সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীতে  দুই দিনব্যাপী পণতীর্থ মহাবারুনী গঙ্গাস্নান গতকাল বুধবার শুরু হয়েছে। এটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে পুণ্যলাভের সবচেয়ে বড় উৎসব হিসেবে পরিচিত।

গঙ্গাস্নানের পাশাপাশি বারুনী মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতি বছর এ সময়ে গঙ্গাস্নান ও বারুনী মেলা ঘিরে যাদুকাটা নদীর উভয় তীরে লক্ষাধিক পুণ্যার্থীর সমাগম ঘটে। সারাদেশের পুণ্যার্থীর পাশাপাশি সীমান্তের ওপার থেকেও পুণ্যার্থীরা গঙ্গাস্নানে আসেন। বুধবার রাত ১১টা ১ মিনিটে পণতীর্থে গঙ্গাস্নান শুরু হয়ে চলবে আজ বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ২৪ মিনিট পর্যন্ত।

একই সময়ে সীমান্তের শাহিদাবাদ এলাকায় হজরত শাহজালাল (র.

)-এর ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম সফরসঙ্গী হজরত শাহ-আরেফিন (র.)-এর আস্তানায় বসে ওরস মোবারক ও মেলা। ওরস মোবারক ও মেলা ঘিরে সারাদেশের ফকির দরবেশরা সেখানে সমবেত হয়ে জিকির-আসকারে মুখরিত করে তোলেন শাহ-আরেফিনের আস্তানা এলাকা। এ বছর পবিত্র রমজান মাস ও শবেকদরের সম্মানার্থে শাহ-আরেফিনের আস্তানাতে ওরস মোবারক ও মেলা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।

এ বিষয়ে হজরত শাহ-আরেফিন (র.)-এর আস্তানার ওরস মোবারক ও মেলা কমিটির সদস্য সচিব আলম সাব্বির বলেন, ১৯ মার্চ ওরস মোবারক ও মেলার বিষয়ে হজরত শাহ-আরেফিন (র.)-এর ওরস উদযাপন ও পণতীর্থ গঙ্গাস্নান-সংক্রান্ত আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক সভায় তিনি প্রস্তাব রাখেন, এ বছর হজরত শাহ-আরেফিন (র.)-এর আস্তানায় ওরসের সময়ে পবিত্র রমজান মাস ও শবেকদর পালিত হবে। এলাকার অনেক আলেম উলামাও তাঁকে ওরস পালন বন্ধ রাখার জন্য প্রস্তাব করেন। বিষয়টি সভায় আলোচনা হলে ধর্মীয় অনুভূতির সম্মানার্থে এ বছর ওরস মোবারক ও মেলা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়।  

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

দোয়ার ফজিলত ও আদব

দোয়া শব্দের আভিধানিক অর্থ আহ্বান করা বা প্রার্থনা করা। পরিভাষায় দোয়া হলো কল্যাণ ও উপকার লাভের উদ্দেশ্যে এবং ক্ষতি ও অপকার রোধে মহান আল্লাহকে ডাকা এবং তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা।

প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, ‘দোয়াই ইবাদত।’ (বুখারি ও মুসলিম) ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কিছু চায় না, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন।’ (তিরমিজি: ৩৩৭৩)

আল–কোরআনের বর্ণনা, ‘আর তোমাদের রব বলেন, “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।”’ (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ৬০)

মুমিনের পরিচয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের পার্শ্বদেশ শয্যা থেকে আলাদা থাকে। তারা তাদের পালনকর্তাকে ডাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে। কেউ জানে না তার কৃতকর্মের জন্য তাদের কী কী চোখজুড়ানো প্রতিদান লুকায়িত আছে।’ (সুরা-৩২ সাজদা, আয়াত: ১৬-১৭)

‘আর আমার বান্দাগণ যখন আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, (তখন বলে দিন যে) নিশ্চয় আমি অতি নিকটে। আহ্বানকারী যখন আমাকে আহ্বান করে, আমি তার আহ্বানে সাড়া দেই। কাজেই তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার প্রতি ইমান আনুক, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৬)

দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত হলো হালাল উপার্জন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে আহার করো এবং সৎকাজ করো; তোমরা যা করো, সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা-২৩ মুমিনুন, আয়াত: ৫১)

দোয়া ও আমল কবুল হওয়ার মূল শর্ত হলো ইখলাস। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। অতএব, তাঁকে ডাকো খাঁটি ইবাদতের মাধ্যমে।’ (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ৬৬)

দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত হলো হালাল উপার্জন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে আহার করো এবং সৎ কাজ করো; তোমরা যা করো, সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা-২৩ মুমিনুন, আয়াত: ৫১) ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা পাক পবিত্র বস্তুসামগ্রী আহার করো, যেগুলো আমি তোমাদের রিজিক হিসেবে দান করেছি।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৭৩)

নবীজি (সা.) বলেন, ‘উষ্কখুষ্ক ধুলায় ধূসরিত অবস্থায় দীর্ঘ সফরকারী একজন যে স্বীয় দুই হাত আকাশের দিকে প্রসারিত করে বলে, “হে প্রভু! হে প্রভু!” অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং সে হারাম দ্বারা লালিত, তার দোয়া কীভাবে কবুল হবে?’ (মুসলিম: ১৬৮৬)

নির্জনে নীরবে বিনয়ের সঙ্গে দোয়া করা উত্তম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাকো কাকুতি মিনতি করে এবং সংগোপনে। তিনি সীমা অতিক্রমকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ৫৫)। পৃথিবীকে কুসংস্কারমুক্ত ও ঠিক করার পর তাতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করো না। তাকে আহ্বান করো ভয় ও আশাসহকারে। নিশ্চয় আল্লাহর করুণা সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ৫৫-৫৬)

দোয়ার আদব হলো দৃঢ়সংকল্প ও আকুতির সঙ্গে দোয়া করা, দোয়া কবুলে প্রবল আশাবাদী হওয়া।

হজরত জাকারিয়া (আ.) তাঁর দোয়ায় বলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনার কাছে দোয়া করে আমি কখনো ব্যর্থ হইনি।’ (সুরা-১৯ মারিয়াম, আয়াত: ৪) হজরত ইব্রাহিম (আ.) বলেন, ‘আশা করি, আমার প্রতিপালকের নিকট দোয়া করে আমি বিফল হব না।’ (সুরা-১৯ মারিয়াম, আয়াত: ৪৮)

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দোয়ার ফজিলত ও আদব