যুবদলে সক্রিয় ছিলেন দুই ভাই, ১৫ বছরের ব্যবধানে দুজনই খুন
Published: 21st, April 2025 GMT
চট্টগ্রামের রাউজানে গত শনিবার রাতে একটি বাসায় ভাত খাওয়ার সময় গুলি করে হত্যা করা হয় প্রবাসফেরত যুবদলকর্মী মানিক আবদুল্লাহকে। ১৫ বছর আগে তাঁর বড় ভাই রাশেদুল ইসলাম ওরফে খোকনকেও গাড়ি থেকে নামিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করেছিলেন সন্ত্রাসীরা। যুবদলের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা রাশেদুল ইসলামকে হত্যার ঘটনায় আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠে। তবে তাঁর ভাই মানিক আবদুল্লাহকে খুনে বিএনপিরই একটি অংশ জড়িত বলে অভিযোগ পরিবারের।
রাশেদুল ইসলামকে হত্যার দেড় দশকেও এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। মানিক আবদুল্লাহকে খুনের ঘটনায়ও এখন পর্যন্ত মামলা করেনি পরিবার। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তাঁরা মামলা করতে ভয় পাচ্ছেন। নিহত ব্যক্তিরা চট্টগ্রামের রাউজানের বাগোয়ান ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গরীব উল্লাহপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রাশেদুল ইসলাম যুবদলের রাজনীতি সক্রিয় ছিলেন। এর মধ্যেই ২০০৩ সালের দিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলে যান তিনি। ২০০৮ সালে দেশে ফিরে আবারও রাজনীতিতে সক্রিয় হন। এ সময় তাঁর বিরুদ্ধে একটি ডাকাতির প্রস্তুতির মামলা হয়। মামলাটিতে তিনি এক বছর কারাগারে ছিলেন। ২০১০ সালের ২৬ মার্চ রাতে স্থানীয় নোয়াপাড়া পথেরহাট বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে তাঁকে গুলি করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার পর কাপ্তাই সড়কের পাশে লাশ ফেলে রেখে চলে যান সন্ত্রাসীরা। নিহত হওয়ার সময় রাশেদুলের বয়স ছিল ৩৫ বছর। তিনি অবিবাহিত ছিলেন।
রাশেদুলের ছোট ভাই মানিক আবদুল্লাহও প্রায় পাঁচ বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতে ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দুই মাস পর তিনি দেশে ফিরে যুবদলের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। গত শনিবার রাতে গ্রামের ভান্ডারী কলোনির একটি বাসায় ভাত খাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা তাঁকে গুলি করে হত্যা করেন। পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, মানিক আবদুল্লাহ দেশে ফেরার পর স্ত্রী, ১০ বছর বয়সী ১ ছেলে ও ৫ বছরের মেয়েকে নিয়ে চট্টগ্রাম নগরের একটি বাসায় ভাড়ায় থাকতেন। স্ত্রী-সন্তান ছাড়া গ্রামে এলে ভান্ডারী কলোনির ওই বাসাটিতে ভাত খেতেন। শনিবার রাতেও আরেক যুবদলকর্মীসহ তিনি ওই বাসাটিতে ভাত খাচ্ছিলেন। এ সময় বাসাটিতে ঢুকে ১২ থেকে ১৫ জন সন্ত্রাসী গুলি করে তাঁকে হত্যা করেন। তাঁর শরীরের তিনটি স্থানে গুলি লাগে। হত্যার পর সন্ত্রাসীরা অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে চলে যান।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মানিক আবদুল্লাহ দেশে ফিরে বিএনপির চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত যুবদলকর্মী ও একই পাড়ার বাসিন্দা আরফাত মামুনের সঙ্গে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। কিছুদিন পর তাঁর সঙ্গে আরফাত মামুনের দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। দ্বন্দ্বের জেরে মানিক পরে কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য মুহাম্মদ জসিম উদ্দিনের পক্ষে যোগ দেন। এর কিছুদিন পর পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন আরফাত মামুন, যা নিয়ে এলাকায় আনন্দমিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করা হয় মানিক আবদুল্লাহর নেতৃত্বে। বিষয়টি নিয়ে মানিকের ওপর মামুনের অনুসারীরা ক্ষিপ্ত ছিলেন।
গতকাল রোববার ময়নাতদন্ত শেষে নিহত মানিক আবদুল্লাহর লাশ তাঁর বাড়িতে নেওয়া হয়। এ সময় লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর মা পাকিজা আকতার। তিনি মানিকের দুই শিশুসন্তানের প্রসঙ্গ টেনে বিলাপ করতে থাকেন। পাকিজা আকতার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ছেলে মানিক কোনো সন্ত্রাসী নন, প্রবাসী ছিলেন। এরপরও মানিককে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে। ১৫ বছর আগে মানিকের বড় ভাইকেও খুন করেছেন সন্ত্রাসীরা। দুটি হত্যারই বিচার দাবি করেন পাকিজা আকতার।
নিহত ব্যক্তিদের ছোট ভাই সাকিল আহমেদ মাস্টার্সে অধ্যয়নরত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৫ বছরের ব্যবধানে দুই ভাইকে হারিয়েছি। রাশেদুল ভাইকে খুন করেছেন আওয়ামী লীগের লোকজন, এখন মানিক ভাই নিজের দলের মানুষের হাতেই খুন হলেন। আমরা দুটি খুনেরই বিচার চাই।’
মানিক আবদুল্লাহর লাশ ঘরে আনার পর স্বজনদের আহজারী। গতকাল রাউজানের বাগোয়ান ইউনিয়নের বাড়িতে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ন ক আবদ ল ল হ র শ দ ল ইসল ম র জন ত ত ব এনপ র ১৫ বছর পর ব র য বদল বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হই হই অবস্থা, প্রস্তুতি না নেওয়া আত্মঘাতী
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশেরও প্রস্তুতি নিয়ে রাখা দরকার বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘এমন বিশ্বে আমরা বাস করি, প্রতিনিয়ত যুদ্ধের হুমকি আমাদের ঘিরে থাকে। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হই হই অবস্থার মধ্যে রয়ে গেছে। সকালের খবরে দেখলাম, হয়তো গুজব, যে আজকেই শুরু হয়ে যাবে যুদ্ধ। প্রস্তুতি না নেওয়াটা আত্মঘাতী। আধাআধি প্রস্তুতির কোনো জায়গা নাই।’
গতকাল বুধবার রাজধানীর বীরউত্তম এ কে খন্দকার ঘাঁটিতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অনুশীলন পর্যবেক্ষণ অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা। খবর বিবিসি বাংলা ও বাসসের।
নিজেকে ‘যুদ্ধবিরোধী মানুষ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে যুদ্ধ হোক– এটা আমরা কামনা করি না।’ যুদ্ধের প্রস্তুতি অনেক সময় যুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়– এ রকম ধারণার বিষয়ে ঘোরতর আপত্তির কথা জানান ড. ইউনূস।
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার প্রতি যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সদা প্রস্তুত আধুনিক বিমানবাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
দেশপ্রেম ও পেশাদারিত্ব আগামী দিনের নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার মূল ভিত্তি উল্লেখ করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বিমানবাহিনীর সব সদস্যের প্রতি যুগোপযোগী ক্ষমতা ও দক্ষতা অর্জন এবং পেশাগত ও কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতি অব্যাহত মনোযোগ বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আমরা একটা নিরাপদ, উন্নত ও শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’
তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার, রাডার সংযোজনের জন্য বিমানবাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করবে সরকার।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বের দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের গুরুত্ব অপরিসীম। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সদস্যরা নিয়মিতভাবে বহুমাত্রিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ও অনুশীলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জ্ঞান-দক্ষতাকে যুগোপযোগী করতে সদা সচেষ্ট রয়েছেন।’
তিনি দেশের বিমানবন্দরগুলোর সুষ্ঠু পরিচালনা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বিমানবাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।
মহড়া কেবল একটি সাময়িক অনুশীলনই নয় উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এটি আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিমানবাহিনীর পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার পরিচয় বহন করে। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী সময়োপযোগী পরিকল্পনা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং কার্যকর আকাশ প্রতিরক্ষার পাশাপাশি বিস্তীর্ণ সমুদ্র এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
এর আগে বিমানঘাঁটিতে এসে পৌঁছলে প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান। অনুষ্ঠানস্থলে বিমানবাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল তাঁকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর বিতরণ প্রধান উপদেষ্টার
গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশেষ আবাসন প্রকল্পে নির্মিত ঘর বিতরণ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। গতকাল সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি গত বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে এসব ঘর বিতরণ করেন।
ওই বন্যায় অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম। অসংখ্য বাড়িঘর সম্পূর্ণরূপে ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নির্মাণের সামর্থ্য নেই, এ রকম তিনশ পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ঘর পুনর্নির্মাণ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ফেনীতে ১১০টি, নোয়াখালীতে ৯০টি, কুমিল্লায় ৭০টি ও চট্টগ্রামে ৩০টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। দুটি কক্ষ, কমন স্পেস, শৌচাগার, রান্নাঘরসহ বারান্দা রয়েছে। ৪৯২ বর্গফুট আয়তনের ঘরে ৭ লাখ ২৫ হাজার ৬৯৪ টাকা এবং ৫০০ বর্গফুটের ঘরে প্রাক্কলিত ব্যয় ৭ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৮ টাকা বরাদ্দ করা হয়। সেনাবাহিনী ঘরগুলো নির্মাণ করেছে।
অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান বক্তব্য দেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ত্বরান্বিত করার নির্দেশ
চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ত্বরান্বিত ও বিশ্বমানের সেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ নির্দেশ দেন তিনি। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক হয়।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বন্দর ব্যবস্থাপনায় এমন অপারেটরদের সম্পৃক্ত করতে হবে, যাতে এগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারে।
বৈঠকে বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ‘দেশের নৌবন্দরগুলোর বর্তমান হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি বছরে ১ দশমিক ৩৭ মিলিয়ন ইউনিট, যা সঠিক পরিকল্পনা ও কর্মপন্থার মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরে ৭ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন ইউনিটে উন্নীত করা সম্ভব।’