ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কখনোই আপস করতেন না- এমন মন্তব্য করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক বলেছেন, 'মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কখনোই আপস করতেন না। সেটা যতবড় শক্তিই হোক না কেন। এ কারণেই তিনি বাংলাদেশের তরুণদের কাছে অক্ষয় ও অমর হয়ে থাকবে।'

শুক্রবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের জুলাই বিপ্লব স্মৃতি হলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা.

জাফরুল্লাহ চৌধুরীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নাগরিক স্মরণ সভা এবং চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক শেখ মোজাফফর আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।

উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম আরও বলেন, 'প্রধান উপদেষ্টা ড. মো. ইউনুস এবং ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মধ্যে অত্যন্ত নিবিড় সখ্যতা ছিল। এটি কোনো ব্যক্তি সখ্যতা না, এটি ছিল অন্তরের সখ্যতা।'

অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতেন জাফরুল্লাহ- এমন মন্তব্য তরে উপদেষ্টা বলেন, 'ড. মো. ইউনুস, ফজলে হাসান আবেদ এবং ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মিলে গণস্বাস্থ্যে ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপন করেছিলেন। তিনি সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে আমাদের অণুপ্রেরণা যোগাতেন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গণমানুষের বিরুদ্ধে একটি কাজও করছেনা।'

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর রাজনৈতিক ভূমিকা, সামাজিক ভূমিকা এবং নৈতিকতার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, 'ডা. জাফরুল্লাহ কখুব স্পষ্টভাষী ছিলেন। সময় এবং পরিবর্তনের সঙ্গে প্রতিটি সংগ্রামে ওনাকে আমরা কাছে পেয়েছি। এই গুণী ব্যক্তিকে যতটা আমাদের গুরুত্ব দেওয়ার কথা ছিল, ততটা আমরা দিতে পারিনি। যেখানে আমাদের অর্থনীতি মাল্টিন্যাশনালদের হাতে সে জায়গায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন আলাদা।'

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতালের ম্যানেজিং ট্রাস্টি অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেন, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি শিরিন পারভিন হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, চট্টগ্রামের সিনিয়র সাংবাদিক   জাহিদুল করিম কচি প্রমুখ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড জ ফর ল ল হ চ ধ র উপদ ষ ট ফ র ক ই আজম জ ফর ল ল হ চ ধ র উপদ ষ ট ব ষয়ক

এছাড়াও পড়ুন:

বকুলতলায় বৃষ্টির সুর

নীল-সাদা পোশাকে সজ্জিত হয়ে নানা বয়সী মানুষ এসে জড়ো হতে থাকেন। যেন শহরের হৃদয়ে নেমে আসে গ্রামবাংলার ঘ্রাণ। মেঘলা আকাশের নিচে কণ্ঠে সুর, পায়ে তাল, কল্পনায় বর্ষার রূপই দেখা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় গতকাল রোববার এভাবে উদযাপন হলো ‘বর্ষা উৎসব ১৪৩২’।
বর্ষা উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে আষাঢ়ের প্রথম দিনে রাগ, রস ও রং মিলে তৈরি হলো এক বর্ষামুখর ক্যানভাস। এবারের আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন নবীন সংগীতশিল্পী সোহানী মজুমদার। সেতারের কোমল তারে বেজে ওঠে রাগ ‘আহীর ভৈরব’। রাগভিত্তিক এ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে মিলে যায় প্রাচ্যের সংগীত ঐতিহ্য ও বর্ষার আধ্যাত্মিকতা। সেই মুহূর্তে বকুলতলায় যেন ভেসে বেড়ায় বৃষ্টির সুর আর আকাশের নরম আলো।
‘বর্ষাকথন’ পর্বে বর্ষার ভাবনা, পরিবেশ ও সময়ের প্রেক্ষাপটে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি শিল্পী কাজী মিজানুর রহমান।
ঘোষণা পাঠ করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট এবং সভাপতিত্ব করেন লেখক ও গবেষক অধ্যাপক ড. নিগার চৌধুরী। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন সংস্কৃতিকর্মী নুসরাত ইয়াসমিন রুম্পা।
ঘোষণাপত্র পাঠে জানানো হয়, ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে আজ ঋতুচক্রে দেখা দিচ্ছে অসামঞ্জস্য। গ্রীষ্ম হয়ে উঠছে খরতর, বর্ষা রুষ্ট, বসন্ত ক্ষীয়মাণ। এই পরিবর্তনের মূলে রয়েছে মানুষের সীমাহীন ভোগবাদী আচরণ, প্রকৃতির ওপর অনবরত অনাচার। ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত, সমুদ্রজল স্ফীত, ওজোনস্তর ক্ষতিগ্রস্ত– প্রকৃতি আজ সংকটে।
এ প্রসঙ্গে মানজার চৌধুরী সুইট সমকালকে বলেন, এ উৎসব শহুরে জীবনে আমরা প্রায় ১৮ বছর ধরে পালন করে আসছি। উৎসবের শিকড় নিহিত রবীন্দ্রনাথের ‘বর্ষামঙ্গল’-এ। আমরা তারই উত্তরসূরি হয়ে আষাঢ়ের প্রথম দিনটিকে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিই। এতে শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, বরং তার সংকটও তুলে ধরা হয়। আমরা চাই, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক 
গড়ুক, তার বিপন্নতাকে বুঝুক এবং তা রক্ষায় সক্রিয় হোক।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম, এ ধরনের উৎসবই সেই স্বপ্নের বাস্তব রূপ। শিকড়ের দিকে ফিরে যাওয়ার মধ্যে নিহিত আমাদের সংস্কৃতি ও চেতনার পুনর্জাগরণ।
বর্ষা মানে নতুন জন্মের বারতা। সেই বারতা ছড়িয়ে দিতে উৎসবে প্রতীকীভাবে শিশু-কিশোরের হাতে তুলে দেওয়া হয় বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছের চারা। এই চারাগুলো শুধু বৃক্ষ নয়, বরং হয়ে উঠেছে সবুজ ভবিষ্যতের আশ্বাস।
উৎসবে একক সংগীত পরিবেশন করেন ইয়াসমিন মুশতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী ও নবনীতা জাইদ চৌধুরী অনন্যা।
রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন অণিমা রায়, শামা রহমান, মকবুল হোসেন ও ফেরদৌসী কাকলি। লোকসংগীত পরিবেশন করেন বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, শ্রাবণী গুহ রায় ও এস এম মেজবাহ। আধুনিক গান গাইতে মঞ্চে ওঠেন রত্না সরকার।
দলীয় সংগীতে অংশ নেয় সীমান্ত খেলাঘর আসর (শিশু-কিশোর), সুর বিহার, বহ্নিশিখা, সুর নন্দন এবং সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। আবৃত্তি পরিবেশন করেন নায়লা তারাননুম চৌধুরী কাকলি ও আসান উল্লাহ তমাল। শিল্পবৃত্ত শিশু-কিশোর দল পরিবেশন করে আবৃত্তি ও নৃত্য কোলাজ।
নৃত্য পরিবেশনায় অংশ নেয় ধৃতি নর্তনালয়, নৃত্যাক্ষ, স্পন্দন, বেমুকা ললিতকলা কেন্দ্র, সিনথিয়া একাডেমি অব আর্টস ও নৃত্যম।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ