Samakal:
2025-08-01@04:45:40 GMT

সরোয়ারের সততার দৃষ্টান্ত

Published: 22nd, March 2025 GMT

সরোয়ারের সততার দৃষ্টান্ত

বাজারে সবকিছুর দামই বাড়তি। চারদিকে মুনাফালোভী মানুষের ভিড়। এমন সময়ে ব্যতিক্রম কেবল সরোয়ার আলম। রমজানকে পুঁজি করে বেশির ভাগ ব্যবসায়ী যেখানে বেপরোয়া; সেখানে রোজাদারদের সুবিধার্থে প্রতি কাপ চায়ের দাম তিন টাকা কমিয়ে বিক্রি করছেন ষাটোর্ধ্ব মানবিক মানুষটি। চট্টগ্রাম নগরের কাজির দেউড়ি স্টেডিয়ামপাড়ার একপাশে ভাসমান দোকানের সামনে তিনি টাঙিয়েছেন ‘পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে ১৫ টাকার চা ১২ টাকা’সংবলিত একটি পোস্টারও। 
তাঁর এমন অনন্য উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন চট্টগ্রামের তরুণ থেকে বয়স্ক অনেকেই। সরোয়ার আলমের কাছ থেকে অসাধু ব্যবসায়ীদের শিক্ষা নেওয়া উচিত বলে মনে করছেন ক্যাবসহ সংশ্লিষ্টরা। সততার কারণে চা বিক্রির টাকায় এরই মধ্যে হজ করেছেন মানুষদের কাছে ‘মিটা কাকু’ হিসেবে পরিচিত সরোয়ার আলম। দাম কমিয়ে দেওয়ায় স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এখন প্রতিদিন তাঁর আয় কম হচ্ছে। এতে মোটেও চিন্তিত নন তিনি। বরং পবিত্র রমজানে কিছুটা কম দামে গ্রাহককে চা খাওয়ার সুযোগ করে দিতে পেরে তিনি আনন্দিত। অসাধু ব্যবসায়ীদের ভিড়ে তাঁর এমন মানবিকতা স্পর্শ করছে অনেককে। 
ভালো মানের গুঁড়া দুধ, লাল চিনি ও চা পাতা ব্যবহার করার কারণে ‘ভালো চা বিক্রেতা’ হিসেবে বেশ সুনাম রয়েছে সরোয়ারের। রোজার মাসে ইফতারের পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চা বিক্রি করেন তিনি। বর্তমানে প্রতিদিন ৪০০ কাপের বেশি চা বিক্রি হয়। 
নগরের কাজির দেউড়ির তরুণসহ অনেকের আড্ডাস্থল হিসেবে পরিচিত মুক্তমঞ্চের সড়কের পাশে ছোট একটি টেবিল আর চেয়ার নিয়ে চা বিক্রি করছেন সরোয়ার আলম। টেবিলে রাখা হয়েছে চা বানানোর নানা সামগ্রী। সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রেখেছেন চায়ের বেশকিছু কাপ। স্টেডিয়ামপাড়ার চারপাশে অন্তত অর্ধশতজন চা বিক্রি করলেও ইফতারের পর পর তাঁর দোকানেই পছন্দের চা খেতে বেশির ভাগ রোজাদারকে ভিড় করতে দেখা যায়। এর  কারণ অন্যরা বেশি লাভের আশায় চা বানাতে কনডেন্সড মিল্ক ও সাদা চিনি ব্যবহার করলেও তিনি ব্যবহার করেন পাউডার দুধ ও স্বাস্থ্যসম্মত লালচিনি। 
পাশের একটি রেস্টুরেন্টে ইফতার সেরে পাঁচ বন্ধুকে নিয়ে চা খেতে আসেন ব্যাংকার আরমান হোসেন। তিনি বলেন, ‘লেখাটি প্রথম দেখাতে বিশ্বাস করতে পারিনি। কারণ রমজান শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই বেশির ভাগ পণ্যের দাম আরেক দফা বেড়েছে। অনেকে রমজানকে পুঁজি করে চার দামও বাড়িয়ে দিয়েছে। সেখানে এই চাচা উল্টো প্রতিকাপ চায়ের দামে তিন টাকা কমিয়েছেন। নিঃসন্দেহে তাঁর এমন উদ্যোগ সাধুবাদ পাওয়ার মতো। তাঁকে দেখে মনে হয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীর ভিড়ে এখনও ভালো মানুষ আছেন।’ তরুণ আইনজীবী মো.

ফোরকান রাসেল বলেন, ‘রমজান উপলক্ষে প্রতি কাপ চায়ের দামে তিন টাকা কমিয়েছেন তিনি। এখানে টাকাটা সামান্য হলেও মুনাফালোভী ব্যবসায়ীর ভিড়ে তাঁর এমন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে ভালো।’ গণমাধ্যমকর্মী এফএম মিজানুর রহমান বলেন, ‘ইচ্ছা থাকলে সৎ থেকেও ভালো কিছু করা যায়। তাঁর বড় উদাহরণ তিনি। কারণ চা বিক্রি করে তিনি এরইমধ্যে হজ পালন করেছেন। চা খেতে আসা বেশির ভাগ মানুষই তাঁর এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন।’
সরোয়ার আলম বলেন, ‘বর্তমান বাজারে চাল, ডাল, তেলসহ প্রায় ভোগ্যপণ্যেরই দাম চড়া। ঈদ পোশাকের দামও বাড়তি। এই অবস্থায় নিদারুণ কষ্ট পাচ্ছেন বেশিরভাগ মানুষ। যাদের একটি বড় অংশ আবার খেটে খাওয়া, দিনমজুর ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত। বিষয়টি উপলব্দি করে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রতি কাপ চায়ের দামে তিন টাকা কমিয়ে দিয়েছি। এই তিন টাকাও অনেকের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তির হবে বলে বিশ্বাস আমার।’
 তিনি আরও বলেন, ‘রমজান মাসে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে ভোগ্যপণ্যসহ সবকিছুর দাম কমিয়ে দেওয়া হয়। সেই বিষয়টি উপলব্দি করে নিজেও কিছু করতে চেয়েছি। মানুষকে দেখাতে বা কারও বাহবা পেতে দাম কমাইনি।’
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘মুনাফালোভীদের ভিড়ে চা বিক্রেতা সরোয়ার আলম ব্যতিক্রম। তাঁর কাছে থেকে অন্যদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।’ 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইফত র ব যবস য় রমজ ন র এমন

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ