২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস, যা আমাদের গৌরব, আত্মত্যাগ এবং বিজয়ের প্রতীক। এটি শুধু একটি তারিখ নয়; এটি একটি জাতির দীর্ঘ সংগ্রামের ফল। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানের শাসন থেকে মুক্তির লক্ষ্যে স্বাধীনতার সংগ্রামের সূচনা হয়। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের শুরু এখান থেকেই। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর। এই দিনটিতে তৎকালীন অবিভক্ত পাকিস্তানের প্রথম এবং শেষ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সে নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী সে নির্বাচনের পর বিজয়ী শেখ মুজিবের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা করে। নির্বাচিতদের কাছে শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতা হস্তান্তর না করাসহ নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে পাকিস্তানের রাজনৈতিক সংকট আরও প্রকট হয়। ২৫ মার্চ সারাদিন রাজশাহী শহরের মোড়ে মোড়ে চলে স্বাধীনতাকামী বাঙালির মিছিল ও সমাবেশ। দিনভর মুহুর্মুহু বিক্ষোভ চলে। এরপর দিনের সূর্য লাল আভা ছড়িয়ে পশ্চিমে অস্ত যাওয়ার পর নেমে আসে অন্ধকার। রাতের আঁধারে রাজশাহী পুলিশ লাইন্সে হামলা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এটিই ছিল রাজশাহীর মাটিতে প্রথম আঘাত। পুলিশ বাহিনীর সহযোগিতা না পাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে রাতের অন্ধকারে পুলিশ লাইন্সে হামলা করে পাকিস্তানি বাহিনী। বৃষ্টির মতো চলে অবিরাম গুলিবর্ষণ। বিধ্বংসী গোলা ফেলা হয় আকাশ থেকেও। গভীর রাতে পেছন থেকে অতর্কিতে হামলায় দিশেহারা হয়ে পড়েন ঘুমন্ত পুলিশ সদস্যরা। এ সময় পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষ পুলিশকে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসে। শুরু হয় গুলিবিনিময়। নিজেদের সবটুকু দিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যান মুক্তিকামী বাঙালি। ২৬ মার্চ সারাদিন পুলিশ লাইনসে গুলিবিনিময় হয়। তবে জীবন উৎসর্গ করে বাঙালিরা রক্ষা করেন পুলিশ লাইন্স।
১৯৭১ সালে আমি রাজশাহী কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলাম। তখন আমি টগবগে যুবক। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে নিরস্ত্র জনগণের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হামলায় বেঘোরে প্রাণ হারায় অসংখ্য মানুষ। এ সময় জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা আমাদের উজ্জীবিত করে। বাঙালির এই দুঃসময়ে জীবনবাজি রেখে প্রবল বিক্রমে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযোদ্ধারা। চট্টগ্রামে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণায় অনুপ্রাণিত জনগণ সাহসের সঙ্গে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আমরা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করলাম। একটা বিষয় এখানে বলে রাখা ভালো, যখন রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে পড়তাম, তখন আমি ডামি রাইফেল ও থ্রি নট থ্রি চালানোর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম; যা পরে যুদ্ধের সময় কাজে লেগেছিল। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর জনসাধারণের প্রবল প্রতিরোধে অল্প কয়েক দিনের মধ্যে রাজশাহীতে দুর্বল হয়ে পড়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। অবশেষে স্থানীয় ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় পাকিস্তানি বাহিনী; কিন্তু ১০ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি বিপুল অংশ রাজশাহী শহরে প্রবেশ করে। ১৩ এপ্রিল ভোরে পাকিস্তানি সেনারা গুলিবর্ষণ করতে করতে প্রবেশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে। জোহা হল, জিন্নাহ (বর্তমান শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক) হলসহ অন্যান্য আবাসিক হল, বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ও অতিথি ভবন দখল করে নেয়। ধ্বংসযজ্ঞ চালায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার, গ্রন্থাগার, ল্যাবরেটরিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়।
২৬ মার্চ সকালে রাজশাহীর বাতাসে মুক্তির আনন্দ ও ভয় একসঙ্গে প্রবাহিত হচ্ছিল। ভয় ছিল যে কোনো সময় পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ করতে পারে। আবার আমরা একটা স্বাধীন জাতি– এই ভেবে আনন্দও লাগছিল। ২৬ তারিখ সকাল থেকে আমরা এলাকায় মুক্তিকামী লোকজন পরামর্শ করতে থাকলাম, কীভাবে আমরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারি এবং কীভাবে দেশকে হানাদারমুক্ত করতে পারি। এভাবে ভাবতে ভাবতে আমরা আশপাশের এলাকা থেকে সবাই তালাইমারী এলাকায় একত্র হতে থাকলাম। কারণ তালাইমারী হচ্ছে রাজশাহী শহরের প্রবেশপথ। তাই শহরকে নিরাপদ করতে হলে আমাদের অবশ্যই এই স্থান নিরাপদ করে তুলতে হবে। তালাইমারীতে আমরা প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ জন মুক্তিকামী মানুষ একত্র হয়ে যাই। পরে আমরা বাঁশ, লাঠি হাতে নিয়ে সারাদিন এই পয়েন্টে অবস্থান নিই। আমরা প্রতিরোধমূলক যুদ্ধ করার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। জেবর মিয়া আমাদের সংগঠক ছিল। তবে সেদিন সাধারণ লোকজন দেশের জন্য যুদ্ধ করতে উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিল। সেদিন সারাদিন তালাইমারীতে আমরা অবস্থান করেছিলাম। পরে রাতে সবাই নিজ নিজ বাসায় চলে যাই। চাপা ভয়, আনন্দের মিশ্র অনুভূতির কারণে সেদিন রাতে ঘুমাতে পারিনি। বিছানায় এপাশ-ওপাশ করতে করতেই কেটে যায় রাত।
অনুলিখন
হাবিবুর রহমান সৌরভ
রাজশাহী ব্যুরো
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ব ধ নত র রহম ন আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
ঝিনাইদহে ছেলের হাতে বাবা খুন
ঝিনাইদহে মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের কোদালের কোপে শাহাদত হোসেন (৬৩) নামের এক কৃষক নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ফয়সাল হোসেনকে (২২) আটক করেছে পুলিশ।
সোমবার (১৬ জুন) সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের শংকরপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শাহাদত হোসেন ওই গ্রামের তাইজেল হোসেনের ছেলে।
নিহতের স্বজনেরা অভিযোগ করেন, সকাল ১০টার দিকে শাহাদত হোসেন ছেলে ফয়সাল হোসেনকে সাথে নিয়ে মাঠে কাজ করতে যান। কাজ করার ফাঁকে ফয়সাল কোদাল দিয়ে তার বাবার মাথায় আঘাত করেন। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে মৃত বাবাকে মাঠে রেখে বাড়িতে গিয়ে মাকে পুরো ঘটনা জানান ফয়সাল। স্বজনেরা দ্রুত মাঠে গিয়ে শাহাদতের লাশ পড়ে থাকতে দেখে থানায় খবর দেন।
আরো পড়ুন:
কারাগারে ‘ফাঁস নিলেন’ জুলাই-আগস্ট হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সুজন
মহাসড়কের পাশ থেকে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ফয়সাল হোসেন দুই বছর ধরে মানসিক বিকারগ্রস্ত। পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে কিছুদিন আগে বাড়িতে ফিরেছেন।
ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘‘অভিযুক্ত ফয়সালকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।’’
ঢাকা/শাহরিয়ার/রাজীব