জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায় ইসলামী আন্দোলন ও গণ অধিকার পরিষদ
Published: 23rd, April 2025 GMT
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও গণ অধিকার পরিষদ। আজ বুধবার বিকেল সোয়া চারটায় গণ অধিকার পরিষদের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বৈঠক শেষে পৃথক বক্তব্যে এ বিষয়ে মতৈক্যের কথা জানান দল দুটির শীর্ষ নেতারা।
বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার বিষয়ে গণ অধিকার পরিষদ তাদের সঙ্গে একমত হয়েছে।
আরও কয়েকটি বিষয়ে দুই দল একমত হয়েছে বলে জানান মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে নারীর অধিকারবিষয়ক সংস্কার কমিশনের ‘ইসলাম ধর্মবিরোধী’ প্রস্তাব বাতিল, গণহত্যা, খুনসহ টাকা পাচারকারীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা, ফ্যাসিবাদের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ঠেকাতে আধিপত্য ও সাম্রাজ্যবাদমুক্ত একটি ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্র গঠন এবং সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের আয়োজন ইত্যাদি।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ‘গত ৫৩ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল, তাদের মাধ্যমে দেশে কোনো সুন্দর রাজনৈতিক ধারা প্রতিষ্ঠা পায়নি। পেশিশক্তি প্রয়োগ করে নির্বাচনের মাধ্যমে অযোগ্য লোকজন ক্ষমতায় বসে দেশকে বিভিন্ন কায়দায় অশান্ত করেছিল। সে জন্য আমরা পিআর (সংখ্যানুপাতিক) পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিষয়ে একমত হয়েছি।’
এ সময় গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেন, কিছু মৌলিক সংস্কার না হলে দেশে আবার স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্ট সৃষ্টিসহ নানা ধরনের সংকট তৈরি হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নির্মম গণহত্যা পরিচালনাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাচ্ছি। তাদের রাজনীতিও এ দেশে হওয়া উচিত নয়। তাদের বিচারের বিষয়ে গতি আনার ক্ষেত্রে (ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে) একমত হয়েছি।’
সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন ও গণ অধিকার পরিষদ অনেক আগে থেকেই একমত বলে জানান নুরুল হক। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট আমলে অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে যাঁরা জনপ্রতিনিধি হয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও নির্বাচন বাতিল করা দরকার।
নুরুল হক বলেন, ‘গত আট মাসে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি না থাকায় সেবা পেতে মানুষ ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কিছু মানুষ জোর করে আধিপত্য বিস্তার করছে। সে জন্য স্থানীয় নির্বাচন মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে। জাতীয় নির্বাচনের আগে সংস্কারে কিছু সময়ের প্রয়োজন। আবার জাতীয় ঐকমত্যেরও প্রয়োজন। অন্তত তার আগে স্থানীয় নির্বাচন হতে পারে।’
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি বলেন, ভৌগোলিক কারণে বিদেশি আগ্রাসন যাতে এ দেশের রাজনীতির কলকাঠি নাড়াতে না পারে, সে জন্য আধিপত্যবাদমুক্ত কল্যাণরাষ্ট্র তৈরির বিষয়ে বৈঠকে মতৈক্য হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটি এমন রাষ্ট্র হবে, যেখানে ইসলামী আদর্শবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করা হবে না।’
এর আগে বেলা তিনটায় রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন দুই দলের নেতারা। বৈঠকে গণ অধিকার পরিষদের পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের মুখপাত্র ফারুক হাসান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, উচ্চতর পরিষদের সভাপতি হাসিবুর রহমান, আইনজীবী নুরে এরশাদ ও সাকিব হোসেন।
অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন দলটির মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আহমাদ আব্দুল কাইউম প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইয়েমেনে মার্কিন হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ আখ্যা দিয়ে নিন্দা ইরানের
ইয়েমেনের বিভিন্ন স্থানে, যার মধ্যে আফ্রিকান অভিবাসীদের জন্য নির্ধারিত একটি আটক কেন্দ্রও রয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাণঘাতী বিমান হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইরান। খবর প্রেস টিভির।
গতকাল সোমবার ইয়েমেনের সা’দা প্রদেশে আফ্রিকান অভিবাসীদের জন্য নির্ধারিত একটি আটক কেন্দ্র লক্ষ্য করে মার্কিন বিমান হামলায় প্রায় ৭০ জন বন্দী নিহত এবং ৫০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে বেশিরভাগেরই অবস্থা গুরুতর।
এছাড়া একই দিনে ইয়েমেনের রাজধানী সানার উত্তরাঞ্চলের বানি আল-হারিথ জেলার থাকবান এলাকায় মার্কিন বিমান হামলায় অন্তত আটজন নিহত এবং আরো বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
আরো পড়ুন:
ইয়েমেনে কারাগারে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা, নিহত ৬৮
ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় নিহত ৮
সোমবার এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই এক বিবৃতিতে বলেন, “ইয়েমেনের বিভিন্ন অংশে বেসামরিক লক্ষ্যবস্তু, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো এবং মানুষের বাড়িঘরে মার্কিন সামরিক বাহিনীর অব্যাহত হামলা, যার ফলে শত শত নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছে, তা ‘যুদ্ধাপরাধ’।”
তিনি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ‘এই সুস্পষ্ট আইন লঙ্ঘন এবং ইয়েমেনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার ঘন ঘন লঙ্ঘনের প্রতি নীরব এবং উদাসীন’ ভূমিকার জন্য সমালোচনা করেছেন।
ইরানের মুখপাত্র আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইসরায়েল ফিলিস্তিনে গণহত্যামূলক যুদ্ধ এবং লেবাননের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে।
বাঘাই বলেন, ইয়েমেনের বিরুদ্ধে মার্কিন সামরিক আগ্রাসন ইসরায়েলি সরকারের ‘মুসলিম দেশগুলোকে ধ্বংস ও দুর্বল করার এবং পুরো পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে নিরাপত্তাহীনতা ছড়িয়ে দেওয়ার’ দুষ্ট পরিকল্পনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
ইয়েমেনের মুসলিম জনগণের হত্যা বন্ধে এবং গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের ‘গণহত্যা’ অব্যাহত রাখা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বাঘাই ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ