ভয়াবহ ভূমিকম্পে শতাধিক নিহতের শঙ্কা, নিখোঁজ ৭০
Published: 28th, March 2025 GMT
মিয়ানমারে আজ শুক্রবার পরপর দুটি ভূমিকম্প হয়েছে। বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছয়টি দেশে এর প্রভাব অনুভূত হয়েছে। ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ৭০ জন নিখোঁজ থাকার খবর পাওয়া গেছে। খবর বিবিসি, ইরাবতী, রয়টার্স ও আনাদোলুর
মিয়ানমারের মান্দালয়ে উদ্ধারকারী দলের একজন সদস্য বিবিসিকে বলেছেন, ‘ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। মৃত্যুর সংখ্যাও অনেক বেশি। হতাহতদের সঠিক সংখ্যা এখনও জানা যায়নি, তবে এটি শতাধিক।’
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৭। এর উৎপত্তিস্থল মিয়ানমারের সাগাইং থেকে ১৬ কিলোমিটার উত্তর–উত্তরপশ্চিমে। ভূমিকম্পটির উৎপত্তি ১০ কিলোমিটার গভীরে। ইউএসজিএস জানিয়েছে, স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে আঘাত হানা ভূমিকম্পের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশ, ভারত, লাওস, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এবং চীনে।
বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে মিয়ানমারে অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছেন। জানা গেছে, শুক্রবারের নামাজের সময় মান্দালয় অঞ্চলের শ্বেফোশিং মসজিদ ধসে অন্তত ২০ জন এবং টাংগু শহরের একটি মঠ ধসে পড়ে আরও অনন্ত পাঁচজন বাস্তুচ্যুত শিশু নিহত হয়েছেন।
একজন উদ্ধারকর্মী বলেন, নামাজের সময় প্রায় তিনটি মসজিদ ধসে পড়ে। সেখানে অনেক মানুষ আটকা পড়ে। এতে অন্তত ২০ জন মারা গেছে। মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণাকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.
আনাদোলু জানিয়েছে, থাইল্যান্ডে একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ভূমিকম্পের তীব্রতা অনুভূত হয়েছে প্রতিবেশি বাংলাদেশ ও চীনেও।
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে নির্মাণাধীন একটি ৩০তলা ভবন ধসে ৭০ নির্মাণকর্মী নিখোঁজ রয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ভবনটি নিমিষেই ধসে পড়তে দেখা যায়। এ ছাড়া আরেকটি ভিডিওতে বহুতল ভবনের সুইমিং পুল থেকে পানি ছিটকে পড়তেও দেখা যায়।
কম্পনের সময় ব্যাংককের বাসিন্দারা উঁচু ভবন থেকে বেরিয়ে রাস্তায় জড়ো হন। সেখানকার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কম্পন যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। শহরটির কিছু মেট্রো এবং রেল পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে। থাই প্রধানমন্ত্রী পেতোংটার্ন শিনাওয়াত্রা এক্সে একটি পোস্টে বলেছেন, শক্তিশালী ভূমিকম্পের পরে তিনি একটি জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছেন। এ কারণে তিনি দক্ষিণ দ্বীপ ফুকেটে একটি সরকারি সফর স্থগিত করেছেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে অনেক বহুতল ভবন ধসে পড়েছে। সেগুলোতে আটকা পড়েছেন অনেকে। ফলে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে জরুরি অবস্থা জারি করেছে দেশ দু’টির সরকার।
ইরাবতীর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে মিয়ানমারের ঔপনিবেশিক আমলের একটি সেতু ধসে পড়েছে। ভেঙে পড়া ৯১ বছর বয়সী আভা নামের সেতুটি ব্রিটিশদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। পুরাতন সাগাইং সেতু নামেও পরিচিত সেতুটি মান্দালয় এবং সাগাইং অঞ্চলের মধ্যে ইরাবতী নদীর ওপর বিস্তৃত।
ভূমিকম্পের তীব্রতায় দেশটির রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে। স্তব্ধ হয়ে পড়েছে জনজীবন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মান্দালয় প্রাসাদও। এ ছাড়া অন্যান্য এলাকার বহু ভবন ধসে পড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোর একটি প্রধান হাসপাতালে বহু আহত ব্যক্তিকে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ভূমিকম্পের ফলে সমস্যা দেখা দিয়েছে মোবাইল নেটওয়ার্কেও। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে ভবন ও সড়কের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি দেখা গেছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ভ ম কম প ভ ম কম প র উৎপত ত ত হয় ছ
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের সঙ্গে সংঘাত: ইসরায়েলকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা দিতে সৌদি সরকারকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র
গত জুনে সংঘাতের সময় ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে উপর্যুপরি আঘাত হানছিল। তা প্রতিরোধ করতে গিয়ে দেশটির ভান্ডারে থাকা টার্মিনাল হাই অল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্সে (থাড) টান পড়েছিল। সংঘর্ষ চলাকালে সৌদি আরবের হাতে এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অন্য আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তাদের ছিল। তাই সংকটকালে ইসরায়েলকে কিছু আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দিতে সৌদি আরবকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু রিয়াদ তাতে রাজি হয়নি।
অনুরোধের বিষয়টি জানেন, এমন দুজন মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দুজনের একজন বলেন, ‘যুদ্ধ চলাকালে আমরা সবাইকে (মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশে মার্কিন প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ছিল) তাদের সবাইকে (ইসরায়েলকে কিছু ধার দেওয়া) অনুরোধ করেছিলাম। যখন কাজ হলো না, তখন আমরা চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিলাম। শুধু কোনো একটি দেশকে অনুরোধ করা হয়েছিল, তা কিন্তু নয়।’
কিন্তু ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে সাহায্য করার জন্য সবচেয়ে ভালো অবস্থানে ছিল সৌদি আরব। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলে আসছিলেন, ইরান শুধু ইসরায়েল নয়, সৌদি আরবের জন্যও হুমকি।
তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় এই দেশের হাতে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আগেই নিজেদের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হয়েছিল। কিছুদিন আগেও এসব প্রতিরক্ষাব্যবস্থা লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছিল ইয়েমেনের হুতিরা।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যখন সংঘর্ষ চলছিল, ঠিক তখনই নিজেদের কেনা থাড ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার প্রথম ব্যাটারিটি গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল সৌদি আরব। ব্যাটারিটি নিজেদের সার্বভৌম তহবিল দিয়েই কিনেছিল রিয়াদ। ঘটনা হলো, ইসরায়েল ও ইরানের যুদ্ধবিরতির মাত্র ৯ দিন পর ৩ জুলাই সৌদি সেনাবাহিনী এই ব্যাটারি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করেছে।
ইরান-ইসরায়েলের সংঘাতের একপর্যায়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে নিজেদের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মজুত ফুরিয়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ ছিল। কারণ, তখন ইসরায়েলের বিভিন্ন নিশানায় ব্যাপক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছিল ইরান।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের সময় মিডল ইস্ট আই-ই প্রথম জানিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এবং ইসরায়েলের নিজস্ব আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অ্যারো দ্রুত শেষ হয়ে আসছে। পরে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও দ্য গার্ডিয়ান নিজেদের প্রতিবেদনে মিডল ইস্ট আইয়ের তথ্য নিশ্চিত করেছিল।
চলতি মাসে এক প্রতিবেদনে গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের পর যুক্তরাষ্ট্রের হাতে মাত্র ২৫ শতাংশ প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অবশিষ্ট ছিল, যা পেন্টাগনের পরিকল্পনামাফিক বিশ্বব্যাপী দেশটির সামরিক অভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় মজুতের তুলনায় অনেক কম।
এক মার্কিন কর্মকর্তা ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের হাতে কী পরিমাণ প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ছিল, সেই গোপন সংখ্যা মিডল ইস্ট আইকে নিশ্চিত করেছেন।
ইরানের হামলা থেকে ইসরায়েলকে রক্ষা জন্য যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের স্ট্যান্ডার্ড মিসাইল-৩ (এসএম-৩) ছুড়েছিল। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছিল দেশটির রণতরি আরলি বার্ক ক্লাসের গাইডেড-মিসাইল ডেস্ট্রয়ার থেকে।
ইসরায়েলের তিন স্তরের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তো ছিলই, সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শক্তি। তা সত্ত্বেও যুদ্ধবিরতির আগপর্যন্ত ইসরায়েলি শহরগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছিল ইরান।
যুক্তরাজ্যের দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের পাঁচটি সামরিক স্থাপনায় সরাসরি আঘাত করতে সক্ষম হয়েছিল।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান যেভাবে বৃষ্টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে, সেটার বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা প্রত্যাশার চেয়ে ভালো করেছে। তবে সংঘাত দীর্ঘ সময় ধরে চলায় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার দুর্বল দিকটি বুঝে গিয়েছিল ইরান। তাই তারা ইসরায়েলে বেশি পরিমাণে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে পেরেছিল।
মিচেল ইনস্টিটিউট ফর অ্যারোস্পেস স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক ডগলাস বারকি বলেন, দুর্বলতাটা হলো, যুদ্ধের একটা পর্যায়ে আপনার প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মজুত ফুরিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে। আমাদের হাতে যে পরিমাণ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আছে, সেগুলো শেষ হয়ে যাওয়ার পর নতুন করে তৈরি করার সক্ষমতা সীমিত।
গত শুক্রবার দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার ঘাটতির এই পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কর্মকর্তা সৌদি আরবের কেনা থাড প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ইসরায়েলে পাঠানোর বিষয়েও রিয়াদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে নিশ্চিত করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সৌজন্য অনুরোধ ও চুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পরই সৌদি আরবের সঙ্গে এ বিষয়ে গভীর আলোচনা শুরু হয়েছিল।
উভয় মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে আরও বলেছেন, ইসরায়েলকে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দিতে যুক্তরাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাতকেও অনুরোধ করেছিল। তবে দেশটির কাছ থেকে ইসরায়েল আদৌ কোনো আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পেয়েছিল কি না, এই দুই কর্মকর্তার কেউ তা নিশ্চিত করতে রাজি হননি।
যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে আমিরাতই প্রথম দেশ, যারা প্রথম থাড কিনেছিল এবং ব্যবহার করেছিল। দেশটি থাড কিনেছিল ২০১৬ সালে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান যেভাবে ইসরায়েলের উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ভেদ করে হামলা চালাতে পেরেছে, তা উপসাগরীয় অঞ্চলের তুলনামূলক কম সুরক্ষিত দেশগুলোকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।