ট্রাম্প কি সত্যি ইসরায়েলি দখলদারি বন্ধ করতে চান
Published: 31st, October 2025 GMT
যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ‘শান্তি পরিকল্পনা’র ছাতার নিচে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে, তখন যুক্তরাষ্ট্র একটি কূটনৈতিক প্রচারণা শুরু করেছে। এতে দেখানো হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র যেন ইহুদি বসতি–উপনিবেশের অংশ হিসেবে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক পশ্চিম তীর দখলের পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে।
গাজায় যুদ্ধবিরতির সমর্থন আদায় করার জন্য ট্রাম্প গত মাসে তাঁর মিত্র আরব দেশগুলোর শাসকদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি ইসরায়েলকে দখলদারি আর এগিয়ে নিতে দেবেন না। কিন্তু ১০ অক্টোবর থেকে ‘শান্তি পরিকল্পনা’ কার্যকর হওয়ার পরও ইসরায়েল কমপক্ষে ৮৮ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে এবং আরও ৩১৫ জনকে আহত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও তার আরব মিত্ররা মনে করছিল, পশ্চিম তীর দখল করলে জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিতে পারে এবং ওয়াশিংটনের আঞ্চলিক স্বাভাবিকীকরণ প্রকল্প বিপর্যস্ত হতে পারে।
আরও পড়ুনগাজা যুদ্ধ থামিয়েও ট্রাম্প নোবেল পেলেন না কেন১২ অক্টোবর ২০২৫কিন্তু গত সপ্তাহে ইসরায়েলের পার্লামেন্ট (নেসেট) পশ্চিম তীরকে আনুষ্ঠানিকভাবে দখল করার দাবিতে দুটি বিলের প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে।
ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স গাজার গণহত্যার পরবর্তী ধাপ সমন্বয়ে ইসরায়েলিদের সাহায্য করতে সেখানে ছিলেন। তিনি এ বিষয়ে বলেন, ‘এটি খুব নির্বোধ রাজনৈতিক নাটক’ এবং এমন একটি পদক্ষেপ, যা তাঁকে ‘ব্যক্তিগতভাবে অপমানিত’ করেছে।
ওয়াশিংটনের আরব মিত্রদের সামনে মুখ রক্ষা করতে ট্রাম্প তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে ইসরায়েলিদের একটু বকুনি দিতে পাঠান। ইসরায়েলে যাওয়ার পথে রুবিও প্রশাসনের সবচেয়ে কঠোর সতর্কবার্তা ছিল: ‘এখন আমরা এটিকে সমর্থন করতে পারি না’—অর্থাৎ পরে সমর্থন করা হবে।
এক সপ্তাহ আগে টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প একই ভাষায় বলেন যে এখন দখলদারির সময় নয়, ‘এটা হবে না। হবে না। হবে না। কারণ, আমি আরব দেশগুলোকে কথা দিয়েছি। আর এখন এটা করা যাবে না.                
      
				
এই বিবৃতিগুলোয় মূল শব্দ হলো ‘এখন’। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে দ্বন্দ্বটা লক্ষ্য নিয়ে নয়, বরং সময়ের হিসাব ও কীভাবে করা হবে, তা নিয়ে।
দখলদারির অগ্রগতিইসরায়েলের সম্প্রসারণবাদী লক্ষ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্র (ট্রাম্প প্রশাসন) কখনোই বিরত ছিল না, বরং এর বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তাঁর জামাতা জারেড কুশনারের তৈরি ‘শান্তির বিনিময়ে সমৃদ্ধি’ পরিকল্পনা পশ্চিম তীরের ৩০ শতাংশ এলাকা ইসরায়েলের দখলদারির স্বীকৃতি দেয়।
সে প্রস্তাব অনুযায়ী, তখনকার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা করেন, ইসরায়েল অবিলম্বে জর্ডান ভ্যালি ও পশ্চিম তীরের বসতি এলাকাগুলো দখল করবে এবং ‘উদারভাবে’ প্রতিশ্রুতি দেন যে ফিলিস্তিনিদের বাকি যে এলাকাগুলো রাখা হবে, সেখানে নতুন বসতি অন্তত চার বছর নির্মাণ করা হবে না।
ইসরায়েলে নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড ফ্রিডম্যান ট্রাম্পের অনুমোদনের কথা জানিয়ে ঘোষণা করেছিলেন, ‘ইসরায়েলকে কোনো অপেক্ষা করতে হবে না। আমরা এটিকে স্বীকৃতি দেব।’ গত ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প আবার বলেন, ‘এটা তো একটা ছোট দেশ...ভূমির দিক থেকে ছোট।’
আরব শাসকেরা হয়তো ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি বিশ্বাস করেন—এমন অভিনয় করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সত্যি বলতে, তাঁরা শুধু নিজেদের অভ্যন্তরীণ জনমত নিয়ন্ত্রণের জন্য তাঁকে প্রশংসা করেন।
ট্রাম্প ইতিমধ্যে ২০১৯ সালে সিরিয়ার গোলান মালভূমি ইসরায়েলের অবৈধ দখলকে স্বীকৃতি দিয়েছেন, ঠিক যেভাবে ২০১৭ সালে পূর্ব জেরুজালেম দখলকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
তাহলে ট্রাম্প পশ্চিম তীর দখলের বিরোধিতা করছেন কেন? উত্তর হলো, তিনি বিরোধিতা করছেন না, শুধু সময়টা পিছিয়ে দিচ্ছেন।
ইসরায়েলের পরবর্তী লক্ষ্যইসরায়েল এখন শুধু পশ্চিম তীরে থামছে না। তাদের কাছে পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গোলান এখন ‘শেষ হয়ে যাওয়া কাজ’। তারা নতুন করে প্রতিবেশী আরব দেশগুলোর ভূমি দখলের দিকে নজর দিচ্ছে।
কয়েক সপ্তাহ আগে নেতানিয়াহু ঘোষণা করেন, তিনি ‘ইহুদি জনগণের পক্ষ থেকে ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক মিশন’ সম্পাদন করছেন এবং বলেন যে তিনি ‘প্রমিজ ল্যান্ড (প্রতিশ্রুত ভূমি) ও গ্রেটার ইসরায়েল (বৃহত্তর ইসরায়েল) দর্শনের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত’।
এ দর্শনের পরিসর জর্ডানের পুরো ভূখণ্ড ছাড়াও সিরিয়া, লেবানন, মিসর ও ইরাকের অংশবিশেষকে অন্তর্ভুক্ত করে। আরব দেশগুলো প্রতিবাদ করলেও সেটা শুধু আনুষ্ঠানিকতার জন্য।
১৯৪৮ সাল থেকে প্রতিটি ইসরায়েলি দখলদারিকে আরব শাসকেরা কার্যত মেনে নিয়েছেন। অনেক আরব দেশই পরে আইনগতভাবেও সেটা স্বীকৃতি দিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেশগুলো হলো মিসর, জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মরক্কো, সুদান, বাহরাইন।
বৈশ্বিক স্বীকৃতি১৯৪৮ সালে যখন ইসরায়েল প্রতিষ্ঠিত হয়, জাতিসংঘ কর্তৃক ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য নির্ধারিত অর্ধেক এলাকা ও পশ্চিম জেরুজালেম দখল করে তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
১৯৪৯–৫০ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্য ও নিরাপত্তা পরিষদ ইসরায়েলের নতুন বিস্তৃত সীমানাকে স্বীকৃতি দেয়। ইসরায়েল পশ্চিম জেরুজালেমকে রাজধানী ঘোষণা করে এবং তাদের সরকারি অফিস স্থানান্তর করে। ১৯৫০-এর দশকের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ এটিকে স্বীকৃতি দেয়।
সবশেষে মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত ১৯৭৭ সালে ইসরায়েল সফরে গিয়ে দেশটির পার্লামেন্টে (নেসেট) ভাষণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা দেখেননি, যদিও সেটি দখলকৃত পশ্চিম জেরুজালেমে অবস্থিত। তিনি এর কোনো প্রতিবাদও জানাননি।
আরও পড়ুনগাজায় যুদ্ধবিরতির পর নেতানিয়াহুর সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ১১ অক্টোবর ২০২৫জর্ডানের রাজা হুসেন যদিও কখনো পশ্চিম জেরুজালেমে আনুষ্ঠানিক সফর করেননি। তাঁর ১৯৯৪ ও ১৯৯৬ সালের ইসরায়েল সফর মূলত তেল আবিব ও টিবেরিয়াস হ্রদকেন্দ্রিক ছিল, তবু তিনি ১৯৯৫ সালে তৎকালীন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিনের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দখলকৃত পশ্চিম জেরুজালেমে যান। আবার ১৯৯৭ সালে তিনি সেখানে যান সেই ইসরায়েলি পরিবারগুলোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে, যাদের সন্তানদের জর্ডানিয়ান সেনারা গুলি করে হত্যা করেছিলেন।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ১৯৯৩ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করার আগেই রাজা হুসেন কার্যত স্বীকার করে নিয়েছিলেন যে শুধু পশ্চিম জেরুজালেম নয়, পূর্ব জেরুজালেমেও ফিলিস্তিনি ও আরবদের সার্বভৌমত্ব নেই। তিনি বলেছিলেন, ‘জেরুজালেমে দাবি করার অধিকার শুধু ঈশ্বরের’ এবং তিনি বহুবার এই বক্তব্য পুনর্ব্যক্ত করেন।
যেসব দেশ পশ্চিম জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না, তাদের মতোই মিসর ও জর্ডানের দূতাবাসও তেল আবিবেই অবস্থিত। তবে এর মানে এই নয় যে এসব দেশ পশ্চিম জেরুজালেমকে ইসরায়েলের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না।
দখলদারির উত্তরাধিকারনেতানিয়াহুর ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ ধারণা নতুন কিছু নয়। ইসরায়েলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন–গুরিয়ন ১৯৫৬ সালে সিনাই ও গাজা দখল করে বলেন, ‘এটি আমাদের জনগণের ইতিহাসে সবচেয়ে মহান বিজয়।’ তিনি আরও দাবি করেন, সিনাই ‘তৃতীয় ইসরায়েল রাজ্যের’ অংশ হয়ে গেছে।
১৯৬৭ সালে তারা আবার দখলদারি করে—গাজা, সিনাই, পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গোলান মালভূমি। আজও কথাবার্তা চলছে আবারও সিনাই দখলের পরিকল্পনা নিয়ে।
এ বছরের ১০ মাসে ইসরায়েল সিরিয়ার ভূখণ্ডে তাদের বেআইনি দখল আরও বিস্তৃত করেছে যুক্তরাষ্ট্র–সমর্থিত সিরিয়ার নতুন সরকারের নীরব সম্মতিতে। এ সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পুনর্বাসিত আল-কায়েদার সাবেক নেতা ও ইসলামিক স্টেট নেতা আহমাদ আল-শারা।
আরও পড়ুনগাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি কি টিকবে২৫ অক্টোবর ২০২৫ইসরায়েলিরা সিরিয়ার ভূখণ্ডে আরেকটি ‘বাফার জোন’ তৈরি করেছে, যেমনটি তারা ১৯৪৮ থেকে ১৯৬৭ সালের মধ্যে অস্থায়ী সীমান্ত এলাকায় করেছিল। ঠিক একইভাবে গত মাসে ইসরায়েলি ইহুদিরা সিরিয়ার ভূখণ্ডে প্রবেশ করে নতুন এক বসতির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে। এর নাম রাখা হয়েছে ‘নেবে হাবাশান’ বা ‘বাশানের মরূদ্যান’। এটি নতুন দখলকৃত সিরীয় ভূখণ্ডে জাবাল আল-শায়খ অঞ্চলের কাছে।
এই বসতি স্থাপনকারীরা এসেছে ইসরায়েলের ‘উরি জাফোন’ আন্দোলন থেকে, যার লক্ষ্য হলো সিরিয়া ও দক্ষিণ লেবাননে বসতি স্থাপন করা। এই বাশান অঞ্চলকে ইহুদি সম্প্রসারণবাদীরা তাদের ধর্মীয় অধিকারের ভিত্তিতে নিজেদের বলে মনে করে।
অব্যাহত দখলদারি২০০২ সালে ইসরায়েল পশ্চিম তীরে বেআইনি বর্ণবাদী ‘বিচ্ছিন্নকরণ প্রাচীর’ নির্মাণ করে, যা ওই এলাকার ১০ শতাংশকে কার্যত সংযুক্ত করে নেয়। তথাকথিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়—যার মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতও রয়েছেন—কেবল আনুষ্ঠানিক আপত্তি জানায়।
ইসরায়েল ১৯৬৭ সাল থেকেই জর্ডানের সীমানার পাশে অবস্থিত জর্ডান নদীর উপত্যকা এবং পশ্চিম তীরের আরও ১০ শতাংশ সংযুক্ত করার ওপর জোর দিয়ে আসছে। ট্রাম্পের ২০২০ সালের ‘শান্তি পরিকল্পনা’য় এটি অনুমোদিত হয়।
এ ধরনের ভূখণ্ড দখলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের স্বীকৃতি ও কিছু ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতা ট্রাম্পের সাম্প্রতিক গাজা পরিকল্পনার অনুমোদনেরই আরেক রূপ, যেখানে ইসরায়েলকে গাজার অর্ধেকের অধিকার স্থায়ীভাবে দখল করে রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনগাজা শাসনে ব্লেয়ারের কেন এত আগ্রহ০৯ অক্টোবর ২০২৫আরব রাষ্ট্রগুলো, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মতোই, খুব ভালো করেই জানে যে পশ্চিম তীর সংযুক্ত করার ইসরায়েলি প্রকল্প চলবেই, এমনকি তা কৌশলগতভাবে কিছুদিনের জন্য স্থগিত থাকলেও। এটি হবে তথাকথিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আশীর্বাদে, যদিও তারা আনুষ্ঠানিক আপত্তি জানাবে এবং আরব রাষ্ট্রগুলো (জর্ডান ছাড়া, নিজের নিরাপত্তার কারণে) এ প্রকল্পের সামনে থাকবে।
রুবিও এ বিষয়ে খোলাখুলি বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা মনে করি, এটি প্রতিকূল হতে পারে’ এবং ‘সম্ভাব্যভাবে শান্তিচুক্তির জন্য হুমকি’। কিন্তু ভবিষ্যতে কোনো সময়ে এটি ‘উপকারী’ এবং ‘সম্ভাব্যভাবে শান্তির জন্য সহায়ক’ হতে পারে।
আসলে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে ইসরায়েলের চলমান গণহত্যায় ইউরোপীয় ও আরব—এমন ডজনখানেক দেশের জড়িত থাকার প্রমাণ দেখানো হয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্টও প্রকাশ করেছে যে বেশ কয়েকটি আরব রাষ্ট্র গণহত্যা চলাকালে ইসরায়েলের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা বাড়িয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছে জর্ডান, কাতার, সৌদি আরব, মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
ফিলিস্তিনিরা যখন এই আন্তর্জাতিক সমর্থনপ্রাপ্ত দখল, বসতি স্থাপন, দখলদারত্ব এবং তাদের স্বদেশ সংযুক্তিকরণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে, তখন এই রাষ্ট্রগুলো বিস্মিত হওয়ার অভিনয় করবে। একই সঙ্গে তারা খোলাখুলিভাবে বা গোপনে ইসরায়েলের গণহত্যার পরবর্তী ধাপকে সমর্থন করবে—যেমনটি দুই বছর ধরে করে আসছে এবং বরাবরের মতোই তারা এটি করবে ‘ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার’ নামে পরিচিত অজুহাত তুলে ধরে।
জোসেফ মাসাদ নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক আরব রাজনীতি এবং বৌদ্ধিক ইতিহাসের অধ্যাপক। তিনি বহু বই, একাডেমিক প্রবন্ধ ও সাংবাদিকতামূলক নিবন্ধের লেখক।
মিডল ইস্ট আই থেকে নেওয়া, অনুবাদ ও সংক্ষিপ্তকরণ: মনজুরুল ইসলাম
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ও স য ক ত কর র ইসর য় ল ইসর য় ল র র গণহত য দখলদ র র লক ষ য র জন য অন ম দ র দখল ইউর প আরব র সমর থ ইসর য দখল র
এছাড়াও পড়ুন:
ভূমি দখলদার চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাবুডাইং গ্রামে কোল জনগোষ্ঠীর পাঁচটি পরিবারকে যেভাবে উচ্ছেদ করা হয়েছে, তা খুবই অমানবিক। যে আইনি প্রক্রিয়ায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাদের ঘরবাড়ি একেবারে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই উচ্ছেদ কার্যক্রমে আইনি আদেশ পালন করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু মানবিকতার প্রতিটি শর্তকে এক্সকাভেটরের আঘাতে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভূমি সংরক্ষণের জন্য তাদের জমি বিক্রি বা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়। অভিযোগ ওঠে, সেই প্রক্রিয়া এড়াতে দখলদার চক্র জালিয়াতির আশ্রয় নেয়। উচ্ছেদের শিকার কোল পরিবারের সদস্যদের দাবি, এই জমির আসল মালিক ছিলেন তাঁদেরই ‘জাত-ভাই’। অথচ তাঁদের হিন্দু সাজিয়ে জাল দলিল তৈরির মাধ্যমে এই জমির মালিকানা হাতিয়ে নিয়েছে ভূমি দখলদার চক্র। এরপর গরিব কোল পরিবারগুলো যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে না পারায় আদালতের একতরফা রায় যায় দখলদার চক্রের পক্ষে। যার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবারগুলোকে গত সোমবার উচ্ছেদ করা হয়।
কয়েক দশক ধরে বসবাস করে আসা পরিবারগুলো ভিটা ছাড়তে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় চেয়েও পায়নি। কিন্তু উচ্ছেদকারী দল, আদালতের প্রতিনিধি ও পুলিশের উপস্থিতিতে সেই মানবিক আবেদন উপেক্ষা করা হয়েছে। ফলে গরু বিক্রির অর্থ, আসবাব, এমনকি রান্না করা খাবারও চাপা পড়েছে মাটির নিচে। পরবর্তী সময়ে ঘরবাড়ি হারিয়ে পরিবারগুলো বাঁশঝাড়ের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।
আদালত প্রতিনিধির বক্তব্য অনুযায়ী, বাদীপক্ষ সমঝোতায় রাজি হয়নি। কিন্তু রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে উচ্ছেদকারী দলের নৈতিক দায়িত্ব ছিল কেবল দখল বুঝিয়ে দেওয়া নয়, বরং মানবিক বিপর্যয় এড়ানো। একটি গরিব ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পরিবারকে অভুক্ত অবস্থায় মশার কামড় খেতে বাঁশঝাড়ের নিচে ফেলে আসা কোনোভাবেই সভ্য সমাজের আইন প্রয়োগ হতে পারে না।
উচ্ছেদের দুই দিন পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, এই উচ্ছেদ অভিযান সম্পর্কে তাঁকে জানানোই হয়নি। ফলে এখানে আইনি আদেশের স্বচ্ছতা এবং প্রশাসনিক সমন্বয়ের অভাব নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। কেন স্থানীয় প্রশাসনকে এ উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে অন্ধকারে রাখা হলো? উপজেলা প্রশাসন ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে চাল ও অল্প অর্থসহায়তা দিয়েছে। তাদের পুনর্বাসনের আশ্বাসও দিয়েছে। কিন্তু সেটি তো সময়সাপেক্ষ। পরিবারগুলো নারী ও শিশুদের নিয়ে এখন কোথায় যাবে?
সমতলের ভিন্ন নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর ভূমি সংরক্ষণের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আইনকে অপব্যবহার করে যে চক্র পরিবারগুলোকে উদ্বাস্তু করে দিল, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ আমলে নিয়ে গোটা বিষয়টি তদন্ত করা হোক। আমরা আশা করব, কোল পরিবারগুলোকে তাদের জমি ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
 লক্ষ্মীপুরে স্বর্ণালংকার লুটের জন্য মা-মেয়েকে হত্যা, জানাল পুলিশ
লক্ষ্মীপুরে স্বর্ণালংকার লুটের জন্য মা-মেয়েকে হত্যা, জানাল পুলিশ