বিয়ের চাপ দেওয়ায় তরুণীকে গলাটিপে হত্যা
Published: 24th, March 2025 GMT
চট্টগ্রামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচ থেকে উদ্ধার করা তরুণীর মরদেহের পরিচয় মিলেছে। তার নাম জ্যোৎস্না বেগম।
পুলিশ জানিয়েছে, বিয়ে করতে চাপ দেওয়ায় প্রেমিকের হাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তিনি। এ ঘটনায় নয়ন বড়ুয়া নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আজ সোমবার চট্টগ্রাম মহানগরীর চান্দগাঁও থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার নয়ন বড়ুয়া রাউজান উপজেলার পশ্চিম গহিরা গ্রামের মৃত মিলন বড়ুয়ার ছেলে।
পিবিআই সূত্র জানায়, নয়ন বড়ুয়া ও জ্যোৎস্না বেগম কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলে তারা গত ফেব্রুয়ারিতে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে নগরের বন্দরটিলা এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেন। সম্প্রতি জ্যোৎস্না নয়নকে ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করার জন্য চাপ দেন। কিন্তু তিনি বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান। এতে দু’জনের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হয়। শনিবার সকালে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। এর জেরে জ্যোৎস্নাকে গলাটিপে হত্যা করেন নয়ন। পরে লাশটি কম্বল দিয়ে মুড়িয়ে প্লাস্টিকের বস্তার ভরে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে লালখানবাজার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচে ফেলে যান তিনি।
গত শনিবার নগরের লালখানবাজার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচ থেকে জ্যোৎস্নার বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত জ্যোৎস্না নোয়াখালীর কবিরহাট থানার নলুয়ারচর গ্রামের আবুল কালামের মেয়ে।
পিবিআইর চট্টগ্রাম মেট্রোর পুলিশ পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় জ্যোৎস্নার বড় বোন তৈয়বা বেগম বাদী হয়ে খুলশী থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মরদেহের পরিচয় শনাক্তের পর আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি হত্যার কথা স্বীকার করেছে। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
তাণ্ডব হচ্ছে ডায়মন্ড নেকলেসের সবুজ লকেট
তান্ডব সিনেমা কি সত্যিই তান্ডব বইছে নাকি অশ্বডিম্ব ছাড়া কিছুই না? সবই মিডিয়ার হাইপ? মোটাদাগে তান্ডবের প্রধান দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করা যায়। সিনেমার গল্পে দেখা যায়, প্রতিশোধ নিতে একদল গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিদের জিম্মি করে স্বাধীনে টিম (শাকিব)। জিম্মিদের সাথে আলোচনা হবে টিভি লাইভে, যেনো দেশবাসী সরাসরি জানতে পারে। কেনো জিম্মি করলো, শুরু হয় শাকিবের গ্রামের গল্প। প্রেম ভালোবাসা, পাওয়া না পাওয়া, আশা-নিরাশা- হতাশার গল্প পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়। এর মাঝে উঠে আসে, বেকারত্ব, মামা-চাচার জোর না থাকলে চাকরি না পাওয়ার চিত্র। এই সমস্যার মূলে রয়েছে রাজনীতিবীদ, প্রশাসন, টিভি চ্যানেল ও বড় ব্যবসায়ীরা। এই সুবিধাবাদিশ্রেনি সিন্ডিকেট করে সব কিছু নিজেদের দখলে রাখে, বঞ্চিত হয় দেশের সাধারণ মানুষ। এই হল তাণ্ডবের গল্প। তবে গল্প এখানেই শেষ নয়, এখান থেকে শুরু মাত্র।
সিনেমার শেষের দিকে একবার মনে হতে পারে গল্প শেষ, কিন্তু নিশোর আগমন বাড়তি টুইস্ট যোগ করে। তান্ডবের সিক্যুয়ালে শাকিব, নিশোর লড়াই বেশ জমজমাট হবে, এমন ইংগিত দেওয়া হয়েছে এতে। গল্পে সাবিলা নূরের ট্রাজেডি খুব একটা যুক্ত সঙ্গত ছিল না। পরিণতি ভিন্ন হতে পারতো। গল্পে ইমপেক্ট পড়ে নাই সিয়ামের ক্যামিও চরিত্র। তবে সিনেমা তার চরিত্রে সিয়াম অসাধারণ অভিনয় করেছে। অনেক তারকার ভীড়ে তান্ডবের সব আলো কেড়ে নিয়ে একাই জ্বলজ্বল করছেন শাকিব খান।
চেনা চেনা লাগে: ক্রাইম থ্রিলার জনরার সিনেমা তাণ্ডব। গল্পে থ্রিল আছে তবে ইউনিক না। থ্রিলগুলো খানিকটা ধার করা বলা যায়। কারো কারো মনে হতে পারে, বহু সিনেমার বহু দৃশ্যের সুষম মিশ্রণ। দৃশ্যটি দেখলে, চরিত্রের ডিটেইলটা চেনা চেনা লাগতে পারে। বিশেষ করে গল্পের শুরুতে সবাই মুখোশ পড়ে আসে। এটি বহুল প্রচারিত দৃশ্য কিন্তু ভালো লাগবে। গল্পে শাকিব খান মুখোশ পড়ে যে ভাবে হাত দিয়ে উড়ার মতো করে আসে, এই দৃশ্যও দর্শকদের আনন্দিত করেছে, সিনেমা হলে উল্লাস করেছে। তবে গল্পাংশ, চরিত্রায়ণ যেখান থেকেই মিল থাকুক না কেনো, সব মিলিয়ে সিনেমাটি দেখতে দারুণ লাগবে।
গান: তিনটি গানের মধ্যে “লিচুর বাগান” গানটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই গানের বিশেষ দিক হলো, বাংলা লোকগানের আধুনিক মিউজিক আয়োজন। এটা দারুণ ব্যাপার। তবে এই ধরণের গান কোক স্টুডিও বাংলায় বহুবার ব্যবহৃত হয়েছে। গল্পের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না এই গান। যদিও গানটি মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্ট খুব ভালো ছিল। একটি টাইটেল ট্রাক ছিল, সেই গানের শব্দগুলো বুঝতে সমস্যা হয়েছে। রোমান্টিক গানটা শ্রুতিমধুর ছিল।
অভিনয় ও চরিত্রায়ণ: শাকিব খান দারুণ অভিনয় করেছেন। একটা গ্রামের ছেলে আরেকটা গ্যাংস্টার। দুইটা কন্ঠ দুই রকম ছিল। বডি ল্যাগুয়েজ, হাঁটা চলা, কথা বলার ধরণে ভিন্নতা ছিল। গ্যাংস্টারে খষখষে কন্ঠ হওয়াতে চরিত্রের মধ্যে ডায়মেনশন এসেছে। শাকিব দিন দিন অভিনয়ে গড হয়ে উঠছে যেনো। সাবিলা নূর এই চরিত্রের জন্য খুবই মানানসই। এক ঝাঁক তারকা অভিনয় করেছে সিনেমাটিতে। সবাই চরিত্র অনুযায়ী ভালো অভিনয় করেছেন। তবে আলাদা করে বলতে হয় জয়া আহসানের কথা। জয়া ঠিকই নিজের চরিত্রে সেরাটা দিয়েছে, এবং তাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে কল্পনা করার সুযোগ ছিল না। আফজাল হোসেন, শহীদুজ্জামান সেলিম, গাজী রাকায়েত, নাঈম, সালাউদ্দীন লাভলু, ফজলুর রহমান বাবু, সাইফুল জার্নাল, রোজী সিদ্দিকী নিজ নিজ চরিত্রে দারুণ। যদিও কারো কারো চরিত্র প্রস্ফুটিত হয়নি ঠিক মতো।
সেট, লাইট, কস্টিউম: তান্ডবের সেট লাইট দারুণ। দৃশ্যে আয়োজন, আলোর ব্যবহার খুবই মানানসই। টিভি চ্যানেলের সেট বিশ্বাসযোগ্য ছিল। চরিত্রানুযায়ী পোশাক ব্যবহৃত হয়েছে। বিশেষ করে শাকিব, জয়া, সাবিলার পোশাক সুন্দর লেগেছে। অন্যান্য চরিত্রের পোশাকও ছিল দারুণ।
আবহ সঙ্গীত, সংলাপ: সংলাপ দারুণ। কিছু কিছু গালি দর্শকদের আনন্দ দিয়েছে। গল্পের সাথে গালিগুলো যথাযথ ভাবেই মানিয়ে গেছে, তাই অশ্লীল লাগে নাই। আবহ সঙ্গীত মনে দাগ না কাটলেও খারাপ লাগে নাই। গল্পের মুড বুঝেই আবহ সঙ্গীত এগিয়ে গেছে। সংলাপে যখন দেশের কথা বলে, তখন বুকিশ লাগে নাই, শুনতে ভালো লেগেছে।
নির্মাণ: আধুনিক নির্মাণের সকল বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা গেছে। শট ডিজাইন, ট্যাকিং, ক্লোজ আপের ব্যবহারে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে পরিচালক। মুভমেন্ট শটগুলো গল্পকে গতিশীল করতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। জনবহুল বড় বড় দৃশ্যগুলো ঠিকঠাক তুলে আনা গেছে।
সবশেষে: তাণ্ডব একটি গ্যাংস্টার মুভি। কতগুলো অসৎ লোকের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্ব। এই ধরণের মুভি গরম গরম দেখতে ভালো লাগে, বিনোদন পাওয়া যায়, সমাজ বাস্তবতার সাথে মিল পাওয়া যায় কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে কোন ইমপেক্ট পড়ে না। শেষ কথা হলো, কালচারাল ইন্ডাস্ট্রিতে বাংলা সিনেমা সোনালী অতীত পেরিয়ে এখন ডায়মন্ড যুগে প্রবেশ করেছে। তাণ্ডব হলো সেই ডায়মন্ড নেকলেসের সবুজ লকেট।
লেখক: লেখক ও নাট্যকার