ছাত্রলীগ সন্দেহে চবির সাবেক শিক্ষার্থীকে মারধর, জুতার মালা পরিয়ে পুলিশে সোপর্দ
Published: 15th, April 2025 GMT
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সাবেক এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। পরে জুতার মালা গলায় পরিয়ে তাকে পুলিশে সোপর্দ করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। গতকাল সোমবার রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে।
মারধরের শিকার শাওন হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের ছাত্র। পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান উপলক্ষে তিনি সোমবার ক্যাম্পাসে আসেন। পরে তিনি মারধরের শিকার হন। তাকে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রণী ব্যাংকের সামনে থেকে শাওনকে আটক করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এরপর তাকে মারধর করা হয়। পরে তাকে জুতার মালা পরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ফাঁড়িতে সোপর্দ করা হয়। পুলিশ তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে তাকে চমেকে নেওয়া হয়।
মারধর ও জুতার মালা পরানোর সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়টি শিকার করেছেন চবি শাখা ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মী। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছাত্রদল কর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী শামীম উদ্দিন সমকালকে বলেন, ‘২০২২ সালে চবিতে আমি গোপনে ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। এই তথ্য জানার পর শাওন আমাকে মারধর করেন এবং ক্যাম্পাসে আসতেও বাধা দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আমানত হলের ৩০২ নম্বর কক্ষে আমাকে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ রেজাউল হক রুবেল ও সাদাফ খানের উপস্থিতিতে আমাকে মারধর করা হয়। আমার পরিবার ক্ষমা চাওয়ায় পরে আমি ক্লাসে ফেরার সুযোগ পাই। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও কয়েকজন ছাত্রদল নেতাকে মারধরের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন তিনি।’
মারধরের বিষয়টি স্বীকার করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘ছাত্রদল নেতাকর্মীসহ অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে শাওনের বিরুদ্ধে। তাই ছাত্রদল ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা তাকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন।’
পুলিশে সোপর্দ করার সময় মারধরের শিকার শাওন হোসেন বলেন, ‘শামীমকে আমি আগে থেকেই চিনি। তবে কোনো নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতা নেই। আজ রাতে হঠাৎ কিছু লোক আমাকে আটক করে অগ্রণী ব্যাংকের পেছনে নিয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। এরপর তারা আমাকে সেন্ট্রাল ফিল্ডে এনে মারধর করে। আমার কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততাও নেই। মিথ্যা অভিযোগে মারধর করা হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আবু তৈয়ব বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। তবে তিনি আতঙ্কিত ছিলেন। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার বলেন, ‘ভুক্তভোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে প্রশাসনকে বিপাকে পড়তে হয়।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ছ ত রদল ম রধর ছ ত রদল র ন ত কর ম ম রধর র স পর দ
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।