চারঘাটে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে সড়কের গাছ কাটার অভিযোগ
Published: 14th, April 2025 GMT
রাজশাহীর চারঘাটে সরকারি গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ভায়ালক্ষীপুর ইউনিয়নের বাঁকড়া বাজার এলাকায়।
সোমবার সকাল থেকে বাঁকড়া বাজার-রায়পুর সড়কের পাশে থাকা আটটি বিশাল সাইজের মেহগনি গাছ কেটে নিচ্ছিলেন ওই ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আকবর আলী ও ইউনিয়ন বিএনপি নেতা সহকারী অধ্যাপক আবদুল্লাহ হিল কাফি।
খবর পেয়ে সকাল ১০টার দিকে উপজেলার ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গিয়ে গাছ কাটতে নিষেধ করে আসেন। তবে তাঁদের নিষেধ অমান্য করে আরো শ্রমিক লাগিয়ে ও মেশিন দিয়ে গাছ কাটা চলমান রাখেন তারা।
বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আনুমানিক ২০০০ সালের দিকে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির মাধ্যমে বাঁকড়া-রায়পুর গ্রামীণ সড়কের পাশে মেহগনি গাছগুলো রোপণ করা হয়। সেই গাছগুলোর এখন প্রতিটির বাজার মূল্য প্রায় ৪০-৫০ হাজার টাকা। গাছগুলো নিজেদের দাবি করে কাটা শুরু করেছেন তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা হামিদুর রহমান বলেন, গাছগুলো নিজ হাতে রোপণ করেছি আমরা। কিন্তু হঠাৎ করেই সকাল থেকে কাটা শুরু করেছে আকবর আলী ও আবদুল্লাহ হিল কাফির লোকজন। শুনছি গাছগুলো নাকি তাঁদের জমিতে এজন্য তারা কেটে নিচ্ছে। অথচ গাছগুলো ছোট থেকে পরিচর্যা করে বড় করেছি আমরা।
গাছ কাটার বিষয়ে বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ হিল কাফি বলেন, শুধু গাছ না পুরো সড়কটিই আমাদের জমিতে। গাছ আমরা না লাগালেও জমির মালিকানা আমাদের। এজন্য এখন কেটে নিচ্ছি। সকালে প্রশাসনের কেউ গাছ কাটতে নিষেধ করেনি বলে দাবি করেছেন তিনি।
ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আকবর আলী বলেন, ২০১৭ সালেই ভূমি অফিস রায় দিয়েছে গাছের জমিগুলো আমাদের। আওয়ামী লীগ সরকার থাকায় এতোদিন গাছ কাটতে পারিনি। এখন উপযুক্ত সময় মনে হচ্ছে সেজন্য কাটছি। প্রশাসন থেকে বাধা দেওয়ার কিছু নাই।
উপজেলা বন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, গাছ কেটে নেওয়া হচ্ছে কিন্তু আমরা কিছুই জানি না। গাছগুলো সড়ক বিভাগ কিংবা আমাদের লাগানো। সরকারের রোপণকৃত গাছ এভাবে কেটে নেওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। ঘটনাস্থলে আমাদের লোকজন গেছে। গাছ কাটার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) আরিফ হোসেন বলেন, গাছগুলো একেবারে সড়কে পাশে অবস্থিত। স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে গাছকাটা বন্ধ করতে সকালে পাঠালেও তারা বন্ধ করেনি পরবর্তীতে বন বিভাগসহ সেখানে গিয়ে পুনরায় গাছ কাটা বন্ধ করা হয়েছে। যদি গাছগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে হয়ে থেকে তবে যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেওয়া হবে। কিন্তু অনুমোদন ছাড়া গাছ কাটা যাবে না।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ ছ ক ট র অভ য গ ব এনপ আম দ র ব এনপ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
পদ স্থগিত নেতার পক্ষে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির বিবৃতি, দ্রুত মুক্তি দাবি
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে সাদাপাথর লুটের মামলায় গ্রেপ্তার বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিনের মুক্তি দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে উপজেলা বিএনপি। গতকাল সোমবার উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়। কেন্দ্র থেকে পদ স্থগিত হওয়া একজন নেতার পক্ষে এমন বিবৃতি দেওয়ায় দলের ভেতরে ও বাইরে সমালোচনা শুরু হয়েছে।
গত শনিবার রাতে সিলেট নগরের আম্বরখানা এলাকা থেকে সাহাব উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৯)। তিনি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। গত ১১ আগস্ট কেন্দ্রীয় বিএনপি চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ দলীয় নীতি ও আদর্শবিরোধী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে সাহাব উদ্দিনের পদ স্থগিত করে।
গতকাল উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল মন্নান ও সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, সাহাব উদ্দিন বিগত স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামের অগ্রসৈনিক ও মিথ্যা মামলায় নির্যাতিত নেতা। তাঁকে সাদাপাথর লুটের মামলায় মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানোয় উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় এবং অবিলম্বে তাঁর মুক্তি দাবি করা হয়।
এ বিষয়ে কথা বলতে উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল মন্নানের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আকবরের সঙ্গে কথা হয়। তিনি সাহাব উদ্দিনের চাচাতো ভাই। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমরা মাঠে আছি। আমরা তাঁকে ভালোভাবে চিনি। তিনি কোনো লুটপাটে ছিলেন না। বরং লুটপাটের বিরুদ্ধে তাঁর নেতৃত্বে আমরা মিছিল, মানববন্ধন করেছি। এ তথ্য আমরা মৌখিকভাবে জেলা বিএনপিকেও জানিয়েছি।’
উপজেলা বিএনপির বিবৃতিতে সাহাব উদ্দিনের বিষয়ে ‘মিথ্যা অভিযোগে সদ্য পদ স্থগিত হয়েছে’ বলে দাবি করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁরা রিসিভ করেননি। তাই এ বিষয়ে জেলা বিএনপির অবস্থান ও কোনো বক্তব্য জানা যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে সাহাব উদ্দিনের পদ স্থগিত করা হয়েছে। এমন অবস্থায় উপজেলা বিএনপি কীভাবে ওই নেতার পক্ষে বিবৃতি দেয়, সেটা অবশ্যই সাংগঠনিকভাবে বিবেচনায় নেওয়া উচিত। ব্যক্তির অপকর্মের দায় কেন সংগঠন নেবে? বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত।
সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে সরকারি প্রায় ১৫০ একর জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। গত ১৭ মার্চ প্রথম আলোয় এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে ১৮ মার্চ সরকারি জমি উদ্ধারে অভিযানে নামে স্থানীয় প্রশাসন। প্রশাসন অভিযান চালিয়ে প্রায় ৭০ একর জমি উদ্ধার করে এবং ১০০টি পাথর ভাঙার যন্ত্র উচ্ছেদের পাশাপাশি প্রায় ৫০টি টিনশেড ঘর উচ্ছেদ করা হয়।
এ ছাড়া কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে সরকারি জমি দখলের ঘটনায় ১৯ মার্চ সাহাব উদ্দিনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় জেলা বিএনপি। পাশাপাশি অভিযোগ তদন্তে জেলা বিএনপির সহসভাপতি আশিক উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
গত ১০ এপ্রিল ভোলাগঞ্জে পাথর কোয়ারি পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত কমিটি। তদন্ত প্রতিবেদনে সাহাব উদ্দিন ও তাঁর স্বজনেরা জমি দখল ও লুটপাটে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, উপজেলা সভাপতির নেতৃত্বে এমন অপরাধ দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে।
সাহাব উদ্দিনকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাঁকে ‘সাদাপাথর লুটপাটে অভিযুক্ত অন্যতম মূলহোতা’ হিসেবে উল্লেখ করে। সাদাপাথর লুটের ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জ থানায় গত ১৫ আগস্ট খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা এক হাজার থেকে দেড় হাজার জনকে আসামি করা হয়।