‘একটি ফুলকে বাঁচাব বলে...’ গানের শিল্পী আপেল মাহমুদ প্রমাণ দিলেন তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা
Published: 2nd, June 2025 GMT
একাত্তরে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস ও অনুপ্রেরণা জোগানো কালজয়ী গানগুলোর অন্যতম ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি...’ গানটির সুরকার ও গায়ক আপেল মাহমুদ সবার কাছে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচিত। একুশে পদকজয়ী এই শিল্পীর মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় নিয়ে সম্প্রতি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে (জামুকা) অভিযোগ করেছিলেন এক ব্যক্তি।
সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার কুমিল্লা সার্কিট হাউসে জামুকার শুনানিতে হাজির হয়ে আপেল মাহমুদ প্রমাণ দিয়েছেন, তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে তাঁর কণ্ঠে প্রচারিত গান যেমন রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দীপ্ত করেছিল, তেমনি নিজেও পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রহাতে লড়াই করেছেন বীরদর্পে।
আপেল মাহমুদ কুমিল্লার সন্তান। তিনি জেলার মেঘনা উপজেলার বাসিন্দা। এ জন্য জামুকায় তাঁর বিরুদ্ধে জমা পড়া অভিযোগটির বিষয়ে আজ সোমবার কুমিল্লা সার্কিট হাউসে শুনানি হয়। ওই শুনানিতে জামুকার মহাপরিচালক শাহিনা খাতুনসহ সাত সদস্যদের প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিল। এদিন সকালে ঢাকা থেকে কুমিল্লায় বেশ কয়েকটি কার্যক্রমের জন্য আসে প্রতিনিধিদলটি। যার মধ্যে একটি ছিল জেলার বিভিন্ন উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের শুনানি।
শুনানি শেষে জামুকার মহাপরিচালক শাহিনা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, ৫ আগস্টের পরে কুমিল্লা জেলা থেকে ৩১ জন মুক্তিযোদ্ধা নন, এমন অভিযোগ আসে। সেসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কুমিল্লা সার্কিট হাউসে দুটি কমিটিতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আপেল মাহমুদ প্রমাণ করেছেন তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা। আপেল মাহমুদ যদি শুধু গান গেয়ে উদ্বুদ্ধ করার মতো ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকতেন, তাহলেও তিনি সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে খেতাব পেতেন; কিন্তু তিনি কাগজপত্রে প্রমাণ করেছেন তিনি সম্মুখযোদ্ধা ছিলেন। তাই তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা বিষয়টি নিশ্চিত।
শুনানি শেষে বের হয়ে কুমিল্লা সার্কিট হাউসের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আপেল মাহমুদ। সেখানে তিনি বলেন, ‘আপেল মাহমুদ একজন মুক্তিযোদ্ধা, সেটা আমাকে জীবিত থেকেই দ্বিতীয়বার প্রমাণ করতে হয়েছে। আমি মুক্তিযোদ্ধা নই দাবি করে যেই অভিযোগ করা হয়েছে, সেটি ভুল প্রমাণিত হওয়ায় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সদস্যরা দুঃখ প্রকাশ করেছেন।’
আপেল মাহমুদ ও জামুকার সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর স্বাধীন বাংলা বেতারকর্মী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন সুরকার ও গায়ক আপেল মাহমুদের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা নন বলে অভিযোগ করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১২ মে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের উপপরিচালক (উন্নয়ন) ফাতেমা খাতুন আপেল মাহমুদকে নোটিশ করেন। সেই নোটিশে তিনি যে মুক্তিযোদ্ধা, এর পক্ষে যাবতীয় দলিল ও সাক্ষ্য উপস্থাপনের জন্য বলা হয়।
আপেল মাহমুদ দ্য লিজেন্ডআপেল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে আমি ৩ নম্বর সেক্টরে সরাসরি যুদ্ধ করেছি, ক্যাপ্টেন মতিউর রহমানের কমান্ডে যুদ্ধ করেছি। ১০ এপ্রিল (১৯৭১) পর্যন্ত আমরা নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ করেছি। নরসিংদী থেকে আমরা চলে যাই ক্যাপ্টেন নাসিমের আন্ডারে আশুগঞ্জে। সেখানে আমরা ভৈরব রামনগর ব্রিজে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করি। সেখান থেকে রামনগর ব্রিজ, ভৈরব, আশুগঞ্জ, হবিগঞ্জ, চুনারুঘাট, চানপুর টি স্টেট, তেলিয়াপাড়া টি স্টেটে যুদ্ধ করেছি। তেলিয়াপাড়া ১৯৭১ সালে আমার শেষ যুদ্ধক্ষেত্র ছিল। আশুগঞ্জের যুদ্ধের সময় আমার বাঁ চোখের পাশে আঘাতপ্রাপ্তও হয়।’
পরে তাঁকে আগরতলায় নিয়ে যাওয়া হয় উল্লেখ করে আপেল মাহমুদ আরও বলেন, ‘সেখানে আবদুল জব্বার ভাইও আসেন। ২৫ মে কলকাতায় বড় করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতেই আমাকে এবং জব্বার ভাইকে শরণার্থীদের জন্য একটি অনুষ্ঠান করতে হয়েছে। আমরা দুই দিন অনুষ্ঠান করে অনেক শিল্পী পাই। ১ জুন থেকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে আমার ওপর যে দায়িত্ব ছিল, তা ২০০৬ সালে অবসরে যাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ বেতার বা রেডিও বাংলাদেশ যা–ই বলেন না কেন, সেই দায়িত্ব পালন করেছি। আমি তো মনোয়ার হোসেনের কোনো ক্ষতি করিনি, জানি না তিনি কেন এমন করলেন। তাঁর ভিত্তিহীন অভিযোগের কারণে বেঁচে থাকা অবস্থায় আমাকে প্রমাণ করতে হয়েছে যে আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।’
আরও পড়ুনকুমিল্লায় সংবর্ধনা নিতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লেন আপেল মাহমুদ১০ মে ২০১৬কুমিল্লা সার্কিট হাউসে আপেল মাহমুদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তাঁর সহধর্মিণী নাসরিন মাহমুদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা একুশে পদকপ্রাপ্ত শব্দসৈনিক মনোরঞ্জন ঘোষাল, বাংলাদেশ বেতারের সাবেক পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফুল আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর হায়াত খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ সাহাসহ কয়েকজন।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো.
প্রসঙ্গত, আপেল মাহমুদ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি’ গানের গায়ক হিসেবে পরিচিত হলেও তাঁর বেশ কিছু গান আজও মানুষের হৃদয়ে রয়েছে। ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেবো রে... ’ গানটিও তাঁর একটি বিখ্যাত গান। সংগীতে অবদানের জন্য তিনি ২০০৫ সালে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদকে ভূষিত হন। দেশাত্মবোধক গান ছাড়াও রবীন্দ্রসংগীত, লালনগীতি, গণসঙ্গীত ও আধুনিক ধারার গান গেয়ে মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছেন আপেল মাহমুদ।
যুদ্ধদিনের মুক্তির গান যে গান যুদ্ধদিনের কথা বলেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: একজন ব র ম ক ত য দ ধ য দ ধ কর ছ র জন য কর ছ ন র চ লক
এছাড়াও পড়ুন:
ভূমিকম্পের সময় করাচির কারাগার থেকে পালালো ২ শতাধিক কয়েদি
পাকিস্তানের করাচিতে রোববার থেকে পর পর ১৬ বার ভূমিকম্প হয়েছে। দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ সিন্ধে ভূমিকম্পের সময় হৈচৈ-হট্টগোলের ফাঁকে কারাগার থেকে পালিয়েছেন ২ শতাধিক কয়েদি।
সোমবার রাতে সিন্ধের রাজধানী করাচির মালির থেকে পলায়ন করেন ২১৩ জন কয়েদি। খবর জিও নিউজের।
রোববার সকাল থেকে সোমবার সারা রাত দফায় দফায় ভূমিকম্প হচ্ছে করাচি এবং তার আশপাশের এলকায়। একের পর এক কম্পণের ধাক্কা করাচি জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছিল। পাকিস্তানের ভূতত্ব গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে, রোববার সকাল থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত মোট ১৬ বার ভূমিকম্প হয়েছে করাচিতে।
মালির কারাগারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সোমবার রাতে ভূমিকম্পের সময় কারাগারের কয়েদিদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছিল। এ সময় অনেকটা আকস্মিভাবেই কারারক্ষীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বেঁধে যায় কয়েদিদের এবং উদ্ভূত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কারাগার থেকে পলায়ন করেন ২১৩ জন কয়েদি।
কারাগারসূত্রে জানা গেছে, নিরাপত্তা কর্মীদের ওপর হামলা করেছে মূলত কারাগারের ৪ ও ৫ নম্বর সার্কেলের কয়েদিরা। যারা পলায়ন করেছেন, তাদেরও অধিকাংশ এই দুই সার্কেলের সেলগুলোতে থাকতেন।
সংঘাত-ধস্তাধস্তির সময় কারারক্ষী বাহিনীর গুলিতে একজন কয়েদি মারা গেছেন। অন্যদিকে কয়েদিদের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন একজন কারারক্ষী।
মালির কারাগারের সুপারিন্টেডেন্ট আরশাদ শাহ জিও নিউজকে জানিয়েছেন, পালিয়ে যাওয়া এই কয়েদিদের ধরতে পুলিশ, সীমান্তরক্ষী বাহিনী রেঞ্জার্স, আধা সামরিক বাহিনী ফ্রন্টিয়ার কর্পস, স্পেশাল সিকিউরিটি ইউনিট এবং র্যাপিড রেসপন্স ফোর্স (আরআরএফ) সদস্যদের সমন্বয়ে একটি চৌকশ দল গঠন করা হয়েছে এবং দলটি অভিযানও শুরু করেছে।
অভিযানে ইতোমধ্যে ৮০ জন কয়েদিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি ১৩৩ পলাতক কয়েদিকেও শিগগিরই গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছেন আরশাদ।