গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার মধ্যেই দু’পক্ষের মধ্যে যে যুদ্ধবিরতি আলোচনা চলছে, তা শর্তের আবর্তে আটকে আছে। ইসরায়েল একটি অন্তর্বর্তী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিল, যা প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস। ফিলিস্তিনের সংগঠনটি বলছে, তারা গাজায় যুদ্ধ বন্ধে একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তি চায়। পাশাপাশি ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনিদের বিনিময়ে তাদের হাতে থাকা বাকি সব জিম্মিকে তারা মুক্তি দিতে আগ্রহী।

টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে গাজায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটির প্রধান খলিল আল-হায়া জানান, তারা আর কোনো ধরনের অন্তর্বর্তী চুক্তিতে রাজি হবেন না। হামাসের যে দলটি যুদ্ধবিরতি নিয়ে মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে, হায়া তারও নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গতকাল শুক্রবার রয়টার্স জানায়, হামাসের এ অবস্থান ইসরায়েল মেনে নেবে না এবং গাজায় তেল আবিবের সাম্প্রতিক অভিযান আরও দীর্ঘায়িত হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। 

হায়া বলেন, গাজায় যুদ্ধ বন্ধ, ইসরায়েলের কারাগারে থাকা সব ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি ও গাজা পুনর্গঠনের বিনিময়ে সব জিম্মিকে ছাড়তে হামাস যত শিগগির সম্ভব ‘পূর্ণাঙ্গ চুক্তির আলোচনায়’ বসতে চায়। তিনি বলেন, ‘নিজেদের রাজনৈতিক এজেন্ডার ঢাল হিসেবে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তাঁর সরকার এসব সাময়িক চুক্তিকে ব্যবহার করছে; সব জিম্মিকে বলি দিয়ে হলেও তারা এটা করতে চায়। আমরা এ নীতি বাস্তবায়নের অংশ হতে চাই না।’ 

১৫ মাসের যুদ্ধ শেষে চলতি বছরের জানুয়ারিতে হামাস ও ইসরায়েল একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছায়। গত ১৮ মার্চ ওই চুক্তি লঙ্ঘন করে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে না গিয়ে ইসরায়েল প্রথম ধাপের সম্প্রসারণ করতে চাচ্ছিল। দ্বিতীয় ধাপ অনুযায়ী, গাজায় হামাসের হাতে থাকা সব জিম্মির মুক্তির পাশাপাশি গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল। মিসরের মধ্যস্থতাকারীরা এখনও জানুয়ারিতে হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি পুনরুজ্জীবনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে তা সফল হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

হামাসের অবস্থানের সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জেমস হিউইট বলেন, হামাসের মন্তব্য প্রমাণ করে, তারা শান্তিতে নয়, বরং চিরস্থায়ী সহিংসতায় আগ্রহী। ট্রাম্প প্রশাসনের শর্ত বদলায়নি– জিম্মিদের মুক্তি দাও, নতুবা নরকের মুখোমুখি হও। 

যুদ্ধবিরতি পুনরুজ্জীবিত করা ও ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির লক্ষ্যে গত সোমবার কায়রোতে হওয়া সর্বশেষ রাউন্ডের আলোচনায় কোনো ধরনের সমঝোতাই হয়নি। জিম্মিদের মুক্তি ও যুদ্ধ বন্ধে অপ্রত্যক্ষ আলোচনা শুরু করতে ইসরায়েল ৪৫ দিনের একটি অন্তর্বর্তী যুদ্ধবিরতি চেয়েছিল। কিন্তু তাদের দেওয়া বেশ কিছু শর্তে আপত্তি আছে হামাসের। তেল আবিবের শর্তগুলোর মধ্যে একটি ছিল– হামাসের নিরস্ত্রীকরণ। ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীটি বারবারই বলেছে, ‘অস্ত্র সমর্পণ’ এমন একটি ‘লাল দাগ’, যা নিয়ে আলোচনা তো দূর, এটি বিবেচনাযোগ্যও নয়।

এ অবস্থায় গাজায় অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। গতকাল শুক্রবার উপত্যকায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় একই পরিবারের ১০ জনসহ অন্তত ৩৪ জন নিহত হয়েছেন। গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সির মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল টেলিগ্রাম পোস্টে বলেন, ‘আমাদের কর্মীরা ১০ জনের মরদেহ ও অনেক মানুষকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছেন। খান ইউনিসের বানি সুহাইলায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর হামলার শিকার হওয়া বারাকা পরিবারের বাড়ি থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়।’

আনাদোলু এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ভেতরে ২০ লাখেরও বেশি মানুষ আটকা পড়ে আছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, চলমান যুদ্ধ এবং সাহায্য সরবরাহ হ্রাসের ফলে মানসিক চাপের মাত্রা বেড়েছে। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। 

গত মাসে ইসরায়েলি সেনারা গাজায় একটি অ্যাম্বুলেন্স লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে ১৫ চিকিৎসা ও উদ্ধারকর্মী নিহত হন। বাহজেরওল বলেছেন, ‘আমরা গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ ও সেখানকার সব বাসিন্দাকে জোর করে বাস্তুচ্যুত হতে দেখছি।’

ব্রিটেনে সফর সংক্ষিপ্ত করে পালালেন ইসরায়েলের মন্ত্রী 
দখলদার ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিয়ন সার যুক্তরাজ্য থেকে সফর সংক্ষিপ্ত করে ‘পালিয়েছেন’ বলে জানিয়েছে গ্লোবাল লিগ্যাল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (জিএলএএন)। মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানানোর পরই এ দখলদার পালিয়ে দ্রুত ইসরায়েলে চলে যান। লন্ডনভিত্তিক জিএলএএন ছাড়াও হিন্দ রজব ফাউন্ডেশনও তাঁর গ্রেপ্তারি পরোয়ানার জন্য আবেদন জানিয়েছিল।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল র সব জ ম ম অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়: ডাকসু

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগের সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায় বলে দাবি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)।

রবিবার (২ নভেম্বর) ডাকসুর ভিপি মো. আবু সাদিক, জিএস এসএম ফরহাদ ও এজিএস মুহা: মহিউদ্দিন খান স্বাক্ষরিত ‘রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কাৃরের বিরোধিতা এবং ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো অক্ষুণ্ন রাখার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ডাকসুর প্রতিবাদ' শীর্ষক এক প্রতিবাদলিপিতে এ কথা বলা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

ঢাবি শিক্ষার্থীদের মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করতে ২ কমিটি

ঢাবিতে সপ্তাহব্যাপী শিল্পকর্ম প্রদর্শনী শুরু

প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, জুলাই বিপ্লব ছিল বৈষম্য, অবিচার ও ফ্যাসিবাদী শাসনকাঠামোর বিরুদ্ধে এ দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার এক সম্মিলিত বিপ্লব। কেবল সরকার পরিবর্তন নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ, স্বাধীন ও শক্তিশালী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গঠন, প্রশাসনিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং একটি বৈষম্যহীন-ন্যায়ভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল এই বিপ্লবের মূল ভিত্তি। নতুন প্রজন্ম চেয়েছিল এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে কোন প্রকার বৈষম্য ও রাজনৈতিক একচেটিয়া কর্তৃত্বের জায়গা থাকবে না।

কিন্তু দুঃখজনকভাবে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ধারাবাহিকভাবে সংস্কার কার্যকর করার বিরোধিতা করে তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। বিশেষত বিএনপি এমন সব মৌলিক সংস্কারের বিরোধিতা করেছে যা সরাসরি ছাত্র–জনতার স্বপ্নের সঙ্গে জড়িত। পিএসসি, দুদক, ন্যায়পাল ও মহা-হিসাব নিরীক্ষকের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগ নিশ্চিত করার সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তারা ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়।

যে বৈষম্যমূলক চাকরি ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করেই জুলাই বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল সেই কাঠামো পরিবর্তনের বিরুদ্ধাচরণ করে বিএনপি নতুন প্রজন্মের ন্যায্য দাবি অস্বীকার করছে। পাশাপাশি জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিশনের বিরোধিতা, অনুচ্ছেদ–৭০ সংস্কারে আপত্তি, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান আলাদা দুজন ব্যক্তির মতো আধুনিক গণতান্ত্রিক প্রস্তাবে বিরোধিতা, আইন পেশায় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা, স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস গঠনে তাদের আপত্তি রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নির্মাণের পথে বড় বাঁধার সৃষ্টি করছে। এভাবে বিএনপি মূলত জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে অস্বীকার করে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে।

প্রতিবাদলিপিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, এই সংস্কারগুলো ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থ নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তৈরির লক্ষ্যেই প্রস্তাবিত হয়েছে। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গঠনের নৈতিক দায়িত্ব ছাত্র ও সর্বস্তরের জনগণের। তাই সংস্কারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জনগণ থেকে নিতে হবে। আর গণভোটই জনগণের ম্যান্ডেট নিশ্চিতের উপযুক্ত মাধ্যম। গণভোটের মাধ্যমেই জনগণ ঠিক করবে দেশের স্বার্থে কোন কোন সংস্কার প্রস্তাবনাগুলোকে তারা সমর্থন দিবে।

কোনো রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাব যদি রাষ্ট্রগঠনমূলক সংস্কারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তবে ছাত্র-জনতা  সেই বাধা অতিক্রমে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেবে জানিয়ে প্রতিবাদলিপিতে আরো বলা হয়, জুলাই বিপ্লব শুধু শাসক বা সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন নয় বরং জুলাই বিপ্লব হলো ফ্যাসিবাদী কাঠামো বিলোপ করে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণ।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দখলদারদের কাছে প্রশাসনের আত্মসমর্পণ
  • বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়: ডাকসু
  • ট্রাম্প কি সত্যি ইসরায়েলি দখলদারি বন্ধ করতে চান