ভৈরবে গভীর রাতে পুড়ল জুতার মার্কেটের ৩৫টি দোকান
Published: 24th, May 2025 GMT
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মধ্যরাতে জুতার একটি বড় মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অন্তত ৩৫টি দোকান পুড়ে গেছে। ব্যবসায়ীদের ধারণা, এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে ভৈরব পৌর শহরের কমলপুর এলাকার হাজী লালু কালু পাদুকা মার্কেটের পেছনের অংশ থেকে আগুনের সূত্রপাত। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট একযোগে কাজ করে রাত সোয়া ২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, ভৈরব পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য জুতার মার্কেট ও কারখানা। লক্ষাধিক মানুষ এই খাতে যুক্ত। উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের বিপরীতে অবস্থিত হাজী লালু কালু পাদুকা মার্কেটে শতাধিক দোকান আছে, যেগুলোর বেশির ভাগই কাঁচামালের। গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় রাত ১০টার মধ্যে মার্কেট বন্ধ হয়ে যায়। রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে মার্কেটের পেছনের দিক থেকে আগুনের শিখা দেখা যায়। মুহূর্তেই তা ছড়িয়ে পড়ে।
মার্কেটসংলগ্ন এলাকাতেই আছে একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। প্রথমে সেখানকার ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ শুরু করে। পরে ভৈরব বাজার ফায়ার স্টেশন থেকে আরও দুটি ইউনিট যোগ দেয়। মার্কেটের পাশেই দুটি পুকুর থাকলেও জুতা তৈরির বর্জ্যে পুকুর দুটির তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি সংগ্রহে সময় লেগে যায়।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী রাজু মিয়া বলেন, ‘সামনে ঈদ। কারখানাগুলোতে উৎপাদন বেড়েছে। চাহিদা ভালো থাকায় দোকানে কয়েক লাখ টাকার ম্যাটেরিয়াল মজুত ছিল। ক্যাশ বাক্সে ছিল আড়াই লাখ টাকা। আগুনে সব পুড়ে গেছে।’ সবুজ মিয়া নামের এক দোকানকর্মী বলেন, ‘আগুনের উত্তাপে দোকান থেকে এক টাকার মালও বের করতে পারিনি।’ আরেক ব্যবসায়ী শাহিন মিয়ার দাবি, তাঁর ১২ লাখ টাকার কাঁচামাল পুড়ে গেছে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করেছে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অভয়নগরে কৃষক দল নেতাকে হত্যার ৪২ ঘণ্টা পরও মামলা হয়নি, গ্রেপ্তার নেই
যশোরের অভয়নগর উপজেলায় কৃষক দল নেতা তরিকুল ইসলামকে (৫০) হত্যার ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের ৪২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো মামলা হয়নি।
তরিকুল হত্যার জেরে উপজেলার ডহর মশিয়াহাটী গ্রামে পুড়িয়ে দেওয়া বাড়িগুলোয় এখনো পুরুষ সদস্যরা ফেরেননি। নতুন করে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে। এরপরও বাড়িগুলোর নারী সদস্যদের আতঙ্ক কাটছে না।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের একটি বাড়িতে কৃষক দল নেতা তরিকুল ইসলামকে কুপিয়ে এবং গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটে। ঘেরের ইজারা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ পরিবারের। তরিকুল ইসলাম উপজেলার ধোপাদী গ্রামের ইব্রাহিম সরদারের ছেলে। তিনি উপজেলার নওয়াপাড়া পৌর কৃষক দলের সভাপতি ছিলেন।
গুলি করে ও কুপিয়ে তরিকুল ইসলামকে হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে একদল লোক ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের অন্তত ২০টি হিন্দুবাড়িতে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ ছাড়া উপজেলার সুন্দলী বাজারে দুটি দোকানে অগ্নিসংযোগ এবং চারটি দোকান ভাঙচুর করা হয়। এ সময় আহত হন অন্তত ১০ জন।
শনিবার সকালে নিহত কৃষক দল নেতা তরিকুল ইসলামের বাড়িতে যান বিএনপির নেতারা। তাঁরা তরিকুল ইসলামের শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। এরপর বিএনপির নেতারা ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের যে বাড়িতে তরিকুল ইসলামকে হত্যা করা হয়েছিল, সেই বাড়িতে যান। পরে নেতারা গ্রামের পুড়িয়ে দেওয়া বাড়িগুলো ঘুরে দেখেন এবং বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন।
আরও পড়ুনঅভয়নগরে কৃষক দল নেতাকে গুলি করে হত্যা, প্রতিবাদে বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ২২ মে ২০২৫স্থানীয় কয়েকজন বলেন, উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়নের বিল বোকড়ে তরিকুল ইসলামের একটি মাছের ঘের ছিল। ঘেরটির জমির ইজারার মেয়াদ শেষ হয়েছে। পাশের বিল কাছুরাবাদে অন্য এক ব্যক্তির আরেকটি মাছের ঘের ছিল। বিল কাছুরাবাদের বেশির ভাগ জমি ডহর মশিয়াহাটী গ্রামবাসীর। ঘেরের জমির ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর মালিক ঘের ছেড়ে দিয়েছেন। এই ঘেরের জমি ইজারা নিয়ে তরিকুল ইসলাম মাছ চাষ করতে চেয়েছিলেন। অন্য আরেক ব্যক্তি ওই ঘেরের জমি ইজারা নিয়ে মাছ করতে চেয়েছিলেন। এ নিয়ে সেই ব্যক্তির সঙ্গে তরিকুল ইসলামের বিরোধ হয়। বিষয়টি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তরিকুল ইসলামকে ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের পিল্টু বিশ্বাসের বাড়িতে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে প্রথমে কুপিয়ে এবং পরে গুলি করে হত্যা করা হয়।
আরও পড়ুনডহর মশিয়াহাটী গ্রামের পোড়া বাড়িগুলো প্রায় পুরুষশূন্য, আতঙ্কিত নারীরা২১ ঘণ্টা আগেনিহত তরিকুলের ভাই রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমার ভাই মাছের ঘেরের ব্যবসা করতেন। তাঁর তিনটি মাছের ঘের আছে। তিনি ডহর মশিয়াহাটী এলাকায় একজন ঘেরমালিকের ছেড়ে দেওয়া ঘের ইজারা নিতে চেয়েছিলেন। এ নিয়ে একজনের জন্য তাঁর দ্বন্দ্ব হয়। বৃহস্পতিবার সকালে তরিকুল ইসলাম নওয়াপাড়ার বাড়িতে ছিলেন। তখন ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের পিল্টু বিশ্বাস তাঁকে ফোন করেন। ঘেরের ডিড (চুক্তি) হবে বলে পিল্টু বিকেলে তরিকুলকে তাঁর বাড়িতে যেতে বলেন। তরিকুল একজনকে নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে মোটরসাইকেলে পিল্টুর বাড়িতে যান। সে সময় ছয়জন সন্ত্রাসী পিল্টুর ঘরে তরিকুলকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে।’
দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আলিম বলেন, তরিকুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি। ডহর মশিয়াহাটীর গ্রামের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।