রিকশায় ফাঁদ পেতে মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে ১০ লাখ টাকা ছিনতাই, চালকের জবানবন্দি
Published: 25th, April 2025 GMT
রাজশাহী নগরের ঘোড়ামারা এলাকায় চোখে মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে দিলীপ কুমার প্রামাণিক নামের এক দোকানের ব্যবস্থাপকের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় রিকশাকে ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এ কাজের জন্য ছিনতাইকারী চক্রটি এক মাস ধরে ভুক্তভোগী ব্যক্তির ওপর নজরদারি চালিয়েছিল। এ জন্য তারা রিকশাচালককে প্রশিক্ষণও দেওয়া দিয়েছে। গ্রেপ্তার রিকশাচালকের জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ এ তথ্য জানিয়েছে।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন গ্রেপ্তার রিকশাচালক মাসুম (৩০)। গত বুধবার রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-২ আদালতের বিচারক মামুনুর রশিদের কাছে ১৬৪ ধারায় এ জবানবন্দি দেন।
আরও পড়ুনউত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বাবা খুন, লাশ রেখে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে মেয়ে১৭ এপ্রিল ২০২৫মাসুমের জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, শুক্র ও শনিবার ব্যাংক বন্ধ থাকায় ওই দুই দিনের কেনাবেচার টাকা দিলীপের বাসায় থাকে বলে চক্রটি জানতে পারে। রোববার সকালে তিনি টাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে যান। বিষয়টি জানতে পেরে চক্রটি পরিকল্পনা সাজায়। তারপর কীভাবে রিকশা নিয়ে অপেক্ষা করতে হবে এবং কোন রাস্তায় যেতে হবে, এ নিয়ে মহড়াও করেছে। ঘটনার আগের রোববার তিনি রিকশা নিয়ে কুমারপাড়ার চালপট্টির ওই বাড়ির সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু সেদিন পরিকল্পনা সফল হয়নি।
বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, ওই রিকশাকে ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করেছে ছিনতাইকারীরা। পরিকল্পনামাফিক তারা ওই এলাকায় এক মাস ধরে নজরদারি করেছে। আগেও রিকশা নিয়ে ফাঁদ পেতেছিল চক্রটি, তবে সফল হতে পারেনি। পরে গত রোববার ঘটনাটি ঘটায়।
গত রোববার সকালে বোয়ালিয়া থানা এলাকার ঘোড়ামারা মোড়ে ছিনতাইয়ের শিকার হন দিলীপ কুমার প্রামাণিক। তিনি রিলায়েন্স অটো নামের একটি অটোরিকশার যন্ত্রাংশ বিক্রির দোকানের ব্যবস্থাপক।
আরও পড়ুনমেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদে বাবা খুন: প্রধান আসামি ও এক সহযোগী গ্রেপ্তার১৯ এপ্রিল ২০২৫পুলিশ ও দোকানের মালিক পক্ষ জানায়, আগের দিনের বিক্রির ১৩ লাখ টাকা নিয়ে দিলীপ কুমার রোববার সকালে শিরোইলে ঢাকা বাস টার্মিনালের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে মাসুমের রিকশায় ঘোড়ামারা এলাকায় পৌঁছালে, রিকশাটি হঠাৎ একটি সরু গলির দিকে মোড় নেয়। ঠিক তখনই একটি মোটরসাইকেলে আসা দুই ব্যক্তি রিকশার গতি রোধ করেন। তাঁদের একজন দিলীপের চোখে মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে দেন। এ সময় ছিনতাইকারীরা তাঁর পিঠে থাকা টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিতে গেলে তিনি বাধা দেন। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তাঁর ডান হাতের কনুই ও বাঁ হাতের আঙুল কেটে যায়। ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে পালানোর সময় প্রায় আড়াই লাখ টাকা রাস্তায় পড়ে যায়, তবে বাকি টাকা নিয়ে ছিনতাইকারীরা পালিয়ে যায়।
আরও পড়ুনরাজশাহীতে মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদে বাবা খুনের মামলায় প্রধান আসামির সহযোগী গ্রেপ্তার১৮ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ছ নত ই
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশ পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে: আইরিন খান
জাতিসংঘের মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান বলেছেন, ‘আমাদের যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে, তার একটি হলো ঠিক এই মুহূর্তে বাংলাদেশ একটি স্বাভাবিক গণতন্ত্রের দেশ নয়। এখানে গণতন্ত্র চলছে না। কার্যত এটা পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে।’
টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট (টিজিআই) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে আইরিন খান এ কথা বলেন। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গত বুধবার ‘আইন থেকে অধিকার: বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণে ডিজিটাল স্বাধীনতার সুরক্ষা’ শীর্ষক এ ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়। গতকাল রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ওয়েবিনারে বিদ্যমান ও নতুন সাইবার আইন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া এবং নাগরিকদের ওপর নজরদারিসহ ডিজিটাল সুশাসন-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় ও উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা হয়। টিজিআই–এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে নজরদারি সরঞ্জাম কেনার জন্য ১৯ কোটি ডলারের বেশি অর্থ ব্যয় করেছে।
ওয়েবিনারে সূচনা বক্তব্য দেন টিজিআই–এর নির্বাহী পরিচালক সাবহানাজ রশীদ দিয়া। গত বছরের জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর থেকে বাংলাদেশে বেশ কিছু সংস্কার হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। সাবহানাজ রশীদ বলেন, ‘আমরা দেখেছি, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো বিষয়গুলোর ব্যাপারে কিছু উল্লেখযোগ্য তদন্ত, কমিশন ও প্রক্রিয়া করা হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে আমরা নির্বিচার গ্রেপ্তার হতেও দেখেছি।’
টিজিআই–এর নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘গত কয়েক মাসে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। অতীতে আমাদের বিশ্লেষণে আমরা দেখেছি, এই আইন বাংলাদেশে নজরদারির সবচেয়ে সহায়ক এবং একই সঙ্গে এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য একটি বড় বাধা হিসেবে কাজ করেছে।’
আলোচনায় বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা খাতের বিষয়গুলো নিয়ে আইরিন খান বলেন, ‘আমাদের একটি অন্তর্বর্তী সরকার আছে, যার কর্তৃত্ব সীমিত। আমাদের একটি নিরাপত্তা খাত আছে; এই একটি মাত্র খাতে অভ্যুত্থান ও পরিবর্তনের কোনো প্রভাব পড়েনি। তাই এ ধরনের পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা খাতে সংস্কার নিশ্চিত করতে আমরা কী করতে পারি?’
জাতিসংঘের বিশেষ এই র্যাপোর্টিয়ার বলেন, ‘এই রূপান্তর বাস্তবায়নের জন্য নিরাপত্তা খাতকেই সহায়তা করতে এগিয়ে আসতে হবে (বর্তমান সরকারকে)। এখনো তাদের কাছে সব ধরনের (নজরদারি) সরঞ্জাম রয়েছে। আর সে কারণে পরবর্তী সরকারের নেতৃত্ব কে দেবে, তা নির্ধারণে অন্য সবার চেয়ে তাদের বাড়তি সুবিধা রয়েছে।’
পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ডিজিটাল পরিসরে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় বর্তমান সরকার কী করতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনায় আইরিন খান বলেন, ‘ডিজিটাল নিয়ে ভাবুন। আমি মনে করি না, সরকার তা করছে। তবে অন্য সবাই ডিজিটাল নিয়ে ভাবছে। তাই সরকারের ডিজিটাল নিয়ে এবং ডিজিটাল পরিসরে কীভাবে কাজ করবে, সে বিষয়ে ভাবা দরকার। (ইন্টারনেট) কোম্পানিগুলোকে ডাকুন, তাদের সঙ্গে কথা বলুন এবং ডিজিটাল পরিসর কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা মানুষকে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকেও বুঝতে দিন।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিনের প্রোগ্রাম অফিসার ডায়নাহ ফন ডার গেস্ট বলেন, ‘আমি মনে করি, নজরদারি নিজে থেকে অবৈধ নয়। সর্বত্র রাষ্ট্রগুলোর জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধের তদন্ত করা এবং নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু নজরদারি যখন ব্যাপক, অস্বচ্ছ ও অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়, তখন তা একটি বিপজ্জনক সীমা অতিক্রম করে।’
ওয়েবিনারে বলা হয়, বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ডিজিটাল স্বাধীনতা যেমন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, তথ্যে প্রবেশাধিকার এবং অনলাইনে নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি জরুরি হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে সাইবার আইন ও এর প্রয়োগের ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ; ডিজিটাল পরিসরে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা এবং মানুষের অধিকার সুরক্ষায় সংস্কারের সম্ভাবনা নিয়ে এতে আলোচনা হয়েছে।