রাজপথে নয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান আলোচনার টেবিলে করতে হবে বলে মনে করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। শুক্রবার ইসলামী আন্দোলনের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম এক বিবৃতিতে বলেন, ‘দেশের প্রথম সারির একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসন–সংকট দূরীকরণ ও ক্যাম্পাস নির্মাণের মতো বিষয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের রাজপথে আন্দোলন করতে হচ্ছে; এর মতো লজ্জাজনক বিষয় আর হতে পারে না।’

বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের অপশাসনের ফলে দেশের সব খাতের মতো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে রেজাউল করীম বলেন, ‘এর সম্ভাবনা নষ্ট করে ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। এখন এর একটা বিহিত হওয়া আবশ্যক, তবে তা রাজপথে নয়; বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা ও সরকারের সামর্থ্য পর্যালোচনা করে আলোচনার টেবিলে এর সমাধান করতে হবে।’

মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুলিশের শক্তি প্রয়োগ এবং সমাবেশ থেকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর বোতল নিক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘পতিত স্বৈরাচার রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তারা যৌক্তিক আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করে সুযোগ নিতে পারে। সে জন্য সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।’

বিবৃতিতে রেজাউল করীম আরও বলেন, ‘আমাদের সবার মনে রাখতে হবে, বর্তমান সরকার অভ্যুত্থান–পরবর্তী একটি অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারের প্রধান কাজ রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় নীতি ও কাঠামোগত সংস্কার শেষ করে নির্বাচন আয়োজন করা। বিগত ৫৪ বছরের অনিয়মের ফলে সৃষ্ট জঞ্জাল দূর করার দাবি এই সরকারের ওপর চাপিয়ে দেওয়া বে-ইনসাফি হবে।’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার দেশের অর্থনীতিকে যে পর্যায়ে রেখে গেছে, তাতে করে মানুষের প্রাথমিক মৌলিক চাহিদা পূরণেই অন্তর্বর্তী সরকারকে সংগ্রাম করতে হচ্ছে। এই বাস্তবতায় বিগত সরকারগুলোর সৃষ্ট সমস্যার সমাধান তাৎক্ষণিকভাবে এই সরকারের কাছে চাওয়া যৌক্তিক হবে কি না, তা ভেবে দেখতে হবে।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উচ্চ ব্যয়ে নিজ দায়িত্বে আবাসনের ব্যবস্থা করতে হয় উল্লেখ করে রেজাউল করীম বলেন, ‘এটা একজন শিক্ষার্থীর ওপর প্রচণ্ড আর্থিক চাপ তৈরি করে। সেই চাপে শিক্ষার্থীরা টিউশনি, খণ্ডকালীন চাকরি করতে বাধ্য হয়; যা তাদের একাডেমিক দক্ষতা অর্জনের পথে বাধা তৈরি করে। সে জন্য তাদের আবাসনবৃত্তি ও ক্যাম্পাস নির্মাণের দাবি খুবই যৌক্তিক।’

রেজাউল করীম সরকারকে অতিদ্রুত সম্ভাব্য যেকোনো পন্থায় তাঁদের দাবি পূরণের ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

ইউরোপজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ, জার্মানিতে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি

ইউরোপজুড়ে কয়েকদিন ধরে চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। মহাদেশটির দক্ষিণাঞ্চলে গরম ক্রমেই অসহনীয় হয়ে উঠছে। জার্মানিতে রেকর্ড তাপমাত্রা প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। ইতালি, স্পেন ও গ্রিসের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। দক্ষিণ ইউরোপের কিছু অঞ্চলে রাতের তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামছেই না।

প্রচন্ড গরমে সতর্কতা হিসেবে পদক্ষেপ নিচ্ছে বিভিন্ন দেশ। জার্মানি বিভিন্ন শহরে কয়েকদিন ধরে রাস্তাঘাটে লোকজন কম দেখা যাচ্ছে। অনেক স্কুল বন্ধ বা তাড়াতাড়ি ছুটি দেওয়া হচ্ছে। শীতল অনুভূতি পেতে জলাশয়ের ধারে বিপুল মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে। অনেক অঞ্চলে তাপপ্রবাহ সংক্রান্ত সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে এবং তা রেডিও–টেলিভিশনে প্রচার করা হচ্ছে।

জার্মান আবহাওয়া সংস্থার একজন বিশেষজ্ঞের মতে, তীব্র তাপপ্রবাহের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। বুধবার পর্যন্ত তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। জার্মান আবহাওয়া সংস্থার আবহাওয়াবিদ মার্কো মানিত্তা সংবাদমাধ্যম ডের স্পিগেলকে জানিয়েছেন, ‘এই সময়ে, অর্থাৎ জুলাইয়ের শুরুতে, এমন তাপপ্রবাহ আগেও হয়েছে। তবে এবারের তাপমাত্রাটা অস্বাভাবিকভাবে তীব্র।’

অস্বাভাবিক তাপমাত্রার একাধিক কারণের মধ্যে রয়েছে—বায়ুমণ্ডলের ওপরের অংশে একটি শক্তিশালী উচ্চচাপ বিরাজ করছে; সূর্যকিরণ অনেক বেশি সময় ধরে থাকছে; সূর্যের অবস্থান অনেক উঁচুতে থাকার কারণে দিনের আলোও দীর্ঘ হচ্ছে; দীর্ঘ সময় ধরে দিন থাকার কারণে ভূপৃষ্ঠ যত তাপ গ্রহণ করছে, তার চেয়ে কম তাপ বিকিরণ করছে।

মার্কো মানিত্তা বলেন, এই সবকটি উপাদান একসঙ্গে মিলে তাপপ্রবাহ সৃষ্টি করছে। একে ‘হিট কাপ’ বা ‘হিট ডোম’ বলা হয়। এতে মেঘ গঠনের সুযোগ কমে যায় এবং সূর্য সরাসরি মাটিতে তাপ ছড়ায়। একই সঙ্গে বায়ুচাপ গরম বাতাসকে নিচে ঠেলে দেয়, ফলে বাতাস আরও গরম হয় এবং গরম বাড়ে। এই ‘হিট কাপ’ অনেকদিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এর বিপরীতে, যেসব উপাদান ঠান্ডা প্রভাব ফেলতে পারে—যেমন সাহারা মরুভূমির ধুলাবালু, ভেজা বা আর্দ্র মাটি, ঠান্ডা পানির উৎস, এগুলো এখন কমে গেছে।

জার্মান আবহাওয়া সংস্থার পূর্বাভাস অনুসারে, এই সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ অবস্থায় পৌঁছাবে। জার্মানিতে স্থানভেদে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে। বর্তমানে জার্মান জুড়ে তাপমাত্রা রয়েছে ৩৪ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার হতে পারে এবারের গ্রীষ্মের সবচেয়ে গরম দিন। তবে ভালো খবর হলো বৃহস্পতিবার থেকে গরম কিছুটা কমবে।

ইতালির ‘কারোন্তে’ নামের উচ্চচাপ অঞ্চল দেশটিতে বহুদিন ধরে প্রচণ্ড গরমের সৃষ্টি করছে। রোম, ফ্লোরেন্স, বোলোনিয়া ও পেরুজিয়ায় তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১৭টি শহরে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে। পুগলিয়া, বেসিলিকাতা ও সিসিলিতেও তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল ৪টার পর্যন্ত কৃষি ও নির্মাণকাজে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

আফ্রিকা থেকে আসা গরম বাতাস স্পেনে গ্রীষ্মের প্রথম তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে এনেছে। সেভিয়া, সারাগোসা ও অন্যান্য অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। স্পেনের আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, দেশটিতে তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাতে পারে। মায়োর্কায় তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও উচ্চ আর্দ্রতার কারণে আরও বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে।

গ্রিসে কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়ানোর পূর্বাভাস পাওয়া গেছে। দেশটিতে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সব প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান বন্ধ রাখা হয়েছে। অনেক এলাকায় রাতের তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামছে না। তবে গ্রীসের ক্রেট ও এজিয়ান দ্বীপপুঞ্জে সমুদ্রের বাতাসের কারণে কিছুটা ঠান্ডা পরিবেশ রয়েছে। সেখানে তাপমাত্রা প্রায় ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সম্পর্কিত নিবন্ধ