ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে সরাসরি ওঠার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে শেফিল্ড ইউনাইটেডের। সোমবার রাতে টার্ফ মুরে বার্নলির কাছে ২-১ গোলে হেরে চ্যাম্পিয়নশিপের শীর্ষ দুইয়ের বাইরে ছিটকে যায় হামজা চৌধুরীর দল। তবে ম্যাচ শেষে সবচেয়ে বড় আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের জাতীয় দলের ফুটবল ইতিহাসে প্রথম প্রিমিয়ার লিগ খেলা ফুটবলার হামজা চৌধুরী। মাঠ ছাড়ার সময় তাকে ঘিরে ঘটে গেছে অপ্রীতিকর ঘটনা।

বার্নলির জয় নিশ্চিত হওয়ার পর হাজারো সমর্থক মাঠে ঢুকে পড়েন উল্লাস করতে। এ সময় হঠাৎ কয়েকজন দর্শক মাঠে থাকা শেফিল্ড খেলোয়াড়দের দিকে এগিয়ে আসেন। সেই তালিকায় ছিলেন হামজা চৌধুরীও। ক্যামেরায় দেখা যায়, এক দর্শক তাকে উদ্দেশ্য করে কিছু বললে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেন হামজা। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, এমনকি তাকে শারীরিকভাবে থামাতে বাধ্য হন নিরাপত্তাকর্মী ও ক্লাব কর্মকর্তারা। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামজাকে শুধু কটূক্তিই নয়, বর্ণবৈষম্যমূলক মন্তব্যও শুনতে হয়েছে। স্কাই স্পোর্টসের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একজন পুলিশ কর্মকর্তা তাকে মাঠ থেকে টানতে টানতে টানেলে নিয়ে যাচ্ছেন।

Players are having to be separated at Turf Moor as Burnley begin their promotion celebrations ???????? pic.

twitter.com/WOAeuSLJtN

— Sky Sports Football (@SkyFootball) April 21, 2025

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে চলছে তীব্র সমালোচনা। কেউ লিখেছেন, ‘বর্ণবাদের শিকার হয়েছেন হামজা’। আরেক ভক্ত মন্তব্য করেছেন, ‘ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিপক্ষে সোচ্চার ছিলেন হামজা। এজন্য হামলা হয়েছে তার ওপর।’ তবে কি নিয়ে কথা হয়েছে হামজা বা তার ক্লাব শেফিল্ড থেকে এ নিয়ে কিছু জানানো হয়নি এখনও।

Burnley, I love you. But I can pretty much guarantee that the reason Hamza Choudhury @HamzaChoudhury1 lost it there, is because that @BurnleyOfficial fan said summat racist to him. Been to Turf Moor many times and I used to steward there. Racism needs MASSIVELY addressing there.

— Muzz Khan (@muzzkhan) April 21, 2025

Israeli Manor Solomon promoted to the Premier League with Leeds, and “pro-Palestine” flag-shagger Hamza Choudhury loses his shit after missing out on automatic promotion with Sheffield Utd, and has to be dragged off the pitch.

Extra marks to the Burnley player for goading him. pic.twitter.com/45U5cFl9hV

ম্যাচ শেষে শেফিল্ড কোচ ক্রিস ওয়াইল্ডার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ম্যাচের আগে রেফারির কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছিলাম যে খেলোয়াড়দের ঘিরে নিরাপত্তা থাকবে। কিন্তু শেষ বাঁশি বাজার পর তাদের কোনো খোঁজই পাওয়া যায়নি। সেটা ছিল খুবই ভয়ের একটা মুহূর্ত।’

ওয়াইল্ডার আরও বলেন, ‘৪০-৫০ জন উত্তেজিত দর্শক যখন আপনার দিকে দৌঁড়ায় এবং বাজে ভাষায় কিছু বলে কিংবা কিছু করে, তখন মাঠ ছাড়াটা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। আমি নিশ্চিত, এর দায় আমাদের ঘাড়ে চাপানো উচিত হবে না।’

মাঠের খেলায় অবশ্য হামজা ছিলেন শেফিল্ড ইউনাইটেডের অন্যতম উজ্জ্বল পারফর্মার। পুরো ম্যাচে ৪৭টি পাসের মধ্যে ৪২টিই সফলভাবে সম্পন্ন করেন তিনি (৮৯ শতাংশ সফলতা)। প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকাতে ৩টি ট্যাকল করে ২টিতে জয়ী হন, করেন ৫টি ক্লিয়ারেন্স এর মধ্যে ৪টিই হেডে। ৭টি বল পুনরুদ্ধার করে মাঝমাঠে ছিলেন বল নিয়ন্ত্রণে অতুলনীয়।

ম্যাচে বার্নলির হয়ে দুটি গোল করেন জোশ ব্রাউনহিল। ২৮ মিনিটে রিবাউন্ড থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে নেন তিনি। ৩৭ মিনিটে সমতা ফেরান শেফিল্ডের টম ক্যানন। তবে বিরতির আগেই পেনাল্টি থেকে আবারও লিড এনে দেন ব্রাউনহিল।

৪৪ ম্যাচ শেষে বার্নলি ও লিডস ইউনাইটেড ইতোমধ্যেই ৯৪ পয়েন্ট নিয়ে প্রিমিয়ার লিগে জায়গা নিশ্চিত করেছে। শেফিল্ডের পয়েন্ট ৮৬, অর্থাৎ সরাসরি প্রিমিয়ার লিগে ওঠার সম্ভাবনা শেষ। এখন প্লে-অফের দুই ম্যাচই তাদের সামনে একমাত্র সুযোগ।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

আরপিওর বিধানের বৈধতার রায় রিভিউর জন্য হলফনামার অনুমতি

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধানের বৈধতা দিয়ে ১৪ বছর আগে রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদনের জন্য হলফনামার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন দুজন আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আজ সোমবার হলফনামা করার অনুমতি দিয়েছেন।

আবেদনকারী সাত ব্যক্তি হলেন ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন, মেজর (অব.) এস এম হারুনুর রশীদ, কাজী জাহেদুল ইসলাম, আইনজীবী এস এম আজমল হোসেন, মেজর (অব.) নিয়াজ আহমেদ জাবের, মেজর (অব.) মো. জিয়াউল আহসান ও সালাহ উদ্দিন।

আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ মামলায় আবেদনকারীরা পক্ষ ছিলেন না। যে কারণে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন দায়েরের জন্য হলফনামা করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন তাঁরা। চেম্বার আদালত হলফনামা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে শিগগিরই রিভিউ আবেদন করা হবে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২(৩ক)(ক) বিধান অনুযায়ী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যুক্ত করে দিতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী ইতিপূর্বে জাতীয় সংসদের কোনো নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকলে ওই তালিকা প্রদানের প্রয়োজন হবে না।

আইনজীবীর তথ্য অনুসারে, ঢাকার একটি আসন থেকে ২০০৭ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র নেন। পরে নির্বাচনের ওই তারিখ পিছিয়ে যায়। অন্যদিকে ২০০৮ সালে আরপিও দফা ১২(৩ক)–তে সংশোধনী আনা হয়। এই বিধান সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদ ও আরপিওর ১২(১) ধারার পরিপন্থী উল্লেখ করে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী ২০১০ সালে হাইকোর্ট রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট রুল ডিসচার্জ (খারিজ) করে রায় দেন। দফা (৩ক) সংবিধান পরিপন্থী নয় বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন রিট আবেদনকারী। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি লিভ টু আপিল খারিজ করে রায় দেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত আরপিওর ১২(৩ক)–তে বেআইনি কিছু পাননি বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে দুই আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি আবেদন করতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে ভোটারের গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। ভোটার কোন প্রার্থীকে ভোট দেবেন বা দেবেন না, এটি একান্তই তাঁর চিন্তা ও মতপ্রকাশের অধিকার। সিক্রেট ব্যালটে হামলা হলে ভোট বাতিলও হয়। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে প্রার্থীর যোগ্যতা নির্ধারণ করা আছে। রাজনৈতিক দল হলে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন লাগবে না, অথচ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে গেলে লাগবে অর্থাৎ একই মনোনয়নপত্র ঘিরে দ্বৈত বিধান। ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন থাকার ওই বিধানের মাধ্যমে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা সংবিধান সমর্থন করে না এবং ভোটারের গোপনীয়তারও লঙ্ঘন—এসব যুক্তি তুলে ধরে আবেদনটি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ