অন্তর্বর্তী যুদ্ধবিরতি নয় পূর্ণাঙ্গ চুক্তি চায় হামাস
Published: 19th, April 2025 GMT
গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার মধ্যেই দু’পক্ষের মধ্যে যে যুদ্ধবিরতি আলোচনা চলছে, তা শর্তের আবর্তে আটকে আছে। ইসরায়েল একটি অন্তর্বর্তী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিল, যা প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস। ফিলিস্তিনের সংগঠনটি বলছে, তারা গাজায় যুদ্ধ বন্ধে একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তি চায়। পাশাপাশি ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনিদের বিনিময়ে তাদের হাতে থাকা বাকি সব জিম্মিকে তারা মুক্তি দিতে আগ্রহী।
টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে গাজায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটির প্রধান খলিল আল-হায়া জানান, তারা আর কোনো ধরনের অন্তর্বর্তী চুক্তিতে রাজি হবেন না। হামাসের যে দলটি যুদ্ধবিরতি নিয়ে মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে, হায়া তারও নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গতকাল শুক্রবার রয়টার্স জানায়, হামাসের এ অবস্থান ইসরায়েল মেনে নেবে না এবং গাজায় তেল আবিবের সাম্প্রতিক অভিযান আরও দীর্ঘায়িত হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
হায়া বলেন, গাজায় যুদ্ধ বন্ধ, ইসরায়েলের কারাগারে থাকা সব ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি ও গাজা পুনর্গঠনের বিনিময়ে সব জিম্মিকে ছাড়তে হামাস যত শিগগির সম্ভব ‘পূর্ণাঙ্গ চুক্তির আলোচনায়’ বসতে চায়। তিনি বলেন, ‘নিজেদের রাজনৈতিক এজেন্ডার ঢাল হিসেবে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তাঁর সরকার এসব সাময়িক চুক্তিকে ব্যবহার করছে; সব জিম্মিকে বলি দিয়ে হলেও তারা এটা করতে চায়। আমরা এ নীতি বাস্তবায়নের অংশ হতে চাই না।’
১৫ মাসের যুদ্ধ শেষে চলতি বছরের জানুয়ারিতে হামাস ও ইসরায়েল একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছায়। গত ১৮ মার্চ ওই চুক্তি লঙ্ঘন করে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে না গিয়ে ইসরায়েল প্রথম ধাপের সম্প্রসারণ করতে চাচ্ছিল। দ্বিতীয় ধাপ অনুযায়ী, গাজায় হামাসের হাতে থাকা সব জিম্মির মুক্তির পাশাপাশি গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল। মিসরের মধ্যস্থতাকারীরা এখনও জানুয়ারিতে হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি পুনরুজ্জীবনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে তা সফল হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
হামাসের অবস্থানের সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জেমস হিউইট বলেন, হামাসের মন্তব্য প্রমাণ করে, তারা শান্তিতে নয়, বরং চিরস্থায়ী সহিংসতায় আগ্রহী। ট্রাম্প প্রশাসনের শর্ত বদলায়নি– জিম্মিদের মুক্তি দাও, নতুবা নরকের মুখোমুখি হও।
যুদ্ধবিরতি পুনরুজ্জীবিত করা ও ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির লক্ষ্যে গত সোমবার কায়রোতে হওয়া সর্বশেষ রাউন্ডের আলোচনায় কোনো ধরনের সমঝোতাই হয়নি। জিম্মিদের মুক্তি ও যুদ্ধ বন্ধে অপ্রত্যক্ষ আলোচনা শুরু করতে ইসরায়েল ৪৫ দিনের একটি অন্তর্বর্তী যুদ্ধবিরতি চেয়েছিল। কিন্তু তাদের দেওয়া বেশ কিছু শর্তে আপত্তি আছে হামাসের। তেল আবিবের শর্তগুলোর মধ্যে একটি ছিল– হামাসের নিরস্ত্রীকরণ। ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীটি বারবারই বলেছে, ‘অস্ত্র সমর্পণ’ এমন একটি ‘লাল দাগ’, যা নিয়ে আলোচনা তো দূর, এটি বিবেচনাযোগ্যও নয়।
এ অবস্থায় গাজায় অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। গতকাল শুক্রবার উপত্যকায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় একই পরিবারের ১০ জনসহ অন্তত ৩৪ জন নিহত হয়েছেন। গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সির মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল টেলিগ্রাম পোস্টে বলেন, ‘আমাদের কর্মীরা ১০ জনের মরদেহ ও অনেক মানুষকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছেন। খান ইউনিসের বানি সুহাইলায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর হামলার শিকার হওয়া বারাকা পরিবারের বাড়ি থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়।’
আনাদোলু এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ভেতরে ২০ লাখেরও বেশি মানুষ আটকা পড়ে আছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, চলমান যুদ্ধ এবং সাহায্য সরবরাহ হ্রাসের ফলে মানসিক চাপের মাত্রা বেড়েছে। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
গত মাসে ইসরায়েলি সেনারা গাজায় একটি অ্যাম্বুলেন্স লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে ১৫ চিকিৎসা ও উদ্ধারকর্মী নিহত হন। বাহজেরওল বলেছেন, ‘আমরা গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ ও সেখানকার সব বাসিন্দাকে জোর করে বাস্তুচ্যুত হতে দেখছি।’
ব্রিটেনে সফর সংক্ষিপ্ত করে পালালেন ইসরায়েলের মন্ত্রী
দখলদার ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিয়ন সার যুক্তরাজ্য থেকে সফর সংক্ষিপ্ত করে ‘পালিয়েছেন’ বলে জানিয়েছে গ্লোবাল লিগ্যাল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (জিএলএএন)। মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানানোর পরই এ দখলদার পালিয়ে দ্রুত ইসরায়েলে চলে যান। লন্ডনভিত্তিক জিএলএএন ছাড়াও হিন্দ রজব ফাউন্ডেশনও তাঁর গ্রেপ্তারি পরোয়ানার জন্য আবেদন জানিয়েছিল।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল র সব জ ম ম অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
এটি ভাগাড় নয়, একটি খাল
প্রথম দৃষ্টিতে এটিকে ভাগাড়ই মনে হবে। অথচ এটি একটি খাল। দখল-দূষণে খালটির এই পরিণতি। দখলের ফলে এর পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। যতটুকু অংশ রক্ষা পেয়েছে, সেখানে আবর্জনার স্তূপ।
খালটি লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার রামগতি বাজারসংলগ্ন। ময়লা-আবর্জনার স্তূপে প্রায় মজে গেছে খালটি। এতে সামান্য বৃষ্টিতেই বাজারে জমে হাঁটুপানি। সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগে পড়েন ব্যবসায়ীরা। বছরের পর বছর এভাবে চলতে থাকায় খালের অস্তিত্বই হুমকির মুখে।
সম্প্রতি এ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, রামগতি বাজারসংলগ্ন খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে দুই শতাধিক দোকান। দখলদারদের কবলে পড়ে খালে পানির প্রবাহ নেই। খালে ফেলা হচ্ছে বাজারের আবর্জনা। সেগুলো পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বাজারের পানি নিষ্কাশনের জন্য নালা নেই। কিছু অংশে নালা থাকলেও তা মজে গিয়েও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই পানি উপচে পড়ে। বর্ষাজুড়েই জলাবদ্ধ থাকে এলাকাটি। এ সময় মশা-মাছির উপদ্রব বাড়ে।
ব্যবসায়ীরা জানান, খালের ওপর দোকানপাট হওয়ায় পানি নিষ্কাশনের জায়গা নেই। যে যার মতো দখল নিচ্ছে। ফলে বাড়ছে জলাবদ্ধতা ও ভোগান্তি। এতে ব্যবসার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
বড়খেরী ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. সাবিদ জানান, বর্ষা মৌসুমে রামগতি বাজারে আসতে ইচ্ছে করে না। কাদামাটির সঙ্গে বাজারের ময়লা-আবর্জনা মিশে চলাচল করাটা কঠিন হয়ে পড়ে।
বাজারের ব্যবসায়ী মতিলাল দাস জানান, বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায় বাজার। দখলদারদের কারণে খাল উপচে পানি ঢুকে বাজারসহ আশপাশের দোকানগুলোতে। খালটি দ্রুত দখলমুক্ত করে সংস্কার করার দাবি তাঁর।
ওষুধ ব্যবসায়ী বিপ্লব মজুমদার জানান, খালটি মজে যাওয়ায় বাজারের পানি নামতে পারে না। বৃষ্টি হলেই তাঁর দোকানে পানি ঢোকে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির সময় তাদের দোকানের ভেতর দিয়ে পানি গড়িয়ে খালে প্রবেশ করে।
খাল দখল করে দোকানঘর করা রুহুল আমিন জানান, তাঁর দোকানের কিছু অংশ খালের ওপর পড়েছে। সরকার চাইলে তিনি জায়গা ছেড়ে দেবেন।
রামগতি বাজার উন্নয়ন কমিটির সদস্য গরীব হোসেন রাসেল জানান, কলেজের সামনে থেকে রামগতি দক্ষিণ বাজার পর্যন্ত দুই শতাধিক দোকান প্রায় ১৮ বছর ধরে অবৈধভাবে খাল দখল করে আছে। নজরদারি না থাকায় এতগুলো দোকানের মালিক নিজেদের ইচ্ছেমতো সীমানা বাড়িয়ে নিয়েছেন।
বড়খেরী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও বাজার উন্নয়ন কমিটির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) মিজানুর রহমান বলেন, অবৈধ দখলদারদের বারবার সতর্ক করা হয়েছে। উচ্ছেদের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকেও জানানো হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযানও হচ্ছে না, খাল সংস্কারও হচ্ছে না। ফলে বাজারে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঝান্টু বিকাশ চাকমা বলেন, খালের ওপর দোকান নির্মাণের অনুমতি কাউকে দেওয়া হয়নি। খালের দখল করা ভূমি ইতোমধ্যে সরেজমিন দেখেছেন। দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইউএনও সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, খাল দখলদারদের চিহ্নিত করা হয়েছে। শিগগির উচ্ছেদ অভিযান হবে।