বৈশাখ রাঙাতে শেষ সময়ে ব্যস্ত টাঙ্গাইলের মৃৎশিল্পীরা
Published: 13th, April 2025 GMT
বাঙালির প্রাণের উৎসব নববর্ষ। সাড়া বছরে চাহিদা না থাকলেও পহেলা বৈশাখে চাহিদা বেড়ে যায় মৃৎশিল্পীদের। বছরের অন্য সময়ে মৃৎশিল্পের কদর না থাকলেও পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে মাটির তৈজসপত্রের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খেলনা তৈরি করেন মৃৎশিল্পীরা। বৈশাখ রাঙাতে শেষ সময়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বছরের অন্য সময়ের তুলনায় মৃৎশিল্পীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। মাটি নরম করে তৈরি করছেন মাটির বিভিন্ন তৈজসপত্র। কেউ কাদা নরম করছেন, কেউ মাটির তৈজসপত্র তৈরি করছেন। নিপুন হাতে তৈরি করছেন হাড়ি-পাতিল, শিশুদের খেলনা। নববর্ষে বাহারি সব খেলনা তৈরি করছেন। সেই খেলনা মেলায় নিয়ে যাবেন মৃৎশিল্পীরা।
মৃৎশিল্পী বিষ্ণু পাল বলেন, “বাপ-দাদার পেশা ছাড়াতেও পারি না। আর ছেড়ে দিলে কী করব? লেখাপড়া করি নাই যে চাকরি করব। মাটির জিনিসের চাহিদা আগের মতো নেই। এখন প্লাস্টিক, মেলামাইন, অ্যালুমিনিয়াম ও সিসার জিনিস বের হয়েছে। মাটির জিনিসের চাহিদা কমে গেছে। আগে এক গাড়ি মাটি কিনতাম এক হাজার টাকা দিয়ে। আর এখন পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার টাকা লাগে এক গাড়ি মাটি কিনতে। সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। এ বছর পয়লা বৈশাখের মেলা উপলক্ষে মাটির তৈজসপত্র তৈরি করেছি। বছরের অন্য সময়ের তুলনায় বৈশাখে মাটির জিনিসের চাহিদা ভালো থাকে।”
মৃৎশিল্পী গোলাপি পাল বলেন, “এ বছর ১০ রকমের এক হাজার শিশুদের খেলনা তৈরি করেছি। ছোট ছোট মাটির হাঁড়ি-পাতিল, মাটির চুলা, শিল-পাটা, কড়াই, কলস, কুলা, পুতুল, হাতি, ঘোড়া, মাছ, হাঁসসহ নানা রকম ফল, ফুল আর বাহারি মাটির ব্যাংক, প্লেট, মগ, গ্লাস, চায়ের কাপ তৈরি করেছি। রং তুলির কাজে ব্যস্ত রয়েছি। আশা করছি পয়লা বৈশাখের আগেই রং শেষ করতে পারব। সারা বছর মাটির জিনিসের চাহিদা তেমন একটা থাকে না। বৈশাখ মাসে মাটির জিনিসের চাহিদা থাকে। সবাই মাটির কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে।”
বিসিক টাঙ্গাইল জেলা শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক শাহনাজ বেগম জানান, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এক সময় ১,২৩৫ জন মৃৎশিল্পী ছিলেন। বর্তমানে খুব কম সংখ্যক মৃৎশিল্পী রয়েছেন। যারা বংশের টানে এখনো এই শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছেন। ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পটি হারিয়ে যাওয়ার পথে। গুটি কয়েকটি পরিবার এখন মৃৎশিল্পের সাথে নিয়োজিত আছেন।
তিনি আরও জানান, মৃৎশিল্পীরা যদি আমাদের কাছে আসে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে পারবো। মৃৎশিল্পীদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
ঢাকা/কাওছার/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
প্রযুক্তি কি ডিমেনশিয়া বাড়িয়ে দিচ্ছে? ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে বিস্ময়কর তথ্য
প্রযুক্তির কল্যাণে হুটহাট বড় পরিবর্তন আসা নতুন কিছু নয়। করোনা মহামারির আগে বাসা থেকেও যে অফিস করা সম্ভব, সেটা মানতে চাইতেন না অনেকে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হোম অফিস হয়েছে স্বাভাবিক। একই ঘটনা ঘটেছে ডিজিটাল দুনিয়ায়। একসময় যেকোনো তথ্য খুঁজে বের করার জন্য শরণাপন্ন হতে হতো সার্চ ইঞ্জিনের; এআই সেই উত্তর সবিস্তারে দিয়ে দিচ্ছে মুহূর্তেই। ফলে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন শুধু জীবনকে সহজতর করছে না, বাঁচিয়ে দিচ্ছে সময় ও পরিশ্রমও। কিন্তু এই বেঁচে যাওয়া সময় ও পরিশ্রম মস্তিষ্কের ওপর ঠিক কীভাবে প্রভাব ফেলছে?
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস ও বেলোর ইউনিভার্সিটির এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, এত দিন প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মানব মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমার যে গুঞ্জন ভেসে বেড়িয়েছে, তার কোনো সত্যতা নেই। ‘নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ার’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ নামে যে হাইপোথিসিস আছে, তার কোনো প্রমাণ নেই গবেষকদের কাছে। বরং পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষদের স্মার্টফোন, কম্পিউটার কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার তাঁদের স্বাভাবিক স্মৃতিভ্রম অনেকটা স্তিমিত করে।
ডিজিটাল ডিমেনশিয়া কী২০১২ সালে প্রথম ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ তত্ত্ব নিয়ে হাজির হন জার্মান স্নায়ুবিজ্ঞানী ও মনোবিদ ম্যানফ্রেড স্পিৎজার। মূলত যে হারে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে এবং মানুষ যান্ত্রিক পর্দার সামনে প্রতিদিনের বেশির ভাগ সময় কাটাচ্ছে, তাতে প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে অনেকটাই। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় তথ্যগুলোও মনে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে অনেকে। যেমন ফোন নম্বর। একসময় প্রিয়জনের ফোন নম্বর আমাদের মুখস্থ থাকত। এখন ফোন নম্বর ঠাঁই পায় মুঠোফোনের কনটাক্ট লিস্টে। ফোন নম্বর মনে রাখার চেষ্টাই করে না কেউ। আবার অনেকক্ষণ যান্ত্রিক পর্দার সামনে থাকলেও সেখান থেকে শেখার ইচ্ছা থাকে না অনেকের। চোখের সামনে যা আসছে, স্ক্রল করে চলে যাচ্ছে পরের কোনো কনটেন্টে। এতে মনোযোগ হারিয়ে যায় দ্রুত। আর প্রযুক্তির এমন অতিব্যবহার যে স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দিচ্ছে, একেই ধরা হয় ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ হিসেবে।
আরও পড়ুনডিজিটাল স্ক্রিন ব্যবহারের সময় ২০-২০-২০ নিয়ম মানাটা কেন জরুরি২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩গবেষণা যা বলছেপ্রায় ৪ লাখ ১১ হাজার পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষের ওপর চালানো ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে যে স্মৃতিভ্রম দেখা দেয়, তার অনেকটাই হ্রাস করে প্রযুক্তির ব্যবহার। প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের ফলে স্মৃতিশক্তি কমে আসার আশঙ্কা প্রায় ৫৮ শতাংশে নেমে আসে।
স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া বরং আরও কিছু সূচকের (যেমন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিক অবস্থা) ওপর নির্ভর করে। মজার ব্যাপার হলো, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার থেকেও বেশি কার্যকর প্রযুক্তির ব্যবহার।
তবে এর সবকিছুই নির্ভর করছে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের ওপর। পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিরা বেশির ভাগ সময়ই অনলাইনে কাটান ইউটিউব ভিডিও অথবা ফেসবুক স্ক্রল করে। এতে তাঁদের মস্তিষ্কের ব্যবহার হয় না বললেই চলে। মস্তিষ্ক সচল রাখতে পারে এমন কনটেন্টে তাঁদের মনোযোগ সরিয়ে নিতে পারলে আনন্দ যেমন পাবেন, তেমনই ডিজিটাল দুনিয়া সম্পর্কে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিও পালটে যাবে। এ ছাড়া অনলাইনের হাজারো গুজব ও উসকানি থেকে মুক্ত থাকবেন তাঁরা।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট
আরও পড়ুনমাত্রাতিরিক্ত স্ক্রিনটাইম যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩