কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের হরিণাফাঁড়ি এলাকায় ট্রাকের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও এক যুবক। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে আনোয়ারা-বাঁশখালী-চকরিয়া (এবিসি) আঞ্চলিক মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত যুবকের নাম মোহাম্মদ আরিফ (৩৫)। তিনি চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের সিকদারপাড়া গ্রামের মোহাম্মদ এনামের ছেলে। আহত মোহাম্মদ হোছাইন (৩২) একই এলাকার রাজা মিয়ার ছেলে। হতাহতরা মোটরসাইকেলের আরোহী ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী লোকজন ও পুলিশ জানায়, মোটরসাইকেল নিয়ে পেকুয়ার চৌমুহনী থেকে এবিসি আঞ্চলিক মহাসড়ক হয়ে বাড়ি ফিরছিলেন মোহাম্মদ আরিফ ও মোহাম্মদ হোছাইন। হরিণাফাঁড়ি এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় মোটরসাইকেলটির। এতে মোটরসাইকেল আরোহী দুজনই গুরুতর আহত হন এবং মোটরসাইকেলটি দুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে স্থানীয় বাসিন্দারা পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মোহাম্মদ আরিফকে মৃত ঘোষণা করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় মোহাম্মদ হোছাইনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। খবর পেয়ে পেকুয়া থানা–পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ট্রাকটি জব্দ করে।

পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান বলেন, দুর্ঘটনায় আরিফ মাথায় গুরুতর আঘাত পান। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। আহত মোহাম্মদ হোছাইনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সিরাজুল মোস্তফা বলেন, দুর্ঘটনার পর ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। নিহতের পরিবারের অভিযোগের আলোকে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ হ ছ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

পদত‍্যাগ নয়, সব পক্ষকে সমঝোতামূলক সমাধানে আসার আহ্বান এবি পার্টির

‌রাষ্ট্রের সম্ভাব‍্য রাজনৈতিক সংকট ও জটিল পরিস্থিতিতে ড. ইউনূসের পদত‍্যাগ নয় বরং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব পক্ষকে সমঝোতামূলক সমাধানে পৌঁছার আহ্বান জানিয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি ‘এবি পার্টি’। 

শুক্রবার (২৩ মে) বিকেলে দ‌লের বিজয় নগরস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দল‌টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু এ আহ্বান জানান।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জন‌ ঘি‌রে সর্ব‌শেষ প‌রি‌স্থি‌তি নি‌য়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- দলের ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কাসেম, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল হেলাল উদ্দিন, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল দিদারুল আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসরিন সুলতানা মিলি, আমিনুল ইসলাম এফসিএ, শাহাদাতুল্লাহ টুটুল, সাংগঠনিক সম্পাদক (রাজশাহী) সাইয়েদ নোমান, সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল) গাজী নাসির এবং  বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ লোকমান।

মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “গত কয়েক মাস ধরে দেশে যে পরিস্থিতি ঘুরপাক খাচ্ছিল এবং সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন পক্ষের যে দূরত্ব দৃশ্যমান হচ্ছিল তাতে আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম। আমরা বলেছিলাম, এটা বন্ধ না হলে পরিস্থিতি জটিলতা ও সংকট দেখা দেবে। প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ নেই বলেও আমরা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম।” 

তিনি বলেন, “গত কয়েকদিন বিএনপি ও এনসিপির পাল্টাপাল্টি বক্তব‍্য, ৬ জন উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি, যমুনা অবরোধ করে গত কয়েক মাসের নানা দাবি-দাওয়া আন্দোলন এবং সর্বশেষ সোশ্যাল মিডিয়া ও কিছু সংবাদপত্রে সেনা প্রধানের অফিসার্স এড্রেসে প্রদত্ত বক্তব্যের প্রচার ব‍্যাপক ধুম্রজাল তৈরি করেছে। স্পষ্টত, সরকারের সঙ্গে বিএনপি ও এনসিপির সম্পর্কের অবনতি লক্ষ‍্য করা গেছে। সেনাপ্রধানের নামে প্রচারিত বক্তব‍্য থেকে বোঝা গেছে, সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সমন্বয়গত ঘাটতি রয়েছে।”

এসব বিষয়কে অনাকাঙ্ক্ষিত আখ্যায়িত করে তিনি আরো বলেন, “গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন‍্য সরকারের উপদেষ্টারা কোনো উদ‍্যোগ নেননি। কোনো কোনো উপদেষ্টার তৎপরতা ও কর্মকাণ্ডে রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পর সংহতি ও জাতীয় ঐক‍্য বিনষ্ট হয়েছে। ছাত্রদের সমন্বয়ে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি কিছু কিছু বিষয়ে অহেতুক বিবাদে লিপ্ত হয়ে নিজেদের ইমেজ ও গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।” 

“বিএনপিসহ বড় কয়েকটি রাজনৈতিক দল সংস্কার, বিচার, নির্বাচন এবং আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধকরণ প্রসঙ্গে একেকবার একেক রকম বক্তব্য দিয়েছেন। বড় দুইটি দল নিজেদের ক্ষমতাকেন্দ্রীক বিভেদে লিপ্ত হয়ে প্রশাসনকে অকার্যকর ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিঘ্ন ঘটিয়েছেন। এসব বিষয়ে সরকারের অবস্থান ছিল অস্পষ্ট ও দুর্বল”, যোগ করেন তিনি। 

মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “নির্বাচনের রোডম‍্যাপ নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসায় এবং সরকার অনির্দিষ্ট মেয়াদে দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকতে চান এরকম একটি সন্দেহ সংশয় কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের মধ‍্যে প্রকটভাবে দেখা দিয়েছ। এসব বিষয়ে আমরা বারবার অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও বিবাদমান পক্ষগুলো বসে ভুল বোঝাবুঝি দূর করার কোন পদক্ষেপ নেননি।”

সেনাবাহিনী প্রধানের সর্বশেষ বক্তব্য প্রসঙ্গে মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “উনার বক্তব্যটা আমরা সোশ‍্যাল মিডিয়া ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে জেনেছি। কোনো সরকারি তথ‍্যসূত্র বা সংস্থার অফিসিয়াল বক্তব‍্য আকারে পাইনি। বিস্তারিত বক্তব্যটা আইএসপিআর তথ‍্যসূত্রের আলোকে আসলে ভালো হতো। সেনাপ্রধান এর আগেও ১৮ মাসের মধ‍্যে নির্বাচনের কথা বলেছিলেন। বিডিআর বিদ্রোহের বিচার, ইনক্লুসিভ ইলেকশন ও সংস্কার বিষয়ে তিনি খোলামেলা কথা বলেছেন।”

“আমরা যতটুকু জানি সরকারের পক্ষ থেকে এ ব‍্যপারে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ ধরনের সরকার; যেখানে সেনাবাহিনী ও সরকার নিবিড়ভাবে কাজ করছে। অতএব সরকার ও সেনা প্রধানের বক্তব্যকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। তিনি (সেনাপ্রধান) করিডোর, চট্টগ্রাম বন্দর ইজারা ইস‍্যুসহ যেসব বিষয়ে কথা বলেছেন, তাতে সরকারের মতের সঙ্গে তার দ্বিমত পরিলক্ষিত হয়েছে। এটা জাতির কাছে ভুল বার্তা পৌঁছায় এবং জটিলতার নতুন মাত্রা যোগ করে। সরকারের উচিত সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একটা সমাধানের পথ বের করা, ‌যোগ ক‌রেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, “এনসিপি প্রধান নাহিদ ইসলামের বরাত দিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদত‍্যাগের আগ্রহ সংক্রান্ত যে সংবাদ প্রচারিত হয়েছে, তা নিয়ে দেশবাসী ভীষণ উদ্বিগ্ন। সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য আমরা পাইনি। আমরা মনে করি, দেশের একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে সবারই নানা ভুলভ্রান্তি ও অস্বস্তিকর আচরণ আজকের জটিল পরিস্থিতির জন‍্য দায়ী। প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ কোনো সমাধান নয় বরং তা ভয়াবহ অনিশ্চয়তার জন্ম দেবে।” তিনি আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানে সব পক্ষকে সমঝোতামূলক ঐকমত্যে পৌঁছানোর উদাত্ত আহ্বান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব সেলিম খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল হালিম খোকন, আনোয়ার ফারুক, গণপরিবহন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মতিয়ার রহমান, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা) শাজাহান ব্যাপারী, কেন্দ্রীয় সহকারী ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক বারকাজ নাসির আহমাদ, নারী  উন্নয়ন বিষয়ক সহ সম্পাদক শাহিনুর আক্তার শিলা, আমেনা বেগম, উদ্যেক্তা ও কর্মসংস্থান বিষয়ক সহ সম্পাদক সুমাইয়া শারমিন ফারহানা, আন্তর্জাতিক কমিটির সদস্য মেহজাবিন হাজেরা, নারী নেত্রী রাশিদা আক্তার মিতু আমিনা খাতুন, ছাত্রপক্ষের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব শেখ মাহমুদুল হাসান আসিফ, যাত্রাবাড়ী থানা আহ্বায়ক আরিফ সুলতান উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ