রাজধানীর মিরপুরের পাইকপাড়া এলাকায় এক যুবককে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে নির্মাণাধীন ভবনের সপ্তম তলা থেকে নিচে ফেলে হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন। নিহত সাহিদুল হাসান ওরফে জিতু (২৩) পেশায় দিনমজুর ছিলেন। তিনি পরিবার নিয়ে পাশের স্টাফ কোয়ার্টারে একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন।

গতকাল বুধবার বিকেলে পাইকপাড়ার ঈশা খাঁ সড়কে এ ঘটনা ঘটে। ওই সড়কের একটি নির্মাণাধীন ভবনের লিফটের ফাঁকা জায়গার নিচ থেকে সাহিদুলকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। নগরীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে সাহিদুলের পূর্বপরিচিত মো.

সাব্বির (২৩) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সাহিদুলকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাজ্জাদ রোমন আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, সাহিদুল ও সাব্বির একসঙ্গে চলাফেরা করতেন। সাহিদুলের বাবা শাহিন মিয়া নেশাগ্রস্ত। তাঁকে একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করা নিয়ে সাব্বিরের সঙ্গে সাহিদুলের কথা-কাটাকাটি হয়। এ নিয়ে সাহিদুলের সঙ্গে তাঁর বিরোধ তৈরি হয়। এই বিরোধের জের ধরে সাহিদুল ও তাঁর স্ত্রী রোজিনার সঙ্গে সাব্বিরের একাধিকবার ঝগড়া হয়। এরই জের ধরে সাহিদুলকে হত্যা করা হয়েছে।

মৃত্যুর আগে হাসপাতালে সাহিদুল স্বজনদের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে গেছেন বলে মিরপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে। সেই তথ্যের বরাত দিয়ে ঘটনা সম্পর্কে পুলিশ জানায়, সাহিদুল পরিবারের সঙ্গে মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের পাশে স্টাফ কোয়ার্টারের একটি বাসায় থাকতেন। সাব্বির গতকাল সাহিদুলকে ফোন করে বলেন, তাঁদের মধ্যে বিরোধের মীমাংসা করতে চান তিনি। সে জন্য ঈশা খাঁ সড়কে নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবনের সামনে যেতে বলা হয় সাহিদুলকে। সাব্বিরের কথামতো বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সাহিদুল সেখানে যান। এরপর সাব্বির তাঁকে হাবুলের পুকুরপাড়ের পাশে ১০ তলা নির্মাণাধীন ভবনের সপ্তম তলায় নিয়ে যান। সাহিদুল সেখানে অজ্ঞাতনামা আরও দুই-তিন ব্যক্তিকে দেখতে পান। তাঁরা সাহিদুলের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে সাব্বিরসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা সাহিদুলকে সপ্তম তলা থেকে ধাক্কা দিয়ে নির্মাণাধীন ভবনের লিফটের ফাঁকা জায়গা দিয়ে নিচে ফেলে দেন। এতে সাহিদুলের ডান পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ ভেঙে যায় এবং মাথার পেছনে প্রচণ্ড আঘাত লাগে।

পুলিশ জানায়, কিছু পড়ার শব্দ শুনে নির্মাণাধীন ভবনের নিরাপত্তাকর্মী ও আশপাশের লোকজন লিফটের ফাঁকা জায়গায় মানুষ পড়ে থাকতে দেখেন। চিৎকার–চেঁচামেচি শুনতে পেয়ে পাশের ভবন দেখভালের দায়িত্বে থাকা সাহিদুলের খালা পিংকি ও খালু জনি তাঁদের স্বজনদের খবর দেন। এ সময় সাহিদুলের মা ও ছোট ভাই মিতুল হাসান (১৬) ঘটনাস্থলে যান। আত্মীয়স্বজনেরা সাহিদুলকে উদ্ধার করে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে তাঁর মৃত্যু হয়। এর আগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাহিদুল আত্মীয়স্বজনের কাছে তাঁর ওপর হামলার বিস্তারিত বিবরণ দেন।

পুলিশ কর্মকর্তা সাজ্জাদ রোমন বলেন, এটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। গ্রেপ্তার সাব্বিরকে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আজ ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁর দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সাব্বিরের সহযোগীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র ম ণ ধ ন ভবন র অবস থ য়

এছাড়াও পড়ুন:

২৭ নভেম্বরই জকসু নির্বাচন চায় ছাত্রশিবির

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন চলতি মাসের ২৭ নভেম্বর আয়োজনের দাবি জানিয়েছে শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির।

সোমবার (৩ নভেম্বর) সংগঠনটির নেতারা জকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা হাসান বরাবর এ দাবি জানিয়ে একটি স্মারকলিপি দেন।

আরো পড়ুন:

জকসু নির্বাচন নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ ছাত্র সংগঠনগুলোর

জবি প্রশাসনের কাছে ২০ দাবি জানাল ইউটিএল

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ২০ বছর পর এই প্রথম জকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি ও আন্দোলনের পর প্রশাসন নির্বাচন আয়োজনের রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে। কিন্তু সম্প্রতি একটি গোষ্ঠী নির্বাচন বানচালের নীলনকশা শুরু করেছে, যা শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুণ্নের অপচেষ্টা।

এতে আরো বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পূর্বনির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী নির্বাচন না করলে তা হবে শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার হরণের সামিল। কারণ ১৩ ডিসেম্বর থেকে ২১তম ব্যাচের ভর্তি পরীক্ষা, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস এবং পরবর্তী শীতকালীন ছুটির কারণে ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন করা সম্ভব নয়।

এ সময় সংগঠনটির নেতারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ঘোষিত তারিখ অনুযায়ী ২৭ নভেম্বরই জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। নির্বাচন বিলম্বের কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ