জামিনে মুক্তি পেয়ে বাবার শেষকৃত্যে আ.লীগ নেতা ছেলে
Published: 2nd, June 2025 GMT
বাবার মৃত্যুর ৩৬ ঘণ্টা পর জামিনে কারামুক্ত হয়ে মুখাগ্নি করেছেন মাগুরার আওয়ামী লীগ নেতা রাহুল মিত্র। রবিবার (১ জুন) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে পৌরসভার সাতদোহা শ্মশানে তার বাবার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
এর আগে, শনিবার দুপুরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাহুল মিত্রের বাবা রতন কুমার মিত্র মারা যান। রাহুল মিত্র মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক। তিনি পেশায় দন্ত চিকিৎসক। ঢাকার মিরপুরে নিজ প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসাসেবা দেন তিনি।
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রয়াত রতন কুমার মিত্র আইন পেশার পাশাপাশি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি জেলা জাতীয় পার্টির একটি অংশের সভাপতি ছিলেন। তার দুই ছেলের একজন কয়েক বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। আরেক ছেলে রাহুল মিত্র পেশায় দন্ত চিকিৎসক। ২০২৩ সালের এপ্রিলে ঘোষিত মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক পদ পান।
আরো পড়ুন:
চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন ঢাকায় গ্রেপ্তার
নারায়ণগঞ্জে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
গত ৪ মে ঢাকার মিরপুরের সেনপাড়া পর্বতা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর থেকে মিরপুর মডেল থানায় জুলাই–আগস্টের ঘটনায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় আসামি হিসেবে কারাগারে ছিলেন রাহুল মিত্র।
পরিবারের সদস্যরা বলেন, শনিবার বেলা ১১টার দিকে অসুস্থ হয়ে পড়েন রতন কুমার মিত্র। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হলে দুপুর ১২টার দিকে তিনি মারা যান। একমাত্র জীবিত ছেলে কারাগারে থাকায় তার মরদেহ ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্সে রাখা হয়।
রবিবার বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন রাহুল মিত্রের আইনজীবী। পরে বিকেল ৪টার দিকে ঢাকার একটি কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান ওই চিকিৎসক। রাতে মাগুরায় পৌঁছালে রতন কুমার মিত্রের শেষকৃত্য হয়।
রাহুল মিত্র বলেন, ‘‘আমার বাবা হয়ত আরো কিছুদিন বেঁচে থাকতেন। আমার চিন্তাতেই শেষ হয়ে গেলেন। গত কিছুদিন আমাকে নিয়ে তার চিন্তার অন্ত ছিল না।’’
ঢাকা/শাহীন/রাজীব
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আওয় ম ল গ রতন ক ম র ম ত র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
স্থানীয় সরকার বিভাগের দুই হাজার কোটি টাকা সাশ্রয়
“অপচয় নয়, প্রয়োজনই অগ্রাধিকার” এই মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের (এলজিআরডি) অধীন স্থানীয় সরকার বিভাগে শুরু হয়েছে ব্যয় সংকোচনের এক যুগান্তকারী প্রক্রিয়া। এর মধ্য দিয়ে ২০২৪–২৫ অর্থবছরেই ২০৮৯ কোটি টাকা সাশ্রয়ের নজির স্থাপন করেছে বিভাগটি।
স্থানীয় সরকার বিভাগের এই সাশ্রয় প্রক্রিয়ার পেছনে সরাসরি দিকনির্দেশনা দিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা, যৌক্তিকতা ও জনস্বার্থ যাচাই করে এই ব্যয় হ্রাস নিশ্চিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বাতিলের পথে পাঁচ প্রকল্প
আরো পড়ুন:
৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত
সংশোধনের অংশ হিসেবে পাঁচটি প্রকল্প বাতিলের চূড়ান্ত পর্যালোচনায় রয়েছে, যেগুলোর সম্মিলিত প্রাক্কলিত ব্যয় ৪৭৬ কোটি টাকা। প্রকল্পগুলো হলো:
১. রাজনৈতিক প্রভাবে অনুমোদিত একটি পৌর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প
২. কম চাহিদাসম্পন্ন একটি আঞ্চলিক বাজার নির্মাণ প্রকল্প
৩. অপরিকল্পিত ও ব্যয়বহুল পানি শোধন প্রকল্প
৪. সমান্তরাল ও পরস্পরবিরোধী একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প
৫. পরিবেশবিরোধী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প
এসব প্রকল্প বাতিল হলে সাশ্রয় হওয়া অর্থ বাস্তব চাহিদা ও জনমুখী প্রকল্পে পুনঃবিনিয়োগ করা হবে।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, “উন্নয়ন মানেই প্রকল্প নয়। জনগণের প্রয়োজন ও টেকসই পরিকল্পনা ছাড়া কোনো প্রকল্পই অর্থবহ হয় না। এখন আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি প্রকল্পের মেরিট, কার্যকারিতা ও জনবান্ধব চরিত্রে। কোনো রাজনৈতিক বা ব্যক্তি স্বার্থে প্রকল্প আর টিকবে না।”
তিনি আরো জানান, বাজেট সংকটের মধ্যেও জনস্বার্থ নিশ্চিত করাই এখন অগ্রাধিকার। প্রকল্প গ্রহণে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে একটি শক্তিশালী যাচাই প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে।
প্রকল্প যাচাইয়ে নতুন রীতিনীতি
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী বলেন, মাননীয় উপদেষ্টার নির্দেশে আমরা প্রকল্প যাচাইয়ের জন্য নতুন স্ক্রুটিনি মেকানিজম চালু করেছি। চলতি অর্থবছরে এ ব্যবস্থার মাধ্যমে ২০৮৯ কোটি টাকা ব্যয় হ্রাস সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, এই উদ্যোগ এককালীন নয়। এখন থেকে প্রতিটি প্রকল্প অনুমোদনের আগে ক্ষেত্র জরিপ, বাস্তবতা যাচাই ও অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে।
পুনর্মূল্যায়নে অর্ধশতাধিক প্রকল্প
স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় থাকা ১৩০টির বেশি প্রকল্পের মধ্যে প্রায় ৭০টির পুনর্মূল্যায়ন প্রক্রিয়াধীন। অনেক প্রকল্প বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় বাদ পড়ছে। আবার কিছু প্রকল্পে বাজেট কমিয়ে নতুন কাঠামোতে পুনর্গঠন করা হচ্ছে।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, প্রকল্প প্রাক্কলন থেকে মাঠপর্যায়ের চাহিদা পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। এতে কেবল ব্যয় কমানোই নয়, প্রকল্পের মানও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদী জানান, ভবিষ্যতে যাতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বা ভুল তথ্য দিয়ে প্রকল্প অনুমোদনের সুযোগ না থাকে, সেজন্য প্রযুক্তিনির্ভর যাচাই পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে। একই সঙ্গে জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ক্ষমতায়ন করা হয়েছে যাতে তারা নিজ নিজ এলাকার প্রকল্প নিরীক্ষায় আরো কার্যকর হতে পারেন।
সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া বলেন, বাংলাদেশে প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘদিন ধরে স্বচ্ছতার অভাব ছিল। স্থানীয় সরকার বিভাগের এই উদ্যোগ প্রশাসনিক সংস্কারের এক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কর্মকর্তা মো. জালাল হোসেন বলেন, একটি প্রকল্প মানেই উন্নয়ন নয়—এই উপলব্ধিকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ এখন প্রকল্প মান, জনগণের অংশগ্রহণ এবং সাশ্রয়ের এক নতুন ধারায় প্রবেশ করেছে। উপদেষ্টার নেতৃত্বে শুরু হওয়া এই প্রক্রিয়া শুধু এলজিআরডি নয়, বরং সরকারের বাজেট ব্যবস্থাপনার প্রতিটি স্তরের জন্য একটি উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে।
ঢাকা/এএএম/ফিরোজ