বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-কে বরণ করে নিতে ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে বেরিয়েছে ঐতিহ্যবাহী ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’।

সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৯ টায় আনন্দ শোভাযাত্রাটি শুরু হয়। অন্যবারের তুলনায় এবারের আয়োজনে ভিন্নতা দেখা গেছে। আনন্দ শোভাযাত্রায় ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ দেখা গেছে। এছাড়া, চব্বিশের জুলাই আন্দোলনের চিহ্ন ফুটে উঠেছে। এতে শহীদ মুগ্ধের পানি বিতরণের স্মৃতি হিসেবে পানির বোতল দিয়ে লেখা হয়েছে, 'পানি লাগবে, পানি'।

এছাড়া, শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছে ২৮টি জাতিগোষ্ঠী, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং দেশি-বিদেশি অতিথিরা। রয়েছে ৭টি বড়, ৭টি মাঝারি ও ৭টি ছোট মোটিফ।

বড় মোটিফগুলোর মধ্যে রয়েছে কাঠের বাঘ, ইলিশ মাছ, টাইপোগ্রাফিতে ৩৬ জুলাই, পালকি, জুলাই আন্দোলনে নিহত মুগ্ধের পানির বোতল ইত্যাদি। বিশেষভাবে এবারের শোভাযাত্রায় ফিলিস্তিনের নিপীড়িত জনগণের প্রতি সংহতি জানিয়ে তরমুজের মোটিফ যুক্ত করা হয়েছে, যা সাম্প্রতিক সময়ের এক রাজনৈতিক বার্তাবাহী উপাদান। এছাড়া, রয়েছে সুলতানি ও মুঘল আমলের ১০টি মুখোশ, ৮০টি ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, ২০টি রঙিন চরকি, ২০০টি বাঘের মাথা, তালপাতার ৮টি সেপাই, ১০টি পলো, ৫টি তুহিন পাখি, ৬টি মাছ ধরার চাই, ৪টি পাখা, ২০টি মাথাল, ২০টি ঘোড়া, ৫টি লাঙল, ৫টি মাছের ডোলা এবং ১০০ ফুট দৈর্ঘ্যের লোকজ চিত্রাবলীর ক্যানভাস। 

চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হওয়া শোভাযাত্রাটি শাহবাগ মোড়, টিএসসি মোড়, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্র ও দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হয়। 

গত শনিবার ভোরে চারুকলা অনুষদের ভেতরে শোভাযাত্রার জন্য তৈরি করা দুটি মোটিফে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে ২০ ফুট উচ্চতার ‘স্বৈরাচারের মুখাকৃতি’ নামে মোটিফটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। তার পাশেই রাখা ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফের কিছু অংশ পুড়ে যায়। 

পরে দু’দিনের মধ্যে আবারও ‘ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতি’ হিসেবে ক্ষমতাচ্যুত শাসক শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি তৈরি করেন শিল্পীরা। 

মোটিফ পোড়ার পেছনে ‘ক্ষমতাচ্যুত সরকারের দোসরদের’ হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

ঢাকা/মামুন/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আনন দ শ ভ য ত র চ র কল

এছাড়াও পড়ুন:

প্রযুক্তি কি ডিমেনশিয়া বাড়িয়ে দিচ্ছে? ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে বিস্ময়কর তথ্য

প্রযুক্তির কল্যাণে হুটহাট বড় পরিবর্তন আসা নতুন কিছু নয়। করোনা মহামারির আগে বাসা থেকেও যে অফিস করা সম্ভব, সেটা মানতে চাইতেন না অনেকে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হোম অফিস হয়েছে স্বাভাবিক। একই ঘটনা ঘটেছে ডিজিটাল দুনিয়ায়। একসময় যেকোনো তথ্য খুঁজে বের করার জন্য শরণাপন্ন হতে হতো সার্চ ইঞ্জিনের; এআই সেই উত্তর সবিস্তারে দিয়ে দিচ্ছে মুহূর্তেই। ফলে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন শুধু জীবনকে সহজতর করছে না, বাঁচিয়ে দিচ্ছে সময় ও পরিশ্রমও। কিন্তু এই বেঁচে যাওয়া সময় ও পরিশ্রম মস্তিষ্কের ওপর ঠিক কীভাবে প্রভাব ফেলছে?

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস ও বেলোর ইউনিভার্সিটির এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, এত দিন প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মানব মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমার যে গুঞ্জন ভেসে বেড়িয়েছে, তার কোনো সত্যতা নেই। ‘নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ার’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ নামে যে হাইপোথিসিস আছে, তার কোনো প্রমাণ নেই গবেষকদের কাছে। বরং পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষদের স্মার্টফোন, কম্পিউটার কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার তাঁদের স্বাভাবিক স্মৃতিভ্রম অনেকটা স্তিমিত করে।

ডিজিটাল ডিমেনশিয়া কী

২০১২ সালে প্রথম ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ তত্ত্ব নিয়ে হাজির হন জার্মান স্নায়ুবিজ্ঞানী ও মনোবিদ ম্যানফ্রেড স্পিৎজার। মূলত যে হারে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে এবং মানুষ যান্ত্রিক পর্দার সামনে প্রতিদিনের বেশির ভাগ সময় কাটাচ্ছে, তাতে প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে অনেকটাই। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় তথ্যগুলোও মনে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে অনেকে। যেমন ফোন নম্বর। একসময় প্রিয়জনের ফোন নম্বর আমাদের মুখস্থ থাকত। এখন ফোন নম্বর ঠাঁই পায় মুঠোফোনের কনটাক্ট লিস্টে। ফোন নম্বর মনে রাখার চেষ্টাই করে না কেউ। আবার অনেকক্ষণ যান্ত্রিক পর্দার সামনে থাকলেও সেখান থেকে শেখার ইচ্ছা থাকে না অনেকের। চোখের সামনে যা আসছে, স্ক্রল করে চলে যাচ্ছে পরের কোনো কনটেন্টে। এতে মনোযোগ হারিয়ে যায় দ্রুত। আর প্রযুক্তির এমন অতিব্যবহার যে স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দিচ্ছে, একেই ধরা হয় ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ হিসেবে।

আরও পড়ুনডিজিটাল স্ক্রিন ব্যবহারের সময় ২০-২০-২০ নিয়ম মানাটা কেন জরুরি২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩গবেষণা যা বলছে

প্রায় ৪ লাখ ১১ হাজার পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষের ওপর চালানো ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে যে স্মৃতিভ্রম দেখা দেয়, তার অনেকটাই হ্রাস করে প্রযুক্তির ব্যবহার। প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের ফলে স্মৃতিশক্তি কমে আসার আশঙ্কা প্রায় ৫৮ শতাংশে নেমে আসে।

স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া বরং আরও কিছু সূচকের (যেমন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিক অবস্থা) ওপর নির্ভর করে। মজার ব্যাপার হলো, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার থেকেও বেশি কার্যকর প্রযুক্তির ব্যবহার।

তবে এর সবকিছুই নির্ভর করছে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের ওপর। পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিরা বেশির ভাগ সময়ই অনলাইনে কাটান ইউটিউব ভিডিও অথবা ফেসবুক স্ক্রল করে। এতে তাঁদের মস্তিষ্কের ব্যবহার হয় না বললেই চলে। মস্তিষ্ক সচল রাখতে পারে এমন কনটেন্টে তাঁদের মনোযোগ সরিয়ে নিতে পারলে আনন্দ যেমন পাবেন, তেমনই ডিজিটাল দুনিয়া সম্পর্কে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিও পালটে যাবে। এ ছাড়া অনলাইনের হাজারো গুজব ও উসকানি থেকে মুক্ত থাকবেন তাঁরা।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

আরও পড়ুনমাত্রাতিরিক্ত স্ক্রিনটাইম যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ