ক্ষমতায়ন মানে অংশগ্রহণ নয় অংশীদারিত্ব কোথায়?
Published: 13th, April 2025 GMT
রাস্তাঘাটে নারীকে টিজ করা, কটূক্তি করা, এসব ক্ষেত্রে এখনও আমরা কোনো জোরালো অবস্থান দেখতে পাই না
রাশেদা কে চৌধুরী। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক। ২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। নববর্ষে নারীর অংশগ্রহণ, নারীশিক্ষার বাস্তব অবস্থা, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সমকালের জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক শাহেরীন আরাফাত
সমকাল: নববর্ষের শুভেচ্ছা। বর্ষবরণের আয়োজনকে কীভাবে দেখছেন?
রাশেদা কে চৌধুরী: নববর্ষের শুভেচ্ছা। পহেলা বৈশাখ বাংলা সনের প্রথম দিন। এটি সব বাঙালি নববর্ষ হিসেবে পালন করে। সে হিসেবে এটি বাঙালিদের সর্বজনীন উৎসব। সেই সঙ্গে এ আয়োজন আমাদের অসাম্প্রদায়িক ও চিরায়ত বাংলার ঐতিহ্য। গ্রামবাংলায় আগে থেকেই বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হতো। এখন দেশের প্রায় সব জায়গাতেই এ আয়োজন হয়। সেখানে থাকে ঐতিহ্যবাহী পণ্য ও হস্তশিল্প, যা বাঙালির শিল্পনৈপুণ্য ও সৃজনশীলতার প্রতীক। আরও থাকে নানা ধরনের পিঠা, চিড়া-দই ইত্যাদি খাবারের সমাহার। পরে এতে পান্তা-ইলিশসহ বিভিন্ন বিষয় যুক্ত হয়েছে। মেলায় বাউল গান, কবিগান, যাত্রাপালা, গম্ভীরা, পুঁথিপাঠ, পালাগান ও পুতুলনাচ পরিবেশিত হয়। শিশুদের জন্য থাকে নাগরদোলা, সার্কাস ও বিভিন্ন খেলাধুলার ব্যবস্থা। এসব আয়োজন আমাদের চিরায়ত সংস্কৃতির পরিচায়ক।
সমকাল: নববর্ষে নারীর অংশগ্রহণ কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
রাশেদা কে চৌধুরী: বাংলা নববর্ষ উদযাপনে নারীর অংশগ্রহণ বিশেষভাবে দৃশ্যমান। বাংলার নারীদের সঙ্গে
নববর্ষের ধারাবাহিক ও নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। বাংলা নববর্ষ মূলত গ্রামবাংলার সংস্কৃতি। আর কৃষিকাজে নারী বরাবরই যুক্ত রয়েছে সর্বাত্মকভাবে। চৈত্রসংক্রান্তির আগে থেকেই উদযাপন শুরু হয়ে যায়। শহুরে আয়োজনেও নারীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। তা পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ আয়োজনের দিকে তাকালেই দেখতে পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা রেখেছেন সদ্যপ্রয়াত এক মহীয়সী নারী– সন্জীদা খাতুন। তাঁর উদ্যোগে ষাটের দশকে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শহুরে বাঙালিদের মধ্যে নববর্ষকে উদযাপনের নতুন মাত্রা যুক্ত করেছিল। বর্ষবরণের প্রতিটি আয়োজনে নারীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখা যায়।
সমকাল: এবার নারী শিক্ষা নিয়ে জানতে চাই। প্রাথমিক শিক্ষায় আমরা সাফল্য অর্জন করেছি; কিন্তু মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে এখনও মেয়েরা ব্যাপক হারেই ঝরে পড়ছে– এর কারণ কী?
রাশেদা কে চৌধুরী: প্রাথমিক শিক্ষায় আমাদের সাফল্য দৃশ্যমান এবং ধারাবাহিক। মাধ্যমিকেও আমরা দেখেছি, ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের সংখ্যা আনুপাতিকহারে বেশি ছিল। তারপর যত সময় যেতে থাকে, তত দেখি মেয়েরা ঝরে যেতে থাকে। এই মাধ্যমিকে ঝরে পড়ার প্রধানত চারটি কারণ– এক.
শুধু মেয়েদের শিক্ষা নয়, সার্বিকভাবে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জায়গায় বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে। পাশের দেশ শ্রীলঙ্কা এত বড় গৃহযুদ্ধ কাটিয়ে উঠল। গত বছরও তাদের জিডিপির ১ দশমিক ৮ শতাংশ বরাদ্দ ছিল শিক্ষা খাতে। সেখানকার বর্তমান সরকার মার্চ মাসে দেওয়া ঘোষণায় এই বরাদ্দ বাড়িয়ে করেছে জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ। বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ জিডিপির ২ শতাংশের নিচে ঘোরাফেরা করছে। এখানে আমাদের একটা বড় ব্যর্থতা। বিনিয়োগ যতটা করা হয়েছে; তা হয়েছে অবকাঠামো নির্মাণে। এখানে নারী শিক্ষক নিয়োগের একটা গুরুত্ব রয়েছে। যেসব এলাকায় নারী শিক্ষকের সংখ্যা কম, যেমন চরাঞ্চল, হাওর-বাঁওড় ইত্যাদি অঞ্চলে মাধ্যমিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেয়েদের সংখ্যা কম। সেখানে বিশেষ বিবেচনায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে কোটা থাকা দরকার।
সমকাল: মেয়েদের শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার সঙ্গে বাল্যবিয়ে ওতপ্রোতভাবে জড়িত...
রাশেদা কে চৌধুরী: মেয়ে শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাল্যবিয়ে, বা আরলি ম্যারেজের বিষয়টা সামনে আসে। বলা হয় যে, ১৬ বছর হলে বিয়ে দিতে পারে; কিন্তু তার পড়ালেখায় যে ছেদ পড়ে, সেটা তো আমরা খেয়াল করি না। জাতিসংঘের প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশ এখনও বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছে। বিয়ে হয়ে গেলে আর মেয়েরা উপবৃত্তি পায় না। শ্বশুরবাড়িতে ও রকম ইতিবাচক পরিবেশ-পরিস্থিতি না থাকলে তারা শিক্ষা চালিয়ে যেতে পারে না। তারপরও বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে মেয়েরা যখন এসএসসি পাস করে এইচএসসিতে যায় অথবা এইচএসসি পাস করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যায়; সেখানেও বিষয় নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে নিজের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে পারে না।
সমকাল: শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ ও টিকে থাকার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো কী কী?
রাশেদা কে চৌধুরী: মেয়েরা কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়– যতদূর পর্যন্তই যাক, তারপর শ্রমবাজারে প্রবেশ করতে হবে। আর এখানে তাদের জন্য সুযোগ-সুবিধা অবারিত নয়। ইদানীং আমরা দেখছি, প্রধান উপদেষ্টাও বারবার বলছেন উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য। নারী উদ্যোক্তারা বিশেষ করে কভিডের সময় একটা সুযোগ পেয়েছিলেন, অনলাইনের এই সুযোগে এখন সম্ভবত ছয় লাখের ওপরে নারী উদ্যোক্তা। যারা অনলাইনে ছোট-বড় নানা ধরনের কাজ করেন। এখানে পারিবারিক চ্যালেঞ্জ হলো– বাড়িতে হলেও তিনি সারাদিন অনলাইনে কাজ করেন, অথচ সংসারের কাজে কেউ তাঁকে সহযোগিতা করে না। তাঁর স্বামী হয়তো বাইরের কাজকর্ম করে এসে বিশ্রাম নেন, কিন্তু তাঁর তো বিশ্রাম নেই। এই সামাজিক বৈষম্য প্রচণ্ডভাবে বিদ্যমান শ্রমবাজার হোক, অথবা উদ্যোক্তা হিসেবেই হোক। শ্রমবাজারে, বা গার্মেন্টে নারী-পুরুষের মধ্যে সুস্পষ্ট মজুরি বৈষম্য বিদ্যমান। এটা আমরা এখনও নিরসন করতে পারিনি। সেখানে শ্রমিক হিসেবেই কেবল নারীদের দেখা হয়। ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ক’জন নারী আছেন, তা বলাই বাহুল্য। এই চ্যালেঞ্জগুলোতে প্রাইভেট সেক্টরকেও কার্যকরভাবে এগিয়ে আসার একটা বিষয় রয়েছে।
নারী যদি বিবাহিত হয়, তার সন্তানাদি থাকে, এটা তার শ্রমবাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে বড় একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে যায়। পরিবারের সহায়তা না থাকলে শ্রমবাজারে টিকে থাকা সম্ভব না। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে দিবাযত্নকেন্দ্রের সংখ্যাটা ভীষণ অপ্রতুল। এখানে কিছু কারখানা মালিক শ্রমিক বা নারী কর্মীদের জন্য কিছু ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু এভাবে সবারই এগিয়ে আসা উচিত। নারী শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা করে দিতে পারলে উৎপাদনও বাড়বে। তারা যদি বাড়ির চিন্তা না করে, তাহলে তো গুণগতমানও বাড়বে। মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয় কিছু চেষ্টা করছে– কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল, শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র। এগুলোও নিয়মিত মনিটরিংয়ের অভাবে খুব একটা ভালো চলছে না।
সমকাল: কর্মী বা শ্রমিক হিসেবে দেখা গেলেও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীদের সেভাবে দেখা যায় না। এটাকে কি ক্ষমতায়ন বলা যায়? ক্ষমতায়নের জায়গাটা আমরা কীভাবে বুঝব?
রাশেদা কে চৌধুরী: ক্ষমতায়ন কথাটা খুব খেলোভাবে, বা স্থূল অর্থে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ক্ষমতায়ন মানেই অংশগ্রহণ নয়; অংশীদারিত্ব কোথায়? বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্য নারীর অবদান– পোশাক খাত, ফার্মাসিউটিক্যাল অনেক কিছুতে নারীর অংশগ্রহণ। আমরা অনেক সময় ভুলে যাই ক্ষুদ্রঋণের কথা। এ ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা নারীর। বাংলাদেশ সম্ভবত এ মুহূর্তে ১২ হাজার কোটি টাকার ওপরে ঋণে দায়বদ্ধ। এই ঋণের মূল চালিকাশক্তি নারী। এতকিছুর পরও যেটায় ঘুরেফিরে দেখা যাবে, অংশগ্রহণ আছে কিন্তু অংশীদারিত্ব নেই। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অথবা সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর ভূমিকা খুবই অপ্রতুল। সেটা পাবলিক সেক্টরে হোক, প্রাইভেট অথবা অন্য কোনো খাতে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ কতটুকু সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। সেটা যতদিন মোটামুটি সমান না হবে, ততদিন তো ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলা যাবে না। অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে হার বেড়েছে কিন্তু অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে আমাদের নারী সমাজ অনেক পিছিয়ে আছে।
সমকাল: ৫ আগস্ট বাংলাদেশে একটা বড় পট পরিবর্তন ঘটে গেছে। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের ৮ মাস অতিবাহিত হয়েছে। তবু নারীদের ক্ষমতায়ন নিয়ে সেভাবে অগ্রসর ভূমিকা নেই; বরং নারীদের ওপর আক্রমণ হয়েছে, নারীর পোশাক নিয়ে আক্রমণ হয়েছে, নারীবিদ্বেষী বক্তব্যও দেওয়া হচ্ছে। এটা কি সমাজে বিদ্যমান পুরুষতান্ত্রিক সমাজেরই বহিঃপ্রকাশ?
রাশেদা কে চৌধুরী: নারীর সমানাধিকারের জায়গায় পুরুষ প্রতিবন্ধকতা নয়, পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, বৈশ্বিক কিছু উগ্রবাদী ধারা। যেমন– আফগানিস্তানে আমরা দেখছি উগ্রবাদী জনগোষ্ঠী নারীদের ঘরবন্দি করে রেখেছে; আবার উগান্ডাতে কোনো উগ্রবাদী গোষ্ঠী মেয়েদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে, জোর করে বিয়ে করছে। এসব অনেক জায়গায় ঘটছে। আমরা যেহেতু একই বৈশ্বিক বাস্তবতায় বাস করি, এর কিছু প্রতিফলন আমাদের সমাজেও দেখতে পাই। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে– নারীদের পোশাক নিয়ে ব্যঙ্গ করা হয়, কটূক্তি করা হয়; অথচ এটা মানবাধিকারের অংশ। আমি সমাজে সহনশীলভাবে চলাফেরা করব। তার মানে তো এই নয় যে, আমাকে নিয়ে কেউ কটূক্তি করবে, তার মানে তো এই না যে, হিজাব পরলে তাকে নিয়ে কটূক্তি করবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, এসব কারণে নারী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এটা একটা উগ্রবাদী চিন্তার প্রকাশ। রাস্তাঘাটে টিজ করা, কটূক্তি করা, এসব ক্ষেত্রে এখনও আমরা কোনো জোরালো অবস্থান দেখতে পাই না। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা কতটুকু অনুকূল নারীর জন্য, সেটাই নির্দেশ করে নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নের পথে রাষ্ট্র ও সমাজ কতটা সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
সমকাল: শুধু আইন করে কি এ থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব? অনেকেই সামাজিক জায়গা থেকে ব্যাপক প্রচারণা ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলছেন– বিষয়টা কীভাবে দেখেন?
রাশেদা কে চৌধুরী: গ্রামগঞ্জে বা বিভিন্ন জায়গায় আমরা ইদানীং একটা অন্য ধারা প্রবাহিত হতে দেখছি। কুমিল্লার চান্দিনায় একটা এনজিও নারী কর্মীকে বেঁধে রেখে, ভিডিও করা হলো; এটা কিন্তু আবার স্থানীয়রাই ঠেকিয়েছে। আবার তারা প্রতিবাদেও নেমেছে। এভাবে দুটি ধারা আছে– একদিকে তারা ধর্মকে অপব্যবহার করে নারী নির্যাতন করছে; অপরদিকে সেখান থেকেই প্রতিরোধ হচ্ছে। সামাজিক আন্দোলন প্রধানত স্থানীয়রাই করেন। আবার বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এটা করে থাকে। কুমিল্লার ঘটনায় প্রতিবাদ করার পর ওইদিন দু’জন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে যে পুলিশ কর্মকর্তা বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, তাঁকে ক্লোজ করা হয়। কাজেই সরকার চেষ্টা করলে যে পারে, তার উদাহরণ আমাদের কাছে ভূরি ভূরি আছে। কিন্তু আসল কথা তো শেষ পর্যন্ত পারিবারিক এবং সামাজিক সচেতনতা।
যেসব নারী এগিয়ে আসতে পেরেছেন তাদের পেছনে কিন্তু পুরুষও ছিলেন। যেমন রোকেয়া সাখাওয়াত কিন্তু তাঁর স্বামীর অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। যত নারী দেখবেন বাংলাদেশে পথিকৃৎ হিসেবে আছেন, শিরীন হকও একজন যার অনুপ্রেরণা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। অনেক সময় পুরুষের অবদান দৃশ্যের আড়ালে থেকে যায়। আমি যতটুকু এগিয়েছি আমার পিতা, আমার স্বামী, আমার সন্তানেরা উৎসাহ না দিলে হয়তো পারতাম না। এ জন্য বলতে হবে, সংগ্রামটা পুরুষের বিরুদ্ধে না, পুরুষতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে। পুরুষতান্ত্রিক মনমানসিকতা থেকে যারা বেরিয়ে আসতে পারেন, তারা পথিকৃৎ হতে পারেন। সেই সুযোগটা সবার জন্য থাকতে হবে। এটা গ্রামের একজন উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে সবাই– এই সহযোগিতা না পেলে এগোনো সম্ভব হয় না।
সমকাল: দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
রাশেদা কে চৌধুরী: সমকাল ও আপনাকে ধন্যবাদ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ রমব জ র দ র জন য উপব ত ত অবস থ ন ব যবস থ নববর ষ পর ব র পর য য় আম দ র গ রহণ সমক ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
আ.লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তাদেরকেই নির্ধারণ করতে হবে
আওয়ামী লীগকে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কিনা তা তাদেরকেই নির্ধারণ করতে হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরায় এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান। ‘মুহাম্মদ ইউনূস: রিয়েল রিফর্ম অর জাস্ট আ নিউ রুলিং ক্লাস ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে সাক্ষাৎকারটি গতকাল রোববার আলজাজিরার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে জুলাই বিপ্লব, সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়া, সাবেক সরকারের দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হবে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, এ প্রশ্নের জবাবের একটি অংশ আওয়ামী লীগকেই নির্ধারণ করতে হবে। দলটি আগে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে– তারা নির্বাচনে যোগ দেবে কিনা। তারা এখনও কিছু ঘোষণা করেনি। তা ছাড়া নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন কী প্রতিক্রিয়া দেয়, সেটাসহ নানা বিষয় সামনে আসতে পারে।
তাহলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তা নয়। অন্যান্য রাজনৈতিক দল আছে, যারা বলতে পারে যে, এই আইনের অধীনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং উদাহরণ সৃষ্টিকারী নির্বাচন উপহার দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের আগে সংস্কারের তালিকা ছোট হলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন এবং তালিকা বড় হলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনপ্রত্যাশা এখনও তুঙ্গে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান।
আলজাজিরার উপস্থাপক ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করেন, এটা কি বলা ঠিক যে, শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের ‘মধুচন্দ্রিমা’ এখন সম্ভবত শেষ হয়েছে? কিছু বেশ বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেগুলোর সুনির্দিষ্ট জবাব আপনাকে দিতে হবে। কারণ, পুরোনো ক্ষমতাধরদের প্রভাব রয়েছে, অনেকে রাজনৈতিক শূন্যতাকে কাজে লাগাতে চাইতে পারে।
জবাবে ড. ইউনূস বলেন, মধুচন্দ্রিমা শেষ হোক বা না হোক, বাংলাদেশের মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান। তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সরাসরি চলে যেতে এখনও বলছে না। বরং একটা ভালো নির্বাচন উপহার দিতে সরকারই নির্বাচন আয়োজনের দিকে যাচ্ছে। জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা এখনও বলছে না।
লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সমাধান কি বাংলাদেশ একা করতে পারবে? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতিসংঘের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কাজ করছি। তারা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কিছু বোঝাপড়া যাতে তৈরি হয়।
সাক্ষাৎকারে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ড. ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের প্রসঙ্গ ওঠে। ড. ইউনূস জানান, তিনি বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে বলেছিলেন তিনি। জবাবে মোদি বলেছিলেন, এটা তাঁর জন্য সম্ভব নয়। শেখ হাসিনা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে কিছু বললে, সেটি তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।
যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, একসঙ্গে কাজ করার নীতি নিয়ে আগাতে চাই। আমরা একসঙ্গেই পারস্পরিক সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ নিতে চাই।