মানুষের মস্তিষ্কে ব্লাইন্ডসাইট যন্ত্র বসাবে ইলন মাস্কের নিউরালিংক
Published: 2nd, April 2025 GMT
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের দৃষ্টিশক্তি ফেরাতে মানুষের মস্তিষ্কে বসানোর উপযোগী যন্ত্র তৈরি করেছে ইলন মাস্কের মালিকানাধীন নিউরালিংক। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) কাছ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে মানুষের মস্তিষ্কে ‘ব্লাইন্ডসাইট’ নামের ক্ষুদ্রাকৃতি যন্ত্রটি বসানোর অনুমতিও পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরের মধ্যেই মানুষের মস্তিষ্কে পরীক্ষামূলকভাবে যন্ত্রটি স্থাপন করা হবে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ইলন মাস্ক জানিয়েছেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ প্রথমবারের মতো নতুন এই প্রযুক্তি মানুষের মস্তিষ্কে স্থাপন করা হবে, যা অন্ধ ব্যক্তিদের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনবে। শুরুর দিকে যন্ত্রটির মাধ্যমে কম রেজ্যুলেশনের দৃশ্য দেখা যাবে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তিটি আরও উন্নত হবে। একসময় এটি মানুষের স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তির চেয়েও উন্নত হয়ে উঠতে পারে। গত কয়েক বছর ধরে বানরের ওপর এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আশাব্যঞ্জক ফলাফল পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুনআরও একজনের মস্তিষ্কে তারহীন চিপ বসাল ইলন মাস্কের নিউরালিংক০৮ আগস্ট ২০২৪নিউরালিংকের তথ্য মতে, ব্লাইন্ডসাইট মূলত মাইক্রোইলেকট্রোড দিয়ে তৈরি কৃত্রিম যন্ত্র, যা মস্তিষ্কের ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সে স্থাপন করা হবে। এটি ক্যামেরার মাধ্যমে ধারণ করা ছবি মস্তিষ্কের নিউরনের মাধ্যমে অন্ধ ব্যক্তিদের দেখতে সহায়তা করবে।
নিউরালিংক জানিয়েছে, ব্লাইন্ডসাইট ব্যবহারের মাধ্যমে যাঁদের দুটি চোখ ও অপটিক নার্ভ সম্পূর্ণ অকেজো তাঁরাও দেখতে পারবেন। এ বিষয়ে খুদে ব্লগ সাইট এক্সে (টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে মাস্ক জানিয়েছেন, জন্মান্ধ ব্যক্তিরাও এই প্রযুক্তির সাহায্যে প্রথমবারের মতো দেখতে পারবেন।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইলন ম স ক
এছাড়াও পড়ুন:
বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা
কদিন ধরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আড্ডায় ঘুরেফিরে একটাই নাম জিনাত ফেরদৌস। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এই বক্সার প্রথমবারের মতো পা রেখেছেন জাতীয় বক্সিং রিংয়ে। আর প্রথমবারই নিজের জাত চেনালেন।
আজ বিকেলে পল্টনের মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে ৫২ কেজি ওজন শ্রেণির ফাইনালে নেমে প্রতিপক্ষ আফরা খন্দকারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তুলেছেন জিনাত। প্রতিযোগিতার আগেই যাঁর আগমন ঘিরে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে, সেই জিনাত রিংয়ে নামতেই যেন বুঝিয়ে দিলেন, অন্যদের চেয়ে কেন তিনি এগিয়ে।
তিন রাউন্ডের লড়াইয়ে শুরু থেকেই জিনাত ছিলেন আক্রমণাত্মক। পাঞ্চে ছিল গতি, রক্ষণে ছিল আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে আফরা খন্দকার চেষ্টা করেছেন রক্ষণ সামলে লড়াইয়ে টিকে থাকতে। খান কয়েক মোক্ষম ঘুষিতে কিছুটা নড়বড়ে হলেও শেষ পর্যন্ত দমে যাননি আফরা।
বরং জিনাতের ঘন ঘন আক্রমণের ফাঁক গলে এক-আধটু পাল্টা আঘাত করতেও পেরেছেন। তবে এই পর্যায়ের এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হয়ে পড়ে তাঁর জন্য অনেকটাই চাপের। তবু আফরা লড়ে গেছেন। আর জিনাতের আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি এ লড়াইকে করে তুলেছিল দেখার মতো।
গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ও আফরার বড় বোন আফঈদা খন্দকার। উৎসাহ দিচ্ছিলেন ছোট বোনকে। পাশে ছিলেন মা–বাবাও। তবে পরিবারের ষোলো আনা সমর্থনও জিনাতকে হারানোর জন্য যথেষ্ঠ হয়নি।
ম্যাচ শেষে আফরা বললেন, ‘তিনি একজন ভালো খেলোয়াড়। তাঁর বিপক্ষে খেলা আমার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে তাঁর আক্রমণাত্মক স্কিলটা দুর্দান্ত। ম্যাচ শেষে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, গুড ফাইট।’
বিজয়ী জিনাত পরে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি সবাইকে বলতে চাই, বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা খেলতে চায়। তারা যদি সুযোগ-সুবিধা পায়, অনেক ভালো করবে। ওদের স্কিল আছে।’
সেমিফাইনালে আছিয়া না ফাইনালে আফরা—কোন লড়াইটা বেশি কঠিন ছিল? জিনাতের জবাব, ‘আমি আমার খেলাটা খেলেছি এবং জিতেছি। দুজনই আলাদা ধাঁচের প্রতিপক্ষ।’
জিনাত বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পদক জয়ের আকাঙ্ক্ষার কথা আজও বলেছেন। আগামী এশিয়ান গেমসে সুযোগ পেলে পদক জিতবেন কি না, প্রশ্নের ছোট্ট উত্তর, ‘ইনশা আল্লাহ।’
আফরা-জিনাত ফাইনাল ম্যাচটা যেন ছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বক্সারের লড়াই নয়, এর বাইরেও চলছিল আরেক নাটক। ফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগেই বক্সিং রিংয়ে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। আনসারের বক্সার জাহিদুল হক রেফারির রায় নিয়ে ক্ষোভ জানাতে রিংয়ে বসে পড়েন প্রতিবাদ হিসেবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বক্সার জনি ভদ্রর ঘুষিতে কপালে চোট পান জাহিদুল। চিকিৎসাও নেন। একপর্যায়ে রিংয়ের মাঝখানে বসেই অভিনব প্রতিবাদ জানান।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ আনসার দল বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সভাপতির কাছে অভিযোগ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আনসারের প্রতিনিধিরা রিং ছেড়ে চলে যান। মুহূর্তেই ঘনীভূত হয়ে ওঠে অনিশ্চয়তা, আফরা-জিনাত ফাইনালটি আদৌ হবে তো? কারণ, আফরা বাংলাদেশ আনসারের প্রতিযোগী। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আনসার ফিরে আসে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
এ বিষয়ে বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফাইটে হারলে যা হয়। হারলেই বলে অন্যায় হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত রিংয়ে ফিরে এসেছে, খেলেছে, এটা ভালো।’
ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি প্রতিনিধিদল গ্যালারিতে এসে জিনাতকে শুভেচ্ছা জানায়, তাঁকে উপহারও দেয় তারা। গ্যালারিতে বাড়তি উত্তেজনা আর গুরুত্ব যোগ করে ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে। আর দেশের সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক উপস্থিতি তো ছিলই ম্যাচটা ঘিরে।