তম সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর দমন–পীড়ন আরও বৃদ্ধি করছে।

কাশ্মীরের পেহেলগাম শহরের কাছে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে একজন বাদে বাকি প্রায় সবাই হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। পর্যটক হিসেবে তাঁরা ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে পেহেলগামে গিয়েছিলেন। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে, যদিও পাকিস্তান এই অভিযোগ জোরালোভাবে নাকচ করে দিয়েছে।

পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার জবাবে ভারত সামরিকভাবে পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করে তাদের ঘাঁটি ধ্বংস করে দেওয়া হবে। পাকিস্তান সরকারের একজন মন্ত্রী জানিয়েছেন, তাঁরা বিশ্বাস করেন ভারত শিগগিরই সামরিক হামলা চালাতে পারে।

এই মুহূর্তে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার মূলত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে। যেমন আন্তসীমান্ত নদীগুলোর পানিপ্রবাহ বন্ধের হুমকি দিচ্ছে। একই সঙ্গে বিজেপি সরকার ও উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে মুসলিমদের হয়রানি করছে। তারা এটিকে ‘অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান’ বলে দাবি করছে।

মোদির বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে কর্তৃপক্ষ এই সুযোগে ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ এবং ‘রোহিঙ্গাদের’ বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। রোহিঙ্গারা মূলত মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছেন। ‘পাকিস্তানি’ বা ‘বাংলাদেশি’ তকমা অনেক সময়েই হিন্দুত্ববাদীরা ভারতের অভ্যন্তরীণ মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে থাকে।

উত্তর প্রদেশ ও কর্ণাটক—এই দুই রাজ্যে মুসলিমদের হত্যার খবর পাওয়া গেছে। গণমাধ্যমের খবরে সেগুলোকে বিদ্বেষমূলক অপরাধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী কাশ্মীরে ইতিমধ্যেই শত শত মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে। সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে যাঁদের সন্দেহ করা হচ্ছে, তাঁদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এক সরকারি কর্মকর্তার মতে, প্রায় দুই হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে, যা অনেকটা সমষ্টিগত শাস্তির মতো।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • একজন চা শ্রমিকের দিনে আয় ১৭৮ টাকা
  • বড় বন্দরে ভারী কাজ করেও চলে না সংসার 
  • নাটোরে ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেল একজনের
  • ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতির মেয়ে
  • ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতি মেয়ে
  • ৫০ পেরোনো নারীর খাদ্যাভ্যাস যেমন হতে হবে
  • যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করছে চীন
  • সেলফি’র ধাক্কায় গণস্বাস্থ্যের কর্মীর মৃত্যু, ৬ বাস আটক
  • পেহেলগামে হামলার পর প্রতিশোধের আশঙ্কায় দিন কাটছে ভারতীয় মুসলিমদের
  • সাংবাদিকদের আইনি সুরক্ষা দিতে সংলাপ অনুষ্ঠিত