চট্টগ্রামে মোস্তফা হাকিম কলেজ ও আকবর শাহ থানার সামনে কলেজশিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদলের অতর্কিত হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আজ শুক্রবার বিকেলে নগরের জামালখান এলাকায় এ কর্মসূচির আয়োজন করে সংগঠনটির চট্টগ্রাম মহানগর শাখা।

এদিন বেলা তিনটার দিকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন নেতা-কর্মীরা। এতে বক্তব্য দেন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক খান তালাত মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘যারা জুলাই আন্দোলনে আমাদের সহযোদ্ধা ছিল, আজ তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হচ্ছে। যে গুটিকয়েক সদস্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম করছেন, আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি।’

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম নগরের উত্তর কাট্টলী আলহাজ মোস্তফা হাকিম ডিগ্রি কলেজে হামলার ঘটনায় অভিযোগ দেওয়াকে কেন্দ্র করে থানা ঘিরে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেন ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। গতকাল সন্ধ্যা ছয়টা থেকে নগরের আকবর শাহ থানার ভেতরে ও বাইরে অবস্থান করে দুই পক্ষ। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর রাত ১১টার দিকে থানা প্রাঙ্গণ ছাড়ে তাঁরা। এর আগে সেখানে মারুফ নামের এক কর্মী আহত হন।

সমাবেশে খান তালাত মাহমুদ বলেন, ‘পুরোনো সংস্কৃতি চর্চা করতে চাইলে আমরা আবারও জুলাইতে ফিরে যাব। আমরা আপনাদের দলের বিরুদ্ধে নই, আমরা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। আপনারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিন, নয়তো আওয়ামী লীগ যে জায়গায় গেছে, আপনাদেরও সেই জায়গায় যেতে হবে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম মহানগরে মুখ্য সংগঠক তাওসিফ ইমরোজের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন নগরের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ইবনে হোসেন জিয়াদ, মুখপাত্র ফাতেমা খানম, দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক জোবাইর হোছেন, হামলায় আহত সাইফ উদ্দিন মারুফ প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ‘ছাত্রদল আমাদের বন্ধুপ্রতিম সংগঠন। আমরা আপনাদের প্রতিপক্ষ মনে করি না। আপনারা এর আগে কুয়েট, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে আমাদের ভাইদের ওপর হামলা করেছেন। গতকাল মোস্তফা হাকিম কলেজ ও আকবর শাহ থানায় আমাদের ভাইদের ওপর হামলা করেছেন। আপনারা সন্ত্রাসবাদের পক্ষে হয়ে, আওয়ামী লীগের হয়ে আমাদের বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন।’

সমাবেশের পর একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি জামালখান মোড় হয়ে চেরাগী পাহাড় মোড় ঘুরে আন্দরকিল্লা মোড়ে শেষ হয়।

যা হয়েছিল কলেজে ও থানায়

মূলত গতকাল দুপুরে নগরের উত্তর কাট্টলী আলহাজ মোস্তফা হাকিম ডিগ্রি কলেজে এক শিক্ষিকাকে কলেজে আসতে নিষেধ করার প্রতিবাদ করলে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদলের হামলার অভিযোগ ওঠে। শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, ছাত্রদলের কর্মীরা কলেজের ভেতরে ঢুকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছেন। একই ঘটনায় কলেজে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপির প্রতিনিধিরা গেলে তাঁদের ওপরও হামলার অভিযোগ ওঠে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যা ছয়টার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা আকবর শাহ থানায় জড়ো হন। তাঁরা থানায় ঢুকলে ছাত্রদল ও বিএনপির লোকজন দলীয় স্লোগান দেওয়া শুরু করেন। বৈষম্যবিরোধীদের কেন থানায় ঢুকতে দেওয়া হলো, এ নিয়ে তাঁরা হট্টগোল শুরু করেন। পরে বৈষম্যবিরোধী ও এনসিপির নেতা-কর্মীদের থানার ভেতরে নিয়ে যায় পুলিশ। এ সময় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা থানার বাইরে অবস্থান করছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আকবর শ হ থ ন অবস থ ন ছ ত রদল দ র ওপর কর ম র আম দ র নগর র গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

পদ স্থগিত নেতার পক্ষে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির বিবৃতি, দ্রুত মুক্তি দাবি

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে সাদাপাথর লুটের মামলায় গ্রেপ্তার বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিনের মুক্তি দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে উপজেলা বিএনপি। গতকাল সোমবার উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়। কেন্দ্র থেকে পদ স্থগিত হওয়া একজন নেতার পক্ষে এমন বিবৃতি দেওয়ায় দলের ভেতরে ও বাইরে সমালোচনা শুরু হয়েছে।

গত শনিবার রাতে সিলেট নগরের আম্বরখানা এলাকা থেকে সাহাব উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৯)। তিনি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। গত ১১ আগস্ট কেন্দ্রীয় বিএনপি চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ দলীয় নীতি ও আদর্শবিরোধী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে সাহাব উদ্দিনের পদ স্থগিত করে।

গতকাল উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল মন্নান ও সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, সাহাব উদ্দিন বিগত স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামের অগ্রসৈনিক ও মিথ্যা মামলায় নির্যাতিত নেতা। তাঁকে সাদাপাথর লুটের মামলায় মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানোয় উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় এবং অবিলম্বে তাঁর মুক্তি দাবি করা হয়।

এ বিষয়ে কথা বলতে উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল মন্নানের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আকবরের সঙ্গে কথা হয়। তিনি সাহাব উদ্দিনের চাচাতো ভাই। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমরা মাঠে আছি। আমরা তাঁকে ভালোভাবে চিনি। তিনি কোনো লুটপাটে ছিলেন না। বরং লুটপাটের বিরুদ্ধে তাঁর নেতৃত্বে আমরা মিছিল, মানববন্ধন করেছি। এ তথ্য আমরা মৌখিকভাবে জেলা বিএনপিকেও জানিয়েছি।’

উপজেলা বিএনপির বিবৃতিতে সাহাব উদ্দিনের বিষয়ে ‘মিথ্যা অভিযোগে সদ্য পদ স্থগিত হয়েছে’ বলে দাবি করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁরা রিসিভ করেননি। তাই এ বিষয়ে জেলা বিএনপির অবস্থান ও কোনো বক্তব্য জানা যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে সাহাব উদ্দিনের পদ স্থগিত করা হয়েছে। এমন অবস্থায় উপজেলা বিএনপি কীভাবে ওই নেতার পক্ষে বিবৃতি দেয়, সেটা অবশ্যই সাংগঠনিকভাবে বিবেচনায় নেওয়া উচিত। ব্যক্তির অপকর্মের দায় কেন সংগঠন নেবে? বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত।

সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে সরকারি প্রায় ১৫০ একর জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। গত ১৭ মার্চ প্রথম আলোয় এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে ১৮ মার্চ সরকারি জমি উদ্ধারে অভিযানে নামে স্থানীয় প্রশাসন। প্রশাসন অভিযান চালিয়ে প্রায় ৭০ একর জমি উদ্ধার করে এবং ১০০টি পাথর ভাঙার যন্ত্র উচ্ছেদের পাশাপাশি প্রায় ৫০টি টিনশেড ঘর উচ্ছেদ করা হয়।

এ ছাড়া কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে সরকারি জমি দখলের ঘটনায় ১৯ মার্চ সাহাব উদ্দিনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় জেলা বিএনপি। পাশাপাশি অভিযোগ তদন্তে জেলা বিএনপির সহসভাপতি আশিক উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

গত ১০ এপ্রিল ভোলাগঞ্জে পাথর কোয়ারি পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত কমিটি। তদন্ত প্রতিবেদনে সাহাব উদ্দিন ও তাঁর স্বজনেরা জমি দখল ও লুটপাটে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, উপজেলা সভাপতির নেতৃত্বে এমন অপরাধ দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে।

সাহাব উদ্দিনকে গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাঁকে ‘সাদাপাথর লুটপাটে অভিযুক্ত অন্যতম মূলহোতা’ হিসেবে উল্লেখ করে। সাদাপাথর লুটের ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জ থানায় গত ১৫ আগস্ট খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা এক হাজার থেকে দেড় হাজার জনকে আসামি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পদ স্থগিত নেতার পক্ষে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির বিবৃতি, দ্রুত মুক্তি দাবি