সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে ‘প্যারোল’ কর্মসূচিতে থাকা পাঁচ লাখেরও বেশি অভিবাসীর বৈধতা বাতিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে কিউবা, হাইতি, নিকারাগুয়া ও ভেনেজুয়েলা থেকে আসা ৫ লাখ ৩০ হাজার অভিবাসীকে ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে যে, তাদের বৈধ অভিবাসন মর্যাদা বাতিল করা হয়েছে। তাদের অবিলম্বে স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করতে হবে।

এই অভিবাসীরা বাইডেন প্রশাসনের শুরু করা বিতর্কিত ‌‘মানবিক প্যারোল’ কর্মসূচিতে তালিকাভুক্ত ছিলেন, যার আওতায় তাদের দুই বছরের জন্য কাজের অনুমতি এবং নির্বাসন থেকে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছিল।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের সহকারী সচিব ট্রিসিয়া ম্যাকলাফলিন বলেন, ‘বাইডেন প্রশাসন আমেরিকান জনগণকে মিথ্যা বলেছে। তারা কিউবা, হাইতি, নিকারাগুয়া ও ভেনেজুয়েলা থেকে প্রায় অর্ধ-মিলিয়নের বেশি (যথাযথভাবে যাচাই না করা) বিদেশিকে এবং তাদের পরিবারকে এই ধ্বংসাত্মক প্যারোল কর্মসূচির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দিয়েছে। তাদের আমেরিকান চাকরির জন্য প্রতিযোগিতার সুযোগ দিয়েছে, যার ফলে আমেরিকান শ্রমজীবীদের ক্ষতি হয়েছে। এমনকি প্রতারণার প্রমাণ পাওয়া সত্ত্বেও এই কর্মসূচি এগিয়ে নিতে সিভিল সার্ভেন্টদের বাধ্য করা হয়েছে। পরে আবার কংগ্রেসের রিপাবলিকানদের ওপর দোষ চাপানো হয়েছে এই বিশৃঙ্খলা ও অপরাধের জন্য।’

ম্যাকলাফলিন আরও বলেন, “সিএইচএনভি প্যারোল কর্মসূচি এবং যারা এটিকে অপব্যবহার করেছে তাদের প্যারোল বাতিল করা যুক্তিবাদী নীতিতে, জননিরাপত্তায় এবং ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে ফিরে যাওয়ার একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।”

২০২২ সালের অক্টোবর মাসে বাইডেন প্রশাসন এই প্যারোল কর্মসূচি শুরু করে, যার আওতায় প্রতি মাসে লাতিন আমেরিকার চারটি দেশ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। প্রথমে ভেনেজুয়েলানদের দিয়ে শুরু হলেও ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে কিউবা, হাইতি ও নিকারাগুয়ার নাগরিকদেরও এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

মূলত সীমান্তে বেড়ে যাওয়া অবৈধ অনুপ্রবেশ কমাতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হলেও কর্মসূচিটি ব্যাপক জালিয়াতির কারণে সমালোচিত হয়। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনায় দেখা যায়, বহু প্যারোল আবেদনে একই ঠিকানা, ভুয়া সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর ও ফোন নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিস জানায়, মাত্র ১০০টি ঠিকানার বিপরীতে ১৯,০০০ হাজারেরও বেশি আবেদন জমা পড়ে। অনেক আবেদন একই আইপি ঠিকানা থেকে পাঠানো হয়েছে। ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে বাইডেন প্রশাসন কর্মসূচিতে থাকা অভিবাসীদের অস্থায়ী বৈধতা নবায়নের সুযোগ বন্ধ করে দেয়।

ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনেই কর্মসূচি পুরোপুরি বাতিল করেন এবং নতুন কোনো আবেদন গ্রহণ বন্ধ করে দেন। গত মাসে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত বহাল রাখে।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ তাদের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অভিবাসীদের ‘সিবিপি হোম মোবাইল অ্যাপ’ এর মাধ্যমে স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করার আহ্বান জানায়। তারা জানায়, এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে অভিবাসীদের দেশে ফেরার জন্য ভ্রমণ সহায়তা ও ১,০০০ ডলারের বোনাস দেওয়া হবে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র অভ ব স য ক তর ষ ট র ব ত ল কর র জন য আম র ক

এছাড়াও পড়ুন:

৫ বছরে ঋণের স্থিতি বাড়বে ৫৩.৭৭ শতাংশ: অর্থবিভাগ

পাঁচ বছরে দেশের ঋণের স্থিতি বেড়ে দাঁড়াবে ৫৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের স্থিতি বেড়ে হবে ৫৬ দশমিক ৬ ০ শতাংশ এবং বৈদেশিক ঋণের স্থিতি বৃদ্ধি পাবে ৫০ শতাংশ। অর্থ বিভাগের করা সাম্প্রতিক এক প্রক্ষেপণে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। 

প্রক্ষেপণে বলা হয়েছে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট ঋণের স্থিতি ছিল আঠারো লাখ ৮১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। সেখানে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ঋণের এই স্থিতি বেড়ে দাঁড়াবে ২৮ লাখ ৯৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এই হিসেবে পাঁচ বছরের ব্যবধানে ঋণের স্থিতি টাকার অঙ্কে বৃদ্ধি পাবে ১০ লাখ ১১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।

গত ২ জুন অর্থ বিভাগ থেকে প্রকাশিত ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি ২০২৫-২০২৬ হতে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ২০১৪-২০১৫ হতে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে অভ্যন্তরীণ ঋণ জিডিপি’র অনুপাত ধারবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসময় ঋণ জিডিপি’র অনুপাত ১৫.৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২১.৫২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

অন্যদিকে, বৈদেশিক ঋণ জিডিপি’র অনুপাত ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের ১১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ১০ শতাংশে পৌঁছেছে। 

পূর্বাভাষ অনুযায়ী, ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এটি জিডিপি’র ১৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ হবে। যদিও বাংলাদেশের ঋণ-জিডিপি’র অনুপাত বর্তমানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্ধারিত নিরাপদ সীমার মধ্যে রয়েছে। তবে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক শৃঙ্খলা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এক্ষেত্রে নিবিড় মনিটরিং ও সময়োপযোগী সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ আবশ্যক। 

একটি স্থিতিশীল এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি নিশ্চিত করার পথে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম রাজস্ব সংগ্রহ এবং ক্রমবর্ধমান ঋণ পরিশোধ ব্যয়-বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

অর্থ বিভাগ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি সহায়ক খাতে ঋণ গ্রহণকে অগ্রাধিকার দিলেও এটি মুদ্রার বিনিময় হার ঝুঁকি, ব্যয়বহুল অভ্যন্তরীণ ঋণ এবং অর্থনৈতিক প্রতিকূলতার চাপের মুখোমুখি হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট রাজস্ব আহরণ আশানুরূপ না হওয়ায় সরকারের ওপর অর্থায়নের চাপ থাকছে। অন্যদিকে, উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য দেশজুড়ে ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামো তৈরির প্রয়োজন। 

এ প্রেক্ষাপটে, সরকার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে একটি মধ্যমেয়াদি ঘাটতি অর্থায়ন কৌশল অনুসরণ করছে। ঘাটতি অর্থায়নের অভ্যন্তরীণ উৎস হিসেবে ট্রেজারি বন্ড ও বিল এবং জাতীয় সঞ্চয় স্কিম প্রধান ভূমিকা পালন করছে। বৈদেশিক উৎসসমূহের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক উৎস থেকে নমনীয় ও অ-নমনীয় ঋণ উল্লেখযোগ্য।

ঋণ প্রোফাইলের এক চিত্র উপস্থাপন করে নীতি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের শেষে মোট সরকারি ঋণের পরিমাণ ছিল জিডিপি’র ৩৭ দশমিক ৬২ শতাংশ, যার মধ্যে ২১.৫২ শতাংশ এসেছে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এবং ১৬ .১০ শতাংশ বৈদেশিক উৎস থেকে। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ ঋণের সিংহভাগ (৫৮%) এসেছে ব্যাংকিং খাত থেকে, এরপর রয়েছে জাতীয় সঞ্চয় স্কিম যার অবদান ৩৪ শতাংশ। 

অন্যদিকে, বৈদেশিক ঋণের মধ্যে সর্ব্বোচ্চ পাওয়া গেছে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাজেন্সি (আইডিএ) থেকে, এরপর আছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং জাপান।

ঋণ স্থিতির মধ্যমেয়াদি প্রক্ষেপণ বিষয়ে বলা হয়েছে, মধ্যমেয়াদে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ জিডিপি’র অনুপাতে স্থিতিশীল থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরের শেষে মোট ঋণ জিডিপি’র ৩৭ দশমিক ৭২ শতাংশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যার মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ হতে পারে জিডিপি’র ২১ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং বৈদেশিক ঋণ হতে পারে ১৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ। 

বিগত বছরগুলোর অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের বন্টন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেওয়াকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। বাংলাদেশ ২০১৫ সালে নিম্নমধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। ফলে বহুপাক্ষিক ও দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন অংশীদারদের কাছ থেকে অনুদান এবং নমনীয় ঋণ (কম সুদের হার, দীর্ঘ পরিশোধকাল) পাওয়ার সুবিধাদি ক্রমান্নয়ে হ্রাস পাচ্ছে। 

সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে তুলনামূলক উচ্চ সুদের হার ও স্বল্পমেয়াদি বাণিজ্যিক ঋণের ওপর আরও বেশি নির্ভর করতে হতে পারে। যার ফলে ঋণ পরিশোধ ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। এসময় বাংলাদেশের ঋণ পরিস্থিতির মধ্যমেয়াদী চিত্র অনেকটাই নির্ভর করবে সরকারের গৃহীত কার্যকর কৌশলগুলোর বাস্তবায়নের ওপর। 

যদি রাজস্ব আহরণ, রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ এবং ঋণ ব্যবস্থপনায় কার্যকর সংস্কার না আনা যায়, তাহলে ঋণের স্থিতি এবং সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে। তবে, মধ্যমেয়াদি ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশল সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশ এই উত্তরণের পথ দক্ষতার সাথে অতিক্রম করতে পারবে এবং উন্নত অর্থনৈতিক অবস্থানের সুফল গ্রহণের পাশাপাশি একটি টেকসই ঋণ পরিস্থিতি বজায় রাখতে সক্ষম হবে।

ঢাকা/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সামরিক শক্তিতে ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে কে এগিয়ে  
  • চার দেশের পাঁচ লাখ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ার নির্দেশ
  • ৫ বছরে ঋণের স্থিতি বাড়বে ৫৩.৭৭ শতাংশ: অর্থবিভাগ
  • ফাইনালে উইকেট নেওয়ার রেকর্ডটা এখন স্টার্কের, কার রেকর্ড ভাঙল
  • গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫৫ হাজার ছাড়াল
  • ছন্দে ফিরে ইবাদতের মুখে হাসি, উদযাপনে স‌্যালুট