বাজারে সবকিছুর দামই বাড়তি। চারদিকে মুনাফালোভী মানুষের ভিড়। এমন সময়ে ব্যতিক্রম কেবল সরোয়ার আলম। রমজানকে পুঁজি করে বেশির ভাগ ব্যবসায়ী যেখানে বেপরোয়া; সেখানে রোজাদারদের সুবিধার্থে প্রতি কাপ চায়ের দাম তিন টাকা কমিয়ে বিক্রি করছেন ষাটোর্ধ্ব মানবিক মানুষটি। চট্টগ্রাম নগরের কাজির দেউড়ি স্টেডিয়ামপাড়ার একপাশে ভাসমান দোকানের সামনে তিনি টাঙিয়েছেন ‘পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে ১৫ টাকার চা ১২ টাকা’সংবলিত একটি পোস্টারও।
তাঁর এমন অনন্য উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন চট্টগ্রামের তরুণ থেকে বয়স্ক অনেকেই। সরোয়ার আলমের কাছ থেকে অসাধু ব্যবসায়ীদের শিক্ষা নেওয়া উচিত বলে মনে করছেন ক্যাবসহ সংশ্লিষ্টরা। সততার কারণে চা বিক্রির টাকায় এরই মধ্যে হজ করেছেন মানুষদের কাছে ‘মিটা কাকু’ হিসেবে পরিচিত সরোয়ার আলম। দাম কমিয়ে দেওয়ায় স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এখন প্রতিদিন তাঁর আয় কম হচ্ছে। এতে মোটেও চিন্তিত নন তিনি। বরং পবিত্র রমজানে কিছুটা কম দামে গ্রাহককে চা খাওয়ার সুযোগ করে দিতে পেরে তিনি আনন্দিত। অসাধু ব্যবসায়ীদের ভিড়ে তাঁর এমন মানবিকতা স্পর্শ করছে অনেককে।
ভালো মানের গুঁড়া দুধ, লাল চিনি ও চা পাতা ব্যবহার করার কারণে ‘ভালো চা বিক্রেতা’ হিসেবে বেশ সুনাম রয়েছে সরোয়ারের। রোজার মাসে ইফতারের পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চা বিক্রি করেন তিনি। বর্তমানে প্রতিদিন ৪০০ কাপের বেশি চা বিক্রি হয়।
নগরের কাজির দেউড়ির তরুণসহ অনেকের আড্ডাস্থল হিসেবে পরিচিত মুক্তমঞ্চের সড়কের পাশে ছোট একটি টেবিল আর চেয়ার নিয়ে চা বিক্রি করছেন সরোয়ার আলম। টেবিলে রাখা হয়েছে চা বানানোর নানা সামগ্রী। সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রেখেছেন চায়ের বেশকিছু কাপ। স্টেডিয়ামপাড়ার চারপাশে অন্তত অর্ধশতজন চা বিক্রি করলেও ইফতারের পর পর তাঁর দোকানেই পছন্দের চা খেতে বেশির ভাগ রোজাদারকে ভিড় করতে দেখা যায়। এর কারণ অন্যরা বেশি লাভের আশায় চা বানাতে কনডেন্সড মিল্ক ও সাদা চিনি ব্যবহার করলেও তিনি ব্যবহার করেন পাউডার দুধ ও স্বাস্থ্যসম্মত লালচিনি।
পাশের একটি রেস্টুরেন্টে ইফতার সেরে পাঁচ বন্ধুকে নিয়ে চা খেতে আসেন ব্যাংকার আরমান হোসেন। তিনি বলেন, ‘লেখাটি প্রথম দেখাতে বিশ্বাস করতে পারিনি। কারণ রমজান শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই বেশির ভাগ পণ্যের দাম আরেক দফা বেড়েছে। অনেকে রমজানকে পুঁজি করে চার দামও বাড়িয়ে দিয়েছে। সেখানে এই চাচা উল্টো প্রতিকাপ চায়ের দামে তিন টাকা কমিয়েছেন। নিঃসন্দেহে তাঁর এমন উদ্যোগ সাধুবাদ পাওয়ার মতো। তাঁকে দেখে মনে হয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীর ভিড়ে এখনও ভালো মানুষ আছেন।’ তরুণ আইনজীবী মো.
সরোয়ার আলম বলেন, ‘বর্তমান বাজারে চাল, ডাল, তেলসহ প্রায় ভোগ্যপণ্যেরই দাম চড়া। ঈদ পোশাকের দামও বাড়তি। এই অবস্থায় নিদারুণ কষ্ট পাচ্ছেন বেশিরভাগ মানুষ। যাদের একটি বড় অংশ আবার খেটে খাওয়া, দিনমজুর ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত। বিষয়টি উপলব্দি করে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রতি কাপ চায়ের দামে তিন টাকা কমিয়ে দিয়েছি। এই তিন টাকাও অনেকের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তির হবে বলে বিশ্বাস আমার।’
তিনি আরও বলেন, ‘রমজান মাসে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে ভোগ্যপণ্যসহ সবকিছুর দাম কমিয়ে দেওয়া হয়। সেই বিষয়টি উপলব্দি করে নিজেও কিছু করতে চেয়েছি। মানুষকে দেখাতে বা কারও বাহবা পেতে দাম কমাইনি।’
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘মুনাফালোভীদের ভিড়ে চা বিক্রেতা সরোয়ার আলম ব্যতিক্রম। তাঁর কাছে থেকে অন্যদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইফত র ব যবস য় রমজ ন র এমন
এছাড়াও পড়ুন:
দহন থেকে জংলি
‘আমি নিয়মিত অনেক চিত্রনাট্য পাচ্ছি। নিয়মিত সেসব সিনেমা করলে প্রচুর টাকা কামাতে পারব। ফিন্যান্সিয়ালি জায়গাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দর্শক আমাকে যেভাবে দেখতে চাচ্ছেন, তেমন গল্প পাচ্ছি না। দর্শক-প্রত্যাশার চেয়ে ভালো কিছু দিতে চাই। যখন সামগ্রিক চিন্তা করি, তখন ভাবতে হয় আমি কতটা আয় করলাম তার চেয়েও দর্শকের সামনে কীভাবে আসছি, সেটি মুখ্য। এটি একটি প্যাকেজ। মাঝে একটি-দুটি গল্প পছন্দ হয়। সেসব টিমের যে অবস্থা, বাজেট সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ভালো গল্প তুলে আনা কঠিন হবে। তখন আমি না করে দিই। আমি চাইছি নিজের মতো করে কাজ করতে। জীবনে অনেক সিনেমা করতে হবে, এমন চিন্তা নেই। আমার মতো করে অল্প কিছু কাজ করে যেতে চাই।’ বলছিলেন সিয়াম আহমেদ।
গেল ঈদে মুক্তি পেয়েছে সিয়াম আহমেদ অভিনীত সিনেমা ‘জংলি’। যে সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নায়কের আবেগ ও পরিশ্রমের দীর্ঘ গল্প। সিনেমাটি করতে একচুলও ছাড় দেননি সিয়াম। ফলাফল হিসেবে পেয়েছেন দর্শকের অবারিত ভালোবাসা। জংলি মুক্তির পর তাই গল্পটি হয়ে উঠেছে সবার। দর্শকরা হলে গিয়ে কেঁদেছেন, গল্পে বুঁদ হয়ে থেকেছেন। করেছেন সিয়াম ও তাঁর টিমের প্রশংসা।
সিয়াম বললেন, ‘এ সিনেমায় আমি দীর্ঘ সময় দিয়েছি। সিনেমার জন্য চুলদাড়ি বড় করেছি। একটি সিনেমার জন্য আমার পাগলামি নিয়ে মা-বাবার মনে হয়তো প্রশ্ন ছিল, ছেলেটি চুল-দাড়ি বড় করে কী করছে? কী করেছি, এটি তো তাদের বোঝানো যায় না। তবে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, সিনেমাটি মুক্তির পরে গল্পটি তাদের টাচ করবে। কারণ, গল্পটিই এমন, এটি প্রথম যদি কাউকে টাচ করে, সেটি সন্তানের মা-বাবাদের। যে কারণে তাদের একসঙ্গে হলে নিয়ে কাছ থেকে অনুভূতি জানার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত মা-বাবার কাছ থেকে সেরা ফিডব্যাক পেয়েছি। বাবা-মেয়ের গল্পটি দেখে তারা ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু আমার বাবা-মা নন, অন্য মা-বাবাদের কাছেও গল্পটি নিজেদের হয়ে উঠেছে। তারা সিনেমাটি দেখে কেঁদেছেন। হল রিঅ্যাকশনের সেসব ভিডিও সবাই দেখেছেন। সব মিলিয়ে আমরা সফল। আমাদের জংলি সফল।’
মুক্তির পর থেকে ‘জংলি’ সিনেমার এগিয়ে যাওয়ার গ্রাফ দেখলে শুধু দর্শকের ভালোবাসায় সফল নয়, ব্যবসায়িকভাবেও সিনেমাটি যে সফল তার চিত্র বিদ্যমান। মাত্র ৮টি শো দিয়ে শুরু হওয়া সিনেমাটি ঈদের এতদিন পরও মাল্টিপ্লেক্সে ত্রিশটির মতো শো নিয়ে দাপিয়ে চলছে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও জংলি হয়ে উঠেছে দর্শকদের সিনেমা।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টাইগার মিডিয়ার কর্ণধার জানিয়েছেন, জংলি প্রায় ছয় কোটির (গ্রস) ক্লাবে প্রবেশ করেছে।
ঈদে মুক্তির পর থেকে ক্রমশ দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘জংলি’। এমনকি, দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মন জয় করে কানাডা, আমেরিকা ও ইউকে’র ৪০টি থিয়েটারে মুক্তি পেয়েছে ‘জংলি’। গত ২৫ এপ্রিল থেকে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো-এর পরিবেশনায়, ঈদের সিনেমাগুলোর মধ্যে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি থিয়েটারে একযোগে মুক্তি পেয়েছে এ সিনেমাটি। কানাডা ও আমেরিকার বক্স অফিসে প্রথম ৩ দিনের গ্রস ৩৫,০০০ ডলার আয় করে শুভসূচনা করেছে ‘জংলি’।
ঈদে আরও অনেক ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জংলি বিশেষ হয়ে উঠেছে কেবল বাবা-মেয়ের গল্পের কারণে। সঙ্গে সিয়ামের নজরকাড়া অভিনয়। নৈঋতার পাখি হয়ে ওঠার দারুণ চেষ্টা। দিমিত্রি থে স্টোনহার্ট নামে এক মনীষী বলেছেন, ‘একজন বাবা বলেন না যে তিনি তোমাকে ভালোবাসেন; বরং তিনি দেখিয়ে দেন যে, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন’ জংলি সিনেমায় সিয়াম সেটি বোঝাতে পেরেছেন। ফলে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে সবার।
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন– ‘পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।’
সিয়াম তাঁর জীবনের সেই দৈত্যকে জাগাতে পেরেছেন। পেরেছেন বলেই হয়তো আজ তিনি সাধারণ সিয়াম থেকে নায়ক সিয়াম হয়ে উঠেছেন। সিয়ামের যাত্রাটা শুরু বেশ আগে হলেও পুরোপুরি শুরু হয় ‘দহন’ সিনেমার মাধ্যমে। রায়হান রাফী পরিচালিত এ সিনেমাটির মাধ্যমে সিয়াম নাটক থেকে পুরোপুরি চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে ওঠেন। সে যাত্রা এখনও চলছে। প্রথম সিনেমায় যে সিয়ামকে সবাই দেখেছেন, জংলির সেই সিয়াম যেন আকাশ-পাতাল। তখন সিয়াম ছিলেন তরুণ, এই সিয়াম এখন বাবা। পর্দায় ও বাস্তবে দুই জায়গাতে দারুণ এক বাবা হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কী? প্রশ্ন রাখলে নায়ক বলেন, ‘আমি নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাই। যারা আমার আগের কাজ দেখেছেন, তারা যেন বলেন, আগের কাজকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছি। আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া কঠিন।’