এবার ঈদের বন্ধে গতকাল শুক্রবার থেকে টানা ৯ দিনের ছুটির কবলে পড়ছে দেশ। এই সময়ে বন্ধ থাকছে দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তবে খোলা এটিএম বুথ, ইন্টারনেট ব্যাংকিংসহ বিকল্প সব সেবা। ব্যাংক বন্ধ থাকলেও এসব সেবা নির্বিঘ্ন রাখতে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাস্তবতা হলো ইতিমধ্যে অনেক ব্যাংকের এটিএম অচল দেখা গেছে। আবার অনেক ব্যাংক নিজ গ্রাহক ছাড়া অন্য গ্রাহকদের টাকা তোলার সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে কিংবা নির্দিষ্ট অঙ্কের বেশি টাকা তুলতে দিচ্ছে না। ফলে সাধারণ গ্রাহকদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

সারা দেশে এটিএম বুথ রয়েছে ১২ হাজার ৯৪৬টি এবং ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিন (সিআরএম) রয়েছে ৭ হাজার ১২টি। এটিএম বুথে নিয়মিত টাকা জমা করতে হয়। ঈদের সময় সিআরএমগুলোয়ও এটিএমের মতো টাকা জমা করতে হয়, কারণ এই সময় সবাই টাকা উত্তোলন করে। একটি এটিএমে ২০ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জমা করা যায়।

ব্যাংকগুলো দুই পদ্ধতিতে এটিএম বুথে টাকা জমা করে। শাখার নিকটবর্তী এটিএম বুথগুলোয় শাখার কর্মকর্তারা টাকা জমা করে থাকেন। দূরের এটিএম বুথগুলোয় তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে টাকা জমা করা হয়।

দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি এটিএম বুথ রয়েছে ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংকের। ব্যাংকটির এটিএম বুথ রয়েছে ৮ হাজার ২৫০টি। এর মধ্যে অনেকগুলো ফাস্ট ট্র্যাকের মধ্যে। সব ব্যাংকের গ্রাহকেরা টাকা উত্তোলনের জন্য ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংকের এটিএম ব্যবহার করে থাকেন। এবারের টানা বন্ধে গ্রাহকের ভোগান্তি এড়াতে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ফাস্ট ট্র্যাকের কর্মীদের অফিস খোলা রাখছে ব্যাংকটি। এ ছাড়া নিয়েছে আরও বেশ কিছু উদ্যোগ।

এই উদ্যোগগুলো সম্পর্কে জানিয়েছেন ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল কাশেম মো.

শিরিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদের আগের দিন পর্যন্ত আমাদের ফাস্ট ট্র্যাক খোলা থাকবে। কর্মকর্তারা বুথগুলোয় কাজ করবেন। এই সময় পর্যন্ত এটিএমগুলোয় টাকার কোনো ঘাটতি হবে না, সার্বক্ষণিক তদারকি থাকবে।’

আবুল কাশেম মো. শিরিন আরও বলেন, ‘আমাদের সফটওয়্যার আছে, যা দিয়ে এটিএমে টাকা না থাকলে বা কোনো সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক বার্তা পাওয়া যায়। এক ঘণ্টার মধ্যে ভেন্ডররা টাকা জমা না করলে আমাদের পর্যায় পর্যন্ত বার্তা আসে। ফলে কী পরিমাণ এটিএম কাজ করছে, তা আমরা জানতে পারি। সাধারণত আমাদের দেড় থেকে দুই শতাংশ এটিএম বুথে এ ধরনের সমস্যা হয়। এটা যেকোনো দেশের চেয়ে কম। পৃথিবীতে ৩ শতাংশ পর্যন্ত এটিএম কাজ না করাকে গ্রহণযোগ্য ধরা হয়।’

বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে পূবালী ব্যাংকের শাখা ও এটিএম নেটওয়ার্ক শক্তিশালী অবস্থানে আছে। পূবালী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটিএম বুথ সার্বক্ষণিক চালু রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। যেসব এটিএম বুথে শাখা থেকে টাকা জমা করে, সেসব বুথে শেষ হয়ে গেলে কিছুটা সময় প্রয়োজন হয়। অন্য এটিএম বুথগুলো তৃতীয় পক্ষ থেকে টাকা জমা করে। টাকা না থাকলে আমরা তাৎক্ষণিক জানতে পারি। ফলে ঈদের ছুটিতে টাকা পেতে সমস্যা হবে না।’

বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক বেশির ভাগ এটিএমকে সিআরএমে রূপান্তর করেছে। ব্যাংকটির এটিএম ও সিআরএম রয়েছে ৪৫৮টি। ব্যাংকটির ৮০ শতাংশ এটিএম ও সিআরএম শাখার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ হয় আর ২০ শতাংশ তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে।

সিটি ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) অরুপ হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের এটিএম বুথে সার্বক্ষণিক টাকা থাকে। ঈদের বন্ধের মধ্যেও আমাদের কর্মকর্তারা কাজ করবেন। এতে শুধু সিটি ব্যাংক নয়, সব ব্যাংকের কার্ডধারী গ্রাহকেরা উপকৃত হবেন। কারিগরি কারণে আমাদের ১ শতাংশের কম এটিএমে সমস্যা দেখা দেয়। ফলে এটিএম সেবায় আমরা বাজারের সেরা।’

এর পাশাপাশি আরও কিছু ব্যাংক ঈদের মধ্যে ডিজিটাল সেবা সব সময় চালু রাখতে উদ্যোগ নিয়েছে। তবে অনেক ব্যাংক সেই পথে যায়নি। বিশেষ করে তারল্য ও ব্যবস্থাপনার সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর এটিএম সেবা অচল দেখা গেছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ক ব য স আরএম গ র হক আম দ র সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

৮ দাবিতে সিলেট বিভাগে রেল অবরোধ

সিলেট-আখাউড়া রেলপথে টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করা, রেলপথ সংস্কার, দুটি নতুন ট্রেন চালু করাসহ আট দাবিতে পূর্বঘোষিত রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। 

শনিবার (১ নভেম্বর) সকাল ১০টা থেকে সিলেট বিভাগের সব রেলস্টেশনে অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়। অবরোধের কারণে ট্রেন যাত্রা বিলম্ব হয়। বিশেষ করে, মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া রেলস্টেশনে অবরোধকারীরা রেললাইনে অবস্থান করায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।

মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া, শ্রীমঙ্গল, শমশেরনগর, ভানুগাছ স্টেশনে দাবি আদায় বাস্তবায়ন কমিটির পাশাপাশি সাধারণ মানুষও একাত্মতা প্রকাশ করে লাল পতাকাসহ স্টেশনগুলোতে অবস্থান নেন।

আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক সাংবাদিক আজিজুল ইসলাম ও মুখ্য সমন্বয়ক আতিকুর রহমান এক বিবৃতিতে সাধারণ জনগণকে ১ নভেম্বর ট্রেন ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন আগেই।

তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে সিলেট অঞ্চলের রেলপথের বেহাল অবস্থা দূর করতে এবং যাত্রীসেবার মানোন্নয়নের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে ৪ মাস ধরে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর কুলাউড়ায় অবস্থান ধর্মঘট চলাকালে আন্দোলনকারীরা ট্রেন আটকালে রেলওয়ের ঢাকা অঞ্চলের ডিআরএম ১৫ দিনের মধ্যে আলোচনার আশ্বাস দেন।

এর পর ১০ অক্টোবর কুলাউড়া জংশন স্টেশনের ভিআইপি ওয়েটিং রুমে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন রেলওয়ের ঢাকা অঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (ডিআরএম) মো. মহিউদ্দিন আরিফ। তবে, বৈঠকে আশ্বাসে সন্তুষ্ট না হয়ে আন্দোলনকারীরা ৩১ অক্টোবরের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে ১ নভেম্বর অবরোধের ঘোষণা দেন।

আন্দোলনকারীদের ৮ দাবি 
সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-কক্সবাজার রুটে দুটি স্পেশাল ট্রেন চালু করা। আখাউড়া-সিলেট রেলপথ সংস্কার ও ডাবল লাইন বাস্তবায়ন। আখাউড়া-সিলেট সেকশনে অন্তত একটি লোকাল ট্রেন চালু করা। আখাউড়া-সিলেট সেকশনের সব বন্ধ স্টেশন পুনরায় চালু করা। কুলাউড়া জংশন স্টেশনে আসন বরাদ্দ বৃদ্ধি করা। কালনী ও পারাবত ট্রেনের যাত্রাবিরতি প্রত্যাহার করা। শিডিউল বিপর্যয় রোধে ত্রুটিমুক্ত ইঞ্জিন ব্যবহার ও যাত্রী চাহিদা অনুযায়ী প্রতিটি ট্রেনে অতিরিক্ত বগি সংযোজন করা।আন্দো

লনকারীরা বলছেন, রেল কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে সিলেটবাসী প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। দাবি বাস্তবায়ন না হলে তারা আরো কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবেন। 

কুলাউড়া রেল স্টেশনে অবরোধ কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করেন মৌলভীবাজার-২ আসনের সাবেক এমপি নওয়াব আলী আব্বাছ খান, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আবেদ রাজা প্রমুখ।

এদিকে, অবরোধ চললেও সকাল সাড়ে ৮টার পর সিলেট থেকে আসা ঢাকাগামী কালনী এক্সপ্রেস কুলাউড়া স্টেশন ছেড়ে চলে গেছে।দুপুর ১২টা ৩০ মি

নিটে কুলাউড়া স্টেশন মাস্টার রোমান আহমদ জানিয়েছেন, রেলপথ অবরোধের কারণে দুটি ট্রেনের যাত্রা বিলম্ব হচ্ছে।

সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেছেন, আট দফা দাবিতে অবরোধ চললেও এর প্রভাব সিলেট রেলস্টেশনে পড়েনি। সকালের কালনী ট্রেন যথাসময়ে ছেড়ে গেছে। আবার চট্টগ্রামগামী পাহাড়িকা ট্রেন দেরিতে স্টেশনে আসায় দেড় ঘণ্টা দেরিতে ছেড়ে গেছে। ১২টার জয়ন্তিকা ট্রেন একটু দেরিতে ছেড়ে যায়।

ঢাকা/আজিজ/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৮ দাবিতে সিলেট বিভাগে রেল অবরোধ