পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় মৃত স্বজনের সৎকার শেষে ইজিবাইক যোগে ফেরার পথে ট্রাকের ধাক্কায় দুই নারী ও এক শিশুসহ ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৪ জন।

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বিকেলে দেবীগঞ্জ উপজেলার পৌর শহরের পাকুড়িতলা এলাকায় দেবীগঞ্জ-বোদা মহাসড়কে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে।

নিহতরা হলেন- বোদা উপজেলার সাকোয়া ইউনিয়নের নয়াদিঘী এলাকার তাপস কুমার রায়ের স্ত্রী শ্যামলী রাণী (৩০), দেবীগঞ্জ উপজেলার পামুলী ইউনিয়নের জোতভূবণপাড়া এলাকার অরুণ কুমার রায়ের স্ত্রী ভরসা রাণী (৩৫) ও একই উপজেলার দণ্ডপাল ইউনিয়নের রাজারহাট কালিগঞ্জ এলাকার হরেন্দ্র নাথ রায়ের মেয়ে দেবশ্রী রাণী (৭)।

আহতরা হলেন- দেবীগঞ্জ উপজেলার দেবীডুবা ইউনিয়নের লক্ষীর হাট এলাকার অজয় কুমার রায় (৬০), উপজেলার পামুলী ইউনিয়নের জোতভূবণ পাড়া এলাকার খোকা বাবু (৫০), বিমলা (৫০) ও দণ্ডপাল ইউনিয়নের রাজার হাট কালিগঞ্জ এলাকার সৌরভ (১১)। 

পুলিশ ও স্থানীয়দের থেকে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের ভাউলাগঞ্জ এলাকা থেকে মৃত স্বজনের সৎকার কাজ শেষে ইজিবাইকে ফিরছিলেন তারা। দেবীগঞ্জ পৌর এলাকার পাকুড়িতলায় পৌঁছালে বোদা থেকে দেবীগঞ্জগামী একটি ট্রাকের ধাক্কায় ইজিবাইকের চালকসহ ১০ যাত্রী মহাসড়কের পাশে ছিটকে পড়েন। এসময় ইজিবাইকের ৭ জন যাত্রী গুরুতর আহত হন। স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাদের উদ্ধার করে দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক শ্যামলী রাণীকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে গুরুতর আহত অন্য ৬ জনের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেবশ্রী রাণী নামে এক শিশু ও ভরসা রাণী নামে এক নারীর মৃত্যু হয়। 

দেবীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) প্রবীর কুমার রায় বলেন, ‘‘ঘটনার পরপরই পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেখানে ছুটে যান। ঘাতক ট্রাক নিয়ে চালক পালিয়ে গেছে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় থানায় একটি ইউডি মামলা দায়ের করা হয়েছে।’’

ঢাকা/নাঈম/টিপু

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এল ক র

এছাড়াও পড়ুন:

গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।

গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।

কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।

আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫

একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’

আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’

ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫

গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ