গাইবান্ধায় যাত্রীদের বিরোধ মেটাতে গিয়ে মারধরের শিকার স্টেশনমাস্টার
Published: 15th, June 2025 GMT
যাত্রীদের বিরোধ মেটাতে গিয়ে গাইবান্ধা রেলস্টেশনের স্টেশনমাস্টার আবুল কাশেম মারধরের শিকার হয়েছেন। ওই ঘটনার একটি ভিডিও গতকাল শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
৩৬ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, স্টেশনমাস্টার আবুল কাশেম ও এক ব্যক্তি পরস্পরের গেঞ্জি ও শার্টের বুকের অংশ চেপে ধরে আছেন। একপর্যায়ে স্টেশনমাস্টার মাটিতে পড়ে যান এবং তাঁকে মারধর করা হচ্ছে। দুজন ব্যক্তি এগিয়ে এসে পরিস্থিতি থামানোর চেষ্টা করলেও মারধর থামেনি। মাটিতে পড়ে যাওয়ার পর স্টেশনমাস্টার উঠে ঘুষি মারলে ওই ব্যক্তি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে ট্রেনের দিকে ঠেলে নিয়ে যান। একপর্যায়ে স্টেশনমাস্টারের গায়ে থাকা জামা ছিঁড়ে যায়।
রেলস্টেশন সূত্রে জানা যায়, গতকাল দুপুরে লালমনিরহাট থেকে ঢাকাগামী আন্তনগর লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেন গাইবান্ধা স্টেশনে পৌঁছালে শীতাতপ বগিতে দুই যাত্রীর মধ্যে ওঠা–নামা নিয়ে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। এ সময় স্টেশনমাস্টার নারী যাত্রীদের আগে নামার পরামর্শ দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু এক যাত্রী উত্তেজিত হয়ে তাঁর ওপর চড়াও হন এবং মারধর শুরু করেন।
স্টেশনমাস্টার আবুল কাশেম বলেন, ‘দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ রকম ঘটনার শিকার হব, ভাবিনি। যাত্রীদের সেবা দিতে গিয়েই এমন ঘটনা ঘটেছে।’ তিনি আরও বলেন, ট্রেন ছেড়ে দেওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে কাউকে আটক করতে পারেনি।
রেলস্টেশন সূত্র জানায়, ঈদের পরদিন থেকে আন্তনগর এক্সপ্রেস ট্রেনগুলোতে ঢাকামুখী যাত্রীর অতিরিক্ত চাপ চলছে। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে আন্তনগর লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেন স্টেশনে পৌঁছায়। কিছুক্ষণ পর ট্রেনের শীতাতপ বগিতে দুই যাত্রীর (তাঁদের নাম–পরিচয় জানা যায়নি) মধ্যে ওঠা–নামা নিয়ে বাগ্বিতন্ডা শুরু হয়। এ ঘটনায় রেলওয়ের বোনারপাড়া জিআরপি থানায় একটি মামলা হয়েছে। স্টেশনমাস্টার আবুল কাশেম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এতে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
গতকাল রাত আটটার দিকে বোনারপাড়া জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, মারধরের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুজনকে আটক করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তাঁদের নাম-পরিচয় এখনই বলা যাচ্ছে না।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানে ইসরায়েলের হামলার পর তেলের দামে অস্থিরতা
ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় আজ শুক্রবার ইসরায়েল হামলা চালানোয় মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে। এতে জ্বালানির তেলের জোগানে বিঘ্ন ঘটতে পারে, এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।
অপরিশোধিত তেল ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচারস ৯ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ বা ৬ দশমিক ২৯ মার্কিন ডলার বেড়ে প্রতি ব্যারেলের দাম ৭৫ দশমিক ৬৫ ডলারে উঠেছে। একপর্যায়ে দাম ৭৮ দশমিক ৫০ ডলারে পৌঁছায়, যা গত ২৭ জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ। এ ছাড়া মার্কিন ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬ দশমিক ৪৩ ডলার বা ৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেড়ে ৭৪ দশমিক ৪৭ ডলারে উঠেছে। একপর্যায়ে দাম ৭৭ দশমিক ৬২ ডলারে উঠেছিল, যা কিনা ২১ জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ।
অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির মানে হচ্ছে দুনিয়াজুড়ে সুপারমার্কেটে খাবারের দাম, গাড়িতে তেল ভরার খরচ, পরিবহন ব্যয়—সবকিছুর দাম বাড়বে। এতে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার বিষয়ে একজন ব্যবসায়ী রয়টার্সকে বলেন, ‘এখনই বলা কঠিন, তবে সম্ভবত হরমুজ প্রণালি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় সবাই উদ্বিগ্ন।’
হরমুজ প্রণালি বিশ্বে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জাহাজ চলাচলের পথ। বিশ্বের মোট জ্বালানির প্রায় ২০ শতাংশ এই পথ দিয়েই সরবরাহ হয়। মূলত মধ্যপ্রাচ্যের তেল ও গ্যাস উৎপাদক দেশগুলো এই পথ দিয়েই তাদের জ্বালানি বিশ্ববাজারে পাঠায়। উত্তরে ইরান, দক্ষিণে ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ঘেরা হরমুজ প্রণালি উপসাগরীয় অঞ্চলকে আরব সাগরের সঙ্গে যুক্ত করে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এমএসটি মারকুইয়ের জ্যেষ্ঠ জ্বালানি বিশ্লেষক সল কাভোনিক বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ইরান যদি আঞ্চলিক জ্বালানি তেল পরিকাঠামোতে পাল্টা হামলা চালায়, তাহলে তেলের সরবরাহে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। তিনি আরও জানান, চরম পরিস্থিতিতে ইরান অবকাঠামোতে হামলা বা হরমুজ প্রণালি দিয়ে জাহাজ চলাচলে বাধা দিলে প্রতিদিন প্রায় দুই কোটি ব্যারেল তেল সরবরাহ ব্যাহত করতে পারে।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাসহ দেশটির বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলের প্রাণঘাতী হামলার কঠোর জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে তেহরান। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, ইসরায়েলকে এ হামলার জন্য কঠোর শাস্তি পেতে হবে।
এদিকে ইরানে ইসরায়েলের হামলা একতরফা পদক্ষেপ হিসেবে মন্তব্য করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেন, এতে ওয়াশিংটনের কোনো অংশগ্রহণ নেই। তবে তেহরানকে সতর্ক করে তিনি বলেন, তারা (তেহরান) যেন মার্কিন স্বার্থ বা ব্যক্তিদের লক্ষ্য না করে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ফিলিপ নভার জ্যেষ্ঠ বাজার বিশ্লেষক প্রিয়াঙ্কা সচদেবা বলেন, ইরান পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এতে শুধু তেলের সরবরাহ বিঘ্ন ঘটাবে না, আশপাশের অন্যান্য তেল উৎপাদকদের দেশগুলোতেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি করছে।