জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও গণঅধিকার পরিষদ। বুধবার রাজধানীর পল্টনে ইসলামী আন্দোলনের কার্যালয়ে দল দুটির বৈঠকে এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। 

প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন, গণহত্যায় জড়িতদের বিচার, আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন এবং নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবিতেও ঐকমত্য হয়েছে বলে জানিয়েছেন দল দুটির নেতারা। 

ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদ একমত হয়েছে।

রেজাউল করীম বলেন, গত ৫৩ বছরে পেশিশক্তি প্রয়োগ করে নির্বাচনের মাধ্যমে অযোগ্য লোকজন ক্ষমতায় বসে দেশকে অশান্ত করেছিল। সে জন্য আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনে একমত হয়েছি।

ডাকসুর সাবেক ভিপি এবং গণঅধিকার পরিষদ সভাপতি নুরুল হক বলেন, কিছু মৌলিক সংস্কার না হলে দেশে আবার স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্ট শাসন তৈরি হবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নির্মম গণহত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাইছি। তাদের রাজনীতির সুযোগ পাওয়া উচিত নয়।

সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদ অনেক আগে থেকেই একমত বলে জানিয়েছেন নুর। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট আমলে স্থানীয় নির্বাচনে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে যারা জনপ্রতিনিধি হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও নির্বাচন বাতিল করা দরকার। গত আট মাসে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি না থাকায় সেবা পেতে মানুষ ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। কিছু মানুষ জোর করে আধিপত্য বিস্তার করছে। সে জন্য স্থানীয় নির্বাচন কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে। জাতীয় নির্বাচনের আগে সংস্কারের জন্য কিছু সময়ের প্রয়োজন। আবার জাতীয় ঐকমত্যেরও প্রয়োজন। অন্তত তার আগে স্থানীয় নির্বাচন হতে পারে। বাংলাদেশ এমন রাষ্ট্র হবে, যেখানে ইসলামী আদর্শবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করা হবে না।

বৈঠকে ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমাদসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা ছিলেন। এছাড়া গণঅধিকারের মুখপাত্র ফারুক হাসান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এমপ ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদের খসড়া অসম্পূর্ণ, কিছু অংশ বিপজ্জনক: জামায়াত

জুলাই সনদের খসড়াকে অসম্পূর্ণ বলেছে জামায়াতে ইসলামী। একই সঙ্গে নির্বাচিত সরকারকে দুই বছরের মধ্যে এই সনদ বাস্তবায়নের প্রস্তাবকে বিপজ্জনক বলেছে দলটি।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ২১তম দিনের আলোচনার বিরতিতে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এ কথা বলেন।

সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘এটি অসম্পূর্ণ এবং কিছু অংশ বিপজ্জনক। আজকে তারা বলছে, এটা একটা নমুনামাত্র, ভুল হয়েছে। যদি সেটাই হয়, তাহলে মন্তব্যের দরকার নেই। তবে যদি সেটাই মূল কথা হয়, তাহলে একে গ্রহণ করা যাবে না।’

জামায়াত নিজস্ব একটি খসড়া সনদ তৈরি করছে এবং কমিশনে জমা দেবে বলে জানান তাহের। তিনি বলেন, ‘সংলাপে যেসব বিষয়ে একমত হচ্ছি, সেগুলো বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি থাকতে হবে।’ তিনি প্রস্তাব করেন দুটি পথ—১. অধ্যাদেশের মাধ্যমে একটি আইনি কাঠামো গঠন করে পরে নির্বাচিত পার্লামেন্টে তা অনুমোদন। ২. গণভোটের মাধ্যমে জনগণের চূড়ান্ত অনুমোদন নেওয়া।

সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আমরা যেকোনো একটি পদ্ধতিতে এই কাঠামোকে আইনগত বৈধতা দিতে চাই।’ তিনি জানান, তাঁরা ঐকমত্যের পক্ষে কিন্তু সেটা হতে হবে কার্যকর এবং আইনি কাঠামোর মধ্যে হতে হবে। অন্যথায় দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ‘অনিশ্চয়তার দিকে’ চলে যেতে পারে বলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে চলমান সংলাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠনপ্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে বলে জানান জামায়াতের এই নেতা। তিনি বলেন, ‘আমরা একমত হয়েছি যে আগামী জাতীয় নির্বাচন অবশ্যই কেয়ারটেকার সরকারের অধীনেই হতে হবে, এখানে প্রায় সবাই একমত, একমাত্র বিএনপি কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে।’

আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের জানান, প্রস্তাবিত কাঠামো অনুযায়ী পাঁচ সদস্যের একটি বাছাই কমিটি গঠিত হবে—প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দলের) এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের একজন প্রতিনিধি। এঁরা ১২ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্য থেকে কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান নির্বাচন করবেন।

যদি একমত না হন, তাহলে প্রথমে সর্বসম্মতভাবে, পরবর্তী সময়ে এক চয়েস ভোট, তারপর প্রয়োজনে র‍্যাংক চয়েস ভোটিং পদ্ধতির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে। এ পদ্ধতিতে ভোটার হবেন মোট সাতজন—ওপরে উল্লিখিত পাঁচ সদস্য এবং সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের একজন করে বিচারপতি।

জামায়াতের এ নায়েবে আমির বলেন, ‘বিচারপতি দুজন যুক্ত করা হয়েছে যেন এককভাবে তৃতীয় দল বা অন্য কেউ ডিসাইডিং ফ্যাক্টর না হয়ে যায়। আমরা আশা করি, বিচারপতিরা নিরপেক্ষ থাকবেন এবং হর্স ট্রেডিংয়ের আশঙ্কা কমবে।’ তিনি জানান, বিএনপির আপত্তি মূলত এই যে—যদি ঐকমত্য না হয় তাহলে বিষয়টি সংসদে পাঠানো হোক। তবে জামায়াতসহ বেশির ভাগ দল মনে করে সংসদে পাঠালে তা আর সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে না।

আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘সংসদে পাঁচ-ছয়টা দল আছে, অথচ এই বডিতে ৩০টির বেশি দলের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। এখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।’

আজকের আলোচনায় জামায়াতে ইসলামী ছাড়াও বিএনপি, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত আছেন সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. আইয়ুব মিয়া।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মৌলিক সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কার কী অবস্থান
  • উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে একমত হলেও বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা চায় এনসিপি
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর
  • রাজনৈতিক দলের মতের ভিত্তিতে  জুলাই সনদের খসড়ায় সংশোধনী আনা হচ্ছে: আলী রীয়াজ  
  • মৌলিক সংস্কারের সব বিষয়ে মতৈক্য হয়নি
  • জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তি জরুরি: জামায়াতের নায়েবে আমির
  • জুলাই সনদের খসড়া নিয়ে ৩ দলের আপত্তি, বিএনপি মোটামুটি একমত
  • জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক নয়, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পক্ষে বিএনপি
  • তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে একমত হলেও প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নের প্রক্রিয়ায় মূল বিরোধ: আলী রীয়াজ
  • জুলাই সনদের খসড়া অসম্পূর্ণ, কিছু অংশ বিপজ্জনক: জামায়াত