লিংকডইনের প্রতিবেদনে চাকরির বাজারে এগিয়ে থাকতে ১৫টি দক্ষতা
Published: 1st, April 2025 GMT
প্রযুক্তির বিকাশ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) প্রসার চাকরির বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন আনছে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ও পেশাজীবনে এগিয়ে যেতে নতুন দক্ষতা অর্জন এখন গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি লিংকডইন প্রকাশ করেছে ‘স্কিলস অন দ্য রাইজ ২০২৫’ প্রতিবেদন। যেখানে আগামী দিনের চাকরির বাজারে সবচেয়ে বেশি চাহিদাসম্পন্ন ১৫টি দক্ষতার তালিকা উঠে এসেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়োগদাতারা যেসব দক্ষতার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন, তার মধ্যে সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবন শীর্ষে রয়েছে। এরপর রয়েছে কোড পর্যালোচনা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, প্রাক্–বাছাইয়ের প্রক্রিয়া ও কৌশলগত চিন্তাভাবনা। লিংকডইনের গবেষণায় উঠে এসেছে, ২৫ শতাংশ কর্মজীবী মনে করেন, তাঁদের বর্তমান দক্ষতা ভবিষ্যতের চাকরির বাজারের জন্য যথেষ্ট নয়। তবে আশার বিষয় হলো, ৬০ শতাংশ কর্মী নতুন খাতে কাজের সুযোগ নিতে প্রস্তুত এবং ৩৯ শতাংশ নতুন দক্ষতা শেখার পরিকল্পনা করছেন। অন্যদিকে ভারতের ৬৯ শতাংশ নিয়োগদাতা মনে করেন, কর্মীদের বিদ্যমান দক্ষতা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদার মধ্যে বড় ধরনের ফারাক রয়েছে। ফলে চাকরির বাজারে এগিয়ে থাকতে হলে দক্ষতা উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই।
লিংকডইনের ভারতীয় শাখার জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পেশা বিশেষজ্ঞ নিরজিতা ব্যানার্জি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী কর্মক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) আমাদের কাজের ধরন বদলে দিচ্ছে। ফলে সৃজনশীলতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা ও কৌশলগত চিন্তার মতো সফট স্কিলস এখন আর কেবল বাড়তি গুণ নয়; বরং এগুলো ব্যবসায়িক সাফল্যের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মৌলিক ধারণা এখন প্রায় সব চাকরির ক্ষেত্রে অপরিহার্য হয়ে উঠছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্কিলস অন দ্য রাইজ ২০২৫’ তালিকা চাকরিপ্রার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা হতে পারে, যা তাঁদের শেখার ও পেশাজীবন গঠনের পথ দেখাবে।
গবেষণা বলছে, কর্মক্ষেত্রে এআইভিত্তিক দক্ষতার চাহিদা সবচেয়ে বেশি হলেও কিছু সফট স্কিলস একজন পেশাদারকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে তুলতে পারে। লিংকডইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা ও কৌশলগত চিন্তাভাবনা এখন আর শুধু আর্ট, ডিজাইন বা বিপণন পেশার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়। এসব দক্ষতার চাহিদা ব্যবসায় উন্নয়ন, শিক্ষা, প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেও বেড়েছে।’ যোগাযোগ দক্ষতার চাহিদাও বাড়ছে। আগে এটি শুধু বিক্রয় ও মানবসম্পদসংক্রান্ত পেশার জন্য অপরিহার্য ছিল। কিন্তু এখন তথ্যপ্রযুক্তি, পরামর্শক সেবা ও আর্থিক খাতেও এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মৌলিক ধারণা এখন প্রায় সব চাকরির ক্ষেত্রেই অপরিহার্য হয়ে উঠছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতে ৯৫ শতাংশ শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তা মনে করেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা–সম্পর্কিত দক্ষতা এখন প্রচলিত অভিজ্ঞতার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষ করে লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল ও প্রম্পট প্রকৌশলের মতো বিষয়গুলো নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতা চাকরিপ্রার্থীদের জন্য বাড়তি সুবিধা তৈরি করছে। পাশাপাশি ব্যবসার প্রবৃদ্ধি ও গ্রাহকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়টিও এখন অনেক বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। ফলে গ্রাহক সংযোগ, বাজার বিশ্লেষণ ও অংশীজন ব্যবস্থাপনার মতো দক্ষতার চাহিদাও বেড়েছে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ত র ম ব দ ধ মত ত চ কর র ব জ র অপর হ র য স ক লস র জন য ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
ইরান যে তিন কারণে পারমাণবিক অস্ত্র বানাবে না
বিশ্বরাজনীতিতে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি একটি বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত ইস্যু। পশ্চিমা শক্তিগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল, বহু বছর ধরে অভিযোগ করে আসছে, ইরান নাকি গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চাইছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) বা যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আজ পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি, যা এ দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করে। অন্যদিকে ইরান শুরু থেকেই বলে আসছে যে তাদের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে শান্তিপূর্ণ ও বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত।
প্রশ্ন হলো, যদি ইরান সত্যিই পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে চাইত, তাহলে গত দুই দশকে তা তৈরি করেনি কেন? আর যদি তা না-ই চায়, তাহলে উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চালিয়ে যাচ্ছে কেন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে হলে ইরানের ধর্মীয় অবস্থান, কৌশলগত চিন্তা, রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির দ্বিচারিতা একত্রে বিশ্লেষণ করতে হবে।
আরও পড়ুনইরান এবার বড় যুদ্ধের জন্য যেভাবে প্রস্তুত হবে০৬ জুলাই ২০২৫ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা ও নৈতিক অবস্থান২০০৩ সালে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি একটি ঐতিহাসিক ফতোয়া জারি করেন। সেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়, ‘পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি, মজুত কিংবা ব্যবহার ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম।’ এ সিদ্ধান্ত শুধুই ধর্মীয় নয়, বরং একটি নৈতিক অবস্থানও, যেখানে নিরীহ মানুষ হত্যাকে ইসলাম কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। পারমাণবিক বোমা শুধু সামরিক লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করে না, বরং শহর, জনপদ ও লাখ লাখ নিরীহ মানুষের প্রাণ হরণ করে। ইসলামের যুদ্ধনীতিতে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
ইরান মনে করে, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার শুধু মানবতার বিরুদ্ধে নয়, পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিরুদ্ধে চরম অন্যায়। হিরোশিমা-নাগাসাকির দৃষ্টান্ত এ বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ দেয়।
কৌশলগত ও সামরিক বাস্তবতাঅনেকের ধারণা, পারমাণবিক অস্ত্র থাকলেই একটি দেশ নিরাপদ থাকে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। পাকিস্তান ১৯৯৮ সালে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলেও ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে আফগানিস্তানে মার্কিন অভিযানে অংশ নিতে বাধ্য হয়। উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক অস্ত্রধারী হওয়া সত্ত্বেও আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে। এমনকি রাশিয়া, যাদের বিশ্বের সর্বোচ্চ পারমাণবিক অস্ত্র মজুত রয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধে ন্যাটোর সঙ্গে কৌশলগতভাবে চাপে পড়েছে। ইসরায়েলও অঘোষিত পারমাণবিক অস্ত্রধারী হওয়া সত্ত্বেও ইরানের ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ’-এ বড় ধরনের সামরিক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে।
এ বাস্তবতা ইরানকে বুঝিয়ে দিয়েছে, পারমাণবিক অস্ত্র নয়, কার্যকর প্রতিরোধক্ষমতা ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতিই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। তাই তারা শক্তিশালী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, চালকবিহীন বিমান বা ড্রোন এবং কৌশলগত অস্ত্র নির্মাণে জোর দিয়েছে।
সামরিক মহড়া চলাকালে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলের অজ্ঞাত স্থান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ১৯ জানুয়ারি ছবিটি প্রকাশ করে ইরান