ইতালির প্রেসিডেন্ট সার্জিও মাত্তারেলা ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের মানবিক ও রাজনৈতিক সংকটকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে অভিহিত করেছেন। ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকট মোকাবিলায় তিনি তাৎক্ষণিক আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ ও আরব দেশগুলোকে জড়িত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১২ জুন) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইতালির প্রেসিডেন্ট বুধবার (১১ ‍জুন) লুক্সেমবার্গে একটি রাজনৈতিক আলোচনায় এসব মন্তব্য করেন।  মাত্তারেলা বলেন, “গাজায় চলমান গুরুতর পরিস্থিতির সমাধানের জন্য আরব দেশগুলোকে জড়িত করে দ্রুত প্রতিফলন প্রয়োজন।”

আরো পড়ুন:

গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫৫ হাজার ছাড়াল

গাজা নীতির বিরোধিতাকারী পররাষ্ট্র কর্মকর্তাদের পদত্যাগ করতে বলল যুক্তরাজ্য

ইতালির প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, “গাজায় অবিলম্বে একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে হবে এবং হামাস কর্তৃক সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে।”

এদিকে, ইতালির মধ্যে আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিবর্তনগুলো মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। ইল টেম্পোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাস্কানির আঞ্চলিক কাউন্সিল ‘গাজা উপত্যকায় আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের ক্রমাগত ও গুরুতর লঙ্ঘন’ উল্লেখ করে ইসরায়েলি সরকারের সঙ্গে সব প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা স্থগিত করার একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।

ডেমোক্র্যাটিক পার্টির উপস্থাপিত এবং ইতালিয়া ভিভা, ফাইভ স্টার মুভমেন্ট ও ইউরোপা ভার্দে সমর্থিত প্রস্তাবটি পক্ষে ২৪ ভোট এবং বিপক্ষে সাত ভোটে পাস হয়েছে।

টাস্কানির প্রেসিডেন্ট ইউজেনিও জিয়ানি বলেন, “এই প্রস্তাবের মূলত প্রতীকী মূল্য রয়েছে, এতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির জন্য জোরালো আহ্বান রয়েছে।”

প্রস্তাবটিতে ইতালীয় সরকারকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকারের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাতে এবং অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থগিত করার জন্য চাপ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

যুদ্ধবিরতির আন্তর্জাতিক আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজার বিরুদ্ধে নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। গাজায় দেড় বছরের বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে এ পর্যন্ত ৫৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

মার্চের শুরু থেকে ইসরায়েল গাজায় খাবার, পানি, ওষুধসহ সব ধরনের সহায়তা প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এতে চরম মানবিক সংকটের মুখে পড়েছে গাজার বাসিন্দারা। সাহায্য সংস্থাগুলো সতর্ক করে বলেছে, গাজার ২৪ লাখ বাসিন্দা দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল প রস ত ব আহ ব ন

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ