গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ছাড়া কোনো দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কার্যকর থাকতে পারে না। রাষ্ট্রে এমন কোনো আইন থাকতে পারবে না, যার মাধ্যমে সরকার গণমাধ্যমের গলা টিপে ধরতে পারে। এ ধরনের যত আইন আছে, সেগুলো বাতিল করতে হবে।

আজ রোববার দুপুরে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় জোনায়েদ সাকি এসব কথা বলেন। সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ এ সভার আয়োজন করে।

সভায় জোনায়েদ সাকি বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ন্যূনতম একটা প্রাথমিক শর্ত হচ্ছে সেখানে গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে কি না। ফলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কার্যকর করা, প্রতিষ্ঠা করা কিংবা যাঁরা গণতন্ত্রের পক্ষে নিজেদের অঙ্গীকার রাখতে চান, তার প্রাথমিক ধাপ হলো গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করা।

জবাবদিহি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গণমাধ্যমের মালিক, সাংবাদিক সবার জবাবদিহি দরকার। জবাবদিহি ছাড়া একচ্ছত্র কর্তৃত্ব যদি তৈরি হয়, নিশ্চিতভাবে সেখানে স্বেচ্ছাচারিতা হবে।

কিছু গণমাধ্যমমালিকদের গোষ্ঠী স্বার্থের সেবা করার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, সেই ধারা এখনো বর্তমান। ফলে গণমাধ্যমের মালিকানা কীভাবে নির্ধারণ হবে, সংস্কারের ক্ষেত্রে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

একজন ব্যক্তি চাইলে অনেকগুলো গণমাধ্যম খুলে ফেললেন, এই জায়গাটা বন্ধ হওয়া দরকার বলেও মনে করেন সাকি। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের মালিকানার ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকা দরকার। যাতে একচেটিয়া স্বার্থের গণমাধ্যম না হয়।

জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘কারও একচ্ছত্র ক্ষমতা যাতে সমাজে তৈরি না হয়, সেটাই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। সেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নির্মাণের জন্য আমরা লড়ছি।’ তিনি বলেন, মানুষ যখন মনে করবে ন্যায় পেতে শেষ পর্যন্ত গণমাধ্যমের কাছে যেতে হবে, সেই ভরসার জায়গা তৈরি হবে, সেদিন বুঝতে হবে বাংলাদেশে সত্যি সত্যি একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে।

এ দেশে অভ্যুত্থানের ওপর দাঁড়ানো সরকার তৈরি হয়েছে কিন্তু ‘মব’ আক্রমণ চলছে—এমন মন্তব্য করে জোনায়েদ সাকি বলেন, এখন কোনো জায়গায় মব আক্রমণের হুমকি দিলে সেই জায়গায় কার্যকর হয়ে যাচ্ছে। ভয়ের চোটে কারও চাকরি খেয়ে নেওয়া হচ্ছে। সুতরাং এই মব আক্রমণ বন্ধ করতে হবে। রাষ্ট্র যদি মব আক্রমণ বন্ধ করতে না পারে, তাহলে রাষ্ট্রেরই অস্তিত্ব থাকে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দৈনিক বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহ্‌ফুজ আনাম। আলোচনা সভায় রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

সম্পাদকদের মধ্যে বক্তব্য দেন দ্য নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবীর, মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ। আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, সমকালের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী, দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক ব যবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় পার্টিতে সম্মেলন ঘিরে উত্তেজনা, আপস করবেন না জি এম কাদের

২৮ জুন জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় সম্মেলন আয়োজনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের একটি অংশ। এ লক্ষ্যে সারা দেশে জেলা কমিটির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট নেতারা বলছেন, জাতীয় পার্টি থেকে বের হয়ে গঠিত দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সম্মেলনে উপস্থিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

রাজধানীর কাকরাইলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই সম্মেলন করার প্রস্তুতি চলছে। তবে সম্মেলনের জন্য এখনো প্রশাসনের অনুমতি পাওয়া যায়নি।

এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে সারা দেশে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে দ্বিধা-বিভক্তি দেখা দিয়েছে। দলের নেতৃত্ব নিয়ে কী হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎকণ্ঠাও তৈরি হয়েছে।

সম্মেলন আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত একজন দায়িত্বশীল নেতা বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা সর্বাত্মকভাবে সম্মেলন সফল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা আশা করছেন, আগামী রোববারের মধ্যে প্রশাসনের অনুমতি পাওয়া যাবে। তখন সম্মেলন ঘিরে প্রেক্ষাপট পাল্টে যাবে।

এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে সারা দেশে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে দ্বিধা-বিভক্তি দেখা দিয়েছে। দলের নেতৃত্ব নিয়ে কী হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎকণ্ঠাও তৈরি হয়েছে।

তবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের প্রথম আলোকে বলেছেন, তিনি এই তৎপরতাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তিনি প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠা নেতাদের সঙ্গে কোনোভাবেই আপস করবেন না।

জাতীয় পার্টির সংশ্লিষ্ট নেতারা বলছেন, এবার দলের দশম জাতীয় সম্মেলনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দলীয় গঠনতন্ত্রের ২০ ধারার (ক) উপধারার সংশোধন। এর মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টিতে বিদ্যমান ‘একক’ ও ‘কর্তৃত্ববাদী’ নেতৃত্বের বদলে যৌথ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।

ওনাদের সঙ্গে আমি আর রাজনীতি করতে চাই না। তাঁরা শেখ হাসিনার সময়েও অনেক যন্ত্রণা দিয়েছেন, আবার এখনো সেটি শুরু করেছেন। তারা যা ইচ্ছা করুক। প্রয়োজনে রাজনীতি ছেড়ে দেব, নীতি ছাড়ব না।জি এম কাদের, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান

জাতীয় পার্টির দুই জ্যেষ্ঠ নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার এই সম্মেলনের উদ্যোক্তা। তাঁদের সঙ্গে দলের সাবেক ও বর্তমান জ্যেষ্ঠ নেতাদের বড় একটি অংশসহ বিভিন্ন জেলার নেতারাও রয়েছেন। এতে তারা ভালো সাড়া পাচ্ছেন বলে সম্মেলন আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতারা জানিয়েছেন।

অন্যদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ২৮ জুনের সম্মেলন স্থগিত করেছেন। কারণ, হিসেবে চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের মিলনায়তনের হল বরাদ্দ বাতিল হওয়ার কথা বলেছেন। এরপর দলের অপর পক্ষ কাকরাইলে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সম্মেলন করার ঘোষণা দেয়। ফলে সম্মেলন ঘিরে দুই পক্ষে কিছুটা উত্তেজনার তৈরি করেছে।

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মুজিবুল হক

সম্পর্কিত নিবন্ধ