ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের ২৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা (২০১৭-১৮ সেশন) আজ বুধবার ‘মঙ্গল শোভাযাত্রার’ বিষয়ে স্পষ্ট বিবৃতি দিয়েছেন। এবারের বৈশাখের আয়োজনের সঙ্গে তাঁদের কোনো প্রকার সম্পৃক্ততা নেই বলে উল্লেখ করেছেন। তবে চারুকলা অনুষদের ডিন বলেছেন, উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে একটি গ্রুপ বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছে। জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এ বছর ছাত্র–শিক্ষক সবার সম্মিলনে এই শোভাযাত্রা আয়োজন করা হচ্ছে।

২৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মূলত বৈশাখ প্রতিবছর আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দিষ্ট ব্যাচের তত্ত্বাবধায়নে এবং সম্পূর্ণভাবে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের যৌথ প্রয়াসে আয়োজিত হয়ে থাকে। যে আয়োজনের সম্পূর্ণ অর্থ অনুষদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের শিল্পকর্ম বিক্রির মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। চারুকলার রীতি অনুযায়ী যা এ বছর আমাদের ব্যাচের দায়িত্ব হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এবারের আয়োজন একেবারেই চারুকলা অনুষদের পূর্বাপর রীতির ব্যতিক্রমীভাবে কোনোরকম শিক্ষার্থীদের সম্মতি ও সম্পৃক্ততা ছাড়া শুধু শিক্ষকদের সিদ্ধান্তে করা হচ্ছে, যা আমাদের বিশ্বাস ও ধারণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এ ছাড়া এবার একাডেমিকভাবে বৈশাখ আয়োজন করার এই সিদ্ধান্ত অনুষদে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী, ছাত্রপ্রতিনিধি কারও সঙ্গে কোনোরকম পূর্ব–আলোচনা ছাড়াই একটি নির্দিষ্ট ছাত্র-শিক্ষক গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততায় খুবই অতর্কিতভাবে নেওয়া হয়েছে।’

শিক্ষার্থীরা বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, শোভাযাত্রার জন্য বানানো স্ট্রাকচারের ডিজাইন ও আইডিয়া (কাঠামোর নকশা ও ভাবনা) সম্পূর্ণ শিক্ষকদের দেওয়া, চারুকলার আপামর সাধারণ শিক্ষার্থী এর সঙ্গে কোনোভাবেই সংযুক্ত ও অবগত নন। শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে স্ট্রাকচার তৈরি সম্পর্কেও তাঁরা অবগত ছিলেন না এবং কারও ব্যক্তিগত মতাদর্শে আঘাত দেওয়ার পক্ষেও তাঁরা নন।

এবারের বৈশাখ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বৈশাখ, বিবৃতিতে এমনটি উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা বলেছেন, ‘এ আয়োজনে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গের “চাটুকারিতাপূর্ণ” মনোভাবের কারণে আমরা শিক্ষকদের আয়োজন করা বৈশাখের আনুষ্ঠানিকতা ও শোভাযাত্রা সমর্থন করছি না।’

এ বিষয়ে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম শেখ আজ প্রথম আলোকে বলেন, শুরুর দিকে এই শোভাযাত্রা চারুকলার ছাত্র–শিক্ষক সবার অংশগ্রহণে আয়োজন করা হতো। তবে ২০০৫ সালের দিকে এসে এটি একটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ওপর দেওয়া হয়। তবে এটি যেহেতু একটি একাডেমিক কাজের অংশ, তাই শুধু শিক্ষার্থীরা নন, বরং সুষ্ঠু জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য এবং বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে যেন কোনো ভাবমূর্তি নষ্ট না হয়, সে জন্য এ বছর ছাত্র–শিক্ষক সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই শোভাযাত্রা আয়োজন করা হচ্ছে।

আরও পড়ুননববর্ষের শোভাযাত্রায় থাকছে না আবু সাঈদের ‘প্রতীকী মোটিফ’৫ ঘণ্টা আগে

উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটি পক্ষ এই আয়োজনকে বিতর্কিত করা চেষ্টা করছে মন্তব্য করে অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের পাশে আছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেই এ বছরের এই শোভাযাত্রা আয়োজন করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা সার্বক্ষণিক কাজ করছে। তবে রাজনৈতিক কারণে কেউ কেউ এটাকে বিতর্কিত করতে চাচ্ছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এই শ ভ য ত র শ ক ষকদ র চ র কল র এ বছর

এছাড়াও পড়ুন:

যেকোনো উৎসবকে রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে রাখার আহ্বান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের

কেবল বাংলা নববর্ষই নয়, যেকোনো উৎসবকে রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। 

মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে "বাংলা নববর্ষ: ইতিহাস, সংস্কৃতি ও উত্তরাধিকার" শীর্ষক এক সেমিনারে বাংলা নববর্ষের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, সাংস্কৃতিক তাৎপর্য ও সামাজিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অনুরোধ করেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, কেবল বাংলা নববর্ষই নয়, যেকোনো উৎসবকে রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে রাখা জরুরি। রাজনীতির সঙ্গে রাষ্ট্র ও সমাজের সম্পর্ক সঠিকভাবে গড়ে উঠলে কোনো উৎসবই নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয় না। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে সাংস্কৃতিক চিন্তা-চেতনার যে স্বকীয়তা রয়েছে, তা অক্ষুণ্ন রাখাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। বুদ্ধিভিত্তিক ও সচেতন উদ্যোগের মাধ্যমে ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। বাংলা নববর্ষের প্রতি জনগণের গভীর অনুরাগ রয়েছে, তাই এটিকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে।

সেমিনারে আইআরডিসি’র সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হকের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন 
আইআরডিসি-এর সভাপতি ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিলাল হোসাইন।

সেমিনারে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. নাছির আহমেদ তার মূল প্রবন্ধে বাংলা নববর্ষের ঐতিহাসিক বিবর্তন এবং নববর্ষ উদযাপনের ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার নিয়ে দুই পর্বে বিশদ আলোচনা করেন। তিনি বলেন, বাংলা নববর্ষ কেবল বাঙালিদের উৎসব নয়, বরং এটি ধর্ম, গোত্র ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকল বাংলাদেশির একটি সমন্বিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া, বাংলা সনের উৎপত্তি, এর অর্থনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা এবং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মাত্রা নিয়েও তিনি গভীরভাবে আলোকপাত করেন।

এছাড়াও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্‌দীন এবং বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফজলে এলাহি চৌধুরী প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন। তাঁরা বাংলা নববর্ষের আন্তর্জাতিক ও  সামাজিক সংহতি এবং সাংস্কৃতিক বিকাশে এর ভূমিকা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত তুলে ধরেন। একইসাথে বাংলা নববর্ষের বহুমাত্রিক তাৎপর্য ও এর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা করেন।

এসময় সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, গবেষক উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • উপহার পেল পহেলা বৈশাখে জন্ম নেওয়া জেরিনের পরিবার
  • ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে উৎসবকে রাজনীতি মুক্ত রাখতে হবে: মোহাম্মদ আজম
  • দৃশ্যপটে ‘আনন্দ’, মঙ্গল কোথায়
  • যেকোনো উৎসবকে রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে রাখার আহ্বান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের