বাংলাদেশে প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিবছর দেশে ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করেন। এমন পরিস্থিতিতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাসের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করে তামাকজনিত অকাল মৃত্যু ঠেকাতে দাবি জানিয়েছে পেশাজীবী বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। 

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাজধানীর ঢাকা আহছানিয়া মিশনের অডিটোরিয়ামে ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণে পেশাজীবি সংগঠনের ভূমিকা ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এমন দাবি জানায় তারা।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ দোকান ব্যবসায়ী মালিক সমিতি, বাংলাদেশ সুপারমার্কেট ওনার্স এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাপ) সংস্থা, বাংলাদেশ গ্রোসারী বিজনেস এসোসিয়েশন(বিজিবিএ), বাংলাদেশ সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশন, ঢাকা মহানগর দোকান ব্যবসায়ী মালিক সমিতি, জাতীয় দোকান কর্মচারী ফেডারেশন, এর নেতৃবৃন্দ, পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা আহছানিয়া মিশনের সভাপতি ড.

গোলাম রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে, শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা আহছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ।

মূল প্রবন্ধে ঢাকা আহছানিয়া মিশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের সমন্বয়কারী শরিফুল ইসলাম জানান, গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস) ২০১৭ এর তথ্যমতে ১ কোটি ৯২ লক্ষ মানুষ ধূমপান করে এবং প্রায় ৪ কোটি মানুষ ধূমপান না করেও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে। গ্যাটস ২০১৭ তথ্যমতে পরোক্ষ ধূমপানের এ হার ৪২.৭%। এ সময় তিনি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী চূড়ান্তকরণের পূর্বে বিভিন্ন এসোসিয়েশন ও পেশাজীবী সংগঠনের ভূমিকা তুলে ধরেন এবং ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে ধারণা প্রদান করেন।

অনুষ্ঠানে সংগঠগুলোর নেতারা জানান, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের দাবিতে বিভিন্ন সময় সরকারকে স্মারকলিপি ও চিঠি প্রদান করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের যে সংশোধিত খসড়া তৈরি করেছেন এ জন্য সরকারকে সাধুবাদ জানান তারা। এবং বর্তমানে ৯ জন উপদেষ্টা ও ৩ জন সচিব দ্বারা গঠিত একটি উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি গঠিত হয়েছে যারা আইনের খসড়াটিকে পূনরায় রিভিউ করছেন।

এসময় খসড়া আইনটি দ্রুত পাশে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সরকারের প্রতি দাবি জানান নেতারা। 

সংশোধনীতে উল্লেখিত পাবলিক প্লেসে ধুমপানের নির্ধারিত এলাকা বিলুপ্ত, বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ, খুচরা বিড়ি-সিগারেট বিক্রি বন্ধ, ই-সিগারেট বা হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট থেকে তরুণদের রক্ষা করা, তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম বন্ধ ও সিগারেটের প্যাকেটে সতর্কবার্তা ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ বাড়ানো হলে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভূমিকা রাখবে বলেও জানান তারা।

বক্তারা জানান, তামাক কোম্পানিগুলো মিথ্যা প্রচার করছে। তারা বলছে প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাস হলে সরকার বিপুল পরিমাণে রাজস্ব হারাবে। তবে বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন ও ২০১৩ সালে সংশোধনের পর গত ১৮ বছরে সরকারের রাজস্ব আয় বেড়েছে সাড়ে ১২ গুণ। একই সঙ্গে ২০০৯ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে তামাক ব্যবহার ১৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন তামাক বিরোধী সংগঠন ও ইয়ুথ ফোরামের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত থেকেও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাশের দাবি জানায়।

ঢাকা/হাসান/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অন ষ ঠ ন আহছ ন য় স গঠন র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

রাঙামাটির পাহাড়ে বাড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস

বর্ষা মৌসুম আসলেই রাঙামাটিতে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের জীবন থাকে শঙ্কায়। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে পার্বত্য এ জেলাই প্রতিবছরই ছোট-বড় পাহাড় ধসে প্রাণহানি হয়। এরপরও পাহাড়ের ওপর ও আশপাশে বসতি গড়ে বসবাস করছেন হাজারো মানুষ। মৃত্যু ঝুঁকি জেনেও এ সংখ্যা দিন দিন আরো বাড়ছে।

আট বছর আগে অথাৎ ২০১৭ সালের জুন মাসে পাহাড় ধসে রাঙামাটি জেলায় ১২০ জনের প্রাণহানি হয়। এরপর থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ভারী বৃষ্টি হলেই পাহাড়ের পদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে তোড়জোড় শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন। বৃষ্টি শেষ হলে আবারো আগের অবস্থায় ফিরে আসে সবকিছু। ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিয়ে স্থায়ী কোনো পরিকল্পনা না নেওয়ায় সমস্যা দীর্ঘতর হচ্ছে বলে মত স্থানীয়দের। 

প্রশাসনের তথ্যমতে, রাঙামাটিতে বর্তমানে ১০০’র বেশি এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্ষার আগে এসব এলাকায় প্রশাসন সাইনবোর্ড দিয়ে সতকর্তামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ভারী কিংবা টানা বৃষ্টি হলে পহাড়ে বসবাসকারীদের নিকটস্থ নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। 

আরো পড়ুন:

রাঙামাটিতে গুর্খা সম্মেলন ও গুণীজন সম্মাননা

অভ্যুত্থানে আহতদের সংবর্ধনা দিয়েছে রাঙামাটি জেলা পরিষদ

চট্টগ্রামের শিমুলতলী এলাকার পাহাড়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বসতি। পাহাড় ও আশপাশে থাকা স্থাপনার বেশিরভাগই রয়েছে ঝুঁকিতে। ২০১৭ সালে রাঙামাটিতে পাহাড়ধস হলে এই এলাকায় অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। অর্ধ শতাধিক বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। ২০ জনের বেশি মানুষ মারা যান, আহত হন শতাধিক। 

প্রাণহানির পরেও পুনরায় একই স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে ঘরবাড়ি। শুধু শিমুলতলী এলাকায় নয়; রাঙামাটি শহরের ভেদভেদী, যুব উন্নয়ন এলাকা, মনতলা আদাম, সাপছড়ি, পোস্ট অফিস এলাকা, মুসলিম পাড়া, নতুন পাড়া, মোনঘর ও সনাতন পাড়া এলাকার চিত্রও একই।

শিমুলতলী এলাকার বাসিন্দা খোরশেদ আলী বলেন, “এভাবে পাহাড়ে থাকা ছাড়া কোনো উপায় নেই। মৃত্যুঝুঁকি জেনেও বসবাস করতে হচ্ছে। সরকার যদি কোথাও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে তখন আমরা সেখানে চলে যাব।”

রূপনগর এলাকার খোকন ও হামিদা পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে ঘর নির্মাণ করে পরিবার নিয়ে বসবাস করেছেন। তারা জানান, অন্যত্র যাওয়ার জায়গা না থাকায় মৃত্যুর শঙ্কা আছে জেনেও সেখানে রয়েছেন। 

খোকন বলেন, “সরকার আমাদের জায়গা ছাড়তে বলে। আমরা কোথায় যাব, থাকব কোথায় সেই বিষয়ে তারা কিছুই বলে না। তাই আমরা কোথাও যাব না। বাঁচলে এখানেই বাঁচব, আর মরলে এখানেই মরব।”

যুব উন্নয়ন এলাকা ও মনতলা আদাম এলাকার বাসিন্দা রবীন্দ্র লাল চাকমা ও সোনা চন্দ্র চাকমা জানান, বর্ষা মৌসুমে জেলা প্রশাসন থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে দিয়ে চলে যায়। পাহাড়কে ঝুঁকিমুক্ত করে বসবাসের উপযোগী করার কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়।

পরিবেশবাদী সংগঠন গ্লোবাল ভিলেজের নির্বাহী পরিচালক ফজলে এলাহী বলেন, “২০১৭ সালে পাহাড় ধসে অনেক প্রাণহানির পর প্রশাসন থেকে পাহাড় ধসের কারণ ও করণীয় নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটির রিপোর্ট এবং সুপারিশ আমরা আজো জানতে পারিনি। বর্তমান পাহাড়ের চিত্রই বলে দেয় সেই রিপোর্টের সুপারিশ অনুসরণ করা হয়নি। যদি অনুসরণ করা হতো, তাহলে এতো বড় একটি ঘটনার পর পুনরায় একই স্থানে বসতি স্থাপন হতো না। সাধারণ মানুষকে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করতে হতো না।” 

তিনি বলেন, “পাহাড় ধসে প্রাণহানি ও সম্পদের অপচয় রোধ করতে স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমরা দেখতে পারছি ২০১৭ সালের ঘটনার পরও পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস কমেনি, উল্টো বেড়েছে কয়েকগুণ।”

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, “জেলায় শতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্ষণের পূর্বাভাস থাকলে আমরা পাহাড়ের পদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসি।”

স্থায়ী সমাধানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “পার্বত্য জেলায় ভূমি ব্যবস্থাপনার কারণে এখানে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া একটু জটিল। তবে, প্রশাসন থেকে ঝুঁকি হ্রাসে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে ২০১৭ সালের ১৩ জুন পাহাড়ধসে পাঁচ সেনা সদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানি ঘটে। ২০১৮ সালের জুনে জেলার নানিয়ারচর উপজেলায় ফের পাহাড়ধসে দুই শিশুসহ ১১ জন এবং ২০১৯ সালের জুনে জেলার কাপ্তাইয়ে তিনজনের প্রাণহানি ঘটে।

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফলের তিন হাজার কোটি টাকার বাজার পাহাড়ে
  • রাঙামাটির পাহাড়ে বাড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস