চাষিদের হাতের পেঁয়াজ শেষ, এরপরই দাম বেড়ে দ্বিগুণ
Published: 17th, April 2025 GMT
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার গোলাই গ্রামের পেঁয়াজচাষি মজিবুল ইসলাম ১০ এপ্রিল রাজশাহীর পাইকারি বাজারে বিক্রির জন্য এনেছিলেন ৮ মণ পেঁয়াজ। ১৮ টাকা কেজির বেশি কোনো ব্যবসায়ী দাম বলেননি। রাগ করে পেঁয়াজের বস্তা আড়তে ফেলে তিনি বাড়ি চলে যান।
আড়তদার পরে ২০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি করে টাকা ওই চাষির বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এর মধ্যে বেড়ে গেছে পেঁয়াজের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে দ্বিগুণ।
গতকাল বুধবার বিক্রি করলে মজিবুল প্রতি কেজিতে আরও ২৫ হাজার টাকা বেশি পেতেন। চাষিরা বলছেন, তাঁদের হাতের পেঁয়াজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
মজিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, সেদিন খরচ বাদ দিয়ে তিনি ৮ মণ ৭ কেজি পেঁয়াজের দাম পেয়েছিলেন ১৫ হাজার ১৭০ টাকা। আজ বিক্রি করলে ৪০ হাজার টাকা পেতেন। তাড়াতাড়ি পেঁয়াজ কেন বিক্রি করেছিলেন জানতে চাইলে তিনি জানান, পেঁয়াজ সংরক্ষণের তাঁর কোনো জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে ওই দামে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে এই পেঁয়াজচাষি বলেছিলেন, রাজশাহীর পাইকারি বাজারে সেদিন সর্বনিম্ন ১০ টাকা কেজি থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। দু–একজন ২৮ টাকা কেজি বিক্রি করতে পেরেছেন। সাধারণ পেঁয়াজের বাজার ছিল ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি।
গতকাল রাজশাহীর পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেঁয়াজ ৩৮ টাকা থেকে ৪৮ টাকা কেজি দরে কেনাবেচা হয়েছে। মজিবুল ইসলাম বলেন, এবার তাঁর ৪৫ মণ পেঁয়াজ হয়েছে। সবই বিক্রি করে দিয়েছেন। আর ১৫ মণ মাত্র ঘরে আছে। তিনি জানান, ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ মজুদ করা শুরু করেছেন। আর দামও বাড়া শুরু করেছে।
এদিকে সরকার সাধারণ চাষিদের পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ করার জন্য রাজশাহীতে ১০০টি মডেল ঘর নির্মাণ করেছে। চলতি মাসের শেষ নাগাদ সে ঘরগুলো পেঁয়াজ রাখার উপযোগী হবে। চাষিরা সেই সুবিধা পুরোপুরি পেলেন না।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর মুড়িকাটা ও চারা পেঁয়াজ মিলে মোট ১৮ হাজার ৫৮৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল। পেঁয়াজ চাষ হয়েছে ২১ হাজার ৫০৬ হেক্টর জমিতে। পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪ লাখ ৭ হাজার ৩০০ টন। বুধবার পর্যন্ত ৭৮ শতাংশ পেঁয়াজ আহরণ করা হয়েছে। এখনো ২২ শতাংশ পেঁয়াজ মাঠে রয়েছে।
রাজশাহীর সবচেয়ে বড় পেঁয়াজের মোকাম জেলার পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজার। মেসার্স বানেশ্বর বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম বুধবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার বানেশ্বর মোকামে ১ হাজার ৮৬২ টাকা থেকে ১ হাজার ৮৯২ টাকা মণ হিসেবে পেঁয়াজ কিনেছেন। আজ বুধবার জেলার দুর্গাপুর বাজারে ১ হাজার ৯০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২ হাজার ১৫০ টাকা মণ দরে পেঁয়াজ কিনেছেন। এই হিসাবে পাইকারি বাজারেই কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম পড়ছে ৪৭ টাকা থেকে প্রায় ৫৪ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম লাফ দিয়ে বেড়ে গেল। অনেক ব্যবসায়ী পেঁয়াজ গুদামজাত করছেন, এর ফলে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে বলে দাবি আরিফুলের।
তবে বড় চাষিরা বলছেন, প্রান্তিক চাষিরা ভালো দাম না পেলেও দাম বাড়ার কারণে বড় চাষিরা এবার পেঁয়াজ থেকে ভালো মুনাফা করতে পারবেন। রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার চাষি মামুন অর রশিদ এবার ৪ বিঘা ১২ কাঠা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। তিনি প্রায় ৫০০ মণ পেঁয়াজ পাওয়ার আশা করছেন। ইতিমধ্যে ৩০০ মণ পেঁয়াজ তুলেছেন। শুধু শ্রমিক খরচ দেওয়ার জন্য ৩০ মণ পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন। বাকি পেঁয়াজ ‘এয়ার ফ্লো’ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
এদিকে সরকার সাধারণ কৃষকদের পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণের জন্য ১০০টি মডেল ঘর নির্মাণ করেছে। এসব ঘরে কী পরিমাণ পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেছেন এর হিসাব জানতে চাইলে জেলা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ বিপণন কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘কৃষক পর্যায়ে পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ পদ্ধতি আধুনিকায়ন এবং বিপণন কার্যক্রম উন্নয়ন প্রকল্প’-এর আওতায় রাজশাহী জেলার বাগমারা, দুর্গাপুর ও পুঠিয়া উপজেলায় মোট ১০০টি পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ মডেল ঘর নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। বেশির ভাগ ঘরের নির্মাণকাজ শেষ। কয়েকটি ঘরের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে।
একেকটি মডেল ঘরে ৩০০ থেকে ৪৫০ মণ পেঁয়াজ ৬ থেকে ৯ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা সম্ভব উল্লেখ করে সানোয়ার হোসেন বলেন, রাজশাহী জেলার কৃষকেরা এখন পর্যন্ত পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ মডেল ঘরে পেঁয়াজ সংরক্ষণের কার্যক্রম চলমান রেখেছেন। এপ্রিল মাসের শেষ নাগাদ এই ১০০টি পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ মডেল ঘরে প্রায় ৩০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার মণ পেঁয়াজ সংরক্ষিত হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন সানোয়ার।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে সালমা প্রথম আলোকে বলেন, পেঁয়াজ এখনো মাঠে রয়েছে, কৃষকের কাছেও রয়েছে। কৃষক যাতে উৎপাদনের শুরুতে ভালো দাম পায়, সে জন্য তাঁরা এয়ার ফ্লো পদ্ধতিতে কৃষকের বাড়িতে পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার নির্মাণের জন্য উদ্বুদ্ধ করছেন। এবার মুড়িকাটা পেঁয়াজ অনেক উৎপাদিত হয়েছিল, সে জন্য চারা পেঁয়াজ ওঠার প্রথম দিকে পেঁয়াজের দামটা কম ছিল। এবার পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে না। তাই এখন চাষিরা একটু লাভের মুখ দেখবেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক ব যবস য় ল ইসল ম কর ছ ন র জন য করছ ন উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে ৪টি আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন যারা
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের মধ্যে চারটি আসনে বিএনপির দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করেছে বিএনপির হাইকমান্ড। শুধু নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি।
সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসময় বিএনপির জাতীয় স্থানীয় কমিটির একাধিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী তালিকায়, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভূঁইয়া, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে নজরুল ইসলাম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ-৩ আজহরুল ইসলাম মান্নান এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ মাসুদুজ্জামান মাসুদ ধানের শীষ প্রতীকের সম্ভাব্য প্রার্থী।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে (সদর-বন্দর) মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন তিনবারের সংসদ সদস্য আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান, সাবেক সহসভাপতি আতাউর রহমান মুকুল, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আব্দুস সবুর খান সেন্টু, বর্তমান সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু এবং বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ী আবু জাফর আহমেদ বাবুল।
নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনটি এখনো ফাঁকা রেখেছে দলটি। ধারণা করা হচ্ছে এ আসনটিতে গতবারের মতো জোটের প্রার্থী ছাড় পাবেন। তবে এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও ব্যবসায়ী শাহ্ আলম, জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজিব, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী ভূঁইয়া, সদ্য সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীও রয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ-৩ (সিদ্ধিরগঞ্জ-সোনারগাঁ) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম ও যুব উন্নয়নের সাবেক মহাপরিচালক এসএম ওলিউর রহমান আপেল।
নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খাঁন আঙ্গুর ও তার ভাতিজা বিএনপির সহঅর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন।
নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জে) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান মনির, মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন।
এদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, “দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২৩৮ আসনে আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করছি। আমাদের সঙ্গে যারা আন্দোলন করেছেন, তারা যে সমস্ত আসনে আগ্রহী সে সমস্ত আসনে প্রার্থী দেই। আমরা আলোচনার মাধ্যমে প্রার্থী ঘোষণা করবো। এটা আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা, এর মধ্যেই পরিবর্তন হতে পারে।
বিশেষ করে, আমাদের শরিক দলগুলোর সাথে আলোচনা এবং স্থায়ী কমিটি যদি মনে করে কোনো আসনে পরিবর্তন আনবে, সেক্ষেত্রে নিয়ম মেনে পরিবর্তন আনবেন।”