চুরির অপবাদে ব্যবসায়ীকে গাছে বেঁধে পেটালেন মহাজন
Published: 16th, June 2025 GMT
শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলায় সুদের টাকা দিতে না পারায় এক ব্যবসায়ীকে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে গাছে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে মহাজনের বিরুদ্ধে। এর একটি ভিডিও সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। উপজেলার খরিয়া কাজীরচরের ভাটি লঙ্গরপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খরিয়া কাজীরচরের ভাটি লঙ্গরপাড়া গ্রামের মাদ্রাসা পিয়ন ও ব্যবসায়ী নূর আমিন (৩৮) একই এলাকার সুদে কারবারি আব্দুল জলিলের কাছ থেকে মাসিক ১০ হাজার টাকা সুদের শর্তে ১ লাখ টাকা নেন। তিনি ১০ হাজার টাকা করে চার মাস সুদ দিয়ে আর দিতে পারছিলেন না। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। লাঞ্ছিত করা হয় ব্যবসায়ীকে।
জলিল মারধরের অভিযোগ এনে নূর আমিনের বিরুদ্ধে আদালতে নালিশও করেন। যদিও নূর অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন। কিছুদিন পর ভুক্তভোগীর একটি মোটরসাইকেল আটকে রাখেন জলিল। এ নিয়ে নূর আমিন থানায় অভিযোগ দেন। এর পর তাদের সম্পর্কের আরও অবনতি হয়। এরই মধ্যে রোববার কয়েকজনকে পাঠিয়ে তাঁকে লঙ্গরপাড়া বাজার থেকে ধরে আনেন জলিল।
এক পর্যায়ে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে তাঁকে বাড়ির গাছে বেঁধে ব্যাপক নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, বাড়ির সবাই মিলে তাঁকে লাঠিপেটা করেন। শরীরের কাপড়ও ছিঁড়ে ফেলা হয়। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, দুই হাত গাছে বাঁধা নূরের। এক নারী জামার কলার ধরে তাঁকে নির্যাতন করছেন।
নূর আমিনকে মারধরের সময় বলতে শোনা যায়, ‘এ .
ঘটনা জানাজানি হলে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আশরাফুল কবীর রূপা ঘটনাস্থলে যান। তিনি দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা করে বিষয়টি সুরাহা করেন। বিএনপি নেতা বলেন, ‘সেখানে শত শত মানুষ ছিল। দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে আগামী আগস্ট মাসে টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে নূরকে মুক্ত করি।’
অভিযুক্ত আব্দুল জলিলের ভাষ্য, ‘অনেক দিন ধরে দেড় লাখ টাকা পাই। তাঁকে বাজার থেকে ধরে এনেছিলাম, নির্যাতন করা হয়নি। বাড়ি আনার পর খারাপ আচরণ করায় বেঁধে রেখেছিলাম। নেতারা সমঝোতা করে দেওয়ায় ছেড়ে দিয়েছি।’
ভুক্তভোগী নূর আলম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘জীবনে কোনোদিন এত অপমান কেউ করেনি। মারধর করেছে, অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছে। সুদের টাকার জন্য এক বছর ধরে আমার মোটরসাইকেল আটকে রেখেছে। টাকাও দাবি করছে। মাসে ১০ হাজার করে চার মাস টাকা দিয়েছি। এখন আসল টাকা পাবেন ৬০ হাজার।’
এ বিষয়ে শ্রীবরদী থানার ওসি মো. আনোয়ার জাহিদ বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তার আগেই স্থানীয় নেতারা সমঝোতা করেন। ভুক্তভোগীকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরে ৪ আইনজীবীকে বহিষ্কার
যশোরে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চার আইনজীবীকে জেলা আইনজীবী সমিতি থেকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম.এ. গফুর।
অভিযুক্ত আইনজীবীরা হলেন- আব্দুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবীর হোসেন জনি, রফিকুল ইসলাম এবং তরফদার আব্দুল মুকিত।
জেলা আইনজীবী সমিতি সূত্র জানায়, ওই চার আইনজীবীর মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক এক এনজিওর ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ করেন। ওই টাকা ফেরত দিতে তিনি অঙ্গীকার করে ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। কিন্তু পরবর্তীতে ওই চেক ডিজ অনার হয় এবং একই সাথে তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করেন। এ ঘটনায় মক্কেল আইনজীবী সমিতিতে লিখিত অভিযোগ দেন।
অন্যদিকে, সৈয়দ কবীর হোসেন জনি একটি জমি ক্রয় করেন। কিন্তু ওই জমির মালিককে পূর্ণাঙ্গ টাকা না দিয়ে তালবাহানা করেন। শেষমেষ আট লাখ টাকা না দেওয়ায় জমির মালিক আইনজীবী সমিতিতে লিখিত অভিযোগ দেন।
এছাড়া, রফিকুল ইসলাম নিজে আইনজীবী হয়েও আরেক আইনজীবী নুরুল ইসলামকে নির্বাহী আদালতে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও লাঞ্ছিত করেন। এ ঘটনায় নুরুল ইসলাম অভিযোগ দেন। অন্যদিকে, তরফদার আব্দুল মুকিত এক মক্কেলের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কাজ করেননি। এছাড়া তিনি ওই মক্কেলের কাগজপত্র আটকে রেখে জিম্মি করে রাখেন। বাধ্য হয়ে তিনি মুকিতের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন সমিতিতে।
এসব অভিযোগ জেলা আইনজীবী সমিতি পৃথকভাবে তদন্ত করে। একই সাথে চার আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম.এ. গফুর।
তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার লিখিতভাবে তাদেরকে নোটিশ দিয়ে অবগত করা হবে।”
ঢাকা/রিটন/এস