পাবনায় পেঁয়াজের দাম মনপ্রতি বেড়েছে ৬০০ টাকা
Published: 23rd, April 2025 GMT
পাবনায় দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম মনপ্রতি দাম বেড়েছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। আর খুচরা বাজারে কেজিতে দাম বেড়েছে ২০ টাকা।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকালে পাবনার কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে এই তথ্য জানা যায়। সরেজমিনে পাবনার বড় বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিমণ পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা। অথচ দুই সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছে ১২০০ টাকায়।
অন্যদিকে, খুচরা বাজারে বর্তমানে এক কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৩০-৩৫ টাকা।
আরো পড়ুন:
পেঁয়াজের দামে ক্রেতা খুশি, লোকসানে কৃষক
এক লাফে পেঁয়াজের দাম কমলো কেজিতে ১০ টাকা
এ বিষয়ে পাইকারি ব্যবসায়ী আশরাফ আলী বলেন, ‘‘বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ নাই। আবার যে আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজ ছিল, সেটাও শেষ। এ কারণে চাহিদা বেড়ে গেছে। বাজারে এখন হালি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে, যেটা সারা বছর ঘরে রাখা যায়। তাই কমবেশি সবাই পেঁয়াজ কিনে মজুত করছেন। ফলে দাম কিছুটা বেড়েছে।’’
খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা আব্দুল মমিন বলেন, ‘‘গত সপ্তাহে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। আজ প্রতিমণ পাইকারি কিনলাম ২০০০ টাকায়। তাহলে কেনা পড়ল ৫০ টাকা কেজি। আমরা ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করব। বেশি দামে কিনলে তো বেশি দামেই বিক্রি করতে হবে। লোকসান দিয়ে তো ব্যবসা করা যাবে না।’’
আরিফুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘‘হঠাৎ পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে যদি কেজিতে ২০ টাকা বাড়ে তাহলে সামনে আরো কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। সিন্ডিকেট চক্র আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা পেঁয়াজ কিনে মজুত করে রাখছে।’’
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম প্রামাণিক বলেন, ‘‘পাবনায় এবার পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫২ হাজার ৮০১ হেক্টর জমি। আবাদ হয়েছে ৫৩ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। জেলায় পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৬৩৭ মেট্রিক টন। মজুদ রয়েছে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন।’’
তিনি বলেন, ‘‘মুড়িকাটা পেঁয়াজ শেষ হওয়ায় বাজারে চাহিদা বেড়ে গেছে। যে কারণে দামও কিছুটা বেড়েছে। তবে ৫০ টাকা কেজি পেঁয়াজ এটা স্বাভাবিক দাম। কৃষক অন্তত বাঁচবে। এর চেয়ে বেশি হলে তখন সেটা অস্থিতিশীল হবে। মজুতদার সিন্ডিকেট প্রতিরোধে জেলা প্রশাসন, ভোক্তা অধিদপ্তর যৌথভাবে কাজ করব।’’
ঢাকা/শাহীন/রাজীব
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতীকী মূল্যে কাউকে সরকারি জমি দেওয়া হবে না: অর্থ উপদেষ্টা
এখন থেকে সরকারি জমি প্রতীকী মূল্য কাউকে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, সরকারি জমি যারা নিতে চাইবে যথাযথ মূল্য দিয়ে নিতে হবে।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সচিবালয়ে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানা সম্প্রসারণের জন্য বন্ধ থাকা চট্টগ্রামের জলিল টেক্সটাইল মিলসের ৫৪.৯৯ একর জমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিকট হস্তান্তরের একটি প্রস্তাব অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে উপস্থান করা হয়।
এ প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘‘জলিল টেক্সটাইল মিলস তারা নিতে চাচ্ছে। আমরা প্রস্তাব দিয়েছি প্রতীকী মূল্যে দেব না। এখন থেকে প্রতীকী মূল্যটা এভয়েড (এড়িয়ে চলা) করবো। যারাই নিতে চায় অর্থ দিয়ে নেবে। কারণ প্রতীকী মূল্যে দিলে যারা নিয়ে যায়, তারা ঠিকমত ইউটিলাইজ করে না। অনেক ক্ষেত্রে ১০ একর জমির প্রয়োজন থাকলেও প্রতীকী মূল্যের কারণে ১০০ একর জমি দরকার বলে জানানো হয়।’’
তাহলে কি জলিল টেক্সটাইল মিলসের জমি হস্তান্তরের বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়নি? সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘তাদেরকেই দেওয়া হবে, তবে মূল্যটা নির্ধারণ করে প্রস্তাব আসতে হবে।’’
এদিকে বৈঠক শেষে বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, চট্টগ্রামে বাংলাদেশ অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি (বিওএফ) সম্প্রসারণের জন্য বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলের নিয়ন্ত্রণাধীন চট্টগ্রাম জেলার ভাটিয়ারিতে অবস্থিত জলিল টেক্সটাইল মিলস হস্তান্তরের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ব্যক্তি মালিকানায় ১৯৬১ সালে চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড উপজেলার ফৌজদারহাট এলাকায় মেসার্স জলিল টেক্সটাইল মিলস স্থাপন করা হয়। মিলের জমির পরিমাণ ৫৪.৯৯ একর। ১৯৭২ সালে জাতীয়করণ করার পর উইভিং এবং ডাইং বিভাগ স্থাপনের মাধ্যমে মানসম্মত উৎপাদনের জন্য ৩ বার স্বর্ণপদক লাভ করে মিলটি।
লাভজনকভাবে পরিচালিত মিলটি বিরাষ্ট্রীয়করণ নীতিমালার আওতায় ১৯৮২ সালের ১৫ ডিসেম্বর মিলের সাবেক শেয়ার হোল্ডারদের নিকট হস্তান্তর করা হয়। মালিক পক্ষের মধ্যে অর্ন্তকলহের কারণে ১৯৯৭ সালে মিলটি বন্ধ হয়ে যায়। শ্রমিক-কর্মচারীদের আন্দোলনের একপর্যায়ে তৎকালীন সরকার দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ১৯৯৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর মিলটি অধিগ্রহণ করে। ওই দিন সরকার মিলের সাবেক ৪০ শতাংশ শেয়ার হোল্ডার সেলিম চৌধুরী গংদের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে মিলটি হস্তান্তর করে।
সেলিম চৌধুরী গং মাত্র ১২ লাখ ২২ হাজার টাকা দিয়ে মিলটি অধিগ্রহণের পর হস্তান্তর চুক্তির শর্তানুযায়ী সরকারি পাওনা, ৬০ শতাংশ শেয়ার হোল্ডারদের ক্ষতিপূরণ, শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা, ২০০০ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে মিল চালু, অর্থ মন্ত্রণালয়, বস্ত্র মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রতিনিধি নিয়ে পরিচালনা পর্ষদ না করে চুক্তির সব শর্ত লঙ্ঘন করে। সুচতুরভাবে মালিকপক্ষ ২০০০ সালের শেষের দিকে নামমাত্র ১টি ইউনিট চালু করে পরবর্তীতে শ্রম আইন বহির্ভূতভাবে ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউনিটটিও বন্ধ করে দেয়।
এ অবস্থায় ২০০৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় মালিকপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৬ মাসের মধ্যে মালিকপক্ষ মিল চালু না করলে হস্তান্তর চুক্তির শর্তানুযায়ী সরকার মিলটি অধিগ্রহণ করার ঘোষণা দেয়। মালিকপক্ষ এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করে ২০০৫ সালের ২০ নভেম্বর সরকারের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মিলটি বন্ধ ও পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখে। দীর্ঘ আইনী প্রক্রিয়া শেষে ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি জলিল টেক্সটাইল মিলস পুনঃগ্রহণ করে সরকার এবং মিলটি বিটিএমসির নিয়ন্ত্রণে ন্যস্ত করা হয়।
ঢাকা/হাসনাত//