মানিকগঞ্জের সিংগাইরে সেতুর অ্যাপ্রোচে মাটি না দেওয়ায় স্থানীয় লোকজনের কাজে আসছে না। ছয় মাস আগে নির্মাণ শেষ হলেও যাতায়াতের উপযোগী না করায় ঠিকাদার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের গাফিলতিকে দুষছেন তারা। ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুর অ্যাপ্রোচে মাটি দিতে ঠিকাদারকে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় কৃষক সারেং আলীর ভাষ্য, সেতু নির্মাণের আগে কষ্ট হলেও রাস্তাটি ব্যবহার করা যেত। নির্মাণের পর এতে ওঠার জন্য মাটি দেয়নি। এতে হাট-বাজারে কৃষিপণ্য নিতে অনেক ঘুরে যেতে হচ্ছে। কয়েক দিন পর বর্ষা শুরু হবে। তার আগে দুই পাশে মাটি দেওয়া না হলে তখন যাতায়াতের জন্য নৌকা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
জানা গেছে, উপজেলার বায়রা ইউনিয়নের দেহানখিলায় খালের ওপর দিয়ে ১১ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস দরপত্র আহ্বান করে। কাজটি পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাজ এন্টারপ্রাইজ। অবকাঠামো ও দুই পাড়ে সংযোগ সড়কের সঙ্গে অ্যাপ্রোচ নির্মাণে চুক্তি হয় ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। 
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গত নভেম্বর মাসে সেতুর অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ করে। কিন্তু অ্যাপ্রোচে মাটি না দেওয়ায় তা দিয়ে যাতায়াত করতে পারছেন না লোকজন। দেহানখিলার বাসিন্দা মোবারক হোসেনের ভাষ্য, অনেক তদবির করে সেতুটি নির্মাণ হয়েছে। এর দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে মসজিদ ও মক্তবখানা এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। উত্তরে লোকালয়। সংযোগ সড়ক সংস্কার না হওয়ায় যাতায়াত করতে অনেক ঘুরতে হচ্ছে।
সংযোগ সড়ক না হওয়ায় দুর্ভোগ আগের চেয়ে বেশি হচ্ছে জানিয়ে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দেওয়ান মো.

জিকরুল ইসলাম বলেন, খালের ওপাড়ে রয়েছে দেহানখিলা কবরস্থান। কেউ মারা গেলে বিকল্প রাস্তা দিয়ে কবরস্থানে নিতে হয়। বর্ষায় লাশ নৌকায় করে নিতে হবে। অন্য পাড়ের শিক্ষার্থীদেরও স্কুলে আসতে কষ্ট হচ্ছে।
কলেজছাত্র আতিক হাসানের ভাষ্য, সেতু নির্মাণ হলেও দুই পাশে মাটি না দেওয়ার জন্য ঠিকাদার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের গাফিলতি রয়েছে। বর্ষার আগেই দুই পাড়ে মাটি দিয়ে চলাচলের উপযোগী করতে হবে। তা না হলে এত টাকার সেতুটি কোনো কাজে আসবে না।
সেতু নির্মাণের জন্য খালের দুই পাশে মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল জানিয়ে রাজ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মাহফুজুর রহমান তুহিন বলেন, সেই মাটি দিয়ে সেতুর অ্যাপ্রোচ নির্মাণের কথা ছিল। এলাকায় মানুষজন খাল তাদের দাবি করে মাটি কাটতে দেননি। বিকল্পভাবে কিছু ফেলা হয়েছিল, এলাকায় গ্রুপিংয়ের কারণে তাও বন্ধ। লোকজন সহযোগিতা করলে মাটি ফেলা হবে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আহাদি হোসেন বলেন, সেতুটির দুই পাড়ে ঠিকাদার মাটি রাখলেও স্থানীয় লোকজন নিতে দেয়নি। ঠিকাদারকে বলা হয়েছে দ্রুত কাজ শেষ করতে। মাটি না দেওয়ায় ঠিকদার চূড়ান্ত বিল নিতে পারেনি।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য ল কজন

এছাড়াও পড়ুন:

বেওয়ারিশ লাশের কবর শনাক্ত ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি স্বজনদের

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা লাশগুলোর কবর শনাক্ত ও রাষ্ট্রীয়ভাবে এসব শহীদের স্বীকৃতিসহ হত্যাকারীদের দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছেন স্বজনেরা।

বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ হলে জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স ও জুলাই কমিউনিটি অ্যালায়েন্স–মিরপুরের আয়োজনে ‘বেওয়ারিশ লাশ দাফন করা শহীদ পরিবারের বিভিন্ন দাবি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

সংবাদ সম্মেলনে শহীদ পরিবারের সদস্যরা ১১৪টি লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করার কথা জানান। এ ছাড়া এই লাশগুলোর কবর শনাক্তে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের কোনো আন্তরিকতা দেখছেন না বলে অভিযোগ তাঁদের। এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচার ও ক্ষতিগ্রস্ত শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন এবং আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসার দাবি জানান তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনে শহীদ আসাদুল্লাহর স্ত্রী ফারজানা আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী ১৯ জুলাই থেকে নিখোঁজ হন। এরপর ২৩ জুলাই আমরা ছবির মাধ্যমে তাঁর খোঁজ পাই। কিন্তু তাঁর খোঁজ পাওয়ার আগে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের কাছে লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে হস্তান্তর করা হয়। তাঁরা সে লাশ মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করে। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে জানতে পারি, ২৩ জুলাই যে ৮টি লাশ দাফন করা হয়, তাঁর মধ্যে একজন ছিলেন আমার স্বামী।’

ফারজানা আরও বলেন, ‘দীর্ঘ ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত আমার স্বামীর কবরের সঠিক সন্ধান পাইনি। এ বিষয়ে নাহিদ ইসলাম উপদেষ্টা থাকাকালীন তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন। সারজিস আলমের সঙ্গেও দেখা করেছি, কথা বলেছি, তিনিও আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে আশ্বাসের কোনো ফল আমরা দেখতে পাইনি। সরকারের কাছে দ্রুত আমার স্বামীর কবর শনাক্তের বিষয়ে কাজ করার দাবি জানাই।’

শহীদ সোহেল রানার ছোট ভাই নাবিল হোসেন জানান, তিনি ৩৪ দিন পর ভাইয়ের মৃত্যু ও রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁকে কবর দেওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘১০ মাস হয়ে গেল অথচ এই সরকার আমাদের ভাইদের কবর খুঁজে দিতে সহায়তা করছে না।’ এ সময় বেওয়ারিশ শহীদদের কবর শনাক্তসহ সরকারের কাছে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন নাবিল।

দাবিগুলো হলো ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে প্রতিটি কবর শনাক্ত করতে হবে। শনাক্ত করার পর প্রতিটি কবরে নামফলক দিতে হবে। কবরস্থানকে নামকরণ করতে হবে। জুলাই ঘোষণাপত্রে গণকবরের বিষয়ে উল্লেখ রাখতে হবে। তাঁরা বলেন, ‘দাবিগুলো পূরণ না হলে আমরা ১ জুলাই থেকে মন্ত্রণালয়ের সামনে অনশন করব।’

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিক ইমরান মাহফুজ বলেন, ‘শহীদদের পরিচয় শনাক্তে সরকার কী করছে জানতে চেয়ে গত বছরের ১৯ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আমরা এই চিঠি প্রেরণ করি। ১৫ দিন পর সে চিঠির জবাব এলেও তা সন্তোষজনক ছিল না।’ তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সরকার এ বিষয়ে ভূমিকা গ্রহণ করেনি। অথচ একটি গণ–অভ্যুত্থানের সরকারের এটি প্রথম কাজ হওয়া দরকার ছিল।

জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্সের আহ্বায়ক সালেহ মাহমুদ রায়হানের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জুলাই কমিউনিটি অ্যালায়েন্স–মিরপুরের সমন্বয়কারী মোহাম্মদ রোমেল, শহীদ শেখ শাহরিয়ার বিন মতিনের বাবা আবদুল মতিন, শহীদ জাবির ইব্রাহিমের বাবা কবির হোসেনসহ প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বেওয়ারিশ লাশের কবর শনাক্ত ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি স্বজনদের