ঝালকাঠি জেলা বিএনপির কাউন্সিলে শীর্ষ দুই পদে কেন্দ্রীয় দুই নেতার প্রার্থিতা ঘোষণার পর জটিল হয়ে পড়েছে পরিস্থিতি। দিনক্ষণ ঠিক না হলেও শান্তিপূর্ণ কাউন্সিল অনুষ্ঠান নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন নেতাকর্মীরা। একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কাঁঠালিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন নিজাম মীর বহরের দলীয় পদ স্থগিত করেছে জেলা কমিটি। এ নিয়ে বাড়াবাড়ির অভিযোগ তুলে সদস্য সচিব শাহাদাত হোসেনকে হুমকি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুল হক নান্নু। শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও অভিযোগ দিয়েছেন জেলার চার উপজেলার সাবেক নেতারা।

জেলা বিএনপি সূত্রে জানা যায়, কাউন্সিলের জন্য সম্ভাব্য দিন হিসেবে তারা ২৮ এপ্রিল নির্ধারণ করেছিলেন। তারা অপেক্ষা করছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সবুজ সংকেতের। কিন্তু গতকাল শনিবার পর্যন্ত তিনি এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেননি।
জেলা বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০১৭ সালে। ১৫১ সদস্যের কমিটিতে মোস্তফা কামাল মন্টুকে সভাপতি ও মনিরুল ইসলাম নুপুরকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল। সেই কমিটি ভেঙে ২০২০ সালের নভেম্বরে গঠন করা হয় আহ্বায়ক কমিটি। এতে সৈয়দ হোসেনকে আহ্বায়ক ও  শাহাদাত হোসেন সদস্য সচিব হন।

গত ফেব্রুয়ারিতে দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য হায়দার আলী লেলিনকে জেলা বিএনপির কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক করা হয়। সেই অনুযায়ী, কাজও শুরু করে কমিটি। এরই মধ্যে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠলে ৫ এপ্রিল কাঁঠালিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন নিজাম মীর বহেকে শোকজ করে আহ্বায়ক কমিটি। এতে একই উপজেলার আমুয়া ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলে খোদা সুমন খলিফার কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবির বিষয়ে জবাব চাওয়া হয়। বিএনপি সূত্রের দাবি, ওই টাকা না দেওয়ায় ২০২৪ সালের ২১ নভেম্বর করা এক মামলায় সুমন খলিফাকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর সঙ্গে আসামি করা হয়। এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নিতে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়ার মিন্টুও জেলার নেতাদের অনুরোধ করেন। কিন্তু তা উপেক্ষা করেই কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনায় ২৩ এপ্রিল নিজাম মীর বহরের দলীয় পদ স্থগিত করে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। এতে উল্লেখ করা হয়, নিজাম মীর বহরের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।
২১ এপ্রিল এক সভায় জেলা বিএনপির সভাপতি পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেন দলের কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল। সেখানেই সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থিতার জানান দেন কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুল হক নান্নু। বিএনপি সূত্র জানায়, দলীয় গঠনতন্ত্রের ১৫(খ) ধারায় উল্লেখ আছে, জাতীয় নির্বাহী কমিটির কোনো কর্মকর্তা এবং দলীয় অঙ্গ দল বা সংগঠনের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক অন্য কোনো পর্যায়ের কমিটিতে কর্মকর্তা নির্বাচিত হতে পারবেন না। ওই দুই কেন্দ্রীয় নেতার জেলা কমিটির শীর্ষ দুই পদে প্রার্থিতার ঘোষণাকে গঠনতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।
রাজাপুরের বাসিন্দা যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক দক্ষিণ শাখার সভাপতি সেলিম রেজা কাউন্সিলে সদস্য হতে আগ্রহী। তিনি মোবাইল ফোনে বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশেই জেলা বিএনপির কাউন্সিলের প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু দুই কেন্দ্রীয় নেতার প্রার্থিতা ঘোষণায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়েছে। মাঠ পর্যায়ে তাদের তেমন গ্রহণযোগ্যতা নেই দাবি করে তিনি বলেন, পরাজয় নিশ্চিত বুঝতে পেরে কেন্দ্রীয় প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছেন এই নেতারা। নানা অভিযোগ তৈরি করে তারা কাউন্সিল বানচালের পাঁয়তারা করছেন।

ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আজম সৈকতের বাড়ি কাঁঠালিয়ায়। তাঁর ভাষ্য, ‘নিজাম মীর বহরের পদ স্থগিতে ক্ষুব্ধ হন নান্নু ভাই। তাই বিভাগীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য ও জেলা কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়েও সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দিয়ে যান।’ অভিযোগ দেওয়ার সময় তিনিও সেখানে ছিলেন দাবি করে সৈকত বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ও বর্তমান কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন বলেন, “আমি (নিজাম মীর বহরের) পদ স্থগিতের চিঠি দেওয়ায় নান্নু ভাই আমাকে হুমকি দিয়েছেন। এমনকি আমার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে এসেছেন। নিজাম মীর বহরের জবাব সন্তোষজনক ছিল না ও জবাবের কোনো প্রমাণও দেননি। তাই কেন্দ্রকে জানিয়েই তাঁর পদ স্থগিতের চিঠি দিয়েছি। ওই চিঠির নিচে ‘বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে’ লিখে নান্নু আমার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়েছেন।” তিনি দাবি করেন, মীমাংসিত বিষয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে সম্মেলন বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। যারা এতে সই করেছেন, তারা সবাই বিগত ১৫ বছর ছিল নিষ্ক্রিয়। তাদের কাউন্সিলে ভোট নেই। তাই ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইছেন তারা।
জেলা কমিটির সভাপতি প্রার্থী ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নুপুর শনিবার সন্ধ্যায় সমকালকে বলেন, সভাপতি হতে না পারলেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকবেন বলে রফিকুল ইসলাম জামাল হুমকি দিয়েছেন। তিনি প্রার্থী হতে চাইলে কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। না হলে কাউন্সিলররা স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না।
শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুল হক নান্নু বলেন, শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে রাজাপুর, কাঁঠালিয়া, নলছিটি উপজেলার বর্তমান ও সাবেক নেতারা চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি (শাহাদাত) জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল্লাহ পনিরের আইনজীবী হিসেবে অতীতে কাজ করেছেন। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর জামিনও করিয়েছেন। 

তাঁর ভাষ্য, ‘কাঁঠালিয়ার নিজাম মীর বহরের বিষয়ে তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দিতে বলেছিলেন দলের বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমপ্রধান ও কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু। তাঁর নির্দেশ উপেক্ষা করে তদন্তের আগেই নিজামের পদ স্থগিত করেছেন শাহাদাত। তাই আমি বলেছি, এটা বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে। আমি তো তাঁকে গালাগাল করিনি।’
বর্তমান পরিস্থিতিতে আসন্ন কাউন্সিল সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক হায়দার আলী লেলিন বলেন, ‘কয়েকদিনের ব্যবধানে কিছু ঘটনায় ও ভুল বোঝাবুঝির কারণে বিষয়গুলো নিয়ে কিছু জটিলতা হয়েছে। আমাদের টিমপ্রধান আবদুল আউয়াল মিন্টুর তদন্ত করার আগেই কাঁঠালিয়ার নিজামের পদ স্থগিতের চিঠি কেন দেওয়া হয়েছে– সে বিষয়ে শাহাদাত সাহেবের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। এরপর মিন্টু ভাই সিদ্ধান্ত দেবেন।’ তিনি মনে করেন, শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে উপজেলা নেতাদের অভিযোগ ও পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়েছে। এর প্রভাব পড়বে কাউন্সিলে। তার পরও সব সমস্যার সমাধান করে শিগগিরই কাউন্সিল করার আশা করছেন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ন জ ম ম র বহর র ক ন দ র য় সহস কম ট র সদস য ন ত কর ম র ব এনপ র স পর স থ ত প রস ত ত ল ইসল ম উপজ ল করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ছয় কোটি শ্রমিক রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার বাইরে

দেশের মোট শ্রমিকের ৮৪ দশমিক ১ শতাংশের কোনো দায়দায়িত্ব নেয় না রাষ্ট্র । শ্রমিক হিসেবে তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। কোনো রকম আইনি ও সামাজিক সুরক্ষা নেই। কর্মস্থলের পরিচয়পত্র নেই। কাজের ক্ষেত্রে অন্যায়ের শিকার হলে তাদের শ্রম আদালতে মামলা করার সুযোগও নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী,  অপ্রাতিষ্ঠানিক এই শ্রমিকের সংখ্যা ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার।

বিশালসংখ্যক শ্রমিকের প্রতি রাষ্ট্রের এ রকম অবহেলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকারের গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গত ২১ এপ্রিল পেশ করা কমিশনের ২৫ সুপারিশের মধ্যে প্রথমে প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা ও স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। 

দেশের শ্রম খাতের দুর্বলতা চিহ্নিত করা এবং শ্রমিকের অধিকার ও জীবনমান উন্নয়নে সুপারিশ প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত ১৯ সদস্যের কমিশনপ্রধান ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। জানতে চাইলে গতকাল তিনি সমকালকে বলেন, ‘আমরা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি। শ্রম আইনে অন্য সব শ্রমিকের মতো একই অধিকার এবং সুযোগসুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষে তাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছি। সামাজিক সুরক্ষার আওতায় তাদের জন্য ভাতার কথা বলেছি। প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকের জন্য এ সুবিধার সুপারিশ করা হয়নি। কারণ, তারা চাকরি শেষে কমবেশি কিছু আর্থিক সুবিধা পান।’ 

কমিশনের এ সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে নিয়মিত নজরদারি রাখার কথাও জানান তিনি। 

এ বাস্তবতায় আজ বৃহস্পতিবার মহান শ্রমিক দিবস পালন করা হচ্ছে। আজ সরকারি ছুটি থাকবে। এ দিনও কাজ করতে হবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দিবসটি পালনের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’। 

বিবিএসের গত নভেম্বরে প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১২ কোটি ৬ লাখ ২০ হাজার। তাদের মধ্যে শ্রমশক্তি ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার। মোট শ্রমশক্তির ৮৪ দশমিক ১ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। 

দেশে শ্রমশক্তি বলতে ১৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে যারা কর্মে নিয়োজিত এবং বেকার জনগোষ্ঠীর সমষ্টিকে বোঝায়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর মানদণ্ড অনুযায়ী, যারা সাত দিনে কমপক্ষে ১ ঘণ্টার বেতন, মজুরি বা মুনাফার বিনিময় অথবা পরিবারের নিজস্ব ভোগের জন্য পণ্য উৎপাদনের কাজ করেছেন জরিপে তাদের কর্মে নিয়োজিত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আবার যারা কর্মক্ষম কিন্তু কোনো কাজে নিয়োজিত নন, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ খুঁজে বেড়ান এবং ওই সময়ে কাজের সুযোগ পেলে সে কাজ করতে প্রস্তুত তাদের বেকার বলা হয়েছে। এ হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৪ লাখ ৬০ হাজার। 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক কারা 

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর আন্তর্জাতিক শ্রম পরিসংখ্যানবিদের সম্মেলন ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব লেবার স্ট্যাটিসিয়ান্স–আইসিএলসির সংজ্ঞা অনুযায়ী, বেসরকারি অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বা খানামালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, যেগুলোর আইনি সত্তা নেই, পরিপূর্ণ হিসাব নেই, উৎপাদনের হিসাব দিতে হয় না এবং বেসরকারি ও অনিবন্ধিত–এরকম খাতকে অনানুষ্ঠানিক খাত এবং এ খাতের শ্রমিকদের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক বলা হয়। 

মূলত কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক বেশি। কৃষিতে ৯৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক। শিল্প খাতে ৮২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের বড় অংশই গ্রামে থাকেন। 

বিবিএস বলছে, গ্রামের মোট শ্রমিকের ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। সংখ্যায় তারা ৪ কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার। শহরের শ্রমিকদের এ হার কিছুটা কম। ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ। সংখ্যায় এক কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার। নারী শ্রমিকদের ৯৫ দশমিক ৭ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে থাকেন।

শ্রম আইনে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকেও অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ কমিশনের 

শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক, কৃষি, গৃহশ্রমিক, অভিবাসী, স্বনিয়োজিত শ্রমিকসহ সব শ্রমিকের জন্য শ্রম আইনে সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে শ্রমিকদের কাজের স্বীকৃতি, পরিচয়পত্র, নিরবচ্ছিন্ন কাজ এবং আয়ের নিশ্চয়তা, মর্যাদাকর শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, এসব শ্রমিকের জন্য রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা হিসেবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সব অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলাদা অফিস অথবা ডেস্ক স্থাপন করতে হবে। শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা এবং কল্যাণে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের সব ধরনের তথ্য নিয়ে তথ্যভান্ডার করা, পরিচয়পত্র দেওয়া এবং অবসর ভাতা চালুসহ বেশ কিছু সুপারিশ করে কমিশন। 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের প্রবীণ শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতার সুপারিশ 

রাষ্ট্রের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের আওতায় বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে থাকেন প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা। অবসরের পরও কিছু সুবিধা পান তারা। তবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা সারা জীবন খাটুনির পর প্রবীণ বয়সে আরও কষ্টে থাকেন। কারণ সামান্যতম কোনো সুবিধা পান না তারা। এ বিবেচনা থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতা বা তাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার সুপারিশ করেছে কমিশন। তাদের অবসরের বয়সসীমা ৬০ বছর নির্ধারণের কথা বলা হয় এতে। দরিদ্র বেকার শ্রমিকদের বয়স্কভাতা এবং তাদের প্রতিদিনের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও অন্যান্য চাহিদা বিবেচনায় বয়স্কভাতার পরিমাণ নির্ধারণের কথা বলেছে কমিশন। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের পেশা ও খাত অনুযায়ী সংগঠিত হওয়া, প্রতিনিধিত্ব করা ও নিয়োগকারী, তাদের সমিতি করার সুযোগ দেওয়ার কথাও বলা হয় কমিশনের সুপারিশে। 

প্রাতিষ্ঠানিকের ৫৫ খাতেও ন্যূনতম মজুরি নেই 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের চেয়ে কিছুটা ভালো হলেও প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের অবস্থাও খুব বেশি ভালো নয়। এখনও অনেক শিল্প খাতকে ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর আওতায় আনা হয়নি। মালিকপক্ষ যা দেয়, তা মেনে নিয়ে কাজ করেন শ্রমিকরা। এরকম অন্তত ৫৫টি খাতে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়নি। 

শ্রম মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের স্বীকৃত শিল্প আছে ১০২টি। 

টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের মজুরি বোর্ড হয় সর্বশেষ ১৯৮৩ সালে। অর্থাৎ, গত তিন যুগ ধরে একই মজুরি চলছে এ খাতে। জানতে চাইলে সরকারের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা ইসলাম গতকাল সমকালকে বলেন, ন্যূনতম মজুরি কাঠামোতে বর্তমানে ৪৭টি শিল্প রয়েছে। নতুন করে দুটি শিল্পকে ন্যূনতম মজুরির আওতায় আনা হবে। আরও ২০ শিল্পকে এর আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি জানান, পেট্রোল পাম্পের শ্রমিকদের মজুরি পুনঃনির্ধারণে বোর্ড গঠন হয়েছে। মালিক পক্ষ এ-সংক্রান্ত সভায় আসছে না। এ অবস্থায় করণীয় জানতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চেয়েছে মজুরি বোর্ড। 

টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পে তিন যুগ ধরে একই মজুরির বিষয়ে জানতে চাইলে রাইসা ইসলাম বলেন, টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের আর অস্তিত্ব নেই। খাতটি হয়তো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ