দিনভর তাপপ্রবাহ। বিকেল গড়াতেই আকাশ কালো করে মেঘ হাজির। সন্ধ্যার পর দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি। চৈত্রের শেষ দিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঝড়বৃষ্টিতে টানা গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা থেকে সাময়িক প্রশান্তি মিলেছে। 

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, রোববারও ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ঝড়বৃষ্টি হতে পারে। দুপুর পর্যন্ত রোদ থাকলেও পরে তাপমাত্রা কমতে পারে। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সময়ে বৃষ্টি ও ঝড়ের সম্ভাবনা বেশি।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ বলছে, শনিবার বিকেল থেকে আকাশ কিছুটা মেঘলা হতে শুরু করে। সন্ধ্যা ৭টার পর শুরু হয় দমকা হাওয়া। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আবহাওয়া অধিদপ্তরের কার্যালয়ের হিসাবে বাতাসের সবচেয়ে বেশি গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার। তবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ রেকর্ড করা হয়েছে মাত্র ১ মিলিমিটার।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড.

মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, চৈত্র মাসের যে স্বাভাবিক আবহাওয়া, তা এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি। অর্থাৎ দিনে রোদ ও বিকেলে দমকা হাওয়া বা কালবৈশাখী হয়। তবে আগামী তিন–চার দিন ঝড়বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে পারে।

রাজধানীতে ঝড় ও দমকা হাওয়া শুরু হওয়ার পর রাস্তায় থাকা ময়লা ও ধুলা উড়তে থাকে। ফলে সড়ক দিয়ে চলাচলকারী রাজধানীবাসী বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েন। অনেকে নিরাপদ স্থান খুঁজতে ছোটাছুটি শুরু করেন। তবে যেসব এলাকায় নির্মাণকাজ চলছে, সেখানে বেশ বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ বলছে, শনিবার দিনের বেলায় দেশের অর্ধেকেরও বেশি এলাকায় তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গরম ছিল রাজশাহীতে। সেখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকাতেও দিনে দাবদাহ ছিল। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনে প্রখর রোদের কারণে রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকার মানুষকে গরমের কষ্টে থাকতে হয়। আর্দ্রতা বেশি থাকায় রোদে অল্প সময় থাকলেও ঘেমে একাকার হতে হয়েছে। ফলে সন্ধ্যার মেঘ ও সামান্য বৃষ্টিতে গরম কিছুটা কমে মানুষের মধ্যে স্বস্তি নেমে আসে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববার ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো বা বৃষ্টি অথবা বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। সোমবার সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। মঙ্গলবার অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। বুধবার অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এ ছাড়া ১০ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিলের মধ্যে বাংলাদেশের আট বিভাগের উপর দিয়েই তীব্র বজ্রপাত, শিলাবৃষ্টিসহ কালবৈশাখী ঝড় অতিক্রমের আশঙ্কা রয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এল ক য়

এছাড়াও পড়ুন:

ভিসা ও প্রযুক্তি দিয়ে আসিয়ানে সংযোগ বাড়াচ্ছে চীন

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের সদস্যরা এখনও মধ্যম আয়ের ফাঁদে আটকা। এসব দেশে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ কম থাকায় গবেষণা ও উন্নয়নে তেমন অগ্রগতি নেই। প্রযুক্তির সীমিত বিস্তারের কারণে আজও এই অঞ্চলটি পেছনে পড়ে আছে। শিল্প খাতে অপর্যাপ্ত বিনিয়োগ ও নিম্নমানের শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি মানবসম্পদ উন্নয়নেও অঞ্চলটি পিছিয়ে। 

প্রতিরক্ষা খাত দুর্বল হওয়ায় পরিবর্তিত ঝুঁকি ও হুমকির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট সাহস নেই দেশগুলোর। এ কারণে মিয়ানমার সংকটে শক্তিশালী কোনো ভূমিকাই রাখতে পারছে না জোটটি। এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ বহিরাগত শক্তি এই অঞ্চলে ক্রমশ জেঁকে বসছে। বিশেষ করে চীন বিনিয়োগের পাশাপাশি ভিসা ও প্রযুক্তির ব্যবহার করে আসিয়ানে সংযোগ বাড়াচ্ছে।     

বিশ্লেষকরা বলছেন, মিয়ানমার সংকট নিয়ে আসিয়ান এখনও বিভক্ত। একদিকে চীনের প্রভাব আসিয়ানকে মিয়ানমারে পদক্ষেপ নিতে বাধা দিচ্ছে, অন্যদিকে বহিরাগত শক্তির ওপর নির্ভরতা নিজেদের সক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করছে। আঞ্চলিক নেতৃত্ব এবং ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক দৃশ্যপটে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা না রাখায় মিয়ানমার সংকট গভীর হওয়ার সুযোগ পেয়েছে।  এই অঞ্চল ঘিরে চীন প্রতিরক্ষাসহ নানা খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। থেমে নেই যুক্তরাষ্ট্রও। উৎপাদন ও প্রযুক্তি খাতে যথেষ্ট উন্নতি না করতে পারায় দেশগুলো সামনের দিকে অগ্রসর হতে বাধা পাচ্ছে। 

শক্তিশালী শাসনব্যবস্থার অভাবে তারা প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারছে না। এই অবস্থায় এই অঞ্চলে অর্থনীতির কাঠামোগত রূপান্তর প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। 

আসিয়ানের সদস্য দেশগুলো হলো- ব্রুনাই, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম। 

১০ দেশের এই জোটটির লক্ষ্য দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। আসিয়ানে গড় মাথাপিছু আয় প্রায় ৫ হাজার ৩০০ ডলার এবং দেশগুলোর সম্মিলিত জিডিপি প্রায় ৪ ট্রিলিয়ন ডলার।   

আসিয়ান কোন দিকে ঝুঁকছে, যুক্তরাষ্ট্র না চীন- এই প্রশ্ন এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ নিক্কেই এশিয়ায় এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, দেশগুলোর উচিত বেইজিংয়ের প্রবৃদ্ধি থেকে লাভবান হওয়া। তিনি ভারতের সঙ্গেও বাণিজ্য বৃদ্ধির ওপর জোর দেন।

অন্যদিকে মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কলিন্স চং ইউ কিট মনে করেন, আত্মরক্ষার নিজস্ব শক্তি ও ক্ষমতা অর্জন না করা পর্যন্ত আসিয়ান দেশগুলোকে মার্কিন নিরাপত্তার ছাতার তলেই থাকতে হবে।  

অধ্যাপক কলিন্স ইউরেশিয়া রিভিউকে বলেন, গত কয়েক দশক ধরে আসিয়ান দেশগুলো নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের ওপর নির্ভর করেছে। হঠাৎ করে চীন এই অবস্থানে যেতে পারবে না। আসিয়ান দেশগুলো এটা ভালো করেই জানে। যদিও বেইজিংকে এই অঞ্চলের প্রধান অর্থনৈতিক বিকল্প ও সম্পদের প্রধান সরবরাহকারী হিসেবে দেখা হয়। 

গালফ নিউজের সিনিয়র বিশ্লেষক বলরাম মেনন মনে করেন, অনেক বছর ধরে আসিয়ানসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো বাণিজ্যে স্থিতিশীলতা রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করে আসছে। অঞ্চলটিতে যুক্তরাষ্ট্র ভোক্তা বাজার সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। তাছাড়া প্রযুক্তিগত উন্নয়নে বিনিয়োগও বাড়াতে চায় ওয়াশিংটন। 

থাইল্যান্ডের মাহিদোল ইউনিভার্সিটি ইন্টারন্যাশনাল কলেজের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উইলিয়াম জে জোন্স মনে করেন, আসিয়ান রাষ্ট্রগুলোকে বহিরাগত শক্তির কাছে ঐক্যবদ্ধ বিশ্বাসযোগ্যতা প্রদর্শন করতে ইচ্ছুক হতে হবে। ট্রাম্পের বৈদেশিক নীতির পরিবর্তনের প্রভাব পড়বে পূর্ব এশিয়াও। এজন্য আসিয়ানকে বাস্তবসম্মতভাবে একটি ঐক্যফ্রন্ট উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।  

আসিয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করছে চীন 

ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা ও ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্যে আসিয়ান ও চীনের মধ্যে সহযোগিতার গভীরতা আগের চেয়ে বেড়েছে। চীন দেশগুলোর সঙ্গে সখ্য গড়তে কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহারকে গুরুত্ব দিচ্ছে। দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও আস্থা অর্জনের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা চীনকে এআই প্রযুক্তি কাজে লাগাতে পরামর্শ দিয়েছেন। 

এছাড়া চীন আঞ্চলিক সংযোগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য চালু করেছে ‘আসিয়ান ভিসা’। আন্তঃসীমান্ত ভ্রমণ এবং আঞ্চলিক একীকরণে এটি চীনের বড় পদক্ষেপ। 

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান মনে করেন, নতুন ভিসা সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোর সঙ্গে বিদ্যমান পারস্পরিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করবে।   

গত ২৭ মে কুয়ালালামপুরে হয়ে গেল আসিয়ান-চীন-জিসিসি (উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ) শীর্ষ সম্মেলন। তিনটি পক্ষ তাদের নিজ বাজারকে  সংযুক্ত করার মাধ্যমে বিশাল অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ উন্মোচন করতে পারে। তিন পক্ষের সম্মিলিত শক্তি বিশ্ব অর্থনৈতিক দৃশ্যপটকে নতুন রূপ দিতে পারে।

ক্ষমতার আধিপত্য বজায় রেখেছে ওয়াশিংটন

অধ্যাপক কলিন্স চং ইউ কিট মনে করেন, আসিয়ানে প্রযুক্তিগত আধিপত্যসহ অর্থনৈতিক ও সামরিক খাতে আগামী ৫০ বছর ওয়াশিংটন প্রধান ভূমিকায় থাকবে। এই সময়ের মধ্যে দেশগুলোতে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক বিভাজন ঘটতে পারে। ফলে বিনিয়োগ, প্রযুক্তি এবং নিরাপত্তার জন্য তারা বিদেশি শক্তির ওপর আরও নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। এসব ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই সুবিধা নেবে যুক্তরাষ্ট্র।  

কঠোর নিরপেক্ষতা থাকা সত্ত্বেও আসিয়ান দেশগুলো প্রায় নিশ্চিতভাবেই নতুন সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে বলেও মনে করেন কলিন্স চং। তিনি বলেন, দক্ষিণ চীন সাগর ও তাইওয়ান কেন্ত্রিক এই সংঘাত শুরু হতে পারে। এই সংঘাতে ওয়াশিংটন যুক্ত হয়ে পড়লে দক্ষিণ চীন সাগরে চীন বেকায়দায় পড়বে। ফলে আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে আরও অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা থাকবে।    

সূত্র: গালফ নিউজ, ইউরেশিয়া রিভিউ, ইস্ট এশিয়া ফোরাম 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ