টুইটারের সেই বিখ্যাত নীল পাখির লোগো নিলামে বিক্রি হলো, দাম উঠল ৩৪,৩৭৫ ডলার
Published: 24th, March 2025 GMT
ইলন মাস্কের হাতে যাওয়ার পর টুইটারের নাম বদলে হয়েছে এক্স। সেই টুইটারের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক ছিল তার সেই বিখ্যাত নীল লোগো। নাম বদলের পাশাপাশি এই সামাজিক মাধ্যমের লোগোও বদলে ফেলেছেন ইলন মাস্ক। এবার সেই নীল লোগো নিলামে তুলে বিক্রি করা হয়েছে।
সানফ্রান্সিসকোয় অবস্থিত টুইটারের সদর দপ্তর আলোকিত করে থাকত সেই নীল পাখির লোগো। নীল রঙের পাখির লোগোকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে আরও আগেই। সম্প্রতি সেই লোগো নিলামে তোলা হয়। সেখানে টুইটারের ‘নীল পাখি’র দাম উঠেছে প্রায় ৩৪ হাজার ৩৭৫ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ সেই নীল পাখিটিও আর রাখলেন না ইলন মাস্ক। খবর সিএনবিসি।
টুইটারের লোগোতে থাকা বিখ্যাত ওই পাখির নাম ‘ল্যারি’। কিংবদন্তি মার্কিন বাস্কেটবল খেলোয়াড় ল্যারি জো বার্ডের নাম অনুসারে টুইটারের লোগোর নামকরণ করা হয়েছিল। বিশালাকৃতির এই ব্লু বার্ড বা নীল পাখির ওজন ছিল ২৫৪ কেজি, উচ্চতায় যা ছিল ১২ ফুট ও চওড়ায় ৯ ফুট।
বিষয়টি হলো, টুইটার ইলন মাস্কের হাতে যাওয়ার পর তার প্রায় সবকিছুই বদলে ফেলেছেন ইলন মাস্ক। ছাঁটাই করেছেন বিপুলসংখ্যক কর্মী। কার্যালয়ের সজ্জায়ও এনেছেন পরিবর্তন। টুইটারের অফিসে ব্লু বার্ডের লোগোর পরিবর্তে জায়গা করে নিয়েছে ইংরেজি x অক্ষরের লোগো। এই লোগোতে নীলের চেয়ে কালো রং বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। এর আগে মাস্ক টুইটার সম্পর্কিত বিভিন্ন জিনিস নিলামে তুলেছেন। টুইটার কার্যালয়ের আসবাব এবং রান্নাঘরের সরঞ্জামও নিলামে তোলা হয়েছিল।
টুইটারের সেই বিখ্যাত নীল পাখির লোগোর নিলাম হয়েছে আরআর অকশন নামের কোম্পানির মাধ্যমে। বিভিন্ন দুর্লভ জিনিসের নিলাম করে এই কোম্পানি। সংস্থার ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ব্লু বার্ড বা নীল পাখির যতটা দাম আশা করা হয়েছিল, নিলামে দাম উঠেছে তার কিছুটা কম। তবে কে টুইটারের নীল পাখি কিনেছেন, তা জানানো যায়নি।
৪ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলারে টুইটার কিনে নেন মার্কিন ধনকুবের ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক। ২০২২ সালের ২৮ অক্টোবর এই বেচাকেনা সম্পন্ন হয়।
২০২২ সালের জানুয়ারি থেকেই টুইটারের শেয়ার কেনা শুরু করেন মাস্ক। এপ্রিলের মধ্যে তিনি প্রতিষ্ঠানটির ৯ দশমিক ১ শতাংশ শেয়ারের মালিক হন। টুইটার মাস্ককে তাদের পরিচালনা পর্ষদে যোগদানের আমন্ত্রণ জানায়। প্রথমে তিনি রাজি হয়ে পরে এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। অযাচিতভাবে ১৪ এপ্রিল টুইটার কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দেন ইলন মাস্ক। টুইটার পরিচালনা পর্ষদ এই প্রস্তাবে পাত্তা দেয়নি। তবে শেষ পর্যন্ত ২৫ এপ্রিল ইলন মাস্কের ৪ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলারে টুইটার কেনার প্রস্তাব গৃহীত হয় পরিচালনা পর্ষদে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ট ইট র র স ইলন ম স ক প রস ত ব ট ইট র ক
এছাড়াও পড়ুন:
ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তির বাধা দূর করতে হবে
দেশে রোগমুক্ত সুস্থ প্রজন্ম গড়ে তুলতে ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ড্রামে খোলা ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ একটি বড় বাধা। একইসাথে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধকরণ ও গুণগত প্যাকেজিং অত্যন্ত জরুরি।
রাজধানীর বিআইপি কনফারেন্স রুমে সোমবার (২৮ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত “সবার জন্য ভিটামিন সমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল: অগ্রগতি, বাধা ও করণীয়” শীর্ষক সাংবাদিক কর্মশালায় এসব বিষয় তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা।
গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এই কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত ২৬ জন সাংবাদিক অংশ নেন।
কর্মশালায় জানানো হয়, জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপ ২০১১-১২ অনুযায়ী, প্রাক্-বিদ্যালয়গামী প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন ভিটামিন ‘এ’ এবং দুইজন শিশু ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিতে ভুগছে। ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন, ২০১৩ অনুযায়ী ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ ব্যতীত ভোজ্যতেল বাজারজাত করা নিষিদ্ধ। আইসিডিডিআর,বি-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাজারে মোট ভোজ্যতেলের ৬৫ শতাংশই ড্রামে বিক্রি হয়। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ তেলে কোনো ভিটামিন ‘এ’ নেই, আর ৩৪ শতাংশ তেলে রয়েছে প্রয়োজনের চেয়ে কম মাত্রায়। মাত্র ৭ শতাংশ ড্রামের খোলা তেলে আইন অনুসারে ভিটামিন ‘এ’–এর নির্ধারিত পরিমাণ পাওয়া গেছে। ফলে সাধারণ মানুষ আইনটির সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
কর্মশালায় জানানো হয়, নন-ফুড গ্রেড উপকরণে তৈরি ড্রাম দিয়ে ভোজ্যতেল পরিবহন করা হয়-যেগুলো আগে কেমিক্যাল, লুব্রিকেন্ট/মবিল বা অন্যান্য শিল্পপণ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়েছে। এ ধরনের ড্রামে সংরক্ষিত খোলা ভোজ্যতেল জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, পাশাপাশি এতে ভেজাল মেশানোর আশঙ্কাও থাকে। এই পুরোনো ড্রামগুলোতে কোনো লেবেল বা উৎস সম্পর্কিত তথ্য না থাকায় তেলের উৎপত্তিস্থল বা সরবরাহকারীকে শনাক্ত করা যায় না। তাই খোলা ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ আইন বাস্তবায়নে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কর্মশালায় জানানো হয়, জুলাই ২০২২ এর পর থেকে ড্রামে খোলা সয়াবিন তেল এবং ডিসেম্বর ২০২২ এর পর থেকে খোলা পাম তেল বাজারজাতকরণ বন্ধে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যায়নি। তাই নিরাপদ ভোজ্যতেল ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে শিল্প মন্ত্রণালয়, বিএসটিআই, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন।
ভিটামিন ‘এ’-এর ঘাটতি অন্ধত্ব, গর্ভকালীন মাতৃমৃত্যুসহ নানা শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে। অন্যদিকে, ভিটামিন ‘ডি’-এর অভাব রিকেটস ও হাড় ক্ষয়ের পাশাপাশি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের মতো অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এ প্রেক্ষাপটে, ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’ সমৃদ্ধকরণ একটি সাশ্রয়ী ও কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এতে সাধারণ মানুষ প্রতিদিনের খাবারের মাধ্যমে সহজেই এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন পেতে পারে।
এছাড়াও কর্মশালায় ভোজ্যতেলে গুণগতমানের প্যাকেজিং নিশ্চিতের উপরও জোর দেওয়া হয়। সাধারণত সূর্যরশ্মিসহ যেকোন আলোর সংস্পর্শে ভিটামিন ‘এ’ নষ্ট হতে থাকে এবং একপর্যায়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। ভোজ্যতেল বাজারজাত হয় যেসব বোতলে সেগুলোর অধিকাংশই আলো প্রতিরোধী না হওয়ায় ভোজ্যতেলের গুণগত ও পুষ্টিমান হ্রাস পায়। সে কারণে ভোজ্যতেলের প্যাকেজিংয়ের জন্য আলো প্রতিরোধী অস্বচ্ছ উপাদান ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
কর্মশালায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর-এর কার্যক্রম ও গবেষণাগার বিভাগের পরিচালক (উপসচিব) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন; ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের কনসালটেন্ট সাবেক অতিরিক্ত সচিব মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার; ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট আবু আহমেদ শামীম; দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর ডেপুটি এডিটর সাজ্জাদুর রহমান এবং প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের।
কর্মশালায় গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা তুলে ধরেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের লার্জ স্কেল ফুড ফর্টিফিকেশন কান্ট্রি এডভোকেসি বাংলাদেশ-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. রীনা রাণী পাল এবং প্রজ্ঞা'র কর্মসূচি প্রধান হাসান শাহরিয়ার।
ঢাকা/হাসান/সাইফ