উয়েফা ন্যাশন্স লিগের সেমিফাইনালে উঠেছে ফ্রান্স। রোববার দিবাগত রাতে কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে টাইব্রেকারে ৫-৪ ব্যবধানে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে শেষ চারে নাম লেখায় ফ্রান্স।

প্রথম লেগে ২-০ ব্যবধানে হার মানা ফ্রান্স ঘরের মাঠে এদিন ফিরতি লেগ ২-০ জিতে। তাতে ২-২ সমতা নিয়ে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানেও সমতা না ভাঙলে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে এবং টাইব্রেকারে জয় নিশ্চিত করে ফ্রান্স।

গত আসরের ফাইনালে স্পেনের কাছে টাইব্রেকারে হেরে গিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। এবারও একই পরিণতি বরণ করতে হলো তাদেরকে।

আরো পড়ুন:

মদ্রিচের সামনে মুখ থুবড়ে পড়লেন এমবাপে

বিশ্বকাপ ফাইনালে হারের প্রতিশোধ নিল ক্রোয়েশিয়া

নির্ধারিত সময়ে স্টেড দে ফ্রাঁসে ফ্রান্সের হয়ে গোল করেন মাইকেল ওলিজ ও উসমান দেম্বেলে। বৃহস্পতিবারের প্রথম লেগে ২-০ গোলে পিছিয়ে থাকার পর এই দুই গোলেই তারা ঘুরে দাঁড়ায়। অতিরিক্ত সময়েও কোনো দল গোল করতে না পারায় ম্যাচ গড়ায় পেনাল্টি শুটআউটে। সেখানে ফ্রান্সের গোলরক্ষক মেইনান ক্রোয়েশিয়ার মার্টিন বাতুরিনা ও জোসিপ স্টানিসিচের শট আটকে দেন। এছাড়া ক্রোয়েশিয়ার ফ্রাঞ্জো ইভানোভিচও গোল মিস করেন।  

ফ্রান্সের হয়ে অবশ্য জুল কুন্দে ও থিও হার্নান্দেজ পেনাল্টি মিস করলেও শেষ পর্যন্ত সপ্তম শট নিতে এসে দাইওত উপামেকানো গোল করলে জয় নিশ্চিত হয়। তখনই স্টেড দে ফ্রাঁসের ৭৭ হাজার ৫০২ দর্শক উল্লাসে ফেটে পড়ে।

ফ্রান্স অধিনায়ক কিলিয়ান এমবাপ্পে ম্যাচের পর বলেন, “আমরা জানতাম, আজকের রাতটা আমাদের হতে পারে। আমাদের আত্মবিশ্বাস ছিল। আর পেনাল্টিতে আমাদের দুর্দান্ত এক গোলরক্ষক আছে, যিনি পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন।”

ক্রোয়েশিয়া কোচ জ্লাতকো দালিচ বলেন, “এটা আমাদের জন্য খুব কঠিন রাত। প্রথম লেগের পারফরম্যান্স আমরা ধরে রাখতে পারিনি। তবে, এটা আমাদের জন্য ভালো অভিজ্ঞতা। এখন লক্ষ্য বিশ্বকাপ বাছাই, এবং আমি বিশ্বাস করি আমরা তা পারব।”

ক্রোয়েশিয়া এখন ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে মনোযোগ দেবে। তারা জুন মাসে গ্রুপ ‘এল’-এর ম্যাচগুলো শুরু করবে, যেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে রয়েছে চেক রিপাবলিক, মন্টেনেগ্রো, ফারো দ্বীপপুঞ্জ ও জিব্রাল্টার।

২০২১ সালের নেশন্স লিগ চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স এবার সেমিফাইনালে পেয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে। আগামী ৫ জুন জার্মানির স্টুটগার্টে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে।

ঢাকা/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল আম দ র ফ ইন ল

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনায় এক মাসে ১৩ লাশ উদ্ধার, বাড়ছে উদ্বেগ

বাড়িতে ঝগড়া চলছিল বড় ভাই ও ভাবির। ছোট ভাই এসে ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বড় ভাই ছোট ভাইয়ের মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ধারালো বঁটি দিয়ে ছোট ভাইকে হত্যা করেন। পরে বড় ভাই শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ মে, খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের উলা গ্রামে।

এর আগে ২৭ মে কয়রার ইসলামপুর গ্রামের কয়রা নদীর চর থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় আবদুল মজিদ (৬২) নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ৮ জুন কয়রার কাছারিবাড়ি বাজার-সংলগ্ন পুকুর থেকে নমিতা (৪০) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

১০ জুন কয়রা সদরের গোবরা সড়কে এক ভ্যানচালকের সঙ্গে এক মোটরসাইকেলচালকের কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অন্তত ১৫ জন। ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলাও হয়েছে। এ ছাড়া কথা-কাটাকাটির জেরে কয়রার পল্লীমঙ্গল গ্রামে গত তিন দিনে কয়েক দফা মারামারি, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

অসন্তোষ-দ্বন্দ্বের জেরে কয়রা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা–সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ১০ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত এক মাসে খুলনার ১০টি থানা এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ ১৩টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।

কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান কমে যাওয়ায় মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। মূল্যবোধ ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। এতে খুনখারাবি বাড়ছে। একসময় সমাজের একজনের ভালোতে সবাই আনন্দ পেতেন। নেতিবাচক দিকগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতেন। এখন সেই ব্যবস্থা উঠেই গেছে বলা যায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে প্রভাববলয় সৃষ্টি করতেও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।

৩ জুন খুলনা শহরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সবুজ হাওলাদার (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ৪ জুন খুলনা সদর থানার মতিয়াখালী খালের মধ্যে আটকে ছিল এক নারীর মরদেহ। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ওই নারীর পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুলে দাফন করা হয়। গত ৯ জুন বিকেলে রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী নদীতে পাওয়া যায় অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ। মরদেহের শ্বাসনালিতে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। রূপসা নৌ পুলিশের ওসি আবুল খায়ের বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড।

এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রহস্য উদ্‌ঘাটন ও অপরাধী শনাক্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই অপরাধ বেড়ে চলেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধ বেড়ে চলেছে।

কয়রা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে প্রতিটি ঘটনায় পুলিশও তাৎক্ষণিকভাবে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যে বিষয়গুলো পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্য দিয়ে সমাধান করা যায়, সেখানে খুনাখুনি, অস্থিরতা, মামলা-হামলার মধ্য দিয়ে একধরনের বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে; যা সবার জন্যই অকল্যাণকর ও ভয়ানক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ