নেত্রকোনায় ছাত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় স্বজনকে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা
Published: 1st, April 2025 GMT
নেত্রকোনার আটপাড়ায় নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক স্কুলছাত্রীকে (১৫) উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় ওই ছাত্রীর এক স্বজনকে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা করেছেন এক বখাটে। গতকাল সোমবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার শুনই ইউনিয়নের একটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
আহত ব্যক্তিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়েছে। এর আগে তাঁর গলায় অস্ত্রোপচারে ৪০টি সেলাই লেগেছে।
অভিযুক্ত বখাটের নাম শাহ আলম (৩৫)। তিনি উপজেলার দশভাগিয়া গ্রামের আবদুস ছাত্তার চৌধুরীর ছেলে।
ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, এলাকাবাসী ও থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শাহ আলম দীর্ঘদিন ধরে ওই ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করছিলেন। তিনি সম্প্রতি মেয়েটিকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। কিন্তু মেয়েটি তা প্রত্যাখ্যান করায় শাহ আলম ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। মেয়েটি ওই স্বজনকে ঘটনাটি জানায়। ওই স্বজন এ বিষয়ে প্রতিবাদ করায় শাহ আলমের সঙ্গে সপ্তাহখানেক আগে তাঁর তর্কবিতর্ক হয়। এ সময় শাহ আলম প্রকাশ্যে তাঁকে হত্যার হুমকি দেন। গতকাল রাত ১০টার দিকে ওই স্বজন বাড়ি থেকে বের হয়ে গ্রামের দোকানে যান। এ সময় ওত পেতে থাকা শাহ আলম ওই স্বজনের গলায় ছুরিকাঘাত করেন। পরে তাঁর ডাকচিৎকারে স্থানীয় লোকজন চলে এলে শাহ আলম দৌড়ে পালিয়ে যান।
খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় আহত ওই স্বজনকে উদ্ধার করে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি ওই হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।
প্রত্যক্ষদর্শী দোকানদার রসুল মিয়া বলেন, ‘ওই ব্যক্তি আমার দোকানে কয়েল কিনতে এলে শাহ আলম হঠাৎ ছুরি বের করে তার গলায় আঘাত করে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে উপস্থিত লোকজন সঙ্গে সঙ্গেই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।’
ভুক্তভোগী মেয়েটির বাবা বলেন, ‘শাহ আলম দীর্ঘদিন ধরে আমার মেয়েকে উত্ত্যক্ত করছে। এর প্রতিবাদ করায় সে আমার ভাতিজাকে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা করেছে। শাহ আলম এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত। সে বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমের সঙ্গেও জড়িত। এ ঘটনায় আমরা থানায় মামলা করব।’
এদিকে আজ মঙ্গলবার সকালেও অভিযুক্ত শাহ আলমকে এলাকায় দেখা গেছে। তবে দুপুরের পর থেকে তিনি আত্মগোপন করেছেন। মুঠোফোনে শাহ আলম অভিযোগ অস্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কাউকে উত্ত্যক্ত বা কোনো রকম হয়রানি করিনি। এ ছাড়া কারও ওপর হামলা চালানো বা ছুরিকাঘাতের সঙ্গেও আমি যুক্ত নই। ওই ব্যক্তিকে কে ছুরিকাঘাত করেছে, আমার জানা নেই। আমার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা অভিযোগ ছড়ানো হচ্ছে। আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে আটপাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী বিকেলে বলেন, বিষয়টি শোনার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ছাড়া হাসপাতালেও পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আটকের জন্য পুলিশ চেষ্টা করছে। তবে এখন পর্যন্ত থানায় কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ হ আলম
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেটে হাসপাতালে রোগীর স্বজনকে চিকিৎসকের লাথি মারার ভিডিও ভাইরাল, তদন্তে কমিটি
হাসপাতালে একজন চিকিৎসকের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েছেন এক ব্যক্তি। তাঁদের পাশে আরও কয়েকজন লোক দাঁড়িয়ে। দুজনের বাগ্বিতণ্ডায় এক পর্যায়ে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। এ সময় ওই চিকিৎসককে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন আরেকজন। তখন চিকিৎসকের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ানো ব্যক্তি কিছু একটা বলেন। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে লাথি দিয়ে বসেন ওই চিকিৎসক।
এমন একটি ভিডিও গতকাল রোববার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভিডিওটির ঘটনাস্থল সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিচতলার ৩১ নম্বর ওয়ার্ড। গতকাল দুপুরে এ ঘটনা ঘটেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে জুবায়ের আহমদ (২২) নামের এক রোগীকে নিয়ে এ ঘটনার সূত্রপাত। সুনামগঞ্জের গোবিন্দগঞ্জের কলাগাঁও এলাকার বাসিন্দা জুবায়ের শুক্রবার থেকে পেটের নিচে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। গতকাল দুপুরে জুবায়েরের পাশে তাঁর বন্ধু মিজান আহমদ (২২) ছিলেন। মিজানের সঙ্গেই তন্ময় দেবনাথ নামের ওই চিকিৎসকের বাগ্বিতণ্ডা এবং লাথি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তন্ময় দেবনাথ নামের ওই চিকিৎসক স্নাতকোত্তর ‘ফেজ-বি’–এর আবাসিক শিক্ষার্থী। রোগীর স্বজনের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে কোনো কথার জেরে মেজাজ হারিয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন। রোববারের ঘটনায় হাসপাতালের পরিচালক পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জুবায়েরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিজান আহমদ ওই চিকিৎসককে ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি। পরে মিজানকে ডেকে নিয়ে ব্যবহার ঠিক করার কথা বলেছেন ওই চিকিৎসক। একপর্যায়ে চিকিৎসকের সঙ্গে মিজানের বাগ্বিতণ্ডা হয়। এতে ওই চিকিৎসক লাথি দিয়েছেন।
জুবায়ের জানান, তিনি বাড়িতে কৃষিকাজ করেন। তাঁর বন্ধু মিজান আহমদ তাঁদের পার্শ্ববর্তী আনন্দনগর গ্রামের বাসিন্দা। মিজান মিস্ত্রির কাজ করেন। ওই ঘটনার পর থেকে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বিষয়টি জানার জন্য তাঁর কাছে গিয়েছিলেন। জুবায়ের এখন অনেকটা সুস্থ আছেন চিকিৎসকেরা তাঁকে আজ–কালকের মধ্যেই ছাড়পত্র দিয়ে দেবেন বলে জানান তিনি।
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক সৌমিত্র চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ওই চিকিৎসককে আপাতত দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।