নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের একজন কর্মীকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগে থানা ঘেরাও করে প্রায় চার ঘণ্টা বিক্ষোভ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা। সোমবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোতোয়ালি থানা ঘেরাও করে ওই ছাত্রলীগ কর্মীকে আটকের দাবি জানান তাঁরা। পরে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে গ্রেপ্তারের সময় বেঁধে দিয়ে কর্মসূচি তুলে নেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে ছাত্রদল কর্মীদের ওপর হামলা ও মারধরে জড়িত থাকার অভিযোগে রোববার সন্ধ্যায় দুজনকে প্রক্টর অফিসে হস্তান্তর করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা। তাঁরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আতাউল গণি। অপরজন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আকরাম হোসেন। রাত নয়টার দিকে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা দুজনকে কোতোয়ালি থানা–পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন।

সোমবার আকরাম হোসেনকে ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানান পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলেন, আকরাম জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি কখনো ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের মৌখিক সম্মতি নিয়ে গণস্বাক্ষর দিয়ে থানায় আবেদন করলে পুলিশ মুচলেকা নিয়ে তাঁকে ছেড়ে দেয়।

এ খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে আকরামকে গ্রেপ্তারের দাবিতে সোমবার বিকেল থেকে থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মাসুদ রানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আকরাম ভাই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। তাকে ছাত্রলীগকর্মী আখ্যায়িত করে হামলা ও হেনস্তা করা হয়েছে। সে কখনো ছাত্রলীগের পদে ছিল বা মিছিল মিটিংয়ে যেতে দেখিনি আমরা। একজন জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধাকে এভাবে ছাত্রলীগ বলে চালিয়ে দেবে, তা আমরা মেনে নিতে পারি না। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ বা মামলাও নেই, এ জন্য তাকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে এসেছি।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অসহযোগিতার কারণে ছাত্রলীগ কর্মী ছাড়া পেয়ে গেল। আমরা অভিযোগ দেওয়ার পরও কেন তাকে ছেড়ে দিয়েছে, এ জন্য আমরা অবস্থান নিয়েছি। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত আকরামকে আটক করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে পুলিশকে আহ্বান জানাচ্ছি।’

আকরাম হোসেনকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো.

ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দুজন ছাত্রলীগ কর্মীকে আহত অবস্থায় প্রক্টরিয়াল বডির কাছ থেকে পেয়েছি। তারপর তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পরে থানায় নিয়ে এসেছি। দুজনের মধ্যে আতাউল গণি ছাত্রলীগের পদে থাকায় এবং অভিযোগের ভিত্তিতে চালান করে দিয়েছি। আকরামের বিরুদ্ধে আমরা ছাত্রলীগের সাথে কোনো প্রকার সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাইনি।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল র কর ম র কর ম ক আকর ম

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে