নেত্রকোনার আটপাড়ায় নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক স্কুলছাত্রীকে (১৫) উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় ওই ছাত্রীর এক স্বজনকে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা করেছেন এক বখাটে। গতকাল সোমবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার শুনই ইউনিয়নের একটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

আহত ব্যক্তিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়েছে। এর আগে তাঁর গলায় অস্ত্রোপচারে ৪০টি সেলাই লেগেছে।

অভিযুক্ত বখাটের নাম শাহ আলম (৩৫)। তিনি উপজেলার দশভাগিয়া গ্রামের আবদুস ছাত্তার চৌধুরীর ছেলে।

ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, এলাকাবাসী ও থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শাহ আলম দীর্ঘদিন ধরে ওই ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করছিলেন। তিনি সম্প্রতি মেয়েটিকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। কিন্তু মেয়েটি তা প্রত্যাখ্যান করায় শাহ আলম ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। মেয়েটি ওই স্বজনকে ঘটনাটি জানায়। ওই স্বজন এ বিষয়ে প্রতিবাদ করায় শাহ আলমের সঙ্গে সপ্তাহখানেক আগে তাঁর তর্কবিতর্ক হয়। এ সময় শাহ আলম প্রকাশ্যে তাঁকে হত্যার হুমকি দেন। গতকাল রাত ১০টার দিকে ওই স্বজন বাড়ি থেকে বের হয়ে গ্রামের দোকানে যান। এ সময় ওত পেতে থাকা শাহ আলম ওই স্বজনের গলায় ছুরিকাঘাত করেন। পরে তাঁর ডাকচিৎকারে স্থানীয় লোকজন চলে এলে শাহ আলম দৌড়ে পালিয়ে যান।

খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় আহত ওই স্বজনকে উদ্ধার করে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি ওই হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।

প্রত্যক্ষদর্শী দোকানদার রসুল মিয়া বলেন, ‘ওই ব্যক্তি আমার দোকানে কয়েল কিনতে এলে শাহ আলম হঠাৎ ছুরি বের করে তার গলায় আঘাত করে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে উপস্থিত লোকজন সঙ্গে সঙ্গেই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।’

ভুক্তভোগী মেয়েটির বাবা বলেন, ‘শাহ আলম দীর্ঘদিন ধরে আমার মেয়েকে উত্ত্যক্ত করছে। এর প্রতিবাদ করায় সে আমার ভাতিজাকে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা করেছে। শাহ আলম এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত। সে বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমের সঙ্গেও জড়িত। এ ঘটনায় আমরা থানায় মামলা করব।’

এদিকে আজ মঙ্গলবার সকালেও অভিযুক্ত শাহ আলমকে এলাকায় দেখা গেছে। তবে দুপুরের পর থেকে তিনি আত্মগোপন করেছেন। মুঠোফোনে শাহ আলম অভিযোগ অস্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কাউকে উত্ত্যক্ত বা কোনো রকম হয়রানি করিনি। এ ছাড়া কারও ওপর হামলা চালানো বা ছুরিকাঘাতের সঙ্গেও আমি যুক্ত নই। ওই ব্যক্তিকে কে ছুরিকাঘাত করেছে, আমার জানা নেই। আমার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা অভিযোগ ছড়ানো হচ্ছে। আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করা হচ্ছে।’

এ বিষয়ে আটপাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী বিকেলে বলেন, বিষয়টি শোনার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ছাড়া হাসপাতালেও পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আটকের জন্য পুলিশ চেষ্টা করছে। তবে এখন পর্যন্ত থানায় কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ হ আলম

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ