শ্বশুরবাড়ি থেকে ঈদের সালামি না পেয়ে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ, স্বামী গ্রেপ্তার
Published: 20th, June 2025 GMT
বগুড়ার ধুনট উপজেলায় শ্বশুরবাড়ি থেকে ঈদের সালামি হিসেবে ২০ হাজার টাকা না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে শাম্মি খাতুন (২২) নামের এক গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় থানায় মামলার পর শাম্মির স্বামী সাগর মিয়াকে (৩০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আজ শুক্রবার বিকেলে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। সাগর মিয়ার বাড়ি ধুনটের মথুরাপুর ইউনিয়নের সাগাটিয়া গ্রামে। এর আগে ধুনট পৌর এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা সদরের থানাপাড়া এলাকার রহিম উদ্দিনের মেয়ে শাম্মি খাতুনের প্রায় পাঁচ বছর আগে ধুনটের মথুরাপুর ইউনিয়নের সাগাটিয়া গ্রামের সাগর মিয়ার সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে মেয়েপক্ষ সাগর মিয়াকে প্রায় চার লাখ টাকা দেন। সাগর-শাম্মির দম্পতির সংসারে তিন বছর বয়সী একটি ছেলে আছে।
শাম্মির স্বজনদের অভিযোগ, বিয়ের পর প্রায়ই বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক বাবদ আরও টাকাপয়সা এনে দিতে চাপ দিতেন সাগর। বিয়ের সময় চার লাখ টাকা যৌতুক দেওয়ায় শাম্মির মা-বাবার পক্ষে নতুন করে টাকা দেওয়া সম্ভব ছিল না। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকত। সাগরের পরিবারের লোকজনও শাম্মিকে নানাভাবে নির্যাতন করতেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ঈদুল আজহা উপলক্ষে সাগর ঈদের সালামি হিসেবে শ্বশুরবাড়ি থেকে ২০ হাজার টাকা চান। এই টাকার জন্য ৩ জুন স্ত্রী শাম্মিকে সঙ্গে করে শ্বশুরবাড়িতে যান। শ্বশুরবাড়ি থেকে সালামি না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই দিনই স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে ১০ জুন দুপুরে সাগর মিয়া ও তাঁর পরিবারের লোকজন হত্যার উদ্দেশে জোর করে শাম্মির মুখের ভেতর ‘গ্যাস ট্যাবলেট’ নামের পরিচিত কীটনাশক ঢুকিয়ে দেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১ জুন শাম্মি মারা যান।
এ ঘটনায় শাম্মির মা চায়না খাতুন ধুনট থানায় অভিযোগ করেন। পুলিশ প্রাথমিক তদন্ত শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করে। মামলায় সাগর মিয়া ছাড়াও তাঁর মা-বাবাসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়।
ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল আলম বলেন, অভিযুক্ত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আরপিওর বিধানের বৈধতার রায় রিভিউর জন্য হলফনামার অনুমতি
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধানের বৈধতা দিয়ে ১৪ বছর আগে রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদনের জন্য হলফনামার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন দুজন আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আজ সোমবার হলফনামা করার অনুমতি দিয়েছেন।
আবেদনকারী সাত ব্যক্তি হলেন ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন, মেজর (অব.) এস এম হারুনুর রশীদ, কাজী জাহেদুল ইসলাম, আইনজীবী এস এম আজমল হোসেন, মেজর (অব.) নিয়াজ আহমেদ জাবের, মেজর (অব.) মো. জিয়াউল আহসান ও সালাহ উদ্দিন।
আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ মামলায় আবেদনকারীরা পক্ষ ছিলেন না। যে কারণে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন দায়েরের জন্য হলফনামা করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন তাঁরা। চেম্বার আদালত হলফনামা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে শিগগিরই রিভিউ আবেদন করা হবে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২(৩ক)(ক) বিধান অনুযায়ী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যুক্ত করে দিতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী ইতিপূর্বে জাতীয় সংসদের কোনো নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকলে ওই তালিকা প্রদানের প্রয়োজন হবে না।
আইনজীবীর তথ্য অনুসারে, ঢাকার একটি আসন থেকে ২০০৭ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র নেন। পরে নির্বাচনের ওই তারিখ পিছিয়ে যায়। অন্যদিকে ২০০৮ সালে আরপিও দফা ১২(৩ক)–তে সংশোধনী আনা হয়। এই বিধান সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদ ও আরপিওর ১২(১) ধারার পরিপন্থী উল্লেখ করে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী ২০১০ সালে হাইকোর্ট রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট রুল ডিসচার্জ (খারিজ) করে রায় দেন। দফা (৩ক) সংবিধান পরিপন্থী নয় বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন রিট আবেদনকারী। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি লিভ টু আপিল খারিজ করে রায় দেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত আরপিওর ১২(৩ক)–তে বেআইনি কিছু পাননি বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে দুই আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি আবেদন করতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে ভোটারের গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। ভোটার কোন প্রার্থীকে ভোট দেবেন বা দেবেন না, এটি একান্তই তাঁর চিন্তা ও মতপ্রকাশের অধিকার। সিক্রেট ব্যালটে হামলা হলে ভোট বাতিলও হয়। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে প্রার্থীর যোগ্যতা নির্ধারণ করা আছে। রাজনৈতিক দল হলে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন লাগবে না, অথচ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে গেলে লাগবে অর্থাৎ একই মনোনয়নপত্র ঘিরে দ্বৈত বিধান। ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন থাকার ওই বিধানের মাধ্যমে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা সংবিধান সমর্থন করে না এবং ভোটারের গোপনীয়তারও লঙ্ঘন—এসব যুক্তি তুলে ধরে আবেদনটি করা হয়।