ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে চার লেনবিশিষ্ট আধুনিক মহাসড়কে উন্নীতকরণ একটি জাতীয় উন্নয়ন প্রকল্পমাত্র নয়; এটি আঞ্চলিক সংযুক্তি, আন্তরাষ্ট্রীয় বাণিজ্য ও কৌশলগত পরিবহনব্যবস্থার অংশরূপে বিবেচ্য। এশিয়ান হাইওয়ে, বিমসটেক করিডর ও সার্ক হাইওয়ে করিডরের সঙ্গে এই মহাসড়কের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা থাকার পরও প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এই প্রকল্প সম্পর্কে যেভাবে গুরুতর প্রশ্ন ও সংশয় উত্থাপিত হচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে গভীর উদ্বেগের বিষয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল প্রকল্প পরিকল্পনার প্রারম্ভেই সড়ক নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনানিরোধকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া; দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রকৃত চিত্রটি ভিন্ন।
আধুনিক ও প্রয়োজনভিত্তিক পদচারী-সেতু বা পাতালপথের পর্যাপ্ত সংখ্যা সড়কটির পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ফলে প্রধান মহাসড়কে ধীরগতির যান ও পদচারীদের সরাসরি প্রবেশের মাধ্যমে নৈমিত্তিকভাবে প্রাণঘাতী পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, এমনটি পূর্বানুমেয় ছিল। এ সড়কের পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থিত ৬৫০টির অধিক সংযোগ-সড়ক, শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিল্প এলাকা ও হাটবাজারে প্রতিনিয়ত জনচলাচল ঘটছে এবং এই বাস্তবতা উপেক্ষা করেই নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছে। যে স্বল্পসংখ্যক পদচারী-সেতু নির্মাণের কথা বলা হয়েছে, সেগুলোরও নকশা গতানুগতিক ও প্রযুক্তিগতভাবে অপর্যাপ্ত, যা দুর্বল, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চলাচলের উপযোগী নয়।
গত পাঁচ বছরে এই সড়কে সংঘটিত ৩৫৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন চার শতাধিক ব্যক্তি। এমন ভয়াবহ পরিসংখ্যান থাকা সত্ত্বেও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রস্তাবিত উড়ালসড়ক, পাতালপথ ও উন্নত মানের পদচারী-সেতুর অধিকাংশ সুপারিশই ব্যয় সংকোচনের যুক্তিতে অবজ্ঞার সঙ্গে বাতিল করা হয়। অথচ সড়ক নিরাপত্তায় ব্যয় কখনোই ব্যয় নয়; বরং তা সুদূরপ্রসারী বিনিয়োগ—মানবজীবন রক্ষার পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনীতির গতিশীলতাকেও তা বহুগুণে ত্বরান্বিত করে।
২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনে সড়কের নকশা, নির্মাণ বা রক্ষণাবেক্ষণে গাফিলতিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত করা হয়েছে। এ অবস্থায় প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি যেহেতু এখনো মাত্র ১৪ শতাংশ, এখনো যথাযথ সংশোধন ও পুনর্বিবেচনার সময় আছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষের উচিত, অবিলম্বে বুয়েটসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কারিগরি প্রতিষ্ঠানের সুপারিশের আলোকে মহাসড়কের নকশাকে জনসুলভ, নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব করে পুনর্গঠন করা। অত্যাধুনিক র্যাম্পযুক্ত পদচারী–সেতু, প্রয়োজনীয় সংযোগ সড়কে নিয়ন্ত্রিত প্রবেশপথ, গবাদিপশু ও কৃষিপণ্য পরিবহনের জন্য স্বতন্ত্র লেন এবং লোকাল সার্ভিস রোড নির্মাণ করে দুর্ঘটনার ঝুঁকি হ্রাস করা যেতে পারে। স্থানীয় জনগণের নিরাপদ পারাপার নিশ্চিতকরণে নির্দিষ্ট বিরতিতে ওভারপাস বা আন্ডারপাস অন্তর্ভুক্ত করা আবশ্যক।
পর্যাপ্ত সিসিটিভি, গতিনিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ও বহুমাত্রিক সড়ক-নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে মহাসড়কজুড়ে নিয়ন্ত্রিত ও মনিটরযোগ্য পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি। মনে রাখা দরকার, উন্নয়ন প্রকল্প কেবল পরিকাঠামো নির্মাণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং পরিকাঠামোয় কতটুকু মানবিকতা, নিরাপত্তা ও দীর্ঘস্থায়িত্ব সংযোজিত হলো, তার ওপর এর সার্থকতা নির্ভর করে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র ঘটন প রকল প পদচ র সড়ক র
এছাড়াও পড়ুন:
চরাঞ্চলের মানুষের স্বার্থ রক্ষা করে উৎসবমুখর পরিবেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি
কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের মানুষের ভোটাধিকারের নিশ্চয়তা ও নির্বাচনের প্রচার–প্রচারণায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। নির্বাচনে পেশিশক্তির ব্যবহার বন্ধ করে ভোটারদের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশে দ্রুত গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা।
আজ মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) কুড়িগ্রামে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতকরণে নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এ দাবিগুলো উঠে আসে। বক্তারা আগামী জাতীয় নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে সংসদীয় আসনে নারী আসন বৃদ্ধি, যুব প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো, সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক মানুষের স্বার্থ রক্ষার সুপারিশ করেন।
কুড়িগ্রাম জেলা সদরের উপজেলা অফিসার্স ক্লাব মিলনায়তনে বেলা ১১টা থেকে জেলা পর্যায়ের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় একশনএইডের নেতৃত্বে সুশীল প্রকল্পের অধীনে বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন ‘উদয়াঙ্কুর সেবা সংস্থা (ইউএসএস)’ এ বৈঠকের আয়োজন করে। এ আয়োজনের প্রচার সহযোগী হিসেবে রয়েছে প্রথম আলো।
বিএনপির ৩১ দফায় নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীর মর্যাদার কথা বলা আছে উল্লেখ করে কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাসিবুর রহমান বৈঠকে বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আমাদের দল নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের পাশাপাশি দলীয় মনোনয়নে নারীদের জন্য সুযোগ রাখবে। অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনে চরাঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, সংখ্যালঘু ও যুবসমাজের প্রতিনিধি আরও বাড়ানো হবে।’
‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতকরণে নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। আজ মঙ্গলবার সকালে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা অফিসার্স ক্লাব হলরুমে