কুমিল্লায় যুবলীগ নেতা জামাল হোসেন হত্যার তদন্ত দুই বছর ধরে ঝুলছে। ২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিল রাতে দাউদকান্দি উপজেলার গৌরিপুর পশ্চিম বাজারে তাঁকে গুলি করে হত্যা করে বোরকা পরা ৩ সন্ত্রাসী।

তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল হোসেন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সব আসামিই জামিনে মুক্ত। গত বছরের জুলাই মাসে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) বোরকা পরা তিন শুটারসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয়। এতে আপত্তি জানিয়ে আদালতে আবেদন করেন জামালের স্ত্রী পপি আক্তার। পরে অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

মামলার বাদী পপি আক্তারের অভিযোগ, জামাল পরিকল্পিত হত্যার শিকার। তাঁকে হত্যার আগে আসামিদের একাধিক বৈঠক হয়। কিন্তু ডিবির চার্জশিটে প্রভাবশালী আসামিদের নাম রাখা হয়নি। তাঁর দাবি, হত্যার নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিরাও আওয়ামী লীগের রাজনীতি করত। আসামিদের রক্ষা করতে তদবিরও করেছে আওয়ামী লীগের নেতারা। তিনি বলেন, ‘আমি নারী হয়ে একাই ৪ নাবালক সন্তান নিয়ে স্বামী হত্যার বিচারের জন্য দুই বছর ধরে লড়ছি। মামলায় গ্রেপ্তার ভাইস চেয়ারম্যান সোহেল শিকদার, শুটার দেলুসহ সব আসামিই জামিনে বেরিয়ে গেছে। শুটার কালা মনির ও আরিফ ধরাছোঁয়ার বাইরে।’ পিবিআই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জড়িত সবার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বলেও জানান তিনি।

ডিবির ওসি রাজেস বড়ুয়ার দেওয়া চার্জশিটে থাকা আসামিরা হলো– তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি গ্রামের শুটার আকাশ প্রকাশ আরিফ, কালা মনির ও দাউদকান্দির চরচারুয়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেলু, জিয়ারকান্দি গ্রামের সুজন মিয়া, ইসমাইল, মো.

রবি, শাহপরান, আল-আমিন প্রকাশ শাহ আলী, তিতাসের লালপুর গ্রামের সুমন হোসেন ওরফে ড্রাইভার সুমন, ফরাজি বাড়ি গ্রামের সহিদুল ইসলাম ওরফে সাদ্দাম মাস্টার, দাউদকান্দির গোপচর গ্রামের পা কাটা শাহ আলম ও দেবিদ্বার উপজেলার রসুলপুর গ্রামের অলি উল্লাহ ওরফে অলি হাসান।

অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় তিতাস উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সোহেল শিকদার, জিয়ারকান্দি গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা বাদল রিয়াজ, একই গ্রামের আতিকুর রহমান শাকিল, দেবিদ্বারের নবীয়াবাদ গ্রামের যুবলীগ নেতা মো. মাসুদ ও ছাত্রলীগ নেতা মাজহারুল ইসলাম সৈকত।
বাদীর আইনজীবী মাসুদ সালাউদ্দিন বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর গ্রেপ্তার অনেক আসামি রিমান্ডে ও আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে হত্যার পরিকল্পনা, অস্ত্র সরবরাহ ও হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে অনেক তথ্য দেয়। কিন্তু ডিবির চার্জশিটে তার প্রতিফলন ঘটেনি। মামলাটি এখন তদন্ত করছে পিবিআই। এখন যেহেতু রাজনৈতিক চাপ নেই, তাই পিবিআই নেপথ্যে থাকা সবাইকে আইনের আওতায় আনবে বলে আশা তাঁর।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই কুমিল্লার পরিদর্শক মফজল হোসেন খান জানান, মামলার অনেক আসামি এখন দেশের বাইরে। পরিকল্পনা করেই শুটার ভাড়া করে জামালকে গুলি করে হত্যা করে। তদন্ত শেষ পর্যায়ে। আগামি দুই মাসের মধ্যে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হবে।

এর আগে ২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিল রাতে দাউদকান্দি উপজেলার গৌরিপুর পশ্চিম বাজারে বোরকা পরা তিন সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত হন যুবলীগ নেতা জামাল হোসেন। এ ঘটনায় তাঁর স্ত্রী পপি আক্তার ৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় ৭-৮ জনের বিরুদ্ধে দাউদকান্দি থানায় মামলা করেন। হত্যাকাণ্ডের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই গাড়িচালক সুমন হোসেনকে গ্রেপ্তার করলে রহস্যের জট খুলতে থাকে। পরে র‍্যাব ও পুলিশের অভিযানে ৬ মে ঢাকার রায়েরবাগ থেকে মামলার ৪ নম্বর আসামি সোহেল শিকদার ও মিরপুর থেকে ৩ নম্বর আসামি মো. ইসমাইল, চট্টগ্রাম থেকে ৭ নম্বর আসামি শাহ আলম ওরফে পা কাটা আলম এবং ৯ মে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে দেলোয়ার হোসেন দেলু গ্রেপ্তার হয়। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন হত হত য য বল গ ন ত দ উদক ন দ উপজ ল র র তদন ত প ব আই

এছাড়াও পড়ুন:

আসামি না হয়েও স্বেচ্ছায় কারাগারে যাওয়া সেই যুবক প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামে মাদকের একটি মামলায় আসামি সেজে আদালতে আত্মসমর্পণের পর কারাগারে যাওয়া এক যুবককে জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার (শ্যোন অ্যারেস্ট) দেখিয়েছেন আদালত। তাঁর নাম মো. রাকিব। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদ শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রকৃত আসামি মো. সুমনের হয়ে আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেন রাকিব। আদালতের আদেশে ১ জুলাই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে আটক রাকিবকে জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করেন। আসামিকে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।

আদালত সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট নগরের আকবর শাহ থানার কৈবল্যধাম এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যানে অভিযান চালিয়ে ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে র‌্যাব, যার মূল্য ৪ লাখ টাকা। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় গাড়িচালক রাহাত ইসলামকে। পালিয়ে যান চালকের সহকারী (হেলপার) মো. সুমন। এ ঘটনায় র‌্যাব কর্মকর্তা বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে রাহাত ইসলাম ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়।

আদালত পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে পলাতক আসামি সুমনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরই মধ্যে সুমনের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। বিষয়টি জানতে পেরে সুমন নিজেকে কারামুক্ত রাখতে তাঁর পরিবর্তে নোয়াখালীর রাকিবকে আদালতে আত্মসমর্পণ করায় ১ জুলাই। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তফা শুনানি শেষে আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। সুমনের হয়ে রাকিব আত্মসমর্পণের সময় তাঁর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ওয়াহিদ মুরাদ।

আদালতে একজনের পরিবর্তে আরেকজন আত্মসমর্পণের বিষয়টি ধরা না পড়লেও কারাগারে গিয়ে ধরা পড়ে। জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজে (তথ্যভান্ডার) ভোটারদের আঙুলের ছাপ সংরক্ষিত আছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে আঙুলের ছাপে ধরা পড়েছে অনেক বন্দীর আসল পরিচয়। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি মাসের জুলাই পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করে জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আসা ১৬ জনের আঙুলের ছাপে শনাক্ত করা হয়।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আদালত থেকে কারাগারে আসা প্রত্যেক নতুন আসামির আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। সেখানে আসামির জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা আসল পরিচয় উঠে আসে। ইকবাল হোসেন আরও বলেন, ‘সুমনের হয়ে কারাগারে আসা রাকিব স্বীকার করেছেন তিনি মাদক মামলার প্রকৃত আসামি নন। ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি সুমন সেজেছেন। তাঁকে বলা হয়েছে, দ্রুত কারাগার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হবে। তাই তিনি রাজি হয়েছেন। বিষয়টি চিঠি দিয়ে আদালতকে জানানো হয়েছে।’

আরও পড়ুনচট্টগ্রামে ‘আয়নাবাজি’, ধরা পড়েছে আঙুলের ছাপে০৮ নভেম্বর ২০২৩

কারাগার থেকে চিঠি পাওয়ার পর মামলা করার নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান। একই সঙ্গে আসামিকে আত্মসমর্পণকারী আইনজীবী ওয়াহিদ মুরাদের কাছে কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। আদালতের প্রসিকিউশন শাখার আকবর শাহ থানার জিআরও সাইদুর রহমান বাদী হয়ে গত রোববার রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় মো. রাকিব ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়। সুমন এখনো পলাতক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কলকাতায় বাংলাদেশি অভিনেত্রী গ্রেপ্তার , দাবি ভারতীয় গণমাধ্যমের
  • কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি অভিনেত্রী
  • ওভালে টস হেরে ব্যাটিংয়ে ভারত, একাদশে চার পরিবর্তন
  • কর্মস্থলে অনুপস্থিত, পাঁচ প্রকৌশলী ও এক স্থপতি বরখাস্ত
  • গণপূর্ত অধিদপ্তরের ৫ প্রকৌশলী ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের স্থপতি বরখাস্
  • মুক্তিপণ দিয়েও পাঁচ মাস ধরে ১৪ তরুণের খোঁজ পাচ্ছেন না স্বজনেরা
  • দলবদলের বাজারে চেলসিই রাজা, শীর্ষ দশে আর কারা
  • গাজায় হামলার নিন্দা জানালেও ইসরায়েলের সঙ্গে কেন বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে এসব দেশ
  • গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়ালো
  • আসামি না হয়েও স্বেচ্ছায় কারাগারে যাওয়া সেই যুবক প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার