ঝালকাঠি জেলা বিএনপির কাউন্সিলে শীর্ষ দুই পদে কেন্দ্রীয় দুই নেতার প্রার্থিতা ঘোষণার পর জটিল হয়ে পড়েছে পরিস্থিতি। দিনক্ষণ ঠিক না হলেও শান্তিপূর্ণ কাউন্সিল অনুষ্ঠান নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন নেতাকর্মীরা। একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কাঁঠালিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন নিজাম মীর বহরের দলীয় পদ স্থগিত করেছে জেলা কমিটি। এ নিয়ে বাড়াবাড়ির অভিযোগ তুলে সদস্য সচিব শাহাদাত হোসেনকে হুমকি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুল হক নান্নু। শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও অভিযোগ দিয়েছেন জেলার চার উপজেলার সাবেক নেতারা।

জেলা বিএনপি সূত্রে জানা যায়, কাউন্সিলের জন্য সম্ভাব্য দিন হিসেবে তারা ২৮ এপ্রিল নির্ধারণ করেছিলেন। তারা অপেক্ষা করছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সবুজ সংকেতের। কিন্তু গতকাল শনিবার পর্যন্ত তিনি এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেননি।
জেলা বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০১৭ সালে। ১৫১ সদস্যের কমিটিতে মোস্তফা কামাল মন্টুকে সভাপতি ও মনিরুল ইসলাম নুপুরকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল। সেই কমিটি ভেঙে ২০২০ সালের নভেম্বরে গঠন করা হয় আহ্বায়ক কমিটি। এতে সৈয়দ হোসেনকে আহ্বায়ক ও  শাহাদাত হোসেন সদস্য সচিব হন।

গত ফেব্রুয়ারিতে দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য হায়দার আলী লেলিনকে জেলা বিএনপির কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক করা হয়। সেই অনুযায়ী, কাজও শুরু করে কমিটি। এরই মধ্যে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠলে ৫ এপ্রিল কাঁঠালিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন নিজাম মীর বহেকে শোকজ করে আহ্বায়ক কমিটি। এতে একই উপজেলার আমুয়া ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলে খোদা সুমন খলিফার কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবির বিষয়ে জবাব চাওয়া হয়। বিএনপি সূত্রের দাবি, ওই টাকা না দেওয়ায় ২০২৪ সালের ২১ নভেম্বর করা এক মামলায় সুমন খলিফাকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর সঙ্গে আসামি করা হয়। এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নিতে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়ার মিন্টুও জেলার নেতাদের অনুরোধ করেন। কিন্তু তা উপেক্ষা করেই কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনায় ২৩ এপ্রিল নিজাম মীর বহরের দলীয় পদ স্থগিত করে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। এতে উল্লেখ করা হয়, নিজাম মীর বহরের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।
২১ এপ্রিল এক সভায় জেলা বিএনপির সভাপতি পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেন দলের কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল। সেখানেই সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থিতার জানান দেন কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুল হক নান্নু। বিএনপি সূত্র জানায়, দলীয় গঠনতন্ত্রের ১৫(খ) ধারায় উল্লেখ আছে, জাতীয় নির্বাহী কমিটির কোনো কর্মকর্তা এবং দলীয় অঙ্গ দল বা সংগঠনের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক অন্য কোনো পর্যায়ের কমিটিতে কর্মকর্তা নির্বাচিত হতে পারবেন না। ওই দুই কেন্দ্রীয় নেতার জেলা কমিটির শীর্ষ দুই পদে প্রার্থিতার ঘোষণাকে গঠনতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।
রাজাপুরের বাসিন্দা যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক দক্ষিণ শাখার সভাপতি সেলিম রেজা কাউন্সিলে সদস্য হতে আগ্রহী। তিনি মোবাইল ফোনে বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশেই জেলা বিএনপির কাউন্সিলের প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু দুই কেন্দ্রীয় নেতার প্রার্থিতা ঘোষণায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়েছে। মাঠ পর্যায়ে তাদের তেমন গ্রহণযোগ্যতা নেই দাবি করে তিনি বলেন, পরাজয় নিশ্চিত বুঝতে পেরে কেন্দ্রীয় প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছেন এই নেতারা। নানা অভিযোগ তৈরি করে তারা কাউন্সিল বানচালের পাঁয়তারা করছেন।

ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আজম সৈকতের বাড়ি কাঁঠালিয়ায়। তাঁর ভাষ্য, ‘নিজাম মীর বহরের পদ স্থগিতে ক্ষুব্ধ হন নান্নু ভাই। তাই বিভাগীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য ও জেলা কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়েও সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দিয়ে যান।’ অভিযোগ দেওয়ার সময় তিনিও সেখানে ছিলেন দাবি করে সৈকত বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ও বর্তমান কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন বলেন, “আমি (নিজাম মীর বহরের) পদ স্থগিতের চিঠি দেওয়ায় নান্নু ভাই আমাকে হুমকি দিয়েছেন। এমনকি আমার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে এসেছেন। নিজাম মীর বহরের জবাব সন্তোষজনক ছিল না ও জবাবের কোনো প্রমাণও দেননি। তাই কেন্দ্রকে জানিয়েই তাঁর পদ স্থগিতের চিঠি দিয়েছি। ওই চিঠির নিচে ‘বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে’ লিখে নান্নু আমার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়েছেন।” তিনি দাবি করেন, মীমাংসিত বিষয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে সম্মেলন বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। যারা এতে সই করেছেন, তারা সবাই বিগত ১৫ বছর ছিল নিষ্ক্রিয়। তাদের কাউন্সিলে ভোট নেই। তাই ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইছেন তারা।
জেলা কমিটির সভাপতি প্রার্থী ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নুপুর শনিবার সন্ধ্যায় সমকালকে বলেন, সভাপতি হতে না পারলেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকবেন বলে রফিকুল ইসলাম জামাল হুমকি দিয়েছেন। তিনি প্রার্থী হতে চাইলে কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। না হলে কাউন্সিলররা স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না।
শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুল হক নান্নু বলেন, শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে রাজাপুর, কাঁঠালিয়া, নলছিটি উপজেলার বর্তমান ও সাবেক নেতারা চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি (শাহাদাত) জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল্লাহ পনিরের আইনজীবী হিসেবে অতীতে কাজ করেছেন। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর জামিনও করিয়েছেন। 

তাঁর ভাষ্য, ‘কাঁঠালিয়ার নিজাম মীর বহরের বিষয়ে তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দিতে বলেছিলেন দলের বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমপ্রধান ও কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু। তাঁর নির্দেশ উপেক্ষা করে তদন্তের আগেই নিজামের পদ স্থগিত করেছেন শাহাদাত। তাই আমি বলেছি, এটা বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে। আমি তো তাঁকে গালাগাল করিনি।’
বর্তমান পরিস্থিতিতে আসন্ন কাউন্সিল সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক হায়দার আলী লেলিন বলেন, ‘কয়েকদিনের ব্যবধানে কিছু ঘটনায় ও ভুল বোঝাবুঝির কারণে বিষয়গুলো নিয়ে কিছু জটিলতা হয়েছে। আমাদের টিমপ্রধান আবদুল আউয়াল মিন্টুর তদন্ত করার আগেই কাঁঠালিয়ার নিজামের পদ স্থগিতের চিঠি কেন দেওয়া হয়েছে– সে বিষয়ে শাহাদাত সাহেবের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। এরপর মিন্টু ভাই সিদ্ধান্ত দেবেন।’ তিনি মনে করেন, শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে উপজেলা নেতাদের অভিযোগ ও পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়েছে। এর প্রভাব পড়বে কাউন্সিলে। তার পরও সব সমস্যার সমাধান করে শিগগিরই কাউন্সিল করার আশা করছেন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ন জ ম ম র বহর র ক ন দ র য় সহস কম ট র সদস য ন ত কর ম র ব এনপ র স পর স থ ত প রস ত ত ল ইসল ম উপজ ল করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ক্ষমা চাওয়ার পরই খেলতে রাজি হয়েছিল পাকিস্তান

সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে টসের আগ পর্যন্ত দারুণ নাটকীয়তায় ঘেরা ছিল পাকিস্তানের ড্রেসিং রুম। ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্টকে দায়িত্ব থেকে সরানোর দাবি তোলে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তবে আইসিসি সে দাবি আমলে নেয়নি। শেষ পর্যন্ত নিজের ভুল স্বীকার করে পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলী আগা ও দলের ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান পাইক্রফ্ট। এরপরই মাঠে নামতে রাজি হয় পাকিস্তান দল।

ঘটনার সূত্রপাত ১৪ সেপ্টেম্বরের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ থেকে। টসের সময় দুই অধিনায়কের করমর্দন হয়নি। আরও বড় বিতর্ক তৈরি হয় ম্যাচ শেষে। জয়ী ভারতের ক্রিকেটাররা করমর্দন এড়িয়ে দ্রুত ড্রেসিং রুমে ফিরে যান। সালমান আলী আগার নেতৃত্বে পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলেও সূর্যকুমার যাদব, শিভাম দুবেসহ পুরো ভারতীয় দল সেই শিষ্টাচার মানেনি।

আরো পড়ুন:

আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান, যে ম্যাচে ঝুলছে বাংলাদেশের ভাগ্য

আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান

এমন ঘটনার প্রতিবাদে পাকিস্তান অধিনায়ক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বর্জন করেন। পরে আইসিসির কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানায় পিসিবি। তাদের দাবি ছিল, ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ইচ্ছাকৃতভাবেই দুই অধিনায়কের হাত মেলানো আটকান, যা আইসিসির আচরণবিধি ও ক্রিকেটের স্পিরিটের পরিপন্থী।

যদিও আইসিসির ব্যাখ্যা ছিল ভিন্ন। তারা জানায়, এসিসির কর্মকর্তাদের নির্দেশেই কাজ করেছেন পাইক্রফ্ট। কিন্তু পাকিস্তান নড়েচড়ে বসে। এমনকি জানিয়ে দেয়, পাইক্রফ্ট দায়িত্বে থাকলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে মাঠে নামবে না তারা। এই হুমকির কারণে ম্যাচের শুরুর সময় এক ঘণ্টা পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয় আয়োজকরা।

লাহোরে রমিজ রাজা, নাজাম শেঠিসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি। পরে সমঝোতার পথ খোঁজা হয়। অবশেষে পাইক্রফ্ট স্বীকার করেন, ভুল বোঝাবুঝির কারণেই পরিস্থিতি এতদূর গড়ায়, এবং তিনি পাকিস্তান অধিনায়ক ও ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান। তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান দল।

বুধবার রাতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের সেই শেষ ম্যাচে আরব আমিরাতকে ৪১ রানের ব্যবধানে হারিয়ে সুপার ফোরে ভারতের সঙ্গী হয় সালমান-শাহীনরা। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭.৪ ওভারে ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় আরব আমিরাত।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ