মিরপুরে ‘সাততলা থেকে ফেলে’ যুবককে হত্যা, গ্রেপ্তার ১
Published: 3rd, April 2025 GMT
রাজধানীর মিরপুরের পাইকপাড়া এলাকায় এক যুবককে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে নির্মাণাধীন ভবনের সপ্তম তলা থেকে নিচে ফেলে হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন। নিহত সাহিদুল হাসান ওরফে জিতু (২৩) পেশায় দিনমজুর ছিলেন। তিনি পরিবার নিয়ে পাশের স্টাফ কোয়ার্টারে একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন।
গতকাল বুধবার বিকেলে পাইকপাড়ার ঈশা খাঁ সড়কে এ ঘটনা ঘটে। ওই সড়কের একটি নির্মাণাধীন ভবনের লিফটের ফাঁকা জায়গার নিচ থেকে সাহিদুলকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। নগরীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে সাহিদুলের পূর্বপরিচিত মো.
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাজ্জাদ রোমন আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, সাহিদুল ও সাব্বির একসঙ্গে চলাফেরা করতেন। সাহিদুলের বাবা শাহিন মিয়া নেশাগ্রস্ত। তাঁকে একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করা নিয়ে সাব্বিরের সঙ্গে সাহিদুলের কথা-কাটাকাটি হয়। এ নিয়ে সাহিদুলের সঙ্গে তাঁর বিরোধ তৈরি হয়। এই বিরোধের জের ধরে সাহিদুল ও তাঁর স্ত্রী রোজিনার সঙ্গে সাব্বিরের একাধিকবার ঝগড়া হয়। এরই জের ধরে সাহিদুলকে হত্যা করা হয়েছে।
মৃত্যুর আগে হাসপাতালে সাহিদুল স্বজনদের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে গেছেন বলে মিরপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে। সেই তথ্যের বরাত দিয়ে ঘটনা সম্পর্কে পুলিশ জানায়, সাহিদুল পরিবারের সঙ্গে মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের পাশে স্টাফ কোয়ার্টারের একটি বাসায় থাকতেন। সাব্বির গতকাল সাহিদুলকে ফোন করে বলেন, তাঁদের মধ্যে বিরোধের মীমাংসা করতে চান তিনি। সে জন্য ঈশা খাঁ সড়কে নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবনের সামনে যেতে বলা হয় সাহিদুলকে। সাব্বিরের কথামতো বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সাহিদুল সেখানে যান। এরপর সাব্বির তাঁকে হাবুলের পুকুরপাড়ের পাশে ১০ তলা নির্মাণাধীন ভবনের সপ্তম তলায় নিয়ে যান। সাহিদুল সেখানে অজ্ঞাতনামা আরও দুই-তিন ব্যক্তিকে দেখতে পান। তাঁরা সাহিদুলের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে সাব্বিরসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা সাহিদুলকে সপ্তম তলা থেকে ধাক্কা দিয়ে নির্মাণাধীন ভবনের লিফটের ফাঁকা জায়গা দিয়ে নিচে ফেলে দেন। এতে সাহিদুলের ডান পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ ভেঙে যায় এবং মাথার পেছনে প্রচণ্ড আঘাত লাগে।
পুলিশ জানায়, কিছু পড়ার শব্দ শুনে নির্মাণাধীন ভবনের নিরাপত্তাকর্মী ও আশপাশের লোকজন লিফটের ফাঁকা জায়গায় মানুষ পড়ে থাকতে দেখেন। চিৎকার–চেঁচামেচি শুনতে পেয়ে পাশের ভবন দেখভালের দায়িত্বে থাকা সাহিদুলের খালা পিংকি ও খালু জনি তাঁদের স্বজনদের খবর দেন। এ সময় সাহিদুলের মা ও ছোট ভাই মিতুল হাসান (১৬) ঘটনাস্থলে যান। আত্মীয়স্বজনেরা সাহিদুলকে উদ্ধার করে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে তাঁর মৃত্যু হয়। এর আগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাহিদুল আত্মীয়স্বজনের কাছে তাঁর ওপর হামলার বিস্তারিত বিবরণ দেন।
পুলিশ কর্মকর্তা সাজ্জাদ রোমন বলেন, এটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। গ্রেপ্তার সাব্বিরকে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আজ ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁর দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সাব্বিরের সহযোগীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র ম ণ ধ ন ভবন র অবস থ য়
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।
আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’
আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’
ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫